![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সবার জন্যে শিক্ষা। আমার জন্যে তো বটেই। নিজে আগে শিক্ষা নিয়ে আরেকজনের মাঝে তা ছড়িয়ে দেওয়া...এটাই থাকবে আমার লেখাগুলোর উদ্দেশ্য।
অফিস এমন এক জায়গা যেখানে শুধু কাজের দক্ষতাই যথেষ্ট নয়; সম্পর্ক, যোগাযোগ আর ইমেজ ম্যানেজমেন্টও সমান গুরুত্বপূর্ণ। অনেক সময় দেখা যায়, আপনি সৎভাবে কাজ করছেন, দায়িত্ব পালন করছেন, তবুও আপনার নামে গুজব ছড়ানো হচ্ছে—যা আপনার ক্যারিয়ারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। অথচ যিনি আসল দোষী, তিনি পার পেয়ে যাচ্ছেন!
এমন পরিস্থিতি কেন হয়? আসুন, বাস্তব উদাহরণসহ বিষয়টি বুঝে নিই।
১. অফিস রাজনীতির শিকার হওয়া
যেখানে মানুষ আছে, সেখানেই রাজনীতি। অফিসও তার ব্যতিক্রম নয়। কোনো সহকর্মী আপনার উন্নতি বা সুনাম সহ্য করতে না পেরে ইচ্ছাকৃতভাবে গুজব ছড়াতে পারে।
বাস্তব উদাহরণ:
সুমনা একটি ব্যাংকে কাজ করতেন। তিনি পরিশ্রমী হওয়ায় বস তার ওপর আস্থা রাখতেন। এটি সহকর্মী রিনার ভালো লাগছিল না। রিনা চুপিচুপি অন্য সহকর্মীদের কাছে ছড়াতে লাগলেন যে—“সুমনা বসের প্রিয়পাত্র, তাই তাকে বেশি সুযোগ দেওয়া হয়।” যদিও আসলে এরকম কিছুই ছিল না। ফলাফল, সুমনার ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হলো, অথচ রিনা নিরাপদে থেকে গেলেন।
২. “ভিকটিম” খোঁজা সহজ হয়
অফিসে সবসময় একটা বলির পাঁঠা খোঁজা হয়। কেউ কোনো ভুল করলে অনেক সময় দোষ চাপানো হয় এমন কারও ওপর, যিনি নীরব স্বভাবের বা আত্মপক্ষ সমর্থনে দুর্বল।
বাস্তব উদাহরণ:
মাহির টিমে একটি প্রজেক্ট দেরি হয়ে গেলো। আসল কারণ ছিলো সিনিয়র ডেভেলপারের লম্বা ছুটি নেওয়া। কিন্তু মিটিংয়ে দেখা গেলো মাহির ওপরই দায় চাপানো হলো—কারণ তিনি নতুন, অভিজ্ঞ নন এবং প্রতিবাদ করার মতো আত্মবিশ্বাসীও নন। টিম লিডার আসল দোষীকে আড়াল করলেন, আর গুজব রটে গেলো যে মাহির জন্য প্রজেক্ট দেরি হয়েছে।
৩. ইমেজ ম্যানেজমেন্টের অভাব
আপনি হয়তো চমৎকার কাজ করেন, কিন্তু সহকর্মীদের সঙ্গে নিয়মিত মেলামেশা করেন না। এতে আপনার সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হয়, আর গুজব সহজে বিশ্বাসযোগ্য হয়ে ওঠে।
বাস্তব উদাহরণ:
