নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

জানার আছে অনেক কিছু, শিক্ষা নিবে কতজন?

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition)

সবার জন্যে শিক্ষা। আমার জন্যে তো বটেই। নিজে আগে শিক্ষা নিয়ে আরেকজনের মাঝে তা ছড়িয়ে দেওয়া...এটাই থাকবে আমার লেখাগুলোর উদ্দেশ্য।

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) › বিস্তারিত পোস্টঃ

কিছু মানুষ আপনার কাছ থেকে টাকা ধার নিয়ে সময় মতো পরিশোধ করে নাই, আপনি মামলা না করে চুপ করে কেন বসে আছেন?

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ দুপুর ২:৩৫



আমাদের সমাজে একটা অদ্ভুত বিষয় খুব সাধারণভাবে দেখা যায়—
অনেক সময় কেউ আমাদের কাছ থেকে টাকা ধার নেয়, প্রতিশ্রুতি দেয় অমুক তারিখে ফেরত দেবে। কিন্তু সময় পেরিয়ে যায়, দিন সপ্তাহে, সপ্তাহ মাসে, মাস কখনো বছরে পরিণত হয়… তবুও সেই টাকা আর ফেরত আসে না। আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, টাকা ফেরত না পাওয়ার পরও অনেকেই মামলা করে না, আইনি পদক্ষেপ নেয় না, এমনকি প্রকাশ্যে বিষয়টিও তোলে না—বরং চুপচাপ বসে থাকে।

প্রশ্ন হচ্ছে: কেন?
এর পেছনে আছে কিছু মানসিক, সামাজিক ও বাস্তব কারণ, যা অনেক সময় আমাদের অজান্তেই সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করে।

১. সামাজিক সম্পর্ক নষ্ট হওয়ার ভয়

বাংলাদেশের মতো ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নির্ভর সমাজে সামাজিক সম্পর্ক খুব গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় যে মানুষটা টাকা ধার নিয়েছে সে হতে পারে আত্মীয়, বন্ধু, ব্যবসার পার্টনার বা এলাকার পরিচিত কেউ। তার বিরুদ্ধে মামলা করলে সামাজিকভাবে সম্পর্ক খারাপ হয়ে যেতে পারে, পারিবারিক বন্ধন ভেঙে যেতে পারে—এই ভয়েই অনেকেই মুখ খোলে না।

বাস্তব উদাহরণ:
সিলেটের একটি ব্যবসায়ী আব্দুল হাই তার এক খালাতো ভাইকে ৫ লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন ব্যবসা করার জন্য। নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা ফেরত আসেনি। মামলার পরামর্শ দিলেও পরিবার বলল, “আত্মীয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে সমাজে মুখ দেখাবে কিভাবে?” ফলে তিনি আইনি পদক্ষেপ না নিয়ে বিষয়টা চেপে যান। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেই টাকা আর ফেরত পাননি।

২. “লোক জানাজানি” বা মানহানির ভয়

অনেকে মনে করেন মামলা করলে বিষয়টা “পাবলিক” হয়ে যাবে, মানুষ জানবে, নিজের মান ইজ্জত নষ্ট হবে। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা ভয় পান, যদি বাজারে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে তিনি কারও বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে মামলা করেছেন, তাহলে অন্যরাও ভাবতে পারে তিনি ‘কঠিন’ মানুষ—ফলে ব্যবসায়িক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

বাস্তব উদাহরণ:
ঢাকার গুলিস্তানে এক পোশাক ব্যবসায়ী তার এক কাস্টমারের কাছে ৩ লক্ষ টাকা পাওনা ছিলেন। কিন্তু তিনি মামলা না করে চুপ করে যান। কারণ বাজারে কেউ যদি জানে তিনি কাস্টমারের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন, তাহলে ভবিষ্যতে অন্যরা হয়তো লেনদেনে ভয় পাবে। অথচ টাকা না ফেরত পাওয়ার কারণে তার দোকানে পণ্য ঘুরাতে সমস্যা হয়, নতুন ইনভেস্টমেন্ট আটকে যায়।

