![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানুষকে বিশ্বাস করতে চাই এবং বিশ্বাস রেখেই কাজ করতে চাই।বাস্তবের ভিতরে বসবাস করতে ভালবাসি। কল্পনা করতে ভাল লাগে, কিন্তু বাস্তবকে ভুলে নয়। সততা বলতে আংশিক বুঝি না, পুরোটাই বুঝতে চাই। প্রকৃতির মাঝে শান্তি এবং স্বস্তি দু\\\'টোই খুজে পাই। নারীর প্রতি আকর্ষন আছে তবে উন্মাদনা নেই। বয়সকে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা মনে করি না। লিখতে ভালবাসি, কবিতা-গল্প, যা কিছু। চারটে বই প্রকাশ করেছি নিজ উদ্যোগে। প্রতিভা নেই, শখ আছে। অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে, পারি না কেন বুঝি না।
ডঃ জিওফ ডেভিস একাত্তুরে যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশে আসেন নির্যাতিত নারীদের সহায়তা দেয়ার জন্য। ইন্টারন্যাশনাল প্ল্যান্ড ফাদারহুড, ইউএনএফপিএ এবং ডব্লিউএইচও তাঁর পৃষ্ঠপোষকতা করলেও প্রথম দিকে কেউই দায়দায়িত্ব নিতে রাজি হয় নি। শারীরিক ও মানসিকভাবে বিধ্বস্ত সেই সব সংগ্রামী নারীর পুনর্বাসন ছিল স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রগঠন কাজের সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায়। ডঃ ডেভিস সেই কাজের এক সহযোগী এবং সেই অধ্যায়ের এক গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষী। ডঃ বীণা ডি'কস্টা, অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির ফ্যাকাল্টি অব এশিয়ান স্টাডিজের শিক্ষক, তার পিএইচডি গবেষণায় ডঃ ডেভিসের সাক্ষাতকার থেকে সংক্ষিপ্তাকারে উদ্ধৃত।
আটক অবস্থায় যে শিশুরা জন্মেছিল, তাদের বাঁচানোই ছিল আমার প্রথম কাজ। পাশাপাশি যারা গর্ভস্থ শিশুদের রাখতে নারাজ, তাদের গর্ভপাতে রাজি করানোতেও আমি সচেষ্ট ছিলাম। যদিবা জন্মাতো, মায়েদের অপুষ্টিসহ নানাবিধ কারনে সেসব শিশু হতো রুগ্ন ও অপুষ্ট।
স্বেচ্ছায় কাজটি বেছে নেওয়ার পেছনে দায়িত্ববোধ তো ছিলই, তা ছাড়া আমি ৩০ সপ্তাহ বয়সী ভ্রূনের গর্ভপাতে বিশেষভাবে প্রশিক্ষন নিয়েছিলাম। এখানে এসে কাজ শুরু করি ধানমন্ডির একটি ক্লিনিকে। এ ছাড়া হাসপাতাল নেই এমন শহরেও কাজ করেছি। কিন্তু মেয়েদের সংখ্যা এত বেশি ছিল যে একা সব পারতাম না। তাই নতুন কর্মী তৈরির জন্য এক শহর থেকে আরেক শহরে প্রশিক্ষন দিয়ে বেড়িয়েছি।এক জায়গায় কাজ শেষ হলে চলে যেতাম অন্য শহরে। ঢাকায় আমরা প্রতিদিন গড়ে ১০০ জনের গর্ভপাত করতাম। ঢাকার বাইরের সংখ্যাটিও কাছাকাছিই ছিল। এসব কাজের পরোক্ষ সংগঠক ছিল সরকার।
যারা খানিকটা সামর্থ্যবান, তারা গোপনে কলকাতায় চলে যেতো। আমাদের কাছে যারা আসতো, তারা নিজেদের আগ্রহ থেকেই আসতো। তাদের মধ্যে সব শ্রেনীর, সব ধর্মের নারীই ছিল। যাদের বাচ্চা হয়ে গিয়েছিল তারা নবজাতককে তুলে দিতো পুনর্বাসন সংস্থার হাতে। তারা আবার তাদের তুলে দিতো শিশু দত্তকসংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল সোশ্যাল সার্ভিসসহ (আইএসএস) অন্যান্য সংস্থার হাতে। গর্ভপাতকারী নারী ও নবজাতক, উভয়ের সংখ্যাই ছিল বিপুল। তখন বাংলাদেশের সহায়-সম্পদ কিছুই ছিল না। সামান্য যা ছিল, তা বরাদ্দ ছিল যুদ্ধাহত পরুষদের জন্য। ওষুধ, যন্ত্রপাতি সব আমাকেই ইংল্যান্ড থেকে আনিয়ে নিতে হতো। ছয় মাস কাজের সময় আমার সম্বল ছিল মাত্র দুই সেট যন্ত্রপাতি।
...হাসপাতালের কর্মচারীরা প্রথমে রাজি হতো না; ভাবতো এটা বেআইনী কাজ। সে সময়ের স্বরাষ্ট্রসচিব রব চৌধুরী এ ব্যাপারে আমাকে সহযোগিতার জন্য আদেশসম্বলিত ক্ষমতায়নপত্র দিয়ে সাহায্য করেছিলেন। বাংলাদেশের উপর গুচ্ছ গুচ্ছ কাগজ আমার কাছে পড়ে আছে। সম্ভবতঃ সেই চিঠিটিও সেখানে আছে। তখনই জানতাম, এ রকম অভিজ্ঞতা বাকি জীবনে আর হবে না। সে সময় এ কাজ ছিল খুবই কঠিন ও মর্মপীড়াদায়ক। হায়, এসব ইতিহাস আজকাল আর তো কেউ শুনতে চায় না।
হ্যাঁ, কোন কোন মা সন্তানকে নিজের কাছেই রেখে দিয়েছিল। তাদের ভাগ্যে কি ঘটেছিল, সে ব্যাপারে কোন ধারনা নেই। আইএসএস যতজনকে সম্ভব দত্তক হিসেবে আমেরিকা ও পশ্চিম ইউরোপে পাঠিয়ে দিয়েছে। যতজনকে পাওয়া যায় ততজনকেই নিতে রাজি ছিল তারা।
...শিশুদের পুনর্বাসনের বিষয়টি বেশ স্পর্শকাতর। একটি কারন এই যে পাকিস্তান ছিল কমনওয়েলভুক্ত দেশ এবং তাদের বেশির ভাগ কর্মকর্তারই প্রশিক্ষন হয়েছিল ইংল্যান্ডে। ফলে বিষয়টি ব্রিটিশ সরকারের জন্যও বিব্রতকর ছিল। কুমিল্লা কারাগারে বন্দী এ রকম অনেক পাকিস্তানী কর্মকর্তার সাক্ষাতকার নিয়েছিলাম আমি। তাঁরা বলছিলেন, 'যুদ্ধে তো অনেক কিছুই হয়। আমরা কি এমন করেছি!' সবচেয়ে ভয়ংকর যে তাঁরা নারী ধর্ষনকে জায়েজ মনে করতেন! টিক্কা খানের কাছ থেকে স্পষ্ট নির্দেশ পেয়েছিলেন, যেহেতু একজন ভাল মুসলিম তার বাবার বিরুদ্ধে লড়বে না, সেহেতু যত বেশি সম্ভব বাংলাদেশী নারীদের গর্ভবতী করো। এ থেকে একটা গোটা প্রজন্ম জন্মাবে, যাদের শরীরে বইবে পশ্চিম পাকিস্তানীদের রক্ত। এটাই তারা বলেছিল এবং ধর্ষনের পেছনে এটাই ছিল তাদের তত্ত্ব! ধর্ষিতাদের যে সংখ্যাটি বাংদেশে স্বীকৃত, তা মোটেই বাড়িয়ে বলা নয়; বরং সংখ্যাটি আরও বেশি হতে পারে।
পাকিস্তানীরা যখন কোন শহর দখল করতো তখন তারা স্কুল, হাসপাতাল লক্ষ্য করে বোমা মেরে চরম নৈরাজ্য সৃষ্টি করতো। নিতান্তই যারা শিশু, তারা বাদে বাকি সব মেয়েকে আলাদা করে ফেলা হতো। পদাতিকদের আরেকটি অংশ আওয়ামী লীগ বা পূর্ব পাকিস্তান সরকারের সঙ্গে জড়িত সবাইকে গুলি করে মারার কাজ করতো। তারপর মেয়েদের কোন একটি স্থানে আটকে রেখে তাদের ইচ্ছেমতো ব্যবহার করতো। নির্যাতনের অনেক গল্প শুনেছি আমি। সেগুলো ছিল অবিশ্বাস্য ও ভয়ঙ্কর! মানুষ এ রকম করতে পারে! ধনী ও সুশ্রীদের রাখা হতো কর্মকর্তাদের জন্য। বাকিদের তুলে দেওয়া হতো সেপাইদের হাতে। তারা ঠিকমতো খাবার পেতো না, অসুস্থ্য হলে জুটতো না চিকিৎসা। অজস্র নারী ক্যাম্পেই মরে যেতো। কিন্তু যুদ্ধের পরও এসব বিষয় অবিশ্বাস করার ঝোঁকটাই ছিল বেশি। কিন্তু আমি জানি কি ঘটেছে, কত ব্যাপক আকারে ঘটেছে।
যুদ্ধের পর রেপ ক্যাম্পগুলো তুলে দেওয়া হয়েছিল। মেয়েদের পাঠিয়ে দেওয়া হতো যার যার গ্রাম বা শহরে। অনেক ক্ষেত্রে এমন হয়েছে, হয়তো স্ত্রীকে স্বামীর হাতে তুলে দেওয়া হলো এবং লোকটি তাকে মেরে ফেললো! কোনো কোনো ক্ষেত্রে তারা জানতেও চাইতো না, কি ঘটেছে তাদের স্ত্রীদের জীবনে। যমুনা নদীতে তখন অনেক লাশ ভেসে যেতে দেখা যেতো; অনেক লাশ পড়ে ছিল দেশের আনাচে-কানাচে। পুরুষদের চোখে ঐ সব নারী 'নষ্ট' হয়ে গেছে। তাদের মরে যাওয়াই ভাল। আমি প্রথমে এসব বিশ্বাসই করতে পারিনি।
ডঃ ডেভিস আবার বাংলাদেশে আসার জন্য ভীষন উদ্বেল, বলেছেন ডঃ বীণা। যুদ্ধাপরাধ বিচারের জন্য একটি ট্রাইবুনাল গঠনের ব্যাপারে তাঁরা কথা বলেন।
ডঃ বীণা লিখেছেন : 'বিদায়ের আগে জিওফ বললেন, সুবিচার পাওয়ার জন্য বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নিতে তাঁর ক্ষমতার মধ্যে যা সম্ভব যথাসাধ্য করবেন। তিনি আমার হাত ধরে নিজের বুকের উপর রাখলেন। তাঁর চোখ দিয়ে তখন অঝোরে অশ্রু ঝরছিল।'
সৌজন্যে: দৃষ্টিপাত.অর্গ ও প্রথম আলো
(বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস নিয়ে আজ আমরা বাদ-বিসম্বাদ করি, কিন্তু একবারও ভেবে দেখিনা আমাদের দেশ এবং দেশটার মানুষদের উপর কি বিভৎসতা ঘটেছিল! আর সবই তো আমাদের ইতিহাসের যেমন গৌরব আর তেমনি করুনতম অধ্যায়। এ দেশের নারি-পুরুষ যারা একাত্তরের সেই ভয়ংকর সময়ের ভিতর দিয়ে গিয়েছে তারা কেমন ছিল, কি দেখেছে তারা? তাদেরও তো সংসার ছিল, পরিবার ছিল, জীবন ছিল। আজ কেবলই নেতা-নেতৃত্ব নিয়ে কথা বলি, কিন্তু যেসব নৃসংশতা ঘটেছে তা মনে করে আমরা আমাদের চেতনাকে জাগ্রত করি না।)
২| ০১ লা জুলাই, ২০১৪ সকাল ৯:৪৩
শফিক আলম বলেছেন: অনন্য আর কোথায় হলো! দেখছেন না মাত্র চারজন পড়েছেন। আসলে একদিন টেবিলের উপর দেখি এক টুকরো নিউজপেপার কাটিং। আমার স্ত্রী পড়বে বলে কেটে রেখেছে। আমিও হয়তো ব্যস্ততার কারনে এটা মিস্ করে গেছি। সংগে সংগে পড়ে ফেলার পর ভাবলাম আমার ব্লগে এটা লিখে পোস্ট করবো। এটা আমাদের সবার পড়া উচিত। শিরোনামটা পরিবর্তন করে পোস্ট করেছি। ভিতরে অনুল্লেখ্য ৮/১০ টি লাইন আমি বাদ দিয়েছি। বলতে পারেন হুবহুই আছে। বুঝতেই পারছেন কেন লিঙ্ক দিতে পারছি না। তবে এটা প্রথম আলোর বিজয় দিবস সংখ্যা ছিল যা বিজ্ঞাপন দেখে বুঝতে পেরেছি। হয়তো গত বছরের। ইতিহাসের অন্তর্গত এই সব করুন কাহিনী ক'জন পড়ে বলুন!
©somewhere in net ltd.
১|
৩০ শে জুন, ২০১৪ দুপুর ২:৫১
খাটাস বলেছেন: অনন্য এই নিউজ টা পত্রিকাতে মিস করে গেছি। শেয়ারের জন্য কৃতজ্ঞতা। আপনি কি হুবহ দিয়েছেন? না হলে মুল লিঙ্ক টা দিলে খুশি হব।
ভাল থাকবেন। শুভ কামনা।