নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
"গড ফাদার" আল পাচিনো অভিনীত বিখ্যাত ছবিটি কে কে দেখেছেন ? না দেখলে দেখে নিতে পারেন ভাল লাগবে । যাই হোক আমার আজকের বিষয় ফাদার মাদার কিছু নয় । সরাসরি চলে আসি মূল বিষয় ।
জমে উঠেছে বন্দর নগরী নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের প্রচারণা। এই জমে উঠার পেছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে । যতোটা না রাজনৈতিক তার চেয়ে বেশি ব্যক্তিগত টানাপোড়নের জন্য এই নির্বাচন সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে । নির্বাচন কমিশন এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে তাদের হারানো গৌরব ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করে দেখতে পারে। এটা তাদের জন্য একটা সুযোগ ।
সবাই জানে ওসমান পরিবার তিন পুরুষ যাবত নারায়ণগঞ্জে বেশ দাপটের সাথে শাসন করছে। মাঝখানের কিছুটা সময় বাদ দিলে কোন সন্দেহ নাই, আওয়ামীলীগ যে,আজ নারায়ণগঞ্জে টিকে আছে সেটা এই ওসমান পরিবারের দুই ভাইয়ের জন্য। আওয়ামী নেতা মন্টু'কে দল থেকে বহিষ্কারের পর সন্ত্রাস,চাঁদাবাজির স্বর্গরাজ্য নারায়ণগঞ্জ এক প্রকার আওয়ামীলীগ শূন্য হয়ে পড়েছিলো। শেখ হাসিনাকেও এক সময় নারায়ণগঞ্জে অবাঞ্ছিত করা হয়েছিলো।
তখন কিন্তু কোন নেতা এগিয়ে আসেননি ।
মারামারি করে বলুন আর সন্ত্রাস করেই বলুন এই শামিম ওসমান বাহিনীই সেখানে আবার আওয়ামীলীগের রাজনীতি ফিরিয়ে এনেছে । আর এই কারণে দলের হাই কমান্ড থেকে শুরু করে কেউ ই ওসমান পরিবারের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না । কারণ সবাই ভাল করেই জানে , শামিম ওসমান না থাকলে, নারায়ণগঞ্জে আওয়ামীলীগের রাজনীতি রাতারাতি তলানিতে গিয়ে ঠেকবে । সে কারণেই সন্ত্রাসের তকমা শরীরে থাকলেও শামিম ওসমান এখনো কান্ডারী হয়ে রয়ে গেছেন । হয়তো মৃত্যুর আগ পর্যন্ত থাকবেন ।
অন্যদিকে বর্তমান আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীও কিন্তু রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান । ওনার বাবা আলী আহম্মদ স্বাধীনতার পর অনুষ্ঠিত নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে জয় লাভ করে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। আইভী ও নারায়ণগঞ্জ পৌরসভার মেয়র ছিলেন । যদি নারীর ক্ষমতায়ানের কথা বলি, তাহলে বলতে হবে, তিনি বাংলাদেশের সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নারী মেয়র।
কথায় আছে, নারায়ণগঞ্জে নাকি টাকা উড়ে । সেটা শুধু ধরতে জানতে হয় । "পোর্ট অব ভেনিস" এর মতো নারায়ণগঞ্জে ও গড়ে উঠেছে হাজার হাজার ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পাট,গার্মেন্টসসহ নানা শিল্পকারখানা । পৃথিবীর অন্যসব বন্দরের মতো তাই নারায়ণগঞ্জ ও নিয়ন্ত্রণ করে আসছে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন গ্রুপ বা দল। আধুনিক রাজনীতির ছোঁয়ায় সেটা হয়ে উঠেছে পেশি শক্তির মূল হাতিয়ার ।
বুনো ওয়েস্টার্নের মতো , বাঁচতে হলে, নেতৃত্বে থাকতে হলে সেখানে সন্ত্রাস ও পেশি শক্তির আশ্রয় নিতেই হবে । সেই সাথে চাই রাজনৈতিক সহযোগিতা । যার মাথার উপর রাজনৈতিক ছায়া আছে সেই সেখানে, গড ফাদার বা গড মাদার । তাই বলতে বাধ্য হচ্ছি, শামিম ওসমান যদি নারায়ণগঞ্জের গডফাদার হন তাহলে আইভী রহমান হচ্ছেন,পৃথিবীর প্রথম চিকিৎসক গড মাদার । কেননা সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দেবার জন্য ওনার ও আছে বিশাল সন্ত্রাসী বাহিনী ।
গত সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আমরা দেখেছি, শামিম ওসমানকে নমিনেশন দেওয়ার পরেও তিনি আওয়ামীলীগ থেকে পাশ করতে পারেন নাই। নমিনেশন চেয়ে ব্যর্থ হওয়া আইভি রহমান স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জয় লাভ করে। ২০১১ সালে নারয়নগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় । সেই নির্বাচনে পৌর কমিশনার বা মেয়র আইভি রহমান । নির্বাচন করে জয় লাভ করেন । এরপর ২০১৬ সালের নির্বাচনেও আইভি রহমান নাটকীয়ভাবে জয়লাভ করেন । যারা সেসব নির্বাচন দেখেছেন তার এসব জানবেন ।