আরিফ একজন ইঞ্জিনিয়ার। তিনি শুধু নিজের কাজেই মনোযোগী ছিলেন, কারও সঙ্গে গল্পগুজব করতেন না। হঠাৎ একদিন অফিসে গুজব উঠলো যে আরিফ নাকি চাকরি ছাড়তে যাচ্ছেন। তিনি কিছুই বলেননি, না প্রমাণ দিয়েছিলেন। সবাই ধরে নিলো কথাটা সত্যি। অথচ বাস্তবে তিনি চাকরি ছাড়ার কোনো চিন্তাই করেননি। তার চুপ থাকা গুজবকেই শক্তিশালী করে তুলেছিলো।
৪. দোষী লোকের “নেটওয়ার্ক শক্তিশালী” হওয়া
অফিসে যিনি আসল দোষী, তিনি যদি প্রভাবশালী বা বসের কাছের মানুষ হন, তবে তাকে ঘিরে নেতিবাচক কিছু ছড়াতে সাহস করে না কেউ। বরং কম প্রভাবশালী কারও ওপর দোষ চাপানো সহজ হয়।
বাস্তব উদাহরণ:
তাহসিনের টিমে একজন সিনিয়র ম্যানেজার সবসময় প্রজেক্টের ফাইল দেরিতে দিতেন। কিন্তু তিনি বসের খুব কাছের ছিলেন। তাই টিমে যখন কাজ দেরি হলো, গুজব রটলো যে জুনিয়র কর্মী তাহসিন দায়িত্ব ঠিকমতো পালন করেনি। বসও ব্যাপারটা খতিয়ে না দেখে গুজবকেই সত্যি ধরে নিলেন।
৫. আপনার “ভালোমানুষি”কে দুর্বলতা ভাবা
যারা সোজাসাপ্টা, সৎ আর সহজ-সরল, অনেক সময় তারা অফিসে সহজ টার্গেটে পরিণত হন। কারণ, তাদের বিরুদ্ধে গুজব ছড়ালে তারা খুব একটা পাল্টা প্রতিক্রিয়া দেখান না।
বাস্তব উদাহরণ:
লুবনা অফিসে সবার সাথে ভালো ব্যবহার করতেন, কারও সঙ্গে ঝামেলায় জড়াতেন না। একসময় গুজব উঠলো যে তিনি নাকি অন্য টিমকে তথ্য দেন। তিনি প্রতিবাদ না করে চুপ ছিলেন। ফলে অনেকে সেটিকে সত্যি ভেবে নিলো। আসল দোষী যিনি ছিলেন, তিনি আড়ালে থেকে গেলেন।
তাহলে কী করবেন?
• ইমেজ তৈরি করুন – নিয়মিত সহকর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন, যাতে ভুল ধারণা জন্ম না নেয়।
• গুজব হলে নীরব থাকবেন না – পরিষ্কারভাবে জানান, সত্যি কী।
• ডকুমেন্টেশন রাখুন – কাজের প্রমাণ, ইমেইল বা রিপোর্ট সবসময় সংরক্ষণ করুন।
• বিশ্বস্ত নেটওয়ার্ক তৈরি করুন – সহকর্মীদের মধ্যে কয়েকজনকে আস্থাভাজন করুন, যারা প্রমাণ দিতে পারবেন।
• প্রফেশনাল থাকুন – আবেগী হয়ে প্রতিক্রিয়া না দেখিয়ে যুক্তিসঙ্গতভাবে জবাব দিন।
উপসংহার
অফিসে গুজব ছড়ানো প্রায়শই অন্যের স্বার্থ রক্ষার হাতিয়ার। এতে আসল দোষী পার পেয়ে যায়, আর নির্দোষ ব্যক্তি ভোগেন। তবে মনে রাখবেন, সঠিক যোগাযোগ, প্রমাণ রাখা এবং আত্মপক্ষ সমর্থনে সচেতন হলে গুজবের প্রভাব অনেকটাই কমানো যায়। শুধু ভালো কর্মী হওয়া যথেষ্ট নয়, অফিসে টিকে থাকতে হলে আপনাকে নিজের ইমেজ এবং অবস্থানও সুরক্ষিত রাখতে হবে।
©somewhere in net ltd.