নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
শমশের আলী ।
বয়স আনুমানিক ৪৫ । মাঝারী আকৃতির গোল গাল শরীরের গঠন । মুখের দিকে তাকালে সবার আগে চোখে পরে বাম গালের উপর দুই ইঞ্চি লম্বা একটা কাটা দাগ ।
এই দাগ শমশের আলীর চেহারায় একটা রাগি রাগি ভাব এনে দিয়েছে । হঠাৎ দেখলে জেল পলাতক দাগী আসামী মনে হয় । শমশের আলীর বাড়ি কোন জেলায় সেটা সে কাউকে বলে না । কয়েকটি জেলার ভাষায় সে অনর্গল কথা বলে যেতে পারে । তাই করো পক্ষে সহজে অনুমান করা সম্ভব নয় আসলে কোন জেলায় তার বাড়ি । অত্যন্ত প্রখর স্মরণশক্তির অধিকারী এই লোকটা । কোন একটা বিষয় একবার শুনলে সহজে তা আর সে ভুলে না ।
পল্টনের মোতালেব টাওয়ারে সুপারভাইজার,ম্যানেজার যা ই বলা হোক না কেন সেই সব । তার কথাই শেষ কথা । সব মিলিয়ে পুরো বিল্ডিং অফিসের সংখ্যা প্রায় আশি । সবার কাছ থেকে ভাড়া তোলা । সে টাকা মালিকের একাউন্টে জমা দেওয়া । বিদ্যুৎ, পানি বিল । বিল্ডিং মেরামত সব একা নিজ হাতে সামলায় সে । তাই তার কদর মালিকের কাছে কম না । মালিক পক্ষের পছন্দের লোক হওয়ায় খবর দারির কোন কমতি নেই । পান থেকে চুন খসলেই আর কারো রক্ষা নাই । শারীরিক শাস্তি থেকে শুরু করে বেতন কাটা,ছাটাই করা সবই সে করে নিপুণ দক্ষতার সাথে । নাইট গার্ড,সুইপার, ক্লিনার সব মিলিয়ে দশ থেকে বারোজন শমসের আলীর আন্ডারে কাজ করে । তার আন্ডারে যারা কাজ করে তাদের জন্য শমশের আলীর কথাই শেষ কথা । সে ই এই বিল্ডিংয়ের মালিক । ভাল লাগলে কাজ করো নয়তো রাস্তা মাপ । সুইপার,ক্লিনারদের ডিউটি সন্ধ্যার মধ্যে শেষ হয়ে যায় । সন্ধ্যার পর পুরো বিল্ডিং চলে যায় নাইট গার্ডদের দখলে । তাদের চোখ এড়িয়ে একটা মশা, মাছিও বিল্ডিঙের ভেতর ঢুকতে বা বের হতে পারে না । নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা যাকে বলে ।
দিনে তিনজন, রাতে পাঁচজন গার্ড পালা করে বিল্ডিং পাহারা দেয় । শমসের আলী থাকে গ্রাউন্ড ফ্লোরে পার্কিং লটের পাশে ছোট্র একটি কামরায় । তার কামরার দেয়ালের গা ঘেষে পর পর কয়েকটা চৌকি বিছিয়ে অন্যান্য গার্ডদের থাকার জায়গা করা হয়েছে । তাই কেউ ডিউটি ফাকি দিয়ে বিছানায় এসে ঘুমাতে পারে না । রাতে দু'তিনবার শমসের আলী যখন রাউন্ডে বের হয় তখন সে লিপট ব্যবহার করে । সে সময় তার কাছে নিজেকে জমিদার, জমিদার মনে হয় । শমশের আলী ক্ষমতা ভোগ করে । ক্ষমতা সত্যি এক উপভোগ্য জিনিস । যে তা ভোগ করে সেই জানে এর আসল মজা ।
আজ সকাল থেকে বদরুলের শরীর ভাল নেই । জ্বর জ্বর লাগছে সেই সাথে একটু পরপর বর্মি বর্মি ভাব হচ্ছে । মনে হচ্ছে, বর্মিটা হয়ে গেল শরীরটা আরাম লাগত । সব হালকা হয়ে যেত । কিন্তু বর্মি হচ্ছে না । মুখ তেতো হয়ে আছে ।