২০১৬ সালের আইভি রহমানের এই জয়ের পেছনে দু'টি ইস্যু কাজ করেছে। তার একটি হল, ত্বকি হত্যা কাণ্ড। মেধাবী ছাত্র তৌকির কথা কি আপনাদের মনে আছে? যেহেতু এই হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ সরাসরি ওসমান পরিবারের দিকে। তাই আইভিকে ভোট দিয়ে জনগণ সেটার জবাব দিয়েছে। ২০১৬ সালে আইভি রহমান বারবার শামিম ওসমানের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে এসেছেন যে, তিনি তাকে কাজ করতে দেন না । সব কাজে বাধা সৃষ্টি করেন । চিত্র নায়িকা কবুরী সারোয়ারের কথা কি মনে আছে ? শামিম ওসমানের সাথে তার ও বিস্তর ঝগড়া ঝাটির কথা মিডিয়ায় এসেছে । ব্যাচারী কবুরী সারওয়ার শেষ পর্যন্ত আর নির্বাচনের জন্য নমিনেশন পাননি । সেই কবুরী সারোয়ার ও কিন্তু ২০১৬ সালের নির্বাচনে ব্যাপক ভূমিকা রেখেছিলো । ওনার প্রতি অন্যায় সিদ্ধান্তগুলোর জবাব নারায়ণগঞ্জবাসী ভোটের মাধ্যমে দিয়েছেন । সেই সব ভোট পেয়েছেন, আইভি ।
২০১৬ সালে আইভি রহমানের জয়ের আর একটি অন্যতম কারণ হচ্ছে, বিএনপি প্রার্থী তৌমুর সাহেবকে হুট করে মধ্যরাতে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াবার নির্দেশ দেওয়া। বিএনপি বরাবর নেতৃত্ব মেধা শূন্য একটি দল। বাঘা বাঘা নেতাগুলোকে ক্ষমতার দাপটে দল থেকে বের করে দেওয়া তারেক রহমান আজ নিজেই দেশ ছাড়া । ইহ জন্মে আর দেশে আসতে পারে কিনা সন্দেহ আছে। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে আওয়ামীলীগ সব কিছু নিজেদের মতো গুছিয়ে নিয়ে এখন গোল শূণ্যমাঠে গোল করেই যাচ্ছে । তারপরেও যে তারা সুখে আছে তা কিন্তু নয়।
আইভী রহমান দীর্ঘ সময় মেয়র থাকলেও নারায়ণগঞ্জের উন্নয়ন তেমন কিছু হয়নি । উল্টো অভিযোগ উঠেছে, আইভী রহমানের আশে পাশে থাকা লোকজন আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়েছেন । সেখানকার জনগণ এ দায় কিন্তু আইভীর সাথে সাথে আওয়ামীলীগকেও দিচ্ছে । তারা সত্যিকার অর্থে একটা পরিবর্তন চাইছে । আর এ কারণেই বেছে নিতে পারেন, তৌমুর সাহেব কে । যদিও বলা হচ্ছে, তৌমুর শামিম ওসমানের প্রার্থী । রাজনীতির খেলায় এ কথাটা যদি সত্য হয়ও তাহলেও সেটা অন্যায় কিছু না । কেননা, শক্রর শত্রু সব সময় বন্ধু ভূমিকা পালন করে । এটা অনেক পুরাতন কথা । যে করে হোক আইভিকে ঠেকাও এমন চিন্তা শামীম ওসমান এখন করতেই পারেন ।
দ্রব্য মূল্য বৃদ্ধি, সন্ত্রাস । ত্যাগী নেতা, কর্মীদের সাইড করে একের পর এক দলের মধ্যে মিশে যাওয়া হাইব্রিড নেতাদের আকাম কুকর্মের ফলে তাদের সব অর্জন ভেস্তে যেতে বসেছে। তার উপর পরপর দুটো জাতীয় নির্বাচনে ভোট নিয়ে নানা অনিয়মের কারণে, শুধু নারায়ণগঞ্জ নয় পুরো দেশেই আওয়ামীলীগ বিরোধী একটি মনো ভাব বিরাজ করছে । আর এই ইস্যুটি কাজে লাগিয়ে , নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে ফলাফলটা যদি তৌমুর সাহেবের দিকে চলে যায় তা হলে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না । তাই আমি ব্যক্তিগত ভাবে মনে করি, নারায়ণগঞ্জ নির্বাচনে এবার তৌমুর জিতবেন হেসে খেলে। কেননা,শামিম ওসমান কিছুতেই আইভিকে আর মেয়র হতে দেবে না। তবে তিনি আর সন্ত্রাস দিয়ে খেলছেন না অভিজ্ঞ রাজনৈতিকের মতো হিসাব করে খেলছেন । একদিকে বিএনপি, জামাত,জাতীয় পাটিসহ শামিম ওসমানের সমর্থনে তৌমুর সাহেব বেশ চাঙ্গা অন্য দিকে আইভি বড্ড একা। যদিও মাথা মোটা বিএনপি তৌমুর সাহেব কে দল থেকে বহিষ্কার করেছে। তবুও বিএনপির সব ভোট তিনি পাবেন। তখন যদি তিনি আবার দলে ফেরত যান কিংবা আওয়ামীলীগে যোগ দেন তাহলে আইভি রহমানের রাজনীতির ইতি ঘটবে এই নির্বাচনে ।
ভাল কথা , নির্বাচন যেনো কবে ?
২| ১৩ ই জানুয়ারি, ২০২২ রাত ১২:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: শুধু নারায়নগঞ্জ না বাংলাদেশের সব এলাকার রাজনীতিবিদদের একই চিত্র।
©somewhere in net ltd.
১| ১১ ই জানুয়ারি, ২০২২ বিকাল ৪:২৬
জুল ভার্ন বলেছেন: বর্তমান বাংলাদেশে ক্ষমতাসীনদের সমর্থকদের ঘরে ঘরে শামীম ওসমান কিম্বা গড ফাদার/গড মাদার।