নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদনান শাহরিয়ার

রোদ্দুর অনুভব… হেঁটে হেঁটে ছুঁয়ে যাবে তোমার কলরব… পলকতলে জমা মেঘদল… খাঁচা ভেঙ্গে একদিন ঠিক এনে দিবো নোনাজল…

আদনান শাহ্‌িরয়ার

বেঁচে থাকার চেষ্টায় ব্যস্ত আছি.......

আদনান শাহ্‌িরয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

ভালবাসার একটি ক্ষুদ্র গল্প

০১ লা আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:১১

আচ্ছা আপনারা কি বলতে পারবেন, কেনও প্রয়োজনের সময় দরকারি জিনিসটি পাওয়া যায়না?? প্রকৃতি নাকি রহস্যময়টা পছন্দ করে । মানুষের সামনে প্রশ্ন তৈরি করাটা নিশ্চয়ই তার প্রিয় একটা খেলা , কিন্তু এই মুহূর্তে আমি সে খেলাতে কোনও মজা খুঁজে পাচ্ছি না । কারন আর এক ঘণ্টা পর আমার একটা ইন্টারভিউ আছে, চাকরির ইন্টারভিউ, কিন্তু রাস্তায় কোনও রিক্সাই নেই । বাসা থেকে বের হওয়ার সময় যখন বাম পা টা আগে পরল তখনই মনে হয়েছে, কোনও গড়বড় হবে । মনে মনে প্রার্থনা করলাম, স্রষ্টা, তুমি কি জানো না আমাদের মতো চাল ডালের হিসেব কষে দিন পার করে দেওয়া মধ্যবিত্তদের জন্য একটা চাকরি কত প্রয়োজন? তুমি কি জানো না, একটা চাকুরি যোগাড় করার ব্যর্থতা মানে মা এর হিসেবের খাতায় আরও কিছু জোরপূর্বক কাটাকাটি, বাবার চিন্তিত মুখ? এখন কি এসব খেলা না খেললেই নয়?? আমি মোবাইল বের করে দেখলাম, ৯.৩৩ ! মোবাইলের স্ক্রিনে সম্পার ছবিটা দেখে মনটা আরেকটু ছোট হলো । গতকাল ও হাসতে হাসতে হঠাৎ আমার হাতটা ধরলো । এমনিতে আমার হাত ও ধরে না তাই অবাক হয়ে ওর দিকে তাকালাম । ও মাথা নিচু করে জিজ্ঞেস করলো, তোমার কবে একটা ভালো চাকরি হবে?? বাসায় চাপ অসহ্য হয়ে উঠেছে । আমার বুকটা কেঁপে গেছে । তবুও মুখে জোর করে হাসি টেনে বলেছি, হবে হবে কে বলতে পারে কালই হবে । ও শুনে হেসেছে , বিশ্বাস করেনি নিশ্চয়ই । না করারই কথা । এমন কত কথাই তো স্রেফ কথার কথা হয়ে থাকে । তবুও আজকের ইন্টারভিউ এর উপর বড় আশা করে কথাটা বলেছিলাম । আবারও সময় দেখলাম, ৯.৩৬ । বুকের ভিতরে হাতুড়ির বাড়ি পড়ছে । এমনভাবে হাতুড়ির বাড়ি পরে যেদিন সম্পাকে বরপক্ষ দেখতে আসে । আমি জানি সম্পাকে দেখে যে কেউই পছন্দ করবে, তারা করেও । এরপরে সম্পা কোনও এক কান্ড করে,ছেলেরা আর কথা আগায় না । কি করে সেটা অবশ্য সম্পা আমাকে বলে না । জিজ্ঞেস করলে শুধু হাসে । ছেলেরা না বলার পর ওদের বাসায় বিরাট গণ্ডগোল হয় আমি জানি । ও সেটার কথাও আমাকে বলে না । আমি অবশ্য জানতেও চাইনা, ভয় করে আমার । তাই নির্লজ্জর মতো বলি, এইতো আর কিছুদিন তারপর সব ঠিক হয়ে যাবে । বলি বটে কিন্তু বোধহয় নিজেও বিশ্বাস করি না । এইসব ভাবতে ভাবতে আনমনা হয়ে গেছিলাম তাই হঠাৎ পিছন থেকে ডাক শুনে চমকে উঠলাম, ভাইজান কই যাবেন?? প্রচণ্ড আগ্রহ নিয়ে আমি পিছনে তাকালাম এবং প্রচণ্ড হতাশ হলাম । যে রিকশাওয়ালা দাঁড়িয়ে আছে তাঁর বয়স হবে ৬০ বছরের উপর, হাড় জিরজিরে শরীর, চোখে সুতা দিয়ে লাগানো মোটা একটা চশমা । এ লোক রিক্সা টেনে নিয়ে যেতে পারে কিনা তাতেই আমার সন্দেহ হলো ! এমন প্রয়োজনের মুহূর্তে এমন রিক্সাতে ওঠার কোনও কারন নাই, সুতরাং আমি বললাম, কোথাও যাবো না ।

