নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি শাহেদ শাহরিয়ার,একটু আবেগি আর খানিকটা যৌক্তিক।
তনু,একজন ধর্ষণের শিকার হয়েও শান্তিতে কবরে পর্যন্ত ঘুমাতে পারছেনা,অন্যজন মিতু, এসপি সাহেবের সহধর্মীণি।দু'জনেরই মোটামুটি হিজাব পরার অভ্যাস ছিল,হিজাবটা এখানে মূখ্য নয়,মানুষটাই মূখ্য।ওরা হত্যা হবার পর তথাকথিত কিছু লোক কোন একটা ধর্ম নিয়ে টানা হিচড়ার জন্য দু' জন মানুষকে মানুষ হিসাবে নয়,মুসলিম হিজাব পরা নারী হিসাবে দেখাতে চেয়েছে,যাতে নতুন একটা ইস্যু তৈরি করা যায়।
আমি সেদিকটায় না যায়।খুন, হত্যা,ধর্ষণ,গুম এদেশে এখন নৈমত্তিক ব্যাপার,মুসলিম কি হিন্দু,নাস্তিক কি আস্তিক,ঘরে কি বাইরে!খুনিদের এগুলা পরোয়া করার টাইম নাই।কিন্তু যাদের টাইম আছে,এগুলা থামানোর, তারা থামাতে পারে নি,বা ইচ্ছে করেই থামায় নি!প্রথমবারে যদি থামানো যেত তবে দ্বিতীয়বার থামানোর দরকার পরতো না,এমনিতেই থেমে যেত।আমরা শুধু হারানোর তালিকা দীর্ঘ হতেই দেখেছি,আর দেখেছি স্পর্ধা খুনী কিংবা ধর্ষকদের।আগে ওরা ধর্ষণ করত বিলে কিংবা পাটক্ষেতে,এখন করে ক্যান্টনমেন্টে!আগে ওরা খুন করত,নির্জনে,অন্ধকারে; আর এখন দিবালোকে,মানুষের সামনেই,মানুষের ঘরে ঢুকেই!কতটুকু 'ছাড়' ফেলে ওদের সাহস তরতর করে এমন বেড়ে যায়! হুম,তার ছাড় পেয়ে গেছে,যাচ্ছে প্রতিনিয়ত।যাদের দায়িত্ব ওদের ধরার,তারাই কৌশলে এদের ছাড়ছে,হোক টাকার বিনিময়ে,হোক রাজনৈতিক বিবচনায়,নাহয় ক্রসফায়ারে!সব ছাড়াই আমার কাছে সমান,অপরাধতো আর কোন টা দিয়ে দমছে না!
কিছু আছে এমন যারা বলে, 'ক্রসফায়ার!?ঠিকি আছে'। আমি বলব,মানুষ মারার জন্য কৌশলটা মন্দ না,তবে অপরাধ মরবে না।বাংলাদেশে সন্ত্রাস দমানোর যতগুলি কৌশল প্রশাসন রপ্ত করেছে সবচেয়ে নোংরা এবং অন্তঃ সার শূন্য কৌশলটা হল ক্রসফায়ার,এতে সন্ত্রাস বরং বাড়ে বই কমেনা,মধ্যাখানে অসৎ কিছু মানুষের লাভ হয়,জীবনের বিকিকিনি হয়! যদি ক্রসফায়ারের মত উদ্ভট একটা কৌশল সন্ত্রাস নিয়ন্ত্রণে কাজই করত,তবে বাংলাদেশে ক্রসফায়ারের ইতিহাস ঘাটলে বুঝা যায়,কম মানুষ এই নাটকের শিকার হয়নি সে ২০০৪ সাল থেকে।আমি ওদের মানুষই বলব,কারণ যারা ওদের ক্রসফায়ারে দিয়েছে তারা কেউ প্রমাণ করতে পারেনি যে,ওরা অমানুষ ছিল!প্রমাণের আগেই,প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা করা হয়েছে।
তাই,প্রতিদিন যখন ঘুমাতে যাই তখন যেমন মৃত্যুর খবর শুনে ঘুমাই,ভোরে ওঠেও মানুষের মৃত মুখ দেখি,রাজনৈতিক ব্যক্তিরা আশ্বাস দিয়েই যায়,আর পুলিশ বাহিনী তদন্ত করেই যায়।কোনটারই কোন সুরাহা বা শেষ কোনটাই হয় না।যখন শুনলাম মিতুকে কয়েকজন কুপিয়ে মেরেছে,আমি অবাক হয়নি,কারণ যারা মারছে তারা দাঁড়ি- টুপি,হিজাবী-বেহিজাবী,ধুতি পরা না পাঞ্জাবি পরা এসব দেখে মারছে না,ওরা মানুষ মারছে!পত্রিকাই অবশ্য লিখা উঠছে,হিন্দু মারছে,বৌদ্ধ মারছে,কোথাও নেই মানুষ মারছে।যাক,মিতু নামের মানুষটি মারা যাবার পর,আমি মনস্তাত্তিকভাবে কিছুটা স্বস্তিতে ছিলাম!কারণটা নিষ্ঠুরতার না,কারণ আমি ভেবেছি,পুলিশ অন্তত এবার মাঠে কোমর বেঁধে নামবে,আপন হারানোর বেদনা দিয়ে বুঝবে' স্বজন হারার জ্বালাটা কেমন।কিন্তু বিধিবাম,হয়েছে তার ঠিক ওল্টো!
জনগণের নিরাপত্তার স্পৃহা ওদের ভিতর জাগেনি,জেগেছে,প্রতিশোধ স্পৃহা!
তাই,ঘোষণা দিয়েই শুরু হয়েছে সওদা,ক্রসফায়ার!ইতিমধ্যে,দশ জনের মত গেছে,কাল গেল ফয়জুল্লাহ।আমরা সুরাহা পাইনি,আর পাইনি ভবিষ্যত নিরাপত্তার কোন সুবাতাস,জানতে পারিনি,কারা, কেন এত্তসব জান নিয়ে খেলছে!
আমি সংশয়ে ভুগিঃ ঐ যে এন্থনি মাসকারেনহাস সাহেব 'Legacy Of Blood' বইটাতে যে ভবিষ্যত বাংলাদেশের কথা বলেছেন,সেটা না আবার বাংলার প্রতিটা মানুষের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ঢুকে যায়' রক্ত নিয়ে খেলার নেশা'।একটা রক্তের দাবী আরেকটা রক্ত দিয়ে শোধের ইতিহাস এ জাতি বারংবার লিখতে হয়!
©somewhere in net ltd.