নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।) ( গল্পের ধারা বজায় রাখায় জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক কিছু সংলাপ ও মুহূর্ত উঠে এসেছে । সকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । )
ছয়
বারান্দায় দাঁড়িয়ে অনুরাধার কথা ভাবতে ভাবতে আবারো শরীর গরম হয়ে উঠছে দেখে নিজেই শরম পেয়ে গেলাম । নতুন বিবাহিত জীবনে বোধ হয় এমনই হয় । তাবৎ ভাবনার মধ্যে আবারো কাক'টা কা কা করে ডেকে উঠতে সকল ভাবনায় ছেদ পড়লো। সিগারেট লম্বা টান দিয়ে সেটা ফেলে দিয়ে রেলিং ধরে সামান্য ঝুকে আশে পাশে তাকিয়ে কাকটাকে দেখার চেষ্টা করলাম । না দেখা যাচ্ছেনা । ধীরে ধীরে কুয়াশা যেন ঝেকে বসছে । এখানে শীতের প্রকোপের চেয়ে কুয়াশার আধিক্য বেশি বলে মনে হচ্ছে।
হঠাৎ গেটের বাহিরে অন্ধকারে কিছু একটা নড়াচড়া করতে দেখে চোখ আটকে গেলো । ভালো করে তাকাতেই দেখতে পেলাম সন্ধ্যায় বাসার সামনের রাস্তায় পায়চারি করতে দেখা সেই লোকটা এখনো গেটের বাহিরে দাড়িয়ে আমাদের ফ্লাটের দিকে তাকিয়ে আছে । হ্যা,কোন সন্দেহ নাই এই লোকটাকেই সন্ধ্যায় দেখেছিলাম বলে মনে হচ্ছে। সন্ধ্যায় গেট থেকে বের হবার সময় আমার সঙ্গে চোখাচুখি হতে চোখ ফিরিয়ে নিয়ে এমন ভাবে পায়চারি শুরু করেছিলো যেনো সে কারো জন্য অপেক্ষা করছে । বিষয়টা কেন যেন ভালো লাগলো না। লোকটার নিশ্চয় কোন বদ মতলব আছে৷
আমি তাই দারোয়ান মোতালেবকে ডাক দিলাম । নিচ তলায় সিড়ির পাশেই মোতালেবের থাকার ঘর । আমার ডাকের প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই মোতালেব বাহিরে এসে উপরের দিকে তাকালো । আমি বললাম, মোতালেব ভাই একটু উপড়ে আসুন।
মোতালেব প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই উপড়ে উঠে এলো । আমি দরজা খুলে তাকে বললাম, "একটা লোককে দেখলাম সন্ধ্যা থেকে গেটের বাহিরে ঘুরঘুর করছে । উদ্দেশ্য ভালো মনে হচ্ছে না । একটু দেখুন না গিয়ে ?"
