নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আদনান শাহরিয়ার

রোদ্দুর অনুভব… হেঁটে হেঁটে ছুঁয়ে যাবে তোমার কলরব… পলকতলে জমা মেঘদল… খাঁচা ভেঙ্গে একদিন ঠিক এনে দিবো নোনাজল…

আদনান শাহ্‌িরয়ার

বেঁচে থাকার চেষ্টায় ব্যস্ত আছি.......

আদনান শাহ্‌িরয়ার › বিস্তারিত পোস্টঃ

শিশিরের জল (অল্প একটু গল্প বা আত্মকথন )

২২ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ৯:৩১

রুদ্র’র সাথে প্রথম যেদিন কথা হয় সেদিন ওকে আমি নিতান্তই বাচ্চা ছেলে ভেবেছিলাম। গভীর রাতে ফোন করে বন্ধুত্ব করতে চাইল। কাজটা যে ও প্রথমবারের মত করছিল সেটা ওর নার্ভাসনেস দেখেই বুঝেছিলাম। হয়তো ওর ওই সারল্য আমাকে আকর্ষণ করেছিল, তাই বন্ধুত্ব করে ফেলেছিলাম। নয়তো নিতান্ত অপরিচিত কারও সাথে কথা বলতে আমার চিরকালই অস্বস্তি লাগে। পরে ও আমার কাছে স্বীকার করেছিল যে ওর নাকি হাত কাঁপছিল! আমিই নাকি ওর জীবনের প্রথম মেয়ে ছিলাম!







তারপর আস্তে আস্তে ও অনেক স্বতঃস্ফূর্ত হয়ে গেল। আমার থেকে ওই সবসময় বেশি কথা বলতো। আর ওর কথারও যেন শেষ নেই। এক বিষয় থেকে আরেক বিষয় অস্থিরের মত ঘুরে বেড়াত। আমি শুধু চুপ করে শুনতাম। এই নিয়ে ওর অভিযোগের শেষ ছিল না। কিন্তু ও টের পেত না ও আসলে আমাকে কথা বলারই সুযোগ দিত না!







একদিন এটা নিয়ে আমাদের তুমুল ঝগড়া হয়ে গেল। আমাদের প্রথম ঝগড়া। ও রেগে গিয়ে বলল ও আর ফোনই দিবে না। আমিও বলেছিলাম, ঠিক আছে। একদিন যায় দুইদিন যায় তিনদিন যায় ও ফোন দিল না। চতুর্থ দিন যখন আমি নিজেই ওকে ফোন দিব ভাবছি তখনই ওর ফোন। আমি দৌড়ে গিয়ে ওর ফোন ধরলাম। রুদ্র ওপাশ থেকে বলল, সরি... কি অদ্ভুত একটা কষ্টে বুকের ভেতরটা মোচড় দিয়ে উঠল। নিজেই নিজের কাছে লজ্জা পেয়ে গেলাম।







কিন্তু সেই ঝগড়ার পর আমাদের সম্পর্কটা আরও ঘনিষ্ঠ হয়ে গেল। তিন দিনের দূরত্বটাই বুঝিয়ে দিল আমরা কত কাছের। তারপর সারাদিন অপেক্ষায় থাকতাম কখন ও ফোন দিবে... তারপর কত যে কথা। রবিন্দ্রনাথ থেকে পাবলো গারসিয়া। মোনলিসা থেকে বার্গমান। ফুচকা থেকে চিকেন ফ্রাই। দিনের সামান্যতম ঘটনাও ওকে বলা চাই। অর্থহীন ঘটনাগুলোও তখন নতুন মাত্রা পায়। বরফ জমাট কষ্টের চাপও তখন রোদ হয়ে যায়।







আস্তে আস্তে আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়ই জানা হয়ে গেলো। কি এক অদ্ভুত টান কাজ করতো ওর প্রতি। আমার প্রতিটা বিষয়েই ওর মনোযোগ। একটু এলোমেলো কিছু করলেই বকা। সেটাও এত এত ভাল লাগত যে মাঝে মাঝে ইচ্ছে করেই উল্টা-পাল্টা কাজ করতাম। মনে মনে যখনই ভীষণ করে চাইতাম ও ফোন করুক ও ফোন করতো। আর একটু অবহেলাতেই ওর কি অভিমান। কখনও কখনও আমিও রাগ করতাম। তখন শুরু হত পাগলামো। একবার রাগ করে ফোন অফ করে ঘুমিয়ে গেছি সকালে উঠে দেখি ঠিক ১০০ টা মেসেজ। আমনই পাগল ছিল ও।







বৃষ্টি রুদ্র’র ভীষণ প্রিয় ছিল। বৃষ্টি আসলেই ফোন দিয়ে বলতো, আমি বৃষ্টিতে ভিজছি, তুমিও নেমে পরো। দুইজন দুই জায়গায় থাকলেও বৃষ্টিতে একাকার হয়ে যাই। আমি বকা দিতাম। বলতাম, কখনও না। কিন্তু ঠিকই ভিজতে যেতাম। কিন্তু ওকে জানাতাম না। জানতাম আভাবে জড়িয়ে পরা ঠিক হচ্ছে না, তাই শাসন করতাম নিজেকে। কিন্তু ওর গলা শুনলেই ভুলে যেতাম সব।







