![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি খুবই সাদামাটা একজন মানুষ। শখের বশে লেখালেখি শুরু করেছি। চেষ্টা করি প্রতিনিয়ত কিছু না কিছু লেখার। পছন্দ করি বই পড়তে।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার: পরিবার ও সমাজে তার প্রভাব এবং প্রতিকার
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার আজকের বিশ্বের অন্যতম বিপজ্জনক সামাজিক ব্যাধি হিসেবে পরিচিত। এটি শুধু ব্যক্তিকেই ধ্বংস করে না, বরং পরিবার, সমাজ এবং এক পর্যায়ে পুরো জাতিকে আক্রান্ত করে। বাংলাদেশেও এই সমস্যার বিস্তার আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। মাদক গ্রহণের ফলে ব্যক্তি ধীরে ধীরে নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ হারায়, তার পারিবারিক ও সামাজিক সম্পর্ক ভেঙে পড়ে এবং সে এক সময় সমাজবিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। আজ ২৬ জুন আন্তর্জাতিক মাদকবিরোধী দিবস উপলক্ষে আমরা এই প্রবন্ধে মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, অপব্যবহারের কারণ, পরিবার ও সমাজে এর প্রভাব এবং প্রতিকারমূলক করণীয় নিয়ে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করব।
মাদকদ্রব্যের সংজ্ঞা ও প্রকারভেদ
মাদকদ্রব্য বলতে এমন কোনো রাসায়নিক পদার্থকে বোঝানো হয়, যা গ্রহণের ফলে ব্যক্তির মস্তিষ্কে প্রভাব ফেলে এবং তার আচরণ, অনুভূতি ও চিন্তাশক্তির পরিবর্তন ঘটায়। এ ধরনের পদার্থ শরীর ও মনের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলে, এবং দীর্ঘমেয়াদি ব্যবহারে এটি শারীরিক ও মানসিক আসক্তির জন্ম দেয়। মাদকদ্রব্য সাধারণত তিনটি ভাগে বিভক্ত—প্রাকৃতিক, আধা-কৃত্রিম ও কৃত্রিম। প্রাকৃতিক মাদক যেমন গাঁজা ও আফিম, আধা-কৃত্রিম যেমন হেরোইন এবং কৃত্রিম মাদক হিসেবে ইয়াবা ও আইস উল্লেখযোগ্য।
ব্যবহারের ধরণ অনুযায়ী মাদকদ্রব্য ইনজেক্টেবল (যেমন হিরোইন), ইনহেলেবল (যেমন গাঁজা) এবং ওরাল (যেমন ফেন্সিডিল) হিসেবে শ্রেণিবদ্ধ করা যায়। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ইয়াবা, গাঁজা, ফেন্সিডিল, হেরোইন এবং সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত 'আইস' অত্যন্ত ভয়াবহ হারে ছড়িয়ে পড়েছে। তরুণ সমাজের একটি বড় অংশ এসব মাদকের নেশায় জড়িয়ে পড়ছে, যা জাতির ভবিষ্যৎকে অন্ধকারে ঠেলে দিচ্ছে।
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহারের কারণ
মাদক গ্রহণের পেছনে নানা সামাজিক, মানসিক ও পারিপার্শ্বিক কারণ রয়েছে। মানসিক চাপ, হতাশা এবং একাকীত্ব অনেক সময় মাদক গ্রহণের পথে মানুষকে ঠেলে দেয়। বিশেষ করে যুব সমাজে আত্মপরিচয়ের সংকট এবং জীবনের উদ্দেশ্যহীনতা এই সমস্যাকে আরও ঘনীভূত করে। বন্ধুদের প্ররোচনা, আধুনিকতার নামে ‘কুল’ হওয়ার প্রবণতা, এবং ফ্যাশনের অনুসরণ করাও অনেককে মাদকের দিকে ঠেলে দেয়।
পরিবারে নজরদারির অভাব, সঠিক অভিভাবকত্বের ঘাটতি, এবং বাবা-মা’র সঙ্গে সন্তানের দূরত্ব অনেক সময় কিশোর-তরুণদের বিপথে পরিচালিত করে। পাশাপাশি, ইন্টারনেট ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাদকের গ্ল্যামারাইজেশন এবং সহজলভ্যতার সুযোগ এই প্রবণতাকে আরও উসকে দেয়। দেশের সীমান্ত এলাকায় মাদকের সহজ প্রবেশ এবং আইনের দুর্বল প্রয়োগ মাদকবাণিজ্যকে সহজ করেছে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তুলছে।
পরিবারে মাদকের প্রভাব
মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার কোনো ব্যক্তির একক সমস্যা নয়; এটি তার পরিবারের প্রতিটি সদস্যকে সরাসরি বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত করে। মাদকাসক্ত ব্যক্তির কারণে পরিবারে দাম্পত্য কলহ, পারিবারিক ভাঙন এমনকি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। একজন আসক্ত ব্যক্তি তার আচরণে পরিবর্তন আনে, যা পরিবারে সহানুভূতি ও ভালোবাসার পরিবেশ ধ্বংস করে দেয়।
সন্তানদের মানসিক বিকাশ বাধাগ্রস্ত হয়, তারা চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে এবং ভবিষ্যৎ সম্পর্কে ভীত ও অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। পরিবারের অর্থনৈতিক কাঠামো নষ্ট হয়ে যায়, কারণ মাদকের জন্য প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়, যা পরিবারকে নিঃস্ব করে তোলে। অনেক সময় দেখা যায়, আসক্ত ব্যক্তির কারণে পরিবারের অন্য সদস্যদের সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে হয় এবং পারিবারিক সম্পর্কের অবনতি ঘটে।