আমার কথা শুনে মোতালেব অবাক হয়ে বলল, "কই ভাইয়া , আমি তো কাউকে দেখিনি । আচ্ছা দাঁড়ান, আবারো দেখে আসছি ।"
আমি বললাম, "দেখে আসতে হবে না । আপনি একটু সর্তক থাকবেন । দিনকাল ভালো না ।"
মোতালেব মাথা নেড়ে হেসে বলল, চিন্তা করবেন না । ভুলু আছে না ? রাতে ভুলুকে ছেড়ে দিলে একটা মাছিও বাড়ির ভেতরে ঢুকতে পারবে না । কথাটা বলেই সে সিড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো ।
মোতালেব চলে যেতে দরজা বন্ধ করে রান্না ঘরের দিকে তাকাতে দেখলাম । অনুরাধা সিংকের থালা বাসন ধোয়া,মোছা করছে । আমাকে দেখে ভ্রু নাচিয়ে ভুবন ভুলানো হাসি দিলো । ওর হাসির প্রতি উত্তরে আমিও হেসে বারান্দায় এসে দাঁড়ালাম ।
মোতালেবকে দেখলাম, গেটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। গেটের দিকে তাকিয়ে লোকটাকে আর দেখতে পেলাম না। মোতালেব গেটের সামনে গিয়ে গেট থেকে বের হয়ে রাস্তার ডানে,বামে তাকিয়ে দেখলো। মেইন রোডের দিকে হেঁটে গেলো।
প্রায় মিনিট দশেক পরে মোতালেব ফিরে এসে গেটের সামনে থেকেআমার বারান্দার দিকে তাকিয়ে হাতে নেড়ে বলল, কেউ নেই ভাইয়া।
আমি হাতের ইশারায় ওকে ফিরে আসতে বললাম । গেট বন্ধ করে আমার বারান্দা বরাবর এসে দাঁড়িয়ে মোতালেব বলল, কেউ নাই ভাইয়া গেটের বাহিরে । চিন্তা করবেন না । আমি ভুলুকে ছেড়ে দিচ্ছি । রাতে ভুলেও নিচে নামবেন না ।
আমি বললাম, ঠিক আছে । আপনিও সর্তক থাকবেন। মোতালেব মাথা নেড়ে হ্যা বলে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো।
বারান্দা থেকে ঘরে এসে দেখি অনু দরজার সামনে বড় বড় চোখ করে দাঁড়িয়ে আছে । আমাকে ঘরে ঢুকতে দেখে বলল, এতোক্ষণ তুমি কি ঘরে ছিলে না ?
আমি ও অবাক হয়ে বললাম, না তো; কেন, কি হয়েছে ?
অনু বলল, রান্না ঘরে কাজ করতে করতে হঠাৎ মনে হলো তুমি আমায় ডাকছো । এসে দেখি তুমি ঘরে নেই । বেশ অবাক হলাম । স্পষ্ট শুনেছি তুমি ডাকছো ।
আমি বারান্দায় দাড়িয়ে মোতালেবের সঙ্গে কথা বলছিলাম । তোমাকে ডাকিনি তো।
অনু কিঞ্চিত চিন্তিত হয়ে "ও" বলে রান্না ঘরে চলে গেলো ।
রাতে শুতে এসে অনু বলল, "বাবন এ বাসাটা আমার কাছে ঠিক সুবিধার মনে হচ্ছে না । মনে হচ্ছে কি যেন একটা আছে এখানে।
অনুর কথা বুঝতে পেরেও না বুঝার ভান করে আমি বললাম , কি সমস্যা আছে ?
অনু বলল, ঠিক বুঝতে পারছি না । আমি জানি তুমি বারান্দায় আছে তবুও বেশ কয়েকবার মনে হয়েছে কেউ একজন বাথরুম ব্যবহার করছে। টেপ থেকে পানি পড়ার শব্দ পেয়েছি । দু'দুবার বাথরুমে গিয়ে দেখেছি ভেতরে কেউ নেই ।
আমি সন্ধ্যায় আমার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাটা চেপে গেলাম । পাছে সেটা শুনে অনু ভয় পেয়ে যায় । আপাততো বাসা ছাড়াটা ঠিক হবে না ।