কিন্তু আমি রুদ্রকে কিছু বুঝতে দিতামনা। ওর মাঝেও পরিবর্তন এসেছে বুঝতাম, কিন্তু না বোঝার অভিনয় করতাম সারাক্ষণ। মাঝে মাঝে ও আমাকে দেখতে চাইত। আমি রাজি হতাম না। ছবি চাইত, তাতেও রাজি হতাম না। আমি বলতাম, আমরা এমন বন্ধু হব যারা কোনোদিন কাউকে দেখবনা, কিন্তু পাশে থাকব আজীবন। ও রাগ করতো, অভিমান করতো...তবে শেষে হার মেনে নিত।







মাঝে মাঝে রুদ্র আমাকে শিশির বলে ডাকত। এবং কল্পনা করতো ওর শিশির আমন ওর শিশির তেমন। ওর পাগলামো শুনে আমি হাসতাম আর বলতাম, যতই লোভ দেখাও আমি কিছুতেই বলবোনা আমি কেমন? ওর কল্পনা তবুও থামত না। আমি বলতাম, আমি শিশির বিন্দু হয়েই থাকব তারপর একদিন হঠাৎ করে হারিয়ে যাবো। ও চিৎকার করে বলতো, কখনও না। আমি আমার সবটুকু দিয়ে তোমাকে ধরে রাখবো। আমি হাসতাম আর হাসতাম।







এই এভাবেই কাটছিল দিন। প্রজাপতির ডানায়, আবীরের রঙ মেখে। হয়তো এভাবেই চলত। কিন্তু একদিন কি পাগলামো পেয়ে বসল আমাকে, ওর জেদের কারনেই হোক কিংবা নিজের মনের দূবর্লতার কারনে আমি দেখা করতে রাজি হলাম।







সেদিন আমি ওর মনের মত করেই সেজেছিলাম। রুপালি শাড়ি, খোঁপায় ফুল। তারপর ওর জন্য অপেক্ষা... অপেক্ষা তো অপেক্ষাই... সেকেন্ড মিনিট ঘণ্টা পার হয়ে যায়... রুদ্র আসেনা...আসেনা এবং আসেইনি... ওর ফোন ও অফ। ওর অমঙ্গল আশংকায় কেঁপে ওঠে বুক... জায়নামাজে বসে ওর জন্য কাঁদি আর প্রার্থনা করি। পাঁচদিন পর ওর মেসেজ আসলো “তুমি আমার মনের মত নও। আমাকে ক্ষমা করেও দিও”। তারপর যে আমাকে কোনও কিছুর বিনিময়েই হারিয়ে যেতে দিতে চায়নি সে নিজেই হারিয়ে গেলো শিশিরবিন্দুর মত।







খুব বেশি কি অবাক হয়েছি আমি? হয়তো না। ছোটবেলা থেকেই তো আমি এতে অভ্যস্ত। আমি অসুন্দর বলে কেউ আমাকে আদর করেনি। আমাকে বিয়ে দিবে কিভাবে এই নিয়ে কতবার মাকে গোপনে কাঁদতে দেখেছি। স্কুল কলেজে বন্ধুরা পেঁচী বলে কত হাসাহাসি করেছে আড়ালে। সুন্দর হওয়ার কত চেষ্টা কতভাবেই না বিফলে গেছে। কোনও আয়না আমাকে বলেনি তুমি এ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর নারী। তবুও কেন আমি রুদ্র’র কাছে এতখানি আশা করেছিলাম?? জানিনা। আমি জানিনা।







জানিনা বলেই সবকিছুর পরেও আমি আশা করেছিলাম রুদ্র ফিরে আসবে। বলবে, তুমি যেমনই হও না কেন আমার শিশির হয়েই থাকবে আজীবন। তাই ফোন এলেই ছুটে যেতাম। মেসেজ আসলেই অস্থিরের মত করতাম। কিন্তু রুদ্র আর ফেরেনি। ফিরবেওনা কখনও।







আসলে কেউই ফেরেনা...হয়তো ফেরার পথ থাকে না...তাই আর কারও প্রতি অভিযোগ নেই। সিন্দুকে তুলে রাখা স্বপ্নগুলো হলদেটে হয়ে যায় নিজের মত.. এখন মাঝরাতে ঘুম ভেঙ্গে গেলে খোলা জানালায় অন্ধকার স্পর্শ করি... আর ভাবি কতটা কষ্ট পেলে স্রষ্টা করুণ হয়??? কতটা অশ্রুতে স্রষ্টার হৃদয় গলে???

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১০:৪০

হাসান মাহবুব বলেছেন: দুঃখের বিষয়।

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩০

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: কারো কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা থাকে না । কেউ কেউ ভালবাসা ধরে রাখতে জানে না !

২| ২৩ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১১:০৫

স্বপ্নবাজ অভি বলেছেন: দুঃখ জনক !
অফ টপিকঃ পেরার মাঝের স্পেস বেশী মনে হচ্ছে !

২৪ শে আগস্ট, ২০১৩ রাত ১:৩২

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: কেনও জানিনা স্পেস দিতে ইচ্ছে করলো ! ধন্যবাদ । মনে রাখবো !

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫০

নীল-দর্পণ বলেছেন: মন খারাপ করা ভাললাগা

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৮:৫৫

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: ধন্যবাদ জানবেন । অপরিপক্ব বয়সে লিখা অপরিপক্ব গল্প ! ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগছে !

৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০২

নীল-দর্পণ বলেছেন: এগুলো যদি হয় অপরিপক্ক গল্প! :||

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:০৭

আদনান শাহ্‌িরয়ার বলেছেন: আমার তো তাই মনে হয় । থিমটা হৃদয় বিদারক বলে উৎরে গেছে বোধহয়!

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.