নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার আছে অনেক কিছু, শিক্ষা নিবে কতজন?

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition)

সবার জন্যে শিক্ষা। আমার জন্যে তো বটেই। নিজে আগে শিক্ষা নিয়ে আরেকজনের মাঝে তা ছড়িয়ে দেওয়া...এটাই থাকবে আমার লেখাগুলোর উদ্দেশ্য।

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু মানুষ আপনার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে সময় মতো পরিশোধ করে নাই, আপনি মামলা না করে চুপ করে কেন বসে আছেন?

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫



আমাদের সমাজে একটা অদ্ভুত বিষয় খুব সাধারণভাবে দেখা যায়—
অনেক সময় কেউ আমাদের কাছ থেকে টাকা ধার নেয়, প্রতিশ্রুতি দেয় অমুক তারিখে ফেরত দেবে। কিন্তু সময় পেরিয়ে যায়, দিন সপ্তাহে, সপ্তাহ মাসে, মাস কখনো বছরে পরিণত হয়… তবুও সেই টাকা আর ফেরত আসে না। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, টাকা ফেরত না পাওয়ার পরও অনেকেই মামলা করে না, আইনি পদক্ষেপ নেয় না, এমনকি প্রকাশ্যে বিষয়টিও তোলে না—বরং চুপচাপ বসে থাকে।

প্রশ্ন হচ্ছে: কেন?
এর পেছনে আছে কিছু মানসিক, সামাজিক ও বাস্তব কারণ, যা অনেক সময় আমাদের অজান্তেই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।

১. সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়

বাংলাদেশের মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নির্ভর সমাজে সামাজিক সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় যে মানুষটা টাকা ধার নিয়েছে সে হতে পারে আত্মীয়, বন্ধু, ব্যবসার পার্টনার বা এলাকার পরিচিত কেউ। তার বিরুদ্ধে মামলা করলে সামাজিকভাবে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে, পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যেতে পারে—এই ভয়েই অনেকেই মুখ খোলে না।

বাস্তব উদাহরণ:
সিলেটের একটি ব্যবসায়ী আব্দুল হাই তার এক খালাতো ভাইকে ৫ লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন ব্যবসা করার জন্য। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত আসেনি। মামলার পরামর্শ দিলেও পরিবার বলল, “আত্মীয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে সমাজে মুখ দেখাবে কিভাবে?” ফলে তিনি আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে বিষয়টা চেপে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই টাকা আর ফেরত পাননি।

২. “লোক জানাজানি” বা মানহানির ভয়

অনেকে মনে করেন মামলা করলে বিষয়টা “পাবলিক” হয়ে যাবে, মানুষ জানবে, নিজের মান ইজ্জত নষ্ট হবে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা ভয় পান, যদি বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে তিনি কারও বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে মামলা করেছেন, তাহলে অন্যরাও ভাবতে পারে তিনি ‘কঠিন’ মানুষ—ফলে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বাস্তব উদাহরণ:
ঢাকার গুলিস্তানে এক পোশাক ব্যবসায়ী তার এক কাস্টমারের কাছে ৩ লক্ষ টাকা পাওনা ছিলেন। কিন্তু তিনি মামলা না করে চুপ করে যান। কারণ বাজারে কেউ যদি জানে তিনি কাস্টমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাহলে ভবিষ্যতে অন্যরা হয়তো লেনদেনে ভয় পাবে। অথচ টাকা না ফেরত পাওয়ার কারণে তার দোকানে পণ্য ঘুরাতে সমস্যা হয়, নতুন ইনভেস্টমেন্ট আটকে যায়।

৩. আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতা ও সময়সাপেক্ষ ঝামেলা

অনেকেই মনে করেন মামলা মানেই দীর্ঘদিন কোর্ট-কাচারিতে ঘোরাঘুরি, খরচ, সময় ও মানসিক চাপ। বিশেষ করে ছোট অঙ্কের টাকার ক্ষেত্রে মানুষ ভাবে, “মামলা করতে গিয়ে আরও বেশি খরচ হয়ে যাবে।” এই ধারণা থেকে অনেকে আইনি পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী হন না।

