![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার জন্যে শিক্ষা। আমার জন্যে তো বটেই। নিজে আগে শিক্ষা নিয়ে আরেকজনের মাঝে তা ছড়িয়ে দেওয়া...এটাই থাকবে আমার লেখাগুলোর উদ্দেশ্য।
Apple Books -এ আমার এই বইটি পড়তে চাইলে, এইখান থেকে ডাউনলোড করতে পারবেন - view this link
আপনি হয়তো অফিসে সকাল থেকে রাত অবধি পরিশ্রম করছেন। প্রজেক্টের মূল দায়িত্ব আপনার কাঁধে, আইডিয়া আপনার মাথা থেকে এসেছে, সমস্যার সমাধানটাও আপনি খুঁজে বের করেছেন। কিন্তু প্রেজেন্টেশনের দিন বা ফলাফল ঘোষণার সময় দেখা গেল — করতালির কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন অন্য কেউ। প্রশংসা, পুরস্কার বা প্রমোশন—সবই চলে যাচ্ছে সহকর্মীর ঝুলিতে।
প্রশ্নটা তখন খুবই স্বাভাবিক — “কাজ তো করেছি আমি, তবু করতালি পাচ্ছে ওরা কেন?”
এই প্রশ্নের উত্তর শুধু ‘অন্যায়’ বা ‘ভাগ্য খারাপ’-এ সীমাবদ্ধ নয়। এর পেছনে রয়েছে কয়েকটি মনস্তাত্ত্বিক ও কৌশলগত কারণ, যা অনেক সময় আমরা নিজেরাও খেয়াল করি না।
১. আপনি ফলাফল নয়, প্রক্রিয়ায় আটকে আছেন
অনেক সময় দেখা যায়, আমরা প্রজেক্টের ভেতরের কাজ বা টেকনিক্যাল দিক নিয়ে এতটাই ব্যস্ত থাকি যে, চূড়ান্ত ফলাফল বা তার উপস্থাপনায় সময় দিই না। অন্যদিকে যিনি হয়তো কাজের খুব একটা অংশ করেননি, কিন্তু শেষ মুহূর্তে ফলাফলটি সঠিকভাবে প্যাকেজিং করে উপস্থাপন করেন, তাকেই সবাই মূল অবদানকারী মনে করে।
বাস্তব উদাহরণ:
মেহেদী একটি কোম্পানির মার্কেটিং টিমে কাজ করেন। নতুন একটি প্রোডাক্ট লঞ্চের পুরো কৌশল তিনি তৈরি করেন, কনটেন্ট লেখেন, টার্গেট অডিয়েন্স নির্ধারণ করেন। কিন্তু প্রেজেন্টেশনের দিন তিনি ব্যাকস্টেজে ডেটা ঠিক করছিলেন, আর তার সহকর্মী নিশাত সেই স্ট্র্যাটেজি স্লাইডে তুলে আত্মবিশ্বাসের সাথে প্রেজেন্ট করলেন। ম্যানেজমেন্টের করতালি গেল নিশাতের দিকে — মেহেদীর দিকে নয়।
শিক্ষা: শুধু কাজ করলেই হয় না, ফলাফলকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করাটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
২. দৃশ্যমানতার ঘাটতি
কাজের জায়গায় দৃশ্যমান (Visibility) হওয়া এক বড় ফ্যাক্টর। আপনি যদি নীরবে কাজ করে যান, আর কেউ আপনার অবদানকে তুলে না ধরে, তাহলে খুব স্বাভাবিকভাবেই অন্য কেউ সেই ফাঁকা জায়গায় এসে “গেম চেঞ্জার” হয়ে যায়।
বাস্তব উদাহরণ:
সুমনা নামের একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন যিনি পুরো কোডবেস ঠিক করেছিলেন, কিন্তু মিটিংয়ে কিছুই বলেননি। অন্যদিকে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার রাহাত, যিনি শুধু একটি ছোট অংশে কাজ করেছিলেন, মিটিংয়ে নিজের অংশটুকু উজ্জ্বলভাবে উপস্থাপন করলেন। ফলে সবাই ভাবলো তিনিই মূল সমস্যা সমাধান করেছেন।
শিক্ষা: নিজের অবদান সঠিক সময়ে দৃশ্যমান করা প্রয়োজন। নীরব থাকা মানেই আপনার কাজ অদৃশ্য হয়ে যাওয়া।
৩. যোগাযোগ দক্ষতার অভাব
