নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোলা জীবন, খোলা বই, খোলা পাতা

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.

শাফ্‌ক্বাত

একজন মা এই ব্লগের কোন ছবি, লেখা বা মন্তব্য (সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে) লেখকের পূর্ব-অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবেনা। ধন্যবাদ।

শাফ্‌ক্বাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই তো চলে যায় দিন-৩

২৪ শে মে, ২০১৩ রাত ৯:১৭

হাসি।



কোনও অসাধ্য-সাধন? নাকি মহাপাপ? নাকি অনেক দামী, তাই গোপন লকারে তুলে রাখা? আপনার হাসি কি সীমাবদ্ধ হয়ে গিয়েছে ইংরেজি আর-ও-এফ-এল, এল-ও-এল, কিংবা কিছু ইমোটিকনের মধ্যে?



আজকে সারাদিন হেসেছেন কয়বার, বলেন তো? কেউ হাসির গল্প আগ্রহ করে শোনালে সেটা মন দিয়ে শুনেছেন আদৌ? নাকি গম্ভীর হয়ে বলেছেন “এইই তোমার হাসির গল্প? হুদাই টাইম ওয়েইস্ট!” আচ্ছা, মীরাক্কেল বা ঐধরণের অনুষ্ঠান কি আপনি হাসার জন্যে দেখেন নাকি বিরক্ত হয়ে ক্রিটিসাইজ করার উদ্দেশ্যে দেখেন?



আমরা দুইবোন ছোটবেলায় খুব কাড়াকাড়ি করে কিছু কৌতুকের বই পড়তাম। আব্বু ঢাকা থেকে আসার সময়ে কিনে নিয়ে আসতো, তারমধ্যে কিছু কিছু কৌতুক বারবার পড়ে পড়ে বারবার পেটে খিল দিতাম।



আমার হাসির রোগ ছিলো। জানিনা কেন, কথায় কথায় হাসতাম (এখনও হাসি, তবে আগের চেয়ে অনেক কম)। অনেক বন্ধুর ভীড়ে, স্কুলে, কারণে অকারণে বহুবার হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেয়েছি ছোটবেলায়। একবার, দেরী করে স্কুলে যাওয়াতে এসেম্বলীর সামনে আমাকে দাঁড় করিয়ে রাখা হলো আরও কিছু লেইট-লতিফার সাথে। ব্যাপারটা আসলে বেশ অপমানজনকই হওয়ার কথা। সারি ধরে বাকি স্টুডেন্টরা যার যার ক্লাসে ফেরত গেলো, আমরা দাঁড়িয়ে আছি, ক্লাসে যাবো সবার শেষে। একটু পরপর হাসি পাচ্ছিল আর হাসি চেপে রাখতে গিয়ে আমি কেঁপে কেঁপে উঠছিলাম। সুজাতা টিচার সেটা খেয়াল করে হঠাৎ আমার কান-ধরে আমাকে অন্যদের কাছ থেকে আলাদা করলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন আমি হাসছিলাম কেন? আমি পড়ে গেলাম বিপদে! আমি এর আগে কোনওদিন এসেম্বলীর সামনে শাস্তি পাইনি, ব্যাপারটা আমার জন্যে আনকোরা বলেই হয়তো আমার হাসি পেয়ে যাচ্ছিল। সেটা টিচারকে কিভাবে বলি? উনি কটমট করে জিজ্ঞেস করেই যাচ্ছেন “কেন হাসছো তুমি? বলো, এক্ষুণি বলো!!” যন্ত্রণার কথা, আমি ওনাকে কিছুই বলতে পারছিলাম না! ভট্টাচার্যি স্যার মেইল-টিচার্স রুম থেকে বের হয়ে দেখলেন, “ছেড়ে দিন এবার, ও আর হাসবেনা। কি রে, আর হাসবি??” আমার কী যে হলো, আমি আবার ফিক করে হেসে দিলাম। হায় রে সুজাতা টিচারের আস্ফালন দেখে কে তখন? “এই মেয়ে তো মহা বেয়াদব! অমুক/তমুক-এর বোন কি করে এত বেয়াদব হয়?” [এই বেলা বলে রাখি, আমার স্কুলজীবনের যত যন্ত্রণার উৎস আমার বড়বোনদের ন্যাক্কারজনক ভালো রেজাল্ট এবং অতিশয় ভদ্র ব্যবহার, যার কারণে আমার উড়াধুরা আচরণ মেনে নিতে কিছু কিছু টিচারের বরাবরই বদহজম হতো]।

সেদিন অনেক বকাঝকার পর ছাড়া পেয়েছিলাম। ক্লাসে দেরীতে ঢুকার কারণে রেবা টিচারের কাছ থেকে আরেকদফা ঝাড়িও খেয়েছিলাম। কিন্তু এমন বেহায়া আমি, আজও সেই রুদ্রমূর্তির সুজাতা টিচার মনে পড়লে হাসিই পায়।



