নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

বেনিআসহকলা

সবাইকে শুভেচ্ছা।

শফিক আলম

মানুষকে বিশ্বাস করতে চাই এবং বিশ্বাস রেখেই কাজ করতে চাই।বাস্তবের ভিতরে বসবাস করতে ভালবাসি। কল্পনা করতে ভাল লাগে, কিন্তু বাস্তবকে ভুলে নয়। সততা বলতে আংশিক বুঝি না, পুরোটাই বুঝতে চাই। প্রকৃতির মাঝে শান্তি এবং স্বস্তি দু\\\'টোই খুজে পাই। নারীর প্রতি আকর্ষন আছে তবে উন্মাদনা নেই। বয়সকে অনেক ক্ষেত্রেই বাধা মনে করি না। লিখতে ভালবাসি, কবিতা-গল্প, যা কিছু। চারটে বই প্রকাশ করেছি নিজ উদ্যোগে। প্রতিভা নেই, শখ আছে। অনেক কিছুই করতে ইচ্ছে করে, পারি না কেন বুঝি না।

শফিক আলম › বিস্তারিত পোস্টঃ

সেই বিষণ্ণ তরুনীর হাসি...

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১২:৫৭

আজ (২১/১২/২০১৪) সকালে আমাকে ডায়াগনোস্টিক সেন্টারে যেতে হয়েছে ধানমন্ডিতে। সেন্টারের নাম উল্লেখ করলাম না। এখানে সেটা গৌণ ব্যাপার। যেতে হয়েছে আমার গলব্লাডারে পাথর-টাথর হয়েছে কি না তা আলট্রাসনগ্রাম করে চেক্‌ করানো। আমার মোটেই ইচ্ছে ছিল না এই সব চেক করানোর। হোম মিনিস্ট্রির অনেক দিনের ক্রমাগত যন্ত্রনায় শেষে যেতেই হলো। শরীরের ভিতর পিত্ত-পাথর, বৃক্ক-পাথর কত কিছু হয় কিন্তু হৃদয়টা কেন পাথর হয়ে যায় না বুঝি না। কিছু কিছু ক্ষেত্রে পাথর-হৃদয় নিয়ে বেঁচে থাকা খুব সহজ হয়ে যায়। প্রেম-ভালবাসা, স্নেহ-মমতা কিছুই ছুঁয়ে যাবে না হৃদয়টাকে। হৃদয়ের ভিতরে ঢুকে কোন কিছুই বিগলিত হবে না। পাথরে আঘাত পেয়ে সব আশ-পাশ দিয়ে বেরিয়ে যাবে। নির্ঝঞ্ঝাট বেঁচে থাকা।



যাই হোক, সিরিয়ালে নাম লিখিয়ে যথারীতি বসে আছি। জিজ্ঞেস করে জানতে পারলাম আমার আগে আরো ৬ জন আছে পাথর খোঁজার দলে। অর্থাৎ আধা-ঘন্টা কমসে কম। এই ফ্লোরটাতে আলট্রাসনো ছাড়াও এক্স-রেও করা হয় উল্টো দিকে।

আমি অপেক্ষারত। অফিসে যাওয়ার পথে একটু সকালে সকালে গিয়েছি বলেই হয়তো ভিড় একটু কম। কিন্তু সময় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর সংখ্যা বাড়তে লাগলো। আমার সামনে তিন-চারটে সারির পাশেই দেখলাম হুইল চেয়ারে বসা এক তরুনী। কখন এসে বসেছে লক্ষ্য করিনি। একটু আগেও জায়গাটা ফাঁকা ছিল। দেখি আমার দিকেই তাকিয়ে আছে। চোখাচোখি হতেই মুখ ফিরিয়ে নিল। আমি দেখলাম সুন্দর কিন্তু বিষন্ন এক মুখচ্ছবি। তার পাশে ওয়েটিং চেয়ারে বসা এক ভদ্রলোক আর ভদ্রমহিলা। মাঝে মাঝে তাদের সঙ্গে মুখ ঘুরিয়ে কথা বলছে। মনে হচ্ছিল তার বাবা-মা অথবা আত্মীয় কেউ। আমার কিছু করার নেই, স্বভাবতঃই রোগীদের আনাগোনা দেখতে হচ্ছে। আর ঘুরে ফিরে সেই তরুনীর দিকে চোখ যাচ্ছে। একবার আমার চোখ আটকে গেল। সে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টে আমারই দিকে, আমি চোখ ফেরাতে পারলাম না। তাকিয়ে আছি। কি মায়াভরা চোখ। কি গভীর সে দৃষ্টি! যেন কি একটা খুঁজে পেয়েছে! কি আশ্চর্য, আমাকেই চোখ ফিরিয়ে নিতে হলো!