অনেক সময় কাজটা যিনি করেছেন, তিনি সেটি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করতে বা “বিক্রি” করতে পারেন না। অন্য কেউ তুলনামূলক কম অবদান রেখেও সুন্দরভাবে গল্পের মতো করে বিষয়টা উপস্থাপন করেন, এবং শ্রোতাদের মন জয় করে নেন।
বাস্তব উদাহরণ:
রাফি একটি গবেষণা দলের মূল ডেটা এনালিস্ট ছিলেন। কিন্তু রিপোর্ট উপস্থাপনের সময় তিনি শুধু সংখ্যায় কথা বললেন — আবেগ বা প্রেক্ষাপট ছাড়া। অন্যদিকে তার সহকর্মী তন্ময় সংখ্যাগুলিকে গল্পে পরিণত করে এমনভাবে উপস্থাপন করলেন যে সবাই মুগ্ধ। শেষ পর্যন্ত প্রশংসা গেল তন্ময়ের ঝুলিতে, যদিও মূল বিশ্লেষণ রাফিরই।
শিক্ষা: ভালো কাজকে প্রভাবশালীভাবে “বলা” বা “দেখানো” না গেলে তার মূল্য অনেক সময় অন্যরা নিয়ে যায়।
৪. কৌশলগত অবস্থান নেওয়ার অভাব
কিছু মানুষ শুধু কাজই করে না, তারা জানে কখন কোথায় নিজেদের অবস্থান নিতে হবে। প্রজেক্টের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে, সিনিয়রদের সামনে বা মিডিয়ার আলোচনায় নিজেদের উপস্থিত রাখতে জানে। আপনি যদি সবসময় পর্দার আড়ালে থাকেন, অন্যরা আলোর মঞ্চে জায়গা দখল করে নেয়।
বাস্তব উদাহরণ:
একটি এনজিওতে নাহিদ একটি বড় প্রজেক্টের মাঠ পর্যায়ের পুরো কাজ করেছিলেন। কিন্তু ফাইনাল রিপোর্ট জমা ও প্রেস কনফারেন্সে তিনি যাননি। বরং অফিসের একজন মিডিয়া-স্মার্ট কর্মী সেখানে গিয়ে সব ব্যাখ্যা দেন। সাংবাদিক ও ডোনারদের চোখে সেই কর্মীকেই মনে হলো মূল ব্যক্তি।
শিক্ষা: কাজের পাশাপাশি নিজেকে সঠিক জায়গায় পজিশন করাও একটি দক্ষতা।
৫. আপনি ধরে নিচ্ছেন “ভালো কাজ করলে সবাই বুঝে ফেলবে”
এটাই সবচেয়ে সাধারণ ভুল। কর্মক্ষেত্রে অনেক সময় কেউই আপনার কাজের খুঁটিনাটি বুঝে বসে থাকে না। আপনার সাফল্যকে আপনাকেই সঠিকভাবে তুলে ধরতে হয়।
বাস্তব উদাহরণ:
তাসনিম মনে করতেন, “আমার বস খুবই বুদ্ধিমান, তিনি নিশ্চয়ই বুঝবেন আমি কতটা কাজ করছি।” কিন্তু বাস্তবে তার বস ব্যস্ত ছিলেন বহু প্রজেক্ট নিয়ে। ফলে তাসনিমের অবদান কখনোই পূর্ণভাবে চোখে পড়েনি। প্রমোশনের সময় সেই সহকর্মীই সুযোগ পেলেন যিনি নিয়মিত রিপোর্ট ও অগ্রগতি তুলে ধরতেন।
শিক্ষা: ‘Silent worker’ হওয়া ভালো, কিন্তু ‘Invisible worker’ হওয়া ক্ষতিকর।
শেষ কথা
কাজ করা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি গুরুত্বপূর্ণ সেটিকে সঠিকভাবে উপস্থাপন করা, দৃশ্যমান করা, যোগাযোগে দক্ষ হওয়া এবং কৌশলগতভাবে নিজেকে জায়গা দেওয়া।
মনে রাখুন:
“আপনি যদি নিজের গল্প না বলেন, কেউ না কেউ এসে সেটি নিজের নামে বলবে।”
তাই পরের বার যখন বড় কোনো প্রজেক্টে কাজ করবেন, শুধু পরিশ্রম করেই থেমে থাকবেন না — নিশ্চিত করুন, আপনার অবদান যেন সঠিক সময়ে সঠিক জায়গায় আলো পায়।
০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:২৬
শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:
শুভেচ্ছা নিরন্তর।
©somewhere in net ltd.
১|
০৫ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৫:৪৮
বিজন রয় বলেছেন: ভাল লিখেছেন।
অনেকের কাজে লাগবে।