নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।)
তিন
আচানক ঘুম ভেঙ্গে গেলো ।
চোখ খুলে প্রথমে বুঝতে পারলাম না কোথায় আছি । আবছা আলোয় মশারির বাহিরে চারপাশটা অপরিচিত মনে হচ্ছে । নতুন জায়গা বলে এমটা হচ্ছে, বুঝতে পেরে ভালো করে তাকাতেই ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হয়ে এলো ।
সারা জীবন নিজের ঘরে, নিজের বিছানায় শুয়ে বড় হয়েছি । বাড়ির বাহিরে থেকে অভ্যস্ত নই । পাশে শুয়ে থাকা অনুর দিকে তাকালাম। নি:পাপ শিশুর মতো ঘুমাচ্ছে । অবাধ্য এক গোছা চুল এসে হেলে পড়েছে গালের উপর । আলো আঁধারির খেলায় তাতে ওকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে । ঘুমন্ত অনু যেন জাগ্রত অনুর চেয়েও অনেক অনেক বেশি সুন্দর।
এতো কাছ থেকে কোন নারীকে কোনদিন দেখিনি আমি। ক'দিনে আগেও এমন একটা দৃশ্য কল্পনাতেও ভাবতে পারিনি । অথচ এখন !জলজ্যান্ত একটি মেয়ে আমার পাশে শুয়ে আছে। ভাবতেই পরম পাওয়াত তৃপ্তিতে দেহ,মন পুলকিত হয়ে উঠলো । অনুর জন্য ভালবাসায় বুকের ভেতরটা উথাল পাথাল করে উঠলো । ক্যামন মায়া মায় মুখ করে শিশুর মতো পরম নিশ্চিন্তে ঘুমাচ্ছে মেয়েটা। দেখে খুব মায়া হলো ওর জন্য। মনে মনে বললাম, "অনু প্রিয়তমা আমার, তুমি আমার, শুধুই আমার । পৃথিবীর কোন কষ্টকেই আমি তোমাকে স্পর্শ করতে দিবো না। যতোদিন বাঁচি বুকের ভেতর আগলে রাখবো তোমায়। " নিজের ভেতর জেগে উঠা সিনেমাটিক ভাবনার জন্য হাসি পেয়ে গেলো আমার । আঙুল দিয়ে আলগোছে অনুর মুখের উপর থেকে চুলের গোছাটা সরাতে গিয়ে টের পেলাম অসম্ভব রকমের ঠাণ্ডা হয়ে আছে ওর শরীর । তাকিয়ে দেখি অনুর পাশের জানালাটা খোলা । সেটা দিয়ে হু হু করে বাতাস ঢুকছে ঘরে। এ জন্যই বোধ হয় আমার ঘুম ভেঙ্গে গিয়েছে । ঘরে ফ্যান নেই । ঘুমাবার আগে তাই বাতাস চলাচলের জন্য জানালাটা হালকা করে খুলে রেখেছিলাম । কখন যে সেটা পুরোপুরি খুলে গেছে টের পাইনি ।
শীত এখনো পুরোপুরি আসেনি । আসি, আসি করছে । অথচ ঘরের ভেতরের টেম্পারেচার মনে হচ্ছে শূন্য ডিগ্রীতে নেমে গেছে । দ্রুত উঠে পায়ের কাছ থেকে চাদরটা টেনে নিয়ে অনুর শরীর ঢেকে দিয়ে তারপর বিছানা থেকে নেমে গিয়ে জানালা বন্ধ করে দিলাম ।
আমাদের রুমের ভেতরের ওয়াশরুম'টা পায়ের কাছে । বাথটাবসহ বিশাল আকৃতির এক ওয়াশরুম। অফ হোয়াইট রং এর মস্ত বড় মার্বেল পাথরের বাথটাবের দিকে তাকালে ক্যামন ভয় ভয় লাগে । মনে হয় হুট করে কেউ বের হয়ে আসবে সেটার ভেতর থেকে । বাতি জ্বালিয়ে প্রস্রাব করে এসে পানি খেয়ে আবার শুয়ে পড়লাম । অনু একই ভাবে ঘুমাচ্ছে । আজ শীতটা একটু বেশি বলেই মনে হচ্ছে । বিছানায় উঠে মশারী গুজে । শরীরে চাদর টেনে দিয়ে অনু'র ওর উপর একটা হাত রেখে আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে আবার ঘুমিয়ে গেলাম ।