আমার কেন যেন মনে হয় মানুষ কখনো কখনো খুব অসহায় হয়ে পড়ে, যে কোন কারনেই হোক। সে তখন কোন এক আশ্রয় খুঁজে ফিরে। এই আশ্রয় জীবনের জন্য নয়। যেন কোন এক শুন্যতা, কোন এক অপূর্ণতা। কিছু কিছু অসুখ আছে যা কিনা অংশী খুঁজে ফিরে ভাগ করে নির্ভার হওয়ার জন্য। জীবনটা আসলেই এমন নয় যে মাত্র কয়েকটি গৎবাঁধা নিয়মের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে ফুরিয়ে যায়। অনেকগুলো মুহূর্ত, অনেক অনেক খন্ড খন্ড সুখ, হাসি-কান্না, চাওয়া-পাওয়া, প্রেম-ভালবাসা, চাওয়ার রঙ, পাওয়ার রঙ, নির্বিরোধ আকাংখা...নিজের মত করে জীবনের স্কেচটাকে আঁকিয়ে নেওয়া। এই আঁকিয়ে নেয়ার মাঝেই রয়ে যায় যত রঙের অপূর্ণতা, মিল-অমিলের গল্প কাহিনী। এতকিছুর মাঝে কোন না কোন অপূর্ণতা মানুষকে অসহায় করে তুলে। আর তাই বুঝি তার দু’চোখ অনন্তর খুঁজে ফিরে তেমন কাউকে, যাকে দেখে হঠাৎ চোখ থম্‌কে যায়। সেই তরুনীটিও তেমন কিছু খুঁজছিল কি না আমি জানি না। অনেকবারই আমাদের চোখাচোখি হয়েছে। তার চোখের দৃষ্টি আমি ভুলতে পারি না। আমি জানি না তার কি অসুখ! সে হুইল চেয়ারে বসে আছে, তার মানে যে কোন কারনেই হোক সে হাঁটতে পারছে না। হয়তো এমন কোন অসুস্থতা যা তাকে স্বাভাবিক জীবন থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে।



আমার ডাক পড়লো ভিতরে যাবার। টেস্ট শেষ করে ফিরে এসে রিপোর্টের জন্য আবার অপেক্ষা। আবারও সেই ফিরে ফিরে দেখা। কিছুক্ষন পর রিপোর্ট পেলাম। আমার কাজ শেষ, এবার চলে যাবার পালা। উঠে দাঁড়ালাম। একটু এগিয়ে আমাকে ডানে যেতে হবে মেয়েটিকে পাশ কাটিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার দরজার দিকে। আমি ডানে ঘুরেও থেমে গেলাম। কেন যেন মনে হলো, মেয়েটির সঙ্গে এতক্ষন অনেক কথা হয়ে গেছে আমার। এবার বিদায়ের পালা। আমি ফিরে গিয়ে তরুনীর একেবারে সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। কোন ভুমিকা না টেনে সরাসরি বললাম (একজন অসুস্থ্য মানুষের সামনে ভুমিকা টানার কিছু নেই। বলা যায় না ‘কেমন আছেন’), ‘আপনি এত বিমর্ষ হয়ে আছেন কেন!’ মেয়েটি এতক্ষন মুখ নিচু করে ছিল, আমার কথা শুনে একেবারেই অপ্রস্তুত হয়ে মুখ তুলে তাকালো। হয়তো আশাই করেনি আমি ওর সামনে এসে দাঁড়াবো। এখন খুব কাছে থেকে মেয়েটিকে দেখলাম। সুন্দর মুখখানি। একেবারেই অকৃত্রিম। অগোছালো চুল পিছনে বেঁধে রেখেছে। একগোছা চুল ফাঁকি দিয়ে কপাল বেয়ে ঝুলে আছে। মেয়েদের কপালের উপর বেয়ে পড়া আলগা চুল সবসময়ই ওদের সৌন্দর্যকে বাড়িয়ে দেয়। তরুণীর বয়স কত হবে! ২৪/২৫ হয়তো। পড়াশোনা করছে বলেই মনে হয়। বিবাহিতও হতে পারে, কে জানে!

আমি বলে চললাম, ‘আপনার কি অসুখ আমি জানি না। কিন্তু আমি অনেক্ষন ধরে আপনাকে লক্ষ্য করছিলাম আপনি বিষণ্ণ এবং বিরক্ত। অসুস্থ্যতা নিয়েই মানুষকে বেঁচে থাকতে হয়। আমরা বলতে গেলে সবাই অসুস্থ্য। কিন্তু নিজেই যুদ্ধ করে অসুখটাকে অর্ধেক কমিয়ে ফেলা যায়। হতাশ হবেন না। আপনি ভাল হয়ে যাবেন। অনেক্ষন আপনাকে দেখেছি, কিন্তু একবারও আপনার মুখে হাসির লেশমাত্র দেখিনি। মাঝে মাঝে হাসতে হয়। হাসলে কষ্ট অনেকটা কমে যায়।‘ এতক্ষন সে আমার দিকে নির্বাক তাকিয়েই ছিল। এটুকু শুনে সে একটু মুচকি হাসি হাসলো। বিষণ্ণতার মাঝেও একটু হাসি। মনে হলো যেন এইটুকু হাসির জন্য সে এতদিন অপেক্ষা করছিল। কেউ যেন বলে নি তাকে একটু হাসতে।