ঠিক তখনি গতরাতের ঘটনাটা মনে পড়ে গেলো ।আমি শোয়া থেকে উঠে ডাইনিং এ গিয়ে দাঁড়ালাম । যেখানে গতরাতে ফ্রিজ দেখেছি সে জায়গাটা খালি পড়ে আছে । স্পষ্ট মনে আছে, অনুরাধা রান্না করতে করতে আমার কাছে ডিম চাইলে আমি ফ্রিজ থেকে ডিম বের করে ওর হাতে দিয়ে আবারো শুয়ে পরেছি । আমাদের তো ফ্রিজই নাই । পুরো ব্যাপারটা কি তাহলে স্বপ্ন ছিলো? বিষয়টা নিয়ে অনুরাধার সাথে আর কথা বলতে ইচ্ছে হলো না৷ আমি অফিসে চলে গেলে বেচারি একা একা বাসায় থাকবে এসব বলে ভয় পাইয়ে দেবার কোন মানে হয় না।
অফিসে এলাম ঠিক ১৬ দিন পর ।
হুট করে বিয়ে, নতুন সংসার গোছগাছ করতে করতে কোথা দিয়ে যে দিনগুলো চলে গেলো বুঝতে পারলাম না। টানা এতদিন ছুটির পর অফিসে জয়েন করায় প্রচণ্ড কাজের চাপেমাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়লো। টেবিলের উপর জমে থাকা ফাইলের স্তূপ এ ক দিনে পাহাড়ে পরিণত হয়েছে।
কাজের চাপ এতোটাই বেশি যে, লাঞ্চ করার ফুসরত পাচ্ছি না । দুপুরে কলা, পাউরুটি খেলাম গাড়িতে বসে। প্রতিটি ফাইল পড়ে স্বাক্ষর করতে হচ্ছে । সেই সাথে প্রোডাক্ট কোয়ান্টিটি পরীক্ষা করে, স্টক লট এর সাথে মিলিয়ে দেখতে হচ্ছে ।
দুপুর নাগাদ ছুটতে হলো গাজীপুরে কোম্পানির ওয়ার হাউজে । সেখান থেকে শো রুম হয়ে দিনশেষে অফিসে ফিরে প্রতিটি ফাইল রেডি করে পাঠাতে হচ্ছে সিইও স্যারের রুমে ।
সকালে সিইও স্যার ডেকে নিয়ে আরো একগাদা ফাইল ধরিয়ে দিয়ে বললেন, ফাইলগুলো পড়ে ফাঁক ফোকরগুলো বের করে রাখতে । ফিরে এসে তিনি দেখবেন। তিনি দেখবেন মানে স্বাক্ষর করে হিসাব বিভাগে পাঠিয়ে দিবেন। ভুল হলে দায়টা আমার কাঁধে বর্তাতে এক মুহূর্ত সময় লাগবে না । তাই খুব সর্তকতার সাথে কাজ না করে কোন উপায় নেই ।
এহেন ভয়ানক কাজের চাপে বিয়ের আনন্দ,নতুন সংসার আর অনুরাধার কথা যেন মাথা থেকে একেবারে ডিলিট হয়ে গেলো । কোথা দিয়ে যে সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত্রি নেমে এলো টেরই পেলাম না । কফি,সিগারেট আর কাজের মাঝে ডুবে রইলাম। জমে থাকা ফাইলগুলো সব কম্পিলিট করতে পারলে, আগামীকাল থেকে শুয়ে বসে সময় কাটানো যাবে। একবার ভাবলাম রাতটা অফিসে কাটিয়ে দেই। কিন্তু অনুরাধার কথা ভেবে মাথা থেকে ভাবনাটা বাদ দিলাম।
একসময় অফিস পিয়ন রুবেল এসে বলল, স্যার রাত সাড়ে দশটা বাজে, বাসায় যাবেন না ? রুবেলের কথায় আঁতকে উঠলাম। ও মা বলো কি ? সাড়ে দশটা ! এ তো অনেক রাত্রি । আমার জন্য রুবেল ব্যাচারাও আটকে আছে । আমি বের না হলে সেও বের হতে পারছে না ।
চলবে ............
২| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১০:১০
রাজীব নুর বলেছেন: ভুলু-
আমাদের দেশে কুকুর বিড়ালদের নাম বেশির ভাগ সময় ভুলু রাখা হয় কেন?
©somewhere in net ltd.
১| ৩০ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৪:৪৯
শায়মা বলেছেন: ইন্টারেস্টিং কিছু থাকতেই হবেভাইয়া প্রতি পর্বে। নইলে দুঃখ পাই.......