বাস্তব উদাহরণ:
নরসিংদীর এক যুবক তার এক বন্ধুকে ৫০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন। পরে টাকা ফেরত না পেয়ে মামলা করার কথা ভাবলেন। কিন্তু স্থানীয় একজন বলল, “মামলা করলে বছর চলে যাবে, উকিলের খরচই বেশি হবে।” ফলে তিনিও বিষয়টা ছেড়ে দেন।

৪. ‘ভদ্রতা’ বা ভুল জায়গায় দয়া

কিছু মানুষ মনে করেন টাকা চাইতে গেলে বা আইনি পদক্ষেপ নিলে “খারাপ” মনে হবে। তারা ভাবে, “লোকটা হয়তো বিপদে আছে, আমি একটু সময় দিই।” কিন্তু এই ‘ভদ্রতা’ অনেক সময়েই বিপরীতে গিয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই সুযোগ নিয়ে আর টাকা ফেরত দেয় না।

বাস্তব উদাহরণ:
রাজশাহীর শিরিন আক্তার তার এক বান্ধবীকে ১ লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন মেয়ের চিকিৎসার জন্য। তিনি ভাবলেন, “বান্ধবীর বিপদে সাহায্য করলাম, নিশ্চয়ই ফেরত দেবে।” কিন্তু ২ বছর কেটে গেলেও টাকা ফেরত আসেনি। মামলা তো দূরের কথা, আজও তিনি টাকাটা চাইতেও লজ্জা পান।


তাহলে করণীয় কী?

প্রথমেই প্রমাণ রাখুন: টাকা লেনদেনের সময় লিখিত চুক্তি, রসিদ, মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংক ট্রান্সফারের কাগজ রাখুন। এগুলো ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপ নিতে সহজ করবে।

আইনি নোটিশ দিন: মামলা করার আগেই একজন উকিলের মাধ্যমে আইনি নোটিশ পাঠানো অনেক সময় সমস্যার সমাধান এনে দেয়।

আলোচনায় বসুন: অনেক সময় খোলামেলা কথা বললেই সমাধান পাওয়া যায়।

আত্মবিশ্বাসী হোন: কারও কাছ থেকে আপনার পাওনা দাবি করা অন্যায় নয়—বরং এটা আপনার অধিকার।

মামলার ভয় কাটান: বর্তমানে ছোট পাওনার জন্যও সহজ প্রক্রিয়ায় মামলা করার ব্যবস্থা আছে (বিশেষ করে Negotiable Instruments Act অনুযায়ী চেক বাউন্সের ক্ষেত্রে)।


উপসংহার

টাকা ফেরত না পেলে চুপ করে বসে থাকা আসলে এক ধরণের “নীরব ক্ষতি”। এতে যেমন আপনার আর্থিক ক্ষতি হয়, তেমনি সমাজে এক ধরণের ভুল বার্তা যায়—যে কেউ চাইলেই টাকা নিয়ে না ফেরত দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারে। তাই সামাজিক চাপ বা ভুল ধারণার কারণে নীরব না থেকে সচেতন হোন, নিজের অধিকার দাবি করুন।

আপনার নরম মন আর ভদ্রতা যেন আপনার আর্থিক ক্ষতির কারণ না হয়—এইটাই মূল কথা।

মন্তব্য ১৫ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (১৫) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩

শেরজা তপন বলেছেন: মুল সমস্যা হচ্ছে, নিকটাত্মীয় বা বন্ধু বান্ধবকে টাকা ধার দিলে বেশীরভাগ মানুষ ডকুমেন্ট বা উপযুক্ত প্রমান রাখে না, সেজন্য অনেকে চাইলেও মামলা করতে পারে না।
তবে মামলা করলেও দু-চারদিনে সেটা সমাধান হওয়া কি সম্ভব! কোর্ট-কাচারিতে ভোগান্তি নিশ্চিত।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৪

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:






প্রথমত, ধার বা সাদকা এক নয়। ধার বা সাহায্যও এক নয়।

নিকটাত্মীয় বা বন্ধুকে সাহায্য করতে হয়। ওটাকে ধার বলা যায় না।

কেউ ধার নিলে তা শোধ বা ক্ষমা না করা পর্যন্ত ধারই থেকে যায়।


শুভেচ্ছা নিরন্তর।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:২০

শেরজা তপন বলেছেন: আমি ধারের কথাই বলেছি, সাদকা বা সাহায্য নয়।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩০