যখন থেকে রাস্তায় একা বের হওয়া শুরু করলাম, বোধ করি তখনই কেউ আমাকে বলে দিয়েছিলো “অচেনা লোকের সাথে কথা বলবেনা, ওদের দেওয়া খাবার খাবেনা।” যত্রতত্র মুখে লেগে থাকা হাসিটাও মনে হয় তখন থেকেই আস্তে আস্তে নিভে যাওয়া শুরু হলো। একটা পরিণত বয়সে কোনও এক মহামানব আমাকে একবার বাণী দিয়েছিলেন, আমি বেশি হাসি বলেই নাকি ছেলেরা মনে করে আমি তাদের প্রেমে পড়েছি, কিংবা তাদেরকে আমার প্রেমে পড়ার জন্যে খুব উৎসাহ দিচ্ছি। এই উপদ্রব থেকে নিজেকে মুক্ত করতে হলে সর্বপ্রথমে যার-তার সাথে হেসে-কথা বলাটা আমার বন্ধ করা দরকার। সেই আমলে সেই মহান ব্যক্তিত্বের কথা অক্ষরে অক্ষরে মানিয়া চলিতাম। কাজে কাজে খুবই সতর্কতার সাথে চেহারা থেকে হাসির আচ্ছাদন টান মেরে খুলে ফেল্লাম।



আজকাল বাসা থেকে বের হলে লিফটে পরিচিত কিছু মুখের সাথে প্রায় প্রতিদিনই দেখা হয়। ওদের চিনি, তবু যেন না-পারতে কিছু “কেমন আছেন” টাইপের কথা বলি, যেন অতটুকু বলতে না-পারলে বেঁচেই যাই। লিফটে বেশিলোক থাকলে আমি ঘাড় নামিয়ে ফোন টিপাটিপি করি। [ভাগ্যিস ফোনের ভেতরে আজকাল টিপাটিপি করার মত অনেক কিছু আছে!]



ব্যতিক্রম হলো বেশ কিছু আমেরিকান প্রতিবেশী। এরা আমাদেরকে চিনুক, না চিনুক, দন্তবিকশিত একটা হাসি দেবেই। আমি যদি পাল্টা হাসি, তাহলে কিছু না কিছু বলবেই। হয় আবহাওয়ার কথা বলবে, নাহয় আমার মেয়েদের কথা কিছু বলবে, নাহয় আমার পোশাকটা কত সুন্দর সেটা নিয়ে কিছু বলবে! তাদের আগেই আমাকে নেমে যেতে হয়, তারা লিফটের দরজা থেকে উঁকি মেরে এমনভাবে বাইই বলবে, যে প্রত্যুত্তরে আমাকেও হেসে কিছু না কিছু বলতে হয়। এই আমেরিকানগুলোকে আমার মেয়েদের খুব পছন্দ। সচরাচর ওরাও লিফটে উঠলে আমার মতই চুপচাপ থাকে। কিন্তু এদেরকে দেখলেই মেয়ে দুটো হড়বড় করে রাজ্যের আলাপ জুড়ে দেয়। ওদের স্কুলের টিচারগুলাকেও মাঝে মাঝে রাস্তাঘাটে দেখি, আমাদের এই প্রতিবেশীগুলার মতই ওরা চারিপাশে হাসি-সম্ভাষণ বিলিয়েই যায়। এই হাসিমুখ আমার কিন্তু, বেশ ভালোই লাগে! সেটাই একদিন আরেকজন প্রতিবেশীকে বলাতে উনি বল্লেন “শুনেন আপা, এই আমেরিকান দের কথা বইলেন না। আপনার ভাই তো এদের সাথে কাজ করে, ও বলে এদের মুখের হাসিটাই শুধু ভালো, ভিতরে ভিতরে এরা মহা শয়তান একেকটা।” আমিও ঘাড় কাত করে বলি “তাই নাকি? ইস্‌ দেখে তো বুঝাই যায়না!”



জানিনা আমার নিজের মনের ভিতরে কী আছে। ভিতরে ভিতরে আমিও কি কম শয়তান? অবাক লাগে, কেন আমি চাইলেও হাসতে পারিনা আগের মত? চারপাশে তাকিয়ে দেখি, কই কেউ তো হাসেনা? ফোনে কথা বলি খুব কম, আজকাল। সামনাসামনি কারও সাথে কথা বলার টপিক খুঁজে পাইনা। হাসিঠাট্টা করা তো দূরের কথা! বাচ্চাকাচ্চা ছাড়া, বয়স্কদের সাথে সময় কাটানোটা বড় বেশি টায়ারিং মনে হয়। এই বাচ্চাগুলাই যা একটু কারণে অকারণে হাসে। জানিনা বড় হতে হতে ওরাও হাসতে ভুলে যাবে কি না।