সারা দিন বিছানায় শুয়ে, বসে কাটিয়েছে । মাথা ভারী হয়ে আছে । সারারাত ডিউটি করার পরও এক ফোটা ঘুমাতে পারে নাই । চোখ দু'টো তাই জবা ফুলের মতো টকটকে লাল হয়ে আছে । যে কবারই তন্দ্রার মতো একটা ভাব এসেছে সে কবারই এলোমেলো দু:স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙ্গে গেছে । দুপুরে খাওয়াও হয়নি । খেতে ইচ্ছে করছে না । খাবার পরে আছে বিছানার পাশে । কয়েটা মাছি তাতে ভন ভন করছে । সেদিকে চোখ যেতেই বর্মি বর্মি ভাবটা যেন আরো বেড়ে যাচ্ছে । যে মহিলা এখানে কাজ করে সবাই তাকে খালা বলে ডাকে দেখে বদরুল ও তাকে খালা ডাকতে শুরু করেছে । খালাকে কতোবার যে, সে বলেছে,"খালা আমারে যখন খাবার দিবা তখন কিছু দিয়া ঢাইকা দিয় ।" কিন্তু কে শুনে কার কথা । খালা উল্টা ঝামটা মেরে বলে, "ঢাকমু কি দিয়া ? তোমার খাবার ঢাকলে অন্যেরে খাবার দিমু কিসে ?" বদরুল মনে মনে ঠিক করে রেখেছে, বেতন পেয়ে এক জোড়া থালা বাসন কিনবে । তার আগ পর্যন্ত এ সব সহ্য করা ছাড়া উপায় নাই । তবে, খালার মেয়ে মর্জিনা যতবার খালার বদলি হিসাবে কাজ করতে আসে । সে তখন বদরুলের কথা শুনে । যত্ন করে খাবার ঢেকে রাখে । মাছের বড় টুকরাটা দেয় । তার টুক টাক কথায় মিটমিট করে হাসে । বদরুলের মর্জিনাকে ভাল লাগে । মেয়েটা মন্দ না । আগে নাকি তার একটা বিয়ে হয়েছিল । টিকে নাই । জামাই নেশাখোর । মাইরধোর করতো । নেশা কইরা এইখানে সেইখানে পইরা থাকতো । শেষে কোলে একটা মাইয়া ধরায় দিয়া কাইটা পরছে । সেই মাইয়ার নাম, আয়না বিবি। মজিনা তারে আয়না বিবি'র গল্প শোনায় । বদরুল মুগ্ধ হয়ে সে্ই গল্প শোনে । আয়না বিবি'র বাপের অনেক দিন কোন খোজ খরব নাই । খালা বলে, "ভালাই হইছে । মাইয়াডা আমার মাইরের হাত থোন তো বাচছে । কুত্তার বাচ্চায় মাইনষের জাত ই না ।"
বদরুলদের চৌকিগুলো থেকে একটু দূরেই ইটাদিয়ে চুলা বানিয়ে রান্নার জায়গা করা হয়েছে। বদরুলের বিছানা থেকে সব দেখা যায় । মর্জিনা যখন বসে মশলা বাটে তখন ব্লালাউজের ফাঁক দিয়ে তার ফর্সা ভারী বুক দেখে বদরুলের ভেতরটা ক্যামন যেন করে উঠে । প্রথম, প্রথম সে চোখ সরিয়ে নিত । কিন্তু এখন আড় চোখে তাকিয়ে মর্জিনার ভারি বুক উঠানামা করতে দেখে । থলথলে পাছা দেখে । মিজিনা সেটা বুঝতে পেরেও না দেখার ভান করে । হয়তো বদরুলকে প্রশ্রয় দেয় । মাঝে মাঝে সে মর্জিনারে ঘুমের মধ্যে স্বপ্নে দেখে । সেই সব স্বপ্নের বেশির ভাগই হয় খুব খোলা মেলা । বদরুলের মনে মর্জিনারে নিয়া কু চিন্তা ঘোরাফেরা করে । সে নিজেরে ছি: ছি: বলে ধিক্কার দেয় । মনে মনে বলে, এইডা পাপ । এইডা গোনাহ । তবুও মনের ভেতর কিছু একটা উকি ঝুঁকি মারতে থাকে । শরীর গরম হয়ে যায় । অস্থির, অস্থির লাগে । বদরুলের মনে মর্জিনা নামক নেশা বাড়তে থাকে ।