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:




সেজন্যে বলেছি, ধার ধারই।

টাকা দেওয়ার সময় কৌশলী হতে হবে।

নিকটাত্মীয় বা বন্ধুকে বুঝিয়ে বলতে হবে ধার ও সাহায্যের মধ্যে কি পার্থক্য। তারপরে, জিজ্ঞাসা করতে হবে - 'উনি ধার চাচ্ছেন না সাহায্য? ধার চাইলে ধারের নিয়ম ফলো করতে হবে।'

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শেরজা তপন বলেছেন: মূল সমস্যা হচ্ছে নিকটাত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবকে টাকা ধার দিলে বেশিরভাগ মানুষ ডকুমেন্ট বা উপযুক্ত প্রমাণ রাখে না, সেজন্য অনেকে চাইলেও মামলা করতে পারে না। ২০২০ সালের দিকে এমন একটা সমস্যায় পড়েছিলাম। একজনকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম বিজনেস পারপাসে। সে টাকাটা আর তুলতে পারিনি। এবারের বইমেলায়ও বই করতে গিয়ে একটা ধাক্কা খেলাম। প্রকাশক পাওনা সব বই তো দেয়ইনি, টাকা-পয়সাও বুঝিয়ে দেয়নি। লিখিত দলিল নেই যে ধরব। যদিও সাক্ষী আছে। কিন্তু ওর ধরার সুযোগই নেই।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:




১) বিজনেস পারপাসে যখন দিয়েছিলেন, তার জন্যে বিজনেস ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে গিয়েছে। কারণ, বিজনেসে 'ধার' বলতে কিছু নেই। 'ইনভেস্টমেন্ট' যা দেনা হিসেবে দেখা হয়।

২) বইমেলার ব্যাপারটায় বই প্রকাশের দলিল না করাটা ভুল। এই ভুল আমিও করেছিলাম প্রথমবার। আশা করি, পরের বার করবেন না।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে !
.......................................................
জীবনে এরকম বুদ্ধি অনেক বাড়ায়েছি,
আর না ।
তাই ধার দেয়া বন্ধ করেছি, যা কিছু দেই
মনে মনে বলি এটা সদকা,
ফিরে পাবার আশা করিনা ।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩০

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:




ধারের টাকা ফেরত আসা প্রয়োজন। সমাজেরও এটা একটা ক্ষতি।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৫| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৯

রাসেল বলেছেন: টাকা ধার দেবার অপরাধে আমিও অপরাধী

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩১

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:



আপনি অপরাধী নন।

যিনি নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না, তিনি অপরাধী।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৬| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:৪৭

জুল ভার্ন বলেছেন: “Money belongs to whoever holds it.”

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:১৯

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:



রাইট, ভাইয়া!
বাট ইট শুড বি অনেস্টলি আর্নড :)

ধন্যবাদ নিরন্তর।

৭| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৬

রাজীব নুর বলেছেন: কাউকে টাকা ধার দেওয়াই উচিৎ না।
টাকা নেওয়ার সময় মানুষ মিষ্টি মিষ্টি কথা বলে। ধার ফেরত দেবার কথা মনে থাকে না। ফোন দিলে ফোনও ধরে না।

আমার মা বলেন, যার লেনদেন ভালো, সে মানুষ ভালো। মানুষ চেনা যায় টাকা দিয়ে।

৮| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৮

মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন বলেছেন:

কাউকে টাকা ধার দেয়ার চেয়ে পাপের কাজ আর হয় না

আপনি কি কখনো কাউকে টাকা পয়সা ধার দিয়েছেন? যদি না দিয়ে থাকেন তাহলে শপথ নিন- জীবনেও কাউকে টাকা ধার দিবেন না। আর যদি আপনি ইতিমধ্যে টাকা ধার দিয়ে থাকেন এবং হাজারো চেষ্টা চরিত্র করে ও সেই টাকা তুলতে পারেননি। খেলাপী হয়ে গেছে ঋণ তারাও শপথ নিতে পারেন- জীবনে কাউকেও টাকা ধার দিবো না।