৩. আইনি প্রক্রিয়া সম্পর্কে অজ্ঞতা ও সময়সাপেক্ষ ঝামেলা

অনেকেই মনে করেন মামলা মানেই দীর্ঘদিন কোর্ট-কাচারিতে ঘোরাঘুরি, খরচ, সময় ও মানসিক চাপ। বিশেষ করে ছোট অঙ্কের টাকার ক্ষেত্রে মানুষ ভাবে, “মামলা করতে গিয়ে আরও বেশি খরচ হয়ে যাবে।” এই ধারণা থেকে অনেকে আইনি পদক্ষেপ নিতে আগ্রহী হন না।

বাস্তব উদাহরণ:
নরসিংদীর এক যুবক তার এক বন্ধুকে ৫০ হাজার টাকা ধার দিয়েছিলেন। পরে টাকা ফেরত না পেয়ে মামলা করার কথা ভাবলেন। কিন্তু স্থানীয় একজন বলল, “মামলা করলে বছর চলে যাবে, উকিলের খরচই বেশি হবে।” ফলে তিনিও বিষয়টা ছেড়ে দেন।

৪. ‘ভদ্রতা’ বা ভুল জায়গায় দয়া

কিছু মানুষ মনে করেন টাকা চাইতে গেলে বা আইনি পদক্ষেপ নিলে “খারাপ” মনে হবে। তারা ভাবে, “লোকটা হয়তো বিপদে আছে, আমি একটু সময় দিই।” কিন্তু এই ‘ভদ্রতা’ অনেক সময়েই বিপরীতে গিয়ে দাঁড়ায়। অনেকেই সুযোগ নিয়ে আর টাকা ফেরত দেয় না।

বাস্তব উদাহরণ:
রাজশাহীর শিরিন আক্তার তার এক বান্ধবীকে ১ লক্ষ টাকা ধার দিয়েছিলেন মেয়ের চিকিৎসার জন্য। তিনি ভাবলেন, “বান্ধবীর বিপদে সাহায্য করলাম, নিশ্চয়ই ফেরত দেবে।” কিন্তু ২ বছর কেটে গেলেও টাকা ফেরত আসেনি। মামলা তো দূরের কথা, আজও তিনি টাকাটা চাইতেও লজ্জা পান।


তাহলে করণীয় কী?

প্রথমেই প্রমাণ রাখুন: টাকা লেনদেনের সময় লিখিত চুক্তি, রসিদ, মোবাইল ব্যাংকিং বা ব্যাংক ট্রান্সফারের কাগজ রাখুন। এগুলো ভবিষ্যতে আইনি পদক্ষেপ নিতে সহজ করবে।

আইনি নোটিশ দিন: মামলা করার আগেই একজন উকিলের মাধ্যমে আইনি নোটিশ পাঠানো অনেক সময় সমস্যার সমাধান এনে দেয়।

আলোচনায় বসুন: অনেক সময় খোলামেলা কথা বললেই সমাধান পাওয়া যায়।

আত্মবিশ্বাসী হোন: কারও কাছ থেকে আপনার পাওনা দাবি করা অন্যায় নয়—বরং এটা আপনার অধিকার।

মামলার ভয় কাটান: বর্তমানে ছোট পাওনার জন্যও সহজ প্রক্রিয়ায় মামলা করার ব্যবস্থা আছে (বিশেষ করে Negotiable Instruments Act অনুযায়ী চেক বাউন্সের ক্ষেত্রে)।


উপসংহার

টাকা ফেরত না পেলে চুপ করে বসে থাকা আসলে এক ধরণের “নীরব ক্ষতি”। এতে যেমন আপনার আর্থিক ক্ষতি হয়, তেমনি সমাজে এক ধরণের ভুল বার্তা যায়—যে কেউ চাইলেই টাকা নিয়ে না ফেরত দিয়ে পার পেয়ে যেতে পারে। তাই সামাজিক চাপ বা ভুল ধারণার কারণে নীরব না থেকে সচেতন হোন, নিজের অধিকার দাবি করুন।