গতরাতে তেরো তলায় ডিউটি করার সময় বদরুলের সাথে এক অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে । ঘটনাটা সামান্য হলেও মনের ভেতর দাগ কেটে আছে । কিছুতেই ভুলতে পারছে না । নতুন চাকরী তাই উল্টা পাল্টা কিছু বলে চাকরীটা হারাতে চায় না । তাই ঘটনাটা কারো সাথে শেয়ার করে নাই । গতরাতে ও যখন তেরো তলার করিডোরে হাটাহাটি করছিল, ঠিক তখন একটা মেয়ে চৌদ্দ তলা সিঁড়ি থেকে নেমে ওর কাছে জানতে চায় ওয়াশরুমটা কোন দিকে । চৌদ্দ, পনের তলার আইটি অফিস দু'টা সারারাত খোলা থাকে । তাই মেয়েটিকে দেখে ও খুব একটা অবাক হয়নি । ভেবেছে হয়তো আইটি অফিসের কেউ হবে । নিজেদের ফ্লোরের ওয়াশরুম জ্যাম হয়ে গেলে তারা অনেক সময় নিচের ওয়াশরুম ব্যবহার করে । বদরুল আঙুল দিয়ে সিঁড়ির পাশের ওয়াশরুমটা দেখিয়ে দিয়ে একটু সড়ে গিয়ে এমন ভাবে দাড়ায় যেন মেয়েটা ওয়াশরুম থেকে বের হলে দেখা যায় । ঘড়িতে তখন কাটায় কাটায় তিনটা বাজে । অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পরেও মেয়েটা ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে না আসলে । বদরুল ওয়াশরুমের বাহিরে গিয়ে ডাক দেয়,ম্যাডাম, এ্যই যে ম্যাডাম শুনতে পাইতাছেন । কিন্তু ভেতর থেকে কেউ উত্তর দেয় না । আরো কিছু সময় দাড়িয়ে থাকার পর বদরুল হাতের লাঠিটা শক্ত করে চেপে ধরে ওয়াশরুমের ভেতরে ঢুকে । হাতের বা পাশে পরপর চারটা টয়লেট । শেষে মাথায় তিনটে সাদা রংয়ের ভেসিন। দরজায় দাড়িয়েই দেখা যায় । শেষ মাথায় ষাট ওয়াডের একটা বাতি জ্বলছে । টয়লেটগুলোর দরজা বন্ধ থাকায় সে একে একে তিনটা টয়লেটের দরজা খুলে দেখে । অন্যটার দরজা খোলাই ছিল । ভেতরে কেউ নাই । অথচ এখান থেকে বের হওয়ার অন্য কোন দরজা নেই । আরে; আজব তো ! মাইয়াডা গেল কই ? সে নিজের নিজেকেই যেন প্রশ্ন করে । ব্যাপাটায় বদরুল একটু ঘাবড়ে যায় । কেমন যেন ভয় ভয় লাগে । বুকের ভেতর ধুক ধুক শব্দটা বাড়তে থাকে । ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে করিডোরে এসে বদরুল, ও ম্যাডাম, ও ম্যাডাম বলে ডাকতে থাকে ।
বদরুলে ডাকাডাকি শুনে বারো তলায় ডিউটিরত, স্বপন পাল তেরো উঠে এসে জিজ্ঞাসা করে,কি রে কি হইছে ? কারে ডাকপারোস ? বদরুল তাকে হাউ কাউ করে সব খুলে বলে । সব শুনে স্বপন বদরুলকে বারো তলায় নিয়ে এসে বলে, তুইও দেখলি ?