বাংলাদেশের একটা বিপুল সংখ্যক মানুষ মনে করে কারো কাছ থেকে টাকা ধার নিলে সেটা ফিরিয়ে দেওয়ার দরকার নেই।

প্রাতিষ্ঠানিকভাবে টাকা ধার নেওয়ার জন্য প্রত্যেক দেশেই নানান ধরনের আর্থিক প্রতিষ্ঠান থাকে। সে প্রতিষ্ঠানগুলি সরকারি হতে পারে। আবার বেসরকারি হতে পারে । অর্থাৎ আমি বলছি ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের কথা।

কিন্তু এই সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে টাকা ধার নিতে চাইলে নানান ধরনের আনুষ্ঠানিকতা আছে । আরো আছে আইনের নানান ধরনের মারপ্যাচ। আমার বা আপনার অথবা যে কারো কোন কারণে কোন প্রয়োজনে নগদ টাকার দরকার হতে পারে তখন আপনি চাইলেই কিন্তু ব্যাংক বা অন্য নাস্তিক প্রতিষ্ঠানসমূহ আপনাকে টাকা ধার দিবে না ।

টাকা ধার দেবার জন্য নানান আনুষ্ঠানিকতা আছে। আইনগত ব্যাপার স্যাপার আছে।

আপনি যে টাকা লোন নিবেন সেটা পাশ হওয়ার জন্য তাদের কিছু অনুষ্ঠানিকতার পর আপনি অবশেষে আপনি হয়তো টাকাটা হাতে পাবেন। আপনার কাছ থেকে তারা একটা বড় অংকের টাকা সার্ভিস চার্জ হিসাবে রাখবে।

যে কোন ব্যক্তির কাছ থেকে টাকা ধার নেওয়াটা অনেক সহজ এবং বাংলাদেশের অনেক মানুষ এটা করে থাকে। তিনি বলে দেন যে ভাই টাকাটা আপনি আজকে দেন আমি আগামী সপ্তাহে দিয়ে দেবো।

যদিও সেই আগামী সপ্তাহ সাধারণ আর কখনো আর আসে না বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

আমার ক্ষেত্রে এরকম একটি ঘটনা ঘটেছিল আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ি আমাদের এক হলমেট আমার কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিয়েছিল । যদিও হলজীবনে আমরা সবাই খুব কষ্টই চলতাম। তবু আমার মনে আছে আমি অনেক মানুষকে টাকা ধার দিয়েছি। কেউ কেউ ফেরত দেয়নি। চির বাকির খাতায় রয়ে গেছে সেই ধার। মনে হয় কুঋণ। কয়েক মাস চলে যাওয়ার পরে আমি তাকে টাকাটা ফেরত দেওয়ার ব্যাপারে তাকে স্মরণ করিয়ে দেই।

কিন্তু স্মরণ করিয়ে দেওয়ার একপর্যায়ে এসে আমাকে খুবই মজাদার একটা উত্তর দিয়েছিল। সে বেশ আবেগে গদগদ হয়ে বলল- টাকাটা না দিলে চলে না?

শিক্ষাজীবন শেষ হওয়ার পরে কর্মজীবনে এসো দেখেছি টাকা ধার দেওয়ার ইচ্ছা না থাকা সত্ত্বেও অনেক সময় দিতে হয়।
কিন্তু টাকা ধার দেওয়ার পরে আপনি বুঝতে পারবেন যে টাকা ধার দিয়ে আপনি নিজেই বরং বিপদে পড়ে গেছেন। আপনি একজনকে বিপদ থেকে উদ্ধার করতে গিয়ে উল্টা নিজেই পড়েছেন মহাবিপদে।

যখন আপনার আর্থিক কারণে যখন আপনার নিজেরই টাকার প্রয়োজন কিন্তু যিনি আপনার কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন তিনি আপনাকে আজ দেব কাল দেব করে টাকা দিচ্ছে না। এক পর্যায়ে এমন পরিস্থিতিও দাঁড়ায় যে সে আপনাকে দেখলে মাথা নিচু করে চলে যাবে।

