নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

খোলা জীবন, খোলা বই, খোলা পাতা

I am what I am and that's how I would be. No I am not stubborn. I just want to be myself.

শাফ্‌ক্বাত

একজন মা এই ব্লগের কোন ছবি, লেখা বা মন্তব্য (সম্পূর্ণ অথবা আংশিকভাবে) লেখকের পূর্ব-অনুমতি ছাড়া অন্য কোথাও প্রকাশ করা যাবেনা। ধন্যবাদ।

শাফ্‌ক্বাত › বিস্তারিত পোস্টঃ

এই দু্ঃসহ বেদনা থেকে কি মুক্তি নেই?

২০ শে জুলাই, ২০১৩ ভোর ৪:৩৭

খুব মন খারাপ হলো আমাদের অদ্রিক-বাবার জন্যে আজকে। মন খারাপের সাথে সাথে লজ্জাও হলো। স্কুলে, ওকে ওর বন্ধুরা প্রতিদিন বলে “তোকে আঙ্গুলের ইশারা করে আল্লাহ্‌ পুড়িয়ে মারবে।” ও বেচারা বুঝতে পারেনা, হঠাৎ কী এমন হলো যে ওকে এসব কথা শুনতে হয়। নতুন স্কুলে ক্লাস করার আনন্দে যখন আমাদের বাবা-টার আত্মহারা হওয়ার কথা, তখন তাকে যদি ক্লাসের সহপাঠীদের কাছে এমন শুনতে হয়, এই ২০১৩ সালে এসে, তার দায়িত্ব এদেশের একজন নাগরিক হিসেবে আমি কিভাবে নেবো? প্রতিদিন একই কথা সয়ে সয়ে আজ সে বাসায় এসেই ভেঙ্গে পড়লো, “দিদুন, আমাকে এমন করে বলে কেন ওরা?”



আমরাও অবাক, কেন ওকে অন্য বাচ্চারা এমন বলছে? এর-ওর সাথে কথা বলে গুজবে জানা গেল স্কুলটা শিবির-অধ্যুষিত। এর মানে কী? একটা স্কুলেও শিবিরের কালোছায়া? একটা স্কুলে বাচ্চা ভর্তি করানোর সময়েও তাহলে আমাকে চেক করে নিতে হবে স্কুলটা “শিবির” চালাচ্ছে কিনা? যেখানে কোমলমতি শিশুরা দেহের ও মনের বিকাশের জন্যে সারাটাদিনের বেশিরভাগ সময়ই কাটিয়ে আসে, সেখানেও একটা সন্ত্রাসী সংগঠনের প্রভাব? সেই স্কুলের অন্য বাচ্চারা তবে কোন পরিবার থেকে আসে যে সমবয়সী একজন বন্ধুকে খেলাধুলা কিংবা নির্মল কোনও গল্প করার পরিবর্তে তার ধর্ম নিয়ে কটাক্ষ করবে?? আমাদের অদ্রিক হিন্দু, কি বৌদ্ধ না মুসলমান, তাতে কী যায় আসে এই সাত-আট বছরের বাচ্চাগুলার?



আমার ছোটবেলা কেটেছে পাড়ার একগাদা ছেলে বন্ধুর মাঝখানে। সাতচারা, বোম-ফাইট কিংবা পাহাড়-ডিঙ্গিয়ে লুকোচুরি খেলা কিছুই বাদ দেইনি। কখনও ছেলে-মেয়ে ব্যবধান কিংবা ধর্মীয় তফাৎটা আমাদের মাঝে বড় হয়ে আসেনি। মাঠের ওপাড়ে শ্যামলদা, কানাইদা, দীপাদি...ওদের বাসায় দিব্যি গিয়ে ঘুরে চলে আসতাম। দীপাদি খুব সুন্দর গান গাইতেন, ওনার বাবার কাছে জুয়েল আইচ ম্যাজিক শিখতে আসতো। কলেজে উঠে যাওয়ার পরে এই পাড়াইল্লা দলের কে-কোথায় চলে গেলো, জানিনা আর। সেসময় স্কুলে আমাদের ভূগোল পড়াতেন নারায়ণ স্যার। সায়েন্সের ভট্টাচার্যি স্যার আর চক্রবর্তী স্যার আমার জীবনের দেখা তুখোড় দু’জন শিক্ষক ছিলেন। শান্তি স্যার একটু আলাভোলা ছিলেন, কিন্তু পড়াতেন ভালো। রেবা টিচার, মমতা টিচার, স্বপ্না টিচার, বাবলি টিচার, এডনা টিচার, মার্গারেট টিচার...বলে বলে শেষ করা যাবেনা আমার শিক্ষকদের নাম, যাঁরা কেউই “মুসলমান” ছিলেননা। একটা সেকেন্ডের জন্যেও আমার মাথায় এই চিন্তা আসেনি তো, যে ওনারা আসলে “বিধর্মী”?? আমার অ-আ-ক-খ র হাতে খড়ি হয়েছে গীতাদি আর মুকুলদি’র হাতে। জাতীয় সংগীত শিখেছি নীলিমাদি’র কাছে। ওনাদের “ধর্ম” নিয়ে কেন আমার মাথাব্যাথা হলোনা তবে? আমার পরিবার একটি প্রতিষ্ঠিত মুসলমান পরিবার। কেন আমার বাবা-মা ওনাদের নিয়ে তবে আপত্তি করলেন না? আমাদের সাথে এমন ডিসকাশন করা তো দূরে থাক, আমি নিশ্চিত ওনাদের মাথাতেই আসেনি এধরণের কোনও চিন্তা!