কতক্ষণ ঘুমিয়েছি বলতো পারবো না । গুটর গুটর শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো । চুলার উপর কড়াই চাপিয়ে খুন্তি দিয়ে তাতে নাড়াচাড়া করলে যে রকম শব্দ হয়,অনেকটা ঠিক সে রকম শব্দ হচ্ছে । শুয়ে থেকেই বুঝতে পারলাম শব্দটা রান্না ঘর থেকেই আসছে । সঙ্গে সঙ্গে মনে হলো, অনু হয়তো কিছু রান্না করছে। কিন্তু পাশে তাকিয়েই চমকে উঠলাম। অনু সেই একই ভাবে শুয়ে ঘুমাচ্ছে । ওর ভারি শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছি ।
তাহলে রান্না ঘরে কে? অনু'র বা পাশে থাকা টেবিল ঘড়িটার দিকে চোখ গেলো । রাত তিনটা বাজে । বিছানা থেমে নেমে ঘরের দরজায় গিয়ে দাঁড়ালাম । শোবার ঘর থেকে বের হলেই ডাইনিং রুম তার বা পাশে কমন ওয়াশ রুম, তার পাশে রান্না ঘর । তাই ঘরের দরজায় দাঁড়ালো পুরো জায়গাটা দেখা যায় ।
রান্না ঘরের বাতি জ্বলছে । স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে রান্না ঘরে কেউ রান্না করছে । গুটর গুটর সেখান থেকেই আসছে । তবে রান্না ঘরের দরজা ভেজানো থাকায় দেখা যাচ্ছে না কে রান্না করছে । আমি রান্না ঘরের দিকে এগিয়ে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দিতেই দেখতে পেলাম, অনু রান্না করছে । চুলার উপড় একটা হাড়ি বসানো । হাতে খুন্তি নিয়ে একহাত দিয়ে হাড়িটা ধরে অন্য হাত দিয়ে অনু গভীর মনোযোগের সাথে সেটা নাড়াচাড়া করছে। আমাকে দরজায় দাঁড়াতে দেখে, আমার দিকে তাকিয়ে ও হাসি দিয়ে বলল, "বাবন, যাও তো ফ্রিজ থেকে দু'টো ডিম বের করে নিয়ে এসো । নুডুলস রান্না করছি ।"
আমি ও সুবোধ বালকের মতো ডাইনিং টেবিলের পাশে থাকা বিশাল বড় ফ্রিজ থেকে দু'টো ডিম বের করে এনে অনুর হাতে দিলাম । ও আবারো সেই ভুবন ভুলানো হাসি দিয়ে বলল, " তুমি শুয়ে থাকো গিয়ে । আমি নুডুলস নিয়ে আসছি । আমি বিছানায় এসে শুয়ে পড়েই আবার ঘুমিয়ে গেলাম ।
সকালে ঘুম ভাঙল অনুর ডাকে ।
চোখ খুলে দেখতে পেলাম অনু গোছল করে এসে আমার পাশে দাঁড়িয়ে চুল মুছছে । হালকা গোলামী রং একটা শাড়ী পরেছে । দেবীর মতো লাগছে ওকে । আমি মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছি । আমাকে অপলোক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতে দেখে হাসি দিয়ে বলল, মশায়ের ঘুম ভাঙল তাহলে ? বাব্বা ! এতো ঘুমাতে পারো তুমি ? সেই কখন থেকে ডাকছি । এতো ঘুমলে বলি ঘর সংসার সামলাবে কি করে ?