সমাজে মাদকের প্রভাব
একটি সমাজ তখনই সুস্থ ও স্থিতিশীল থাকে, যখন তার নাগরিকরা সুস্থ মানসিকতা ও মূল্যবোধে উজ্জীবিত থাকে। কিন্তু যখন সমাজে মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সামাজিক কাঠামো হুমকির মুখে পড়ে। মাদকাসক্তদের একটি বড় অংশ অপরাধের সাথে জড়িত হয়ে পড়ে—চুরি, ছিনতাই, ডাকাতি, এমনকি খুনের মতো অপরাধে লিপ্ত হয়।
এর ফলে সমাজে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটে এবং নাগরিকদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ে। তরুণ সমাজ, যারা একটি জাতির ভবিষ্যৎ, মাদকাসক্তির ফলে তাদের সম্ভাবনা হারিয়ে ফেলে। শিক্ষাঙ্গনে ড্রপআউটের হার বৃদ্ধি পায়, মেধাবী শিক্ষার্থীরা নেশার কারণে পিছিয়ে পড়ে এবং কর্মসংস্থানের অযোগ্য হয়ে পড়ে। কর্মক্ষেত্রে অযোগ্যতা, বেকারত্ব এবং আর্থিক অনিশ্চয়তা সমাজে একটি চক্রাকারে ঘূর্ণায়মান সমস্যায় পরিণত হয়। এসবই শেষ পর্যন্ত সমাজে অনৈতিকতা, সামাজিক বিচ্ছিন্নতা এবং বিভাজনের জন্ম দেয়।
প্রতিকারমূলক উদ্যোগ ও করণীয়
মাদকদ্রব্যের এই ভয়াবহতা থেকে সমাজকে রক্ষা করতে হলে প্রতিরোধ ও পুনর্বাসন—এই দুটি কৌশল একসঙ্গে গ্রহণ করতে হবে। প্রথমত, পরিবারের ভেতরেই একটি সহানুভূতিপূর্ণ এবং সচেতন পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সন্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে তোলা, তাদের আচরণ ও মানসিক অবস্থার প্রতি যত্নবান হওয়া, এবং খোলামেলা আলোচনার মাধ্যমে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা যেতে পারে।
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে নিয়মিত মাদকবিরোধী সচেতনতামূলক কার্যক্রম চালু করতে হবে। ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ শিক্ষার মাধ্যমে তরুণদের মাদক থেকে দূরে রাখা সম্ভব। গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মাদকের কুফল সম্পর্কে ব্যাপক প্রচার চালাতে হবে। সরকারের দায়িত্ব আইনের কঠোর প্রয়োগ, সীমান্তে নজরদারি বৃদ্ধি, এবং মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
পুনর্বাসনের ক্ষেত্রে মানসম্মত ও পেশাদার পুনর্বাসন কেন্দ্রের গুরুত্ব অপরিসীম। মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের শুধু শারীরিক চিকিৎসা নয়, মানসিক কাউন্সেলিং এবং পরবর্তী সহায়তাও নিশ্চিত করতে হবে, যাতে তারা সমাজে পুনরায় স্বাভাবিকভাবে ফিরে আসতে পারে। এই লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বিত কার্যক্রম অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
উপসংহার
মাদকদ্রব্যের বিরুদ্ধে লড়াই শুধু সরকারের একক দায়িত্ব নয়; এটি একটি সামাজিক যুদ্ধ যেখানে পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় সংগঠন, গণমাধ্যম এবং প্রশাসন—সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা অপরিহার্য। আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মাদকাসক্ত ব্যক্তির পেছনে একটি পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে, একটি সমাজ ভেঙে পড়ছে এবং একটি জাতি পিছিয়ে যাচ্ছে। তাই সময় এসেছে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ মিলিয়ে সক্রিয়ভাবে এগিয়ে আসার। মাদকমুক্ত সমাজ গঠনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে এবং একটি সুন্দর, সুস্থ ও নিরাপদ ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে।
সাখাওয়াতুল আলম চৌধুরী
২| ২৬ শে জুন, ২০২৫ রাত ৯:২৮
নতুন নকিব বলেছেন:
মাদকদ্রব্যের ‘অপব্যবহার’ শব্দটি প্রকৃতপক্ষে যথার্থ নয়। কারণ, ‘অপব্যবহার’ বললে তাৎপর্য দাঁড়ায় যে মাদকদ্রব্যের ‘সঠিক ব্যবহার’ও রয়েছে—যা সাধারণত নেশাজাতীয় মাদকদ্রব্যের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এই কারণে, এ ধরনের শব্দচয়ন বিভ্রান্তিকর হতে পারে। বরং উপযুক্ত হতে পারে এইভাবে বলা: ‘মাদকদ্রব্যের বিস্তার: পরিবার ও সমাজে এর প্রভাব ও প্রতিকার।’
ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৬ শে জুন, ২০২৫ রাত ৯:২০
কামাল১৮ বলেছেন: মাদকের ভালো ব্যবহার কেনটা।