রিকশাওয়ালা বলল, ভাইজান আমি বুইরা বলে এমন কথা কইতেসেন, কোথায় যাবেন বলেন নিয়া যাই, আপনার উপকার হবে” । আমি বিরক্ত হয়ে বললাম, আমি কারও উপকার নিতে চাচ্ছি না” । বুড়া তাতে নিরুৎসাহিত হলো না । বলতে থাকলো, “সকাল থেকে একটা ভাড়াও পাইনি । বুড়া বলে কেহই উঠবার চায় না । ওঠেন না ভাইজান । একনো কিচু খাই নাই । এক কাপ চা খাবো” । এইসব কথা শুনলে সম্পার মন একেবারে গলে যায় । একবার এমনই এক বুড়ার কথা শুনে উঠে বসলো সে । বুড়া আস্তে চালাবে, বেশিক্ষণ ওর পাশে বসে থাকতে পারবো ভেবে আমিও উঠে পড়লাম । কিন্তু সারাটা রাস্তা সে রিকশাওয়ালার সাথে কথা বলে গেলো । এতো রাগ হয়েছিলো আমার । রিক্সা থেকে নেমেই আমি ওকে বললাম, এতো কি কথা রিকশাওয়ালার সাথে তোমার?? ও অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলল, একটা বুড়াকেও হিংসে হয় তোমার!!! ওর কথা শুনে হেসে ফেললাম আমি । আজকেও হাসি চলে এসেছিলো, সেটা দেখেই আশা নিয়ে এই জীবনযুদ্ধে পরাজিত এই বৃদ্ধ জিজ্ঞেস করলেন, ভাই যাইবেন ?? এইবার আমি মুখ কঠিন করে ফেললাম । যার নিজেরই দয়ার প্রয়োজন, তাঁর অন্যকে দয়া দেখানো সাজেনা । বললাম, না বিদায় হন তো! বৃদ্ধ আহত দৃষ্টি নিয়ে আমার দিকে তাকালো , তারপর কি করুণ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে চলে গেলো সীমাহীন ক্লান্তিমাখা পা নিয়ে ।



আমি আবার সময় দেখলাম ।





২।



“ জব্বর গিত্তু লাগসে গো” !



যে রিকশাওয়ালা এই কথাটি বললো, তার এই গিত্তু নিয়ে যে কোনও মাথা ব্যাথা নেই, সেটা তার ভাবভঙ্গিই বলে দিচ্ছে ! ইচ্ছে হলো লোকটার গালে কষে একটা চড় লাগাই, কিন্তু তাতে যেহেতু কোনও লাভ নেই , সেহেতু নিজের রিক্সাতেই বসে থাকলাম ।



১০.১২ । আর মাত্র ১৮ মিনিট । আমি চারপাশে তাকালাম । নাহ ! এই জ্যাম সহজে খোলার নয় । আজও তাহলে চাকরিটা হাত ফসকাবে ?? বড় আশা ছিলো আজকের ইন্টার্ভিউ নিয়ে । আবার সম্পাকে মনে পড়লো ? ও থাকলে নিশ্চয়ই কোনও বুদ্ধি বের করে ফেলতো ! একবার এমন জামে আটকা পড়লাম আমরা । ও রিক্সা ছেড়ে হাটতে শুরু করলো । দীর্ঘ পথ, ফাঁক গলে বের হতে গেলে লোকে বিরক্তি নিয়ে তাকায় । আমার অস্বস্তি লাগে । ওকে বললাম, কি করছ বলতো লোকে কিভাবে দেখছে আমাদের দেখছ তুমি?? ও বিরক্তি নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে, লোক বিরক্ত হচ্ছে কারন তুমি যা করতে পারছ তারা তা পারছে না, তুমি ওদিকে তাকিও না । পরের মুহূর্তে হেসে বলে, সমস্যা দেখলে সমাধান করতে হয়, পিছিয়ে যেতে হয়না । আহহ! কি চমৎকার একটা মেয়ে । এমন একটা মেয়ে আমার মতো ভীরু, কাপুরুষের সাথে কেনও নিজেকে জড়ালো কে বলবে! আমি একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললাম । ফেলেই চমকে উঠলাম । অবিকল একটু আগে বুড়ো রিকশাওয়ালার মতো পরাজিত, করুণ দীর্ঘশ্বাস! আচ্ছা আমার জীবনও কি ঐভাবেই কাটবে ?? কিছু না পাওয়ার ক্লান্তি নিয়ে?? আচ্ছা খুব কি ক্ষতি হবে যদি আমি রিক্সা ছেড়ে দৌড় দেই ?? হয়তো এখনও পৌঁছে যাওয়ার মতো সময় আছে! জানিনা কি মনে হলো আমার । আমি লাফ দিয়ে রিক্সা থেকে নেমে পড়লাম । রিক্সাওয়ালার কোলে ভাড়াটা ছুড়ে দিয়েই দৌড় দিলাম । সবাই হতচকিত হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । কেউ কেউ গাড়ির জানালা দিয়ে মুখ বের করে দেখার চেষ্টা করছে ঘটনা কি! কেউ কেউ হাসছে ! মাঝ রাস্তায় জ্যামের ভিতরে ফর্মাল পোশাক পরা একজন দৌড়চ্ছে দৃশ্যটা যথেষ্টই হাস্যকর , এরই মাঝে কেউ কোনও মন্তব্য করে সেই হাস্যরস বাড়িয়ে দিচ্ছে আরও ! কিন্তু এসবের কিছুই আমার কানে ঢুকছে না । আমি দৌড়চ্ছি আর দৌড়চ্ছি! কেবল সামনে দৌড়চ্ছি! আর অনুভব করছি আমার শরীর থেকে খসে পড়ছে আমার ভীরুতা, চক্ষুলজ্জা, লোক কথার ভয় আর যতসব মধ্যবিত্ততা।



পড়ুক । তাদের কোনওটাই সম্পার হাসি মুখের চেয়ে দামি নয়, কোনোদিন ছিলও না ।

মন্তব্য ২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ দুপুর ১২:১৩

চতুষ্কোণ বলেছেন: ভাল লাগলো। শেষটা ভাল হয়েছে

০৬ ই আগস্ট, ২০১৩ বিকাল ৩:১১

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ । :) :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.