আপনার নরম মন আর ভদ্রতা যেন আপনার আর্থিক ক্ষতির কারণ না হয়—এইটাই মূল কথা।

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:০৩

শেরজা তপন বলেছেন: মুল সমস্যা হচ্ছে, নিকটাত্মীয় বা বন্ধু বান্ধবকে টাকা ধার দিলে বেশীরভাগ মানুষ ডকুমেন্ট বা উপযুক্ত প্রমান রাখে না, সেজন্য অনেকে চাইলেও মামলা করতে পারে না।
তবে মামলা করলেও দু-চারদিনে সেটা সমাধান হওয়া কি সম্ভব! কোর্ট-কাচারিতে ভোগান্তি নিশ্চিত।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:১৪

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:






প্রথমত, ধার বা সাদকা এক নয়। ধার বা সাহায্যও এক নয়।

নিকটাত্মীয় বা বন্ধুকে সাহায্য করতে হয়। ওটাকে ধার বলা যায় না।

কেউ ধার নিলে তা শোধ বা ক্ষমা না করা পর্যন্ত ধারই থেকে যায়।


শুভেচ্ছা নিরন্তর।

২| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:২০

শেরজা তপন বলেছেন: আমি ধারের কথাই বলেছি, সাদকা বা সাহায্য নয়।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩০

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:




সেজন্যে বলেছি, ধার ধারই।

টাকা দেওয়ার সময় কৌশলী হতে হবে।

নিকটাত্মীয় বা বন্ধুকে বুঝিয়ে বলতে হবে ধার ও সাহায্যের মধ্যে কি পার্থক্য। তারপরে, জিজ্ঞাসা করতে হবে - 'উনি ধার চাচ্ছেন না সাহায্য? ধার চাইলে ধারের নিয়ম ফলো করতে হবে।'

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৩| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:২৯

রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শেরজা তপন বলেছেন: মূল সমস্যা হচ্ছে নিকটাত্মীয় বা বন্ধু-বান্ধবকে টাকা ধার দিলে বেশিরভাগ মানুষ ডকুমেন্ট বা উপযুক্ত প্রমাণ রাখে না, সেজন্য অনেকে চাইলেও মামলা করতে পারে না। ২০২০ সালের দিকে এমন একটা সমস্যায় পড়েছিলাম। একজনকে ৫০ হাজার টাকা দিয়েছিলাম বিজনেস পারপাসে। সে টাকাটা আর তুলতে পারিনি। এবারের বইমেলায়ও বই করতে গিয়ে একটা ধাক্কা খেলাম। প্রকাশক পাওনা সব বই তো দেয়ইনি, টাকা-পয়সাও বুঝিয়ে দেয়নি। লিখিত দলিল নেই যে ধরব। যদিও সাক্ষী আছে। কিন্তু ওর ধরার সুযোগই নেই।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৩৫

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:




১) বিজনেস পারপাসে যখন দিয়েছিলেন, তার জন্যে বিজনেস ইনভেস্টমেন্ট হিসেবে গিয়েছে। কারণ, বিজনেসে 'ধার' বলতে কিছু নেই। 'ইনভেস্টমেন্ট' যা দেনা হিসেবে দেখা হয়।

২) বইমেলার ব্যাপারটায় বই প্রকাশের দলিল না করাটা ভুল। এই ভুল আমিও করেছিলাম প্রথমবার। আশা করি, পরের বার করবেন না।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৪| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৩

স্বপ্নের শঙ্খচিল বলেছেন: চোর পালালে বুদ্ধি বাড়ে !
.......................................................
জীবনে এরকম বুদ্ধি অনেক বাড়ায়েছি,
আর না ।
তাই ধার দেয়া বন্ধ করেছি, যা কিছু দেই
মনে মনে বলি এটা সদকা,
ফিরে পাবার আশা করিনা ।

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩০

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:




ধারের টাকা ফেরত আসা প্রয়োজন। সমাজেরও এটা একটা ক্ষতি।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

৫| ০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৯

রাসেল বলেছেন: টাকা ধার দেবার অপরাধে আমিও অপরাধী

০৬ ই অক্টোবর, ২০২৫ বিকাল ৪:৩১

শাইয়্যানের টিউশন (Shaiyan\'s Tuition) বলেছেন:



আপনি অপরাধী নন।

যিনি নিয়ে ফেরত দিচ্ছেন না, তিনি অপরাধী।

শুভেচ্ছা নিরন্তর।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.