আমি বললাম, ‘এই তো! ভাল থাকবেন’। বলেই আমি চলে এসেছি। অপেক্ষা করিনি তার থেকে কিছু শোনার। আমি জানি না মেয়েটি আমার চলে আসার দিকে তাকিয়ে ছিল কিনা। সে হয়তো কল্পনাও করেনি আমি এভাবে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়াবো আর দুটো কথা বলবো। আমি সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে ভাবছিলাম আমার সকালটাও কেমন যেন হঠাৎ সুন্দর হয়ে উঠলো। এই ভেবে যে এক অসুস্থ্য মানুষকে দুটো ভাল কথা বলে মুখে হাসি ফোটাতে পেরেছি। বুঝতে পারলাম হৃদয়টা পাথর হয়ে যায় নি এখনো। নইলে কি প্রয়োজন ছিল যেচে কথা বলার! আমি নিশ্চিত তরুণীটি আমার কথা অন্ততঃ দু’দিন মনে রাখবে। আর আমার কথাগুলোর জন্য যদি সে সুস্থ্য হওয়ার সাহস খুঁজে পায়, তাহলে আমিই সবচেয়ে খুশি হবো। যদিও জানতে পারবো না কখনই।



সিড়িকোঠার নিচেই দেখলাম ছোট্ট এক ফাস্ট ফুডের দোকান। কিছু খেতে হবে, শুন্য পাকস্থলীতে আসতে হয়েছিল। স্যান্ডউইচ শেষ করে চা চাইলাম। দোকানী বললো, স্যার চা হবে না, কফি হবে। আবার সেই কফি! My dream coffee with my dream lady…..! কফির রঙ কেন যেন আমার কাছে পাথরের মতই মনে হলো। এবার আমার হৃদয় পাথর করে দাও প্রভু!

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:০৫

আজীব ০০৭ বলেছেন: ++

২| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:১৭

আলম দীপ্র বলেছেন: আপনার লেখা পড়তে বেশ লেগেছে ! ঘটনা সত্য ?

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৬

শফিক আলম বলেছেন: একেবারেই সত্য।

৩| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২১

ডরোথী সুমী বলেছেন: শারীরিক সুস্থতার চেয়ে মানসিক সুস্থতা জরুরী।আর এটাই আমাদের সত্যিকার সুস্থ থাকার নিশ্চয়তা দেয়। ভাল লেগেছে।

৪| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৭

মামুন ইসলাম বলেছেন: অবশেষে কি মনে মনে প্রেম :P

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৭

শফিক আলম বলেছেন: জ্বি না মশাই।

৫| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৩৪

ইমতিয়াজ ১৩ বলেছেন: হুম, বুঝলাম। +++

৬| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:৪৬

নতুন বলেছেন: ভাল কাজ করেছেন... :)

৭| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৩৭

আজিজার বলেছেন: গণ্পটা আরো বড় দরকার িছল

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৬

শফিক আলম বলেছেন: এটা গল্প নয়। যা ঘটেছে তাই লিখেছি। হয়তো বলতে পারেন আমাদের প্রতিদিনের গল্পের একটি টুকরো মাত্র।

৮| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ২:৫৭

 বলেছেন: ভালো লিখেছেন +

অনেক ধন্যবাদ।। :D

৯| ২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:৫৪

সুমন কর বলেছেন: আপনার হোম মিনিস্ট্রি এ কথা জানে তো !! :( :(

লেখা ভাল লাগল।

২২ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১০:২২

শফিক আলম বলেছেন: ঘটনাটা হোম মিনিস্ট্রিকে আগে জানিয়েছি। :)

১০| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ রাত ১:৪০

তিথীডোর বলেছেন: হৃদয় ছুঁয়ে গেলো!

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ৯:০৮

শফিক আলম বলেছেন: ভাল থাকবেন।

১১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:২৮

কলমের কালি শেষ বলেছেন: কথায় চমৎকার আবেদন ।

১২| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ সকাল ১০:৩৯

আহমেদ আলিফ বলেছেন:
আপনি মানুষ ভালো! +++

২৪ শে ডিসেম্বর, ২০১৪ দুপুর ১:২৯

শফিক আলম বলেছেন: পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষই ভাল, নিজেকে প্রকাশ করা অথবা ভাল কিছু নিয়ে এগিয়ে আসাটাই বড় ব্যাপার। ভাল থাকবেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.