আমি কিছু না বলে হাসি দিয়ে ওর হাত ধরে কাছে টেনে নিলাম ।
অনু আমার পাশে বসতে বসতে বলল, এ্যই, ছাড়ো, ছাড়ো । একদম দুষ্টামি না । আমি গোছল করে এসেছি । তুমি ও যাও, গোসল সেরে এসো । তারপর চা খাবে ... প্লিজ, দুষ্টামী করো না সোনা ...
আমি অনু'কে ছেড়ে দিয়ে বললাম, "চা খাবো ? পাবো কোথায় ? ইশ রে, চা তো কাল কিনে আনিনি ।"
অনু বলল, "আমি থাকতে সে নিয়ে আপনাকে ভাবতে হবে না মশাই । সকালে ঘুম থেকে উঠেই দারোয়ানকে দিয়ে চা পাত,চিনি,দুধ আর ব্রেড কিনে আনিয়েছে । তুমি এখন উঠো লক্ষ্মীটি । তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসো । আমার খুব খিদে পেয়েছে যে।
অনুর শেষের কথাটায় আমি লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠলাম । ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি পৌনে ১২টা বাজে । সত্যিই অনেক ঘুমিয়েছি ।
ফ্রেশ হয়ে এসে দেখি, ঘরের মেঝেতে শতরঞ্জি বিছিয়ে তার উপর চা,ব্রেড নিয়ে বসে আছে অনু। আমি শরীর মুছতে মুছতে বললাম, এ্যই মেয়ে, তুমি খাচ্ছো না কেন ? খিদে নিয়ে বসে আছো যে ?
অনু বলল, "তুমি না এলে খাবো কি করে ? কোনদিন কি শুনেছো, বর'কে ফেলে রেখে বউ আগে আগে খেয়ে ফেলে?"
আমি , "বললাম, হয়েছে আরো পাকামো করতে হবে না । শুধু শুধু এতো বেলা পর্যন্ত না খেয়ে বসে আছো। আর কোনদিন এমন করবে না । আমার ঘুম ভাংতে দেরি হলে পানি ঢেলে দিবে । তার পরেও না খেয়ে থাকবে না । বুঝেছো ?
অনু কিছু বলল না , চোখ মুখ কুচতে অদ্ভুত এক ভঙ্গি করে হাসলো । সে দৃশ্য দেখে আমি হেসে উঠে মনে মনে বললাম, এ মেয়েটি এতো সুন্দর কেন ? এর জন্য তো একটি নয় , একশ'টা মানব জন্মও উজাড় করে দেওয়া যায় ।
নিজের বউ বলে বলছি না ।
অনু অসম্ভব ভালো চা বানায় । ব্রেড চুলায় সেকে নরম তুলতুলে করে এনেছে । তা চায়ে ডুবিয়ে খেতে অসম্ভব ভালো লাগছে । খেতে খেতে আমি আড় চোখে অনুকে দেখে নিয়ে বললাম, "আজ তোমার জন্য কেনাকাটা করবো । খেয়ে তৈরি হয়ে নাও ।"
অনু বলল, আমার জন্য কিচ্ছু কিনতে হবে না । ঘরে কি কি লাগবে তার জন্য আমি লিস্ট করে রেখেছি তুমি আগে সেগুলো কিনে আনো । আর একটা কথা শোন, একদম বাজে খরচ করবে না । টাকা জমাতে শেখো। এখন তোমার সংসার হয়েছে । ভবিষ্যতের কথা এখন থেকেই ভাবুন মশাই ।
আমি হেসে বললাম, ওরে বাব্বা ! একদিনেই পাকা গৃহিনী হয়ে উঠেছো দেখি ।
অনু বলল, "গৃহিণীর আর দেখছি কি ? বছর ঘুরতে দাও,তখন দেখবে গৃহিণী কাকে বলে, কত প্রকার।"
অনুর কথাটাকে অন্যদিকে ঘুরিয়ে নিয়ে আমি বললাম, "আমার কিন্তু পুরো এক ডজন ছেলে মেয়ে চাই। একটা ও কমে হলে চলবে না। সারাদিন ছেলে মেয়েরা চারপাশে ঘুরঘুর করবে । বাবা বলে ডাকবে, জ্বালাবে । একটা আরেকটার সাথে ঝগড়া করবে । "
অনু চায়ের কাপে শেষ চুমুক দিয়ে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বলল, "পুরো এক ডজন ? দু'একটা কম হলে চলবে না ?