এই টাকা ধার নেওয়া দেওয়ার ব্যাপারে আমার অনেক খারাপ অভিজ্ঞতা থাকলেও এই মুহূর্তে একটি বাজে অভিজ্ঞতার কথা উল্লেখ করতে চাই । ২০১০ সালে আমি চাঁদপুর জেলার মোঃ নোমান নামে এক লোককে ৩৫ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলাম এই শর্তে যে সে আজ যেহেতু শুক্রবার সে পরবর্তী রবিবার অথবা সোমবারের মধ্যে টাকাটা আমাকে দিয়ে দিবে। কারণ তার ব্যাংকে ড্রাফ্ট জমা দেয়া আছে। কোন কারণবশত সেটা ক্যাশ হয়নি। যাক আমিও তার ভালো মানসিক কথাবার্তা খুবই বিশ্বাস করে টাকাটা দিলাম এবং বড়ই আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে তার সেই রবিবার অথবা সোমবার আজও আনেনি। ২০১০ সাল থেকে ২০২৪ সাল মাঝখান থেকে পেরিয়ে গেছে দশটি বছর ।

সেই আমলে ৩৫ হাজার টাকা হয়ত খুব একটা কম টাকা ছিল না। কিন্তু ২০২৪ সালে অনেকে হয়তো বলবেন মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। হোক না মাত্র ৩৫ হাজার টাকা। অন্যের টাকা ধার নিয়ে ফেরত দেবেন না? এটা কোন কথা? তিনি আমার টাকা তো ফেরত তো দেনই নাই । উল্টো মোবাইল ফোনে আমাকে ব্লক করে রেখেছেন । ফেসবুকে আমাকে ব্লক করে রেখেছেন। মাঝে মাঝে মনে হয় যে পুলিশ সাহেবের কাছে নালিশ দিয়ে আসি। পরে আবার ভাবি পুলিশ সাহেব তো কাগজ চাইবেন। আমার তো কাগজ নেই।

পুরো পৃথিবীর মধ্যে বাংলাদেশ পৃথিবীর এক মাত্র দেশ যেখানে টাকা পয়সা অন্য ব্যক্তির কাছ থেকে ধার নেওয়া হয় এবং আশ্চর্যজনকভাবে এই সমস্ত ধার দেনার কোন লিখিত ডকুমেন্ট রাখা হয় না। লিখিত ডকুমেন্ট রাখলে কমপক্ষে কোর্ট কাছারি করা যেত, সালিশ করা যেত । যেহেতু কোন লিখিত প্রমাণপত্র নেই তাই এটা নিয়ে আইন-আদালতে যাওয়াটা হয়ে যায় আরেক দুর্দান্ত ঝামেলার বিষয়। অন্যের উপকারের জন্য নিজের কষ্টের জমানো টাকা-পয়সা ধার দিলাম আবার সেই টাকা আদায় করার জন্য উকিল মুহুরী নিয়োগ করে আমাকে দৌড়াতে হবে কোর্টের দুয়ারে! এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কি হতে পারে?

সে যাই হোক পরিশেষে আমজনতার প্রতি একটি উপদেশ বা পরামর্শ বিনামূল্য দিচ্ছি।

সেটা হচ্ছে কাউকে ধার দিবেন না । আবার কারো কাছ থেকে ধার নিবেনও না।

পেটে ভাতে কষ্ট করে চলবেন। প্রয়োজনে টিউবয়েল থেকে পানি এনে খেয়ে চলবেন। না খেয়ে থাকবেন। তারপরেও কারো কাছ থেকে টাকা ধার আনবেন না। আপনার যদি অতিরিক্ত কোন টাকা পয়সা থাকে রেখে দিন। তারপরেও কাউকে ধার দিতে যাবেন না। আপনার কষ্টার্জিত টাকা ধার দেওয়া মানে তাকে আপনার শত্রুতে পরিণত করা। আপনি অযথা মানুষকে শত্রুতে পরিণত করতে যাবেন?

৯| ০৭ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩

সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: কাছের মানুষ যদি অমানুষ হয়ে যায় তার বিরুদ্ধে কিভাবে মামলা করবেন আপনি মানুষ হয়ে?

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.