আমিও মানে কি ? তুমিও দেখছ নাকি ? স্বপন বয়সে বদরুলের বছর পাঁচেক বড় হবে । তবুও সে তারে নাম ধরে ডাকে । তবে তুমি করে সন্মধন করে । কে কি ডাকল তা নিয়ে স্বপন মাথা ঘামায় না । তার সাথে সবার সমান ভাব । সে সবার সাথে মিশে ।
"শুধু আমি না, অনেকেই দেখছে । তয় এই কথা কাউরে কইতে যাইস না । তাইলে চাকরী যাইবো ।"
"কেন ? চাকরী যাইবো ক্যান ?" চাকরী যাওয়ার কথা শুনে বদরুল অবাক হয় ।
"জানিনা কেন যাইবো । তেরো তলাডা ভালা না রে । ঐখানে একা যাইস না । খারাপ জিনিস থাকে । আমিও তোর মতো দেখছিলাম । তয় আমি দেখছিলাম । তেরো তলার সিঁড়ির শেষ মাথায় দাড়ায় থাকতে । ভয় পাই নাই । কে, কে করতে করতে উপরে উইঠা দেখি কেউ নাই । এই সব কথা সবাই জানলে বিল্ডিংয়ের বদনাম হইবো । কেউ ভাড়া আইতে চাইবো না । দেখছ না তেরোতে এমনিতেই কোন ভাড়াট্টা নাই ।" পুরো ব্যাপারটা ভৌতিক না হলেও বদরুল ক্যামন যেন ভয় পেয়ে যায় । রাতের বাকিটা সময় সে স্বপ্ননের সাথেই বারো তলায় চেয়ারে বসে থাকে । এর মধ্যে কারেন্ট গেছে তিন বার । সে সময় যেন সে সিড়িতে কারো ছায়া দেখতে পেয়েছে । বারবার মনে হচ্ছিল সিড়িতে দাড়িয়ে কেউ তার দিকে তাকিয়ে আছে । স্বপন কে বলার পর সে হেসে বলেছে, এইডা তোর মনের ভুল । বারোতে কোন সমস্যা নাই । চুপচার বইসা আল্লাহ্, খোদার নাম নে । ভোর রাতের দিকে সে টের পায় তার জ্বর আসছে ।
আজ রাতে বদরুলের কিছুতেই ডিউটি যেতে ইচ্ছে করছে না । ছুটির জন্য দু'বার শমসের আলীর কাছে গিয়েও কোন লাভ হয়নি । শমসের আলী চোখ রাঙ্গিয়ে বলেছে , "কেন রে বাপ, নতুন বিয়া করেছিস নাকি ? বউয়ের জন্য কি চ্যাট জ্বলছে ? শরীর টানছে ? যা গিয়া ডিউটি কর । কোন ছুটি নাই । আর যদি কাম করতে ভালা না লাগে তা হইলে বাড়ি চইলা যা । কাল থেইকা আর তোরে দরকার নাই ।"
বদরুল মুখে কিছু না বললেও মনে মনে ভাবে রড দিয়া লোকটার মাথায় একটা বারি মাইরা দেশে চলে যাবে । কিন্তু অভাবের কথা মনে হতেই সে চিন্তাটা মাথা থেকে বাদ দিয়ে বিছানায় ফিরে গিয়ে খেতে বসে । ঠান্ডা ভাত, মাছ গপ গপ করে খেতে থাকে । নিজের দরিদ্রতার জন্য রাগে তার শরীর কাপতে থাকে ।
চলবে ...................
আমি "পরী'কে" ভালবাসি (ভৌতিক রহস্য গল্প ) ১ম পর্ব
আমি "পরী'কে" ভালবাসি (ভৌতিক রহস্য গল্প ) ২য় পর্ব
১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৫৩
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: প্রচন্ড ব্যস্ত থাকি । লেখার সময় পাই না । তবে ইনশা্ আল্লাহ এটা শেষ করবো । মন্তব্যের জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ
২| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:২২
জীবন সাগর বলেছেন: ভালই লাগলো গল্প পড়ে।
২২ শে জানুয়ারি, ২০১৭ বিকাল ৪:০৬
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: ধন্যবাদ , শুনে ভাল লাগলো .............
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে জানুয়ারি, ২০১৭ দুপুর ১২:৪৯
শাহাদাৎ হোসাইন (সত্যের ছায়া) বলেছেন: আনেক দিন পর তৃতীয় পর্বটা দিলেন। তবে, গল্প ভৈৗতিক হলেও বাস্তবতাকে এড়িয়ে যায়নি, সেদিক দিয়ে পরী সফল।
সামনের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।