নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমার পরিচয় একজন ব্লগার, আমি সাহসী, আমি নির্ভীক, আমি আপোষহীন । যা বিশ্বাস করি তাই লিখি তাই বলি ।
( পরিণতি ৬১ পর্বে'র একটি মনস্তাত্ত্বিক রহস্য উপন্যাস ।) ( গল্পের ধারা বজায় রাখায় জন্য প্রাপ্ত বয়স্ক কিছু সংলাপ ও মুহূর্ত উঠে এসেছে । সকলে ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন । )
অষ্টম পর্ব
লোকটা গম্ভীর কণ্ঠে বললো, লাশের গন্ধ । একটু আগে ঢাকা মেডিকেলে একটা লাশ দিয়ে এলাম । পাচ দিনের মরা কারা যেন মেরে ফেলে রেখেছিলো রাস্তার পাশের ডোবায় । পুলিশ আমারে ধরে নিয়ে গিয়ে বাধ্য করলো হাসপাতালে দিয়ে আসতে । হাসপাতাল থাইকাই গাড়ি ধুইয়া আনছি । তবে গন্ধ তো থাকার কথা না ।
লোকটার কথা শুনে আমি চমকে উঠে বললাম, "বলেন কি ? দ্রুত বসে থাকা সিটের দিকে তাকিয়ে হাত দিয়ে পরীক্ষা করে দেখলাম রক্ত টক্ত লেগে আছে কিনা । আঙুল ভেজা আর চটচটে মনে হলো । সঙ্গে সঙ্গে পুরো শরীর ঘেন্নায় রি রি করে উঠলো । গন্ধটা যেন হুট করেই বেড়ে গেছে । নাক মুখ চেপে রেখেও গন্ধ থেকে নিজেকে বাচাতে পারছি না । বিকট গন্ধটা আর সহ্য করতে পারছি না । হঠাৎ পেট মোচড়ে বমি হয়ে যাবার যোগার হলো । আমি কোনরকম লোকটাকে বললাম, থামান, থামান আমি বমি করবো ।
আমার কথা শুনে লোকটা শেয়ালের মতো খেকখেক করে হেসে বলল, " ঘেন্না হচ্ছে ? ঘেন্না করবেন না স্যার । মোটেও ঘেন্