কী ক্ষতি হয় একটু হাসলে? হাসিটা কেমন যেন প্রফেশনাল দরকার ছাড়া দেওয়া হয়না। অফিস আদালতে কাউকে মীট এন্ড গ্রীট করার সময়ে দিব্বি চোখমুখ ঝলকায়ে হাসি। অথচ একই লোকের সাথে দোকান পাটে রাস্তাঘাটে দেখা হলে সেই হাসিটা কেমন একটা ভদ্রতার পর্যায়ে চলে যায়। হাসি যেন একটা ভদ্রতার লেবেল। হাসিতে কারো উচ্ছ্বাস নেই, আন্তরিকতা নেই। এত সুখী দেশের মানুষ আমরা, চারপাশে কাউকে হাসতেই দেখি না!!

মন্তব্য ১২ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১২) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:১৪

কালোপরী বলেছেন: :)

২৪ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:২৭

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: এটা কোনও হাসি হলো??

২| ২৪ শে মে, ২০১৩ রাত ১০:৩১

সানফ্লাওয়ার বলেছেন: সহমত। আপনার লেখাটা পড়ে বুঝতে পারলাম, সত্যি এখন হাসতে ভুলে গেছি। আজ সারাদিনে একবার ও হাসিনি :(

২৪ শে মে, ২০১৩ রাত ১১:২৮

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: জাতি হিসেবেই আমরা কেমন খিটখিটে বিষন্ন সন্দেহবাতিক কুনো হয়ে যাচ্ছি নাকি সেটাই ভয় হয়!!

৩| ২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:০৪

হাসান মাহবুব বলেছেন: আমি কোথায় যেন পড়েছিলাম একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে গড়ে ১৫ বার হাসে। আমার মাঝে মাঝে এমনও দিন যায় যেদিন একবারও হাসি না :|

২৫ শে মে, ২০১৩ সকাল ১১:৫৭

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: ব্যাপারটা আসলেই খুব অদ্ভূত!! আমার ছোটবেলার অনেক স্মৃতিজুড়ে আছে আমার মামা-খালাদের একসাথে বসে হাহা-হিহি করে আড্ডা মারা। আমাদের চারভাইবোন চার জায়গায় থাকি, একসাথে বসে আড্ডা মারাটা খুবই রেয়ার। শেষ যেবার একসাথে ঈদ করলাম, একে-ওকে খোঁচাখুঁচি করে অনেক হেসেছিলাম।
তবু, প্রতিদিনের জীবনে হাসিটা উধাও হয়ে গিয়েছে। আমরা মজা করতে ভুলে গিয়েছি, শেয়ার করিনা, নিজেদের জগতে এতই নিমগ্ন থাকি যে একা একাই হাসি একা একাইই কাঁদি।

৪| ২৫ শে মে, ২০১৩ সকাল ১০:১৪

মোঃ সাইফুল ইসলাম সজীব বলেছেন: আমার এক কলিগের নাম শাফক্বাত। এই নামটা কোনো মেয়ের হতে পারে প্রথম চিন্তায় আসেনি।

ছোটবেলায় খুব একটা হাসতাম না। কি জানি কেন? এরপর ডেল কার্নেগীর বই পড়ে হাসাহাসির প্রাকটিস করছি। এরপর যে কি থেকে কি হলো এখন হাসির অনুষ্ঠান ও দেখতে মনে চায় না।

ভালো থাকবেন আপু। হাসি মনের ঔষধ।

২৫ শে মে, ২০১৩ দুপুর ১২:০০

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: ইউনিভার্সিটিতে আমার দুই সহপাঠী আর চাকরি জীবনে দুই কলিগ ছিলো শাফ্‌ক্বাত। ওরা সবাই ছিলো ছেলে। নিজস্ব পরিচিতি না-হওয়া পর্যন্ত ফোনে প্রায়ই শুনতে হতো "ভাবী, শাফক্বাত ভাই কি বাসায় আছেন?" পরে নিজের পরিচয় দেওয়ার পর তারা বিব্রতবোধ করতো।
আচ্ছা কেন হাসিতে আমাদের এত অনীহা বলুন তো?
এটা বেশ ভাবাচ্ছে!!

৫| ২৫ শে মে, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০৬

বড় বিলাই বলেছেন: এই হাসিরোগ আমারও আছে, কি যে একটা সমস্যা!

২৭ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:২৯

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: এই সমস্যা তো ভালো সমস্যা!!

৬| ২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ৮:৫০

মুনসী১৬১২ বলেছেন: মৃত্যুপুরীতে দাঁড়িয়েও হেসে ওঠে আমার পাললিক মন

সবাই বড় বেশি কর্পোরেট হয়ে যাচ্ছে

২৭ শে মে, ২০১৩ রাত ১২:২৯

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: ভালো বলেছেন। সব শালা কর্পোরেট!!
:D

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.