আমাদের ভাইবোনদের অনেক অনেক বন্ধু নন-মুসলিম, কিভাবে আমরা একসাথে হাতে-হাত রেখে জীবনের অর্ধেকটা বছর পার করে ফেল্লাম তবে? আজ কেন, এতবছর পরে, আমাদেরই সন্তান অদ্রিককে স্কুলে গিয়ে তার সহপাঠীদের এমন কথা শুনতে হচ্ছে তার সহপাঠীদের কাছ থেকে? কেন একটা কচিমনের উপর ধর্মীয় মূল্যবোধ কাজ করবে বিভেদের উপায় হিসেবে? কেন আজকে এই ২০১৩ সালে আমার গা-কেঁপে উঠবে এই গুজব শুনে যে একটা স্কুলের বিধাতা হচ্ছে একটি জঙ্গী সংগঠন? যেখানে মুসলমান ধর্মাবলম্বীরা ধর্ম ক্লাস করার সময়ে অন্য ধর্মীয়রা চুপচাপ একা বসে থাকে? তাদের কোনও ধর্ম ক্লাস হয়না??



এই বাংলাদেশে, চট্টগ্রাম নামের একটি আধুনিক শহরের এই বর্বর চিত্রটা কি আপনার মনে ঘেন্নার উদ্রেক করছে না? আপনার কি রাগে, ঘেন্নায় সারা শরীর রি-রি করছেনা? এটা কি মগের মুল্লুক নাকি? এটা কি শিবিরের মুল্লুক নাকি?



আপনি কি বুঝতে পারছেন আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে কেমন অন্ধকারের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে এই সন্ত্রাসী সংগঠন-টি? আপনি কি তারপরেও এর প্রতিবাদ করবেন না? চুপ করে থাকবেন?



জার্মান যাজক Martin Niemöller এর এই লেখাটা পড়ুন। এরপর আয়নার দিকে তাকিয়ে নিজেকে চিনে নিন। আর কত দেরী করবেন? ভাবুন আপনার রুখে দাঁড়ানোর সময়টা কখন হবে??



When the Nazis came for the communists,

I remained silent;

I was not a communist.



When they locked up the social democrats,

I remained silent;

I was not a social democrat.



When they came for the trade unionists,

I did not speak out;

I was not a trade unionist.



When they came for the Jews,

I remained silent;

I wasn't a Jew.



When they came for me,

there was no one left to speak out.



প্রথম প্রকাশ, চার মাস আগে

মন্তব্য ৬ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:৪৪

অপূর্ণ রায়হান বলেছেন: এই ব্যাপারে আগেও কোথায় যেন অনেক বড় একটা লেখা পড়েছিলাম । এই জানোয়ার সংগঠনটার নাকি এরকম অনেক স্কুলের উপরই প্রভাব রয়েছে ।

++++++++++++++

২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫১

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: খুবই বেদনাদায়ক, যে ডল বেঁধে বিশেষ কিছু অভিভাবক বাচ্চাদের এইসব স্কুলে পাঠায়, জেনেশুনেই!!!

২| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ সকাল ৮:৫২

অচিন্ত্য বলেছেন: আমি ক্লাস নাইন-টেন এ একটা ক্যান্টনমেন্টের ইশকুলে পড়তাম। জন্মসূত্র হিন্দু পরিবারে জন্ম। আমাদের স্কুলে হিন্দু ধর্মের ক্লাস হতো না। সেই সময়টা হিন্দু শিক্ষার্থীরা সাধারণত লাইব্রেরিতে কাটাত। আমি ইসলামিয়াত এর ক্লাসে বসে থাকতাম। ভাল লাগত। কিন্তু একদিন ইসলামিয়াতের স্যারের একটা আচরণে খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। প্রসঙ্গক্রমে স্যার আমার এক বন্ধুকে জিজ্ঞেস করেছিলেন সে নিয়মিত নামায পড়ে কিনা। সে বলল সব সময় নিয়ম করে পড়ে না সে। স্যার আমাকে দেখিয়ে বললেন, "তাহলে ওই বিধর্মীর সাথে তোমার পার্থক্য কোথায় ? "

এই কথাটা আমি আজ পর্যন্ত কাউকে বলি নি। আপনার লেখাটা পড়ে বলে ফেললাম।

২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫৩

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: দুর্ভাগ্য আপনার নয় অচিন্ত্য দুর্ভাগ্য আমাদের। দেশে এইধরণের মানুষগুলোর কারণেই একটা জঙ্গী সংগঠন এখনও বহাল তবিয়তে টিকে থাকে?!!

৩| ২০ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:১৯

হাসান মাহবুব বলেছেন: এইভাবে কোমল মনগুলোকে বিষাক্ত করে দিচ্ছে শিবিরের বরাহশাবকেরা। সমাজের সর্বস্তরে ওদেরকে বর্জন করতে হবে।

২১ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ১০:৫৪

শাফ্‌ক্বাত বলেছেন: আমি বর্জন করেছি। সবারই করা দরকার।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.