কথাটা বলেই ও লজ্জায় দৌড়ে পালিয়ে গেলো রান্না ঘরের দিকে । আমিও ছুটলাম ওর পেছন পেছন । রান্না ঘরে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে চুমোয় চুমোয় ভরিয়ে দিলাম।
অনু নিজেকে ছাড়িয়ে নেবার বিন্দুমাত্র চেষ্টা করলো না । শিহরিত তনু,মনে পরম নিশ্চিন্তে নিজেকে আমার বাহুতে সমর্পণ করে চোখ বন্ধ করে রইলো । পরম মমতায় তাকে কোলে তুলে বিছানায় নিয়ে এলাম। যেনো, টুপ করে এক টুকরো স্বর্গ নেমে এলো আমাদের ঘরে ।
চলবে ............
২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:০৬
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: হ্যা , বনানীতে এমন একটা বাড়ি আছে বলে শুনেছি । লেখার সময় সে বাড়িটির কথা বারবার মনে এসেছে । লেখাটা পড়ার জন্য ধন্যবাদ । ভাল থাকবেন ।
২| ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: ভয়ংকর কিছ হবে মনে হচ্ছে।
এমন জরাজীর্ণ বাড়িতে আসলেই ভয় লাগবে
২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৩:০৭
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: পুরোটাই ভয়ংকর । তবে ভুতের ছেয়ে মানুষ বেশি ভয়ংকর বলে মনে হয় আমার কাছে । ধন্যবাদ আপা ভাল থাকবেন ।
৩| ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯
রাজীব নুর বলেছেন: এত রাতে রান্না ঘরে!!
অনু রান্না করছে!!!!
সব মিলিয়ে সুন্দর লেখা। রহস্য আছে।
২৭ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:২৮
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ, সামনে অনেক কিছু আছে। অপেক্ষা করুন...
৪| ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ২:১২
রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ) বলেছেন: অনু বিছানায় ছিল, আবার রান্না ঘরেও ছিল৷ কিন্তু এ নিয়ে সকালে এ নিয়ে কোনো আলাপ আলোচনা করল না কেনো বুঝলাম না।
২৯ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ২:২৪
সাখাওয়াত হোসেন বাবন বলেছেন: গতানুগতিক গল্প হলে এ নিয়ে আলোচনা হতো কিন্তু যেহেতু এটি একটি মনোস্তান্ত্রিক রহস্য উপন্যাস তাই অনেক কিছুই স্বাভাবিক ভাবে পাবেন না। আমরা ঘুমের মধ্যে এমন অনেক আচরণ করে থাকি যা ঘুম থেকে উঠলে আর মনে থাকে না। ধরে নিন এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে... যার ফলে পাঠকের মনে প্রশ্নের উদয় হবে....
সাথে থাকার জন্য ধন্যবাদ
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৯
শায়মা বলেছেন: ভাইয়া এই রকম ভূতুড়ে বাড়ি আমাদের বারিধারাতেও আছে। কেউ ভাড়াও নেয় না। দারোয়ানও টিকে না। মালিক তার চৌদ্দগুষ্ঠি নিয়ে আমেরিকা পালিয়েছে।
গুলশান ২ তেও এমন এক বাড়ি আছে। নাম্বারটা বললাম না। শেষে শয়তান ভূত যদি তার বাড়ির নাম্বার বলে দেওয়ায় আমার সাথে ঝগড়া করতে আসে।
ভূতের সাথে ঝগড়ার টাইম নাই আমার এখন।