নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেনিআসহকলা

সবাইকে শুভেচ্ছা।

শফিক আলম

মানুষকে বিশ্বাস করতে চাই এবং বিশ্বাস রেখেই কাজ করতে চাই।বাস্তবের ভিতরে বসবাস করতে ভালবাসি। কল্পনা করতে ভাল লাগে, কিন্তু বাস্তবকে ভুলে নয়। সততা বলতে আংশিক বুঝি না, পুরোটাই বুঝতে চাই। প্রকৃতির মাঝে শান্তি এবং স্বস্তি দু\\\'টোই খুজে পাই। নারীর প্রতি আকর্ষন আছে তবে উন্মাদনা নেই। বয়সকে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা মনে করি না। লিখতে ভালবাসি, কবিতা-গল্প, যা কিছু। চারটে বই প্রকাশ করেছি নিজ উদ্যোগে। প্রতিভা নেই, শখ আছে। অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে, পারি না কেন বুঝি না।

শফিক আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

ও রে মোটরবাইকওয়ালা !

০৭ ই ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:১০

আজকাল মোটরবাইকওয়ালাদের দেখলে আমার কেন যেন খুব হিংসে হয়। এই জন্য নয় যে ওরা ইচ্ছে করলেই ফুটপাতে উঠে পথচারীদের ঠেলেঠুলে জ্যাম-জটকে নিকুচি দেখিয়ে সবার আগে পার পেয়ে যায়। এই জন্যও নয় যে ওদের চলে যাওয়ার জন্য রাস্তার গাড়িগুলোকে আজকাল বাঁ পাশে একটু জায়গা ছেড়ে রাখতে হয় যেন নির্বিঘ্নে পাশ কেটে চলে যেতে পারে। বাইকওয়ালারা আবার একটু বেশিই অগ্রাধিকার পেয়ে গেছে। এই প্রাপ্তিটা অবশ্য স্বোপার্জিত নয়। চেষ্টা-সাধনা, সংগ্রাম-টংগ্রাম কিছুই করতে হয় নি। এটা হলো অটো-প্রাপ্তি। মানে না চাইতেই পাওয়া। বলা যায় প্রাকটিস্‌ করতে করতেই হয়ে গেছে। যেমন, এনারা মটর গাড়ীর ঘিঞ্জি-ঘুঞ্জি দিয়ে অথবা রাস্তার ধার দিয়ে যেতে অসুবিধা হলে নিজেরাই গাড়ীর পাশের কানটা (সাইড ভিউ মিরর) চাপিয়ে নিয়ে বেরিয়ে যান। অবশ্য যাওয়ার সময় কানটা আবার টেনে সোজা করে দিয়ে যান। কিন্তু সেই সোজা তো আর গাড়ীর চালকের জন্য সোজা হয় না। তিনি আবার ঠিক করে নেন নিজের মত করে, প্রায় নির্লিপ্ত ভাবেই। এনারা মাঠের সাইড লাইন ধরে ফুটবল খেলেন, মানে ফুটপাত দিয়ে ঘড়্‌ ঘড়্‌ করে বেরিয়ে যান, কেউ কিছু বলে না। এ সবে আমার কোনই প্রতিক্রিয়া নেই, নেই কোন অভিযোগ। কারন আমরা সবই সহ্য করতে পারি। আর আইনও আমরাই তৈরি করে নেই। আমরা প্রথমে অনুশীলন করি, নির্বিরোধ আর নির্বিবাদে। তারপর তা আইনে পরিনত করি এবং এভাবেই আমরা বেআইন-এর 'বে'-কে অনেক জায়গা থেকেই পদাঘাতে পদচ্যুত করেছি।

আমার হিংসে হয় যখন দেখি এই বাইকওয়ালাদের পিছনে বসে ললনারা সওয়ারী হয়ে চলছে দুরন্ত। কত মধুর লাগে! তারা নিশ্চয়ই বেশীর ভাগই স্বামী-স্ত্রী! কোন কোন ললনাকে দেখি বইকওয়ালার পেট জড়িয়ে বসে আছে। কাউকে দেখি ডান হাতটা আল্‌তো করে বাইকও্য়ালার কাঁধ ধরে বসে আছে। কেউ আবার পেছন থেকে বাইকওয়ালাকে জাপ্‌টে ধরে পিঠের সঙ্গে লেপ্টে আছে। আহা কি মধুর! নিশ্চয়ই এরা নতুন দম্পতি। অবশ্য নতুনই হতে হবে এর কোন মানে নেই। যদি চাই জীবনটাকে উড়িয়ে নিতে তবে পুরাতনও পারে রুমাল ওড়াতে। ওই রকমভাবে জড়িয়ে ধরে একে বেঁকে উচ্ছাসে চলে যাওয়া দেখে মনে হয় যেন ভালবাসা ছুটে চলেছে। এই জড়িয়ে থাকা যুগল সম্ভবতঃ প্রেমিক-প্রেমিকাই হবে। এরা যে এই রাইডটাকে কতটা এন্‌জয় করে তা সেদিন আমার এক পরিচিতের ফেইস বুক-এ মন্তব্য দেখেই বুঝতে পারলাম। তার এখন নতুন চাকরি হয়েছে তার সাহেবের অফিসের একেবারেই কাছে। যে কারনে সকাল-বিকেল বাইক-রাইড বেশ এন্‌জয় করছে। সত্যিই এক অন্যরকম অুনভূতিই বটে। মাঝে মাঝে দেখি কোন উর্ব্বশী ঠোঁটে হাসি মেখে কি যেন বলে চালকের কাঁধে হেলে পড়ে। কিছুই বোঝা যায় না। অফিসে যেতে যেতে দেখি সারি সারি জোড়ায় জোড়ায়। ফেরার পথে অতটা দেখা যায় না কেন বুঝি না। হতে পারে দু'জনেই চাকরি করে, অফিস ফেরৎ সময়টা হয়তো মিলিয়ে নিতে পারে না। যারা পারে তারা ক্লান্তি অবসাদ দুর করে ফের 'ভালবাসা' হয়ে বাড়ি ফিরতে পারে। যারা পারে না তাদের একটা সাময়িক বিরহ বিষাদ মনে লেগে থাকে বৈ কি।

মাঝে মাঝে ছুটির দিনে দেখা যায় আরও একটু বেশিই উচ্ছাস। দেখা যায় পশচাতে উপবিষ্ট সুন্দরী তার দোপাট্টা উড়িয়ে সানসিল্‌কে শ্যামপ্যু করা কেশগুচ্ছ ছড়িয়ে যেন 'হাওয়ামে উড়তা যায় লাল দোপাট্টা মলমলকে...'। এসব দৃশ্য দেখতে ভালই লাগে, চোখ জুড়িয়ে যায়। কিন্তু মনটা কেন যে পোড়ে বুঝি না!

এক সময় আমিও মোটর বাইক চালাতাম। নিজের ছিল না বটে কিন্তু জোগাড় হয়ে যেতো, ভাই বা বন্ধুর। সেটা ছিল আমাদের সময়। তবে যে মানুষটি আমাকে চালানো শিখিয়েছিল সে আর এই জগতে নেই। সময় তো কম বয়ে গেল না! ভালই চালাতাম। সামনে একটু ঝুকে চালানোর অভ্যাস ছিল। ক্রুইজ করে চালাতাম সুযোগ পেলেই। অসম্ভব ভাল লাগতো! কিন্তু আজ দেখি আমার সেই ভাল লাগার চেয়ে আরো আরও অনেক ভাল-লাগা আছে! আমাদের সময় তো এ রকম ছিল না যে পেছনে কোন পরী-সুন্দরী বসে থাকবে আর আমি অবলীলা আর অসংকোচে হাওয়ায় উড়ে যাবো! সেই জীবন যদি এই জীবন হতো! আমি আমার পরীকে বলতাম 'ছেড়ো না সখি, জড়িয়েই থাকো...আর কানে কানে বলো তোমার ভালবাসার কথা'। আমি কোন অবস্থাতেই এই হেলমেট্‌ পড়ে রোবট হয়ে যেতাম না। প্রয়োজনে প্রতিবার জরিমানা দিয়ে আমার প্রেমিকার উষ্ণতা নিতাম, তার নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতাম। মনে আছে সেই 'শপ্তপদী' ছবিতে উত্তম-সূচিত্রার 'এই পথ যদি না শেষ হয় তবে কেমন হতো বলো তো!' যেন উড়ে চলেছে ভালবাসার মুক্ত বিহঙ্গ!

আজকাল অফিসে যেতে যেতে এক অপ্সরাকে দেখি (আমি তাকে অপ্সরাই বলছি আমার মত করে অথবা আমার আপন ভাবনার 'পরী') যুগলবন্দি হয়ে তার 'বাইকওয়ালা'র সঙ্গে যেতে। কেন জানি না, প্রায়ই দেখা হয় বলেই কিনা, বলতে ইচ্ছে করে 'সুরণ্জনা, তুমি যেও না কো ঐ যুবকের সাথে, বলো না কো কথা'!

ইচ্ছে করে এখন একটা মোটর বাইক কিনি। কিন্তু সময়কে তো আর কিন্‌তে পারবো না! আশা করি বাইকওয়ালারা আমার এই অনধিকার হৃদয় পোড়ার অপরাধ ক্ষমা করবেন।

মোটর বাইকওয়ালাদের জন্য শুভ কামনা!

মন্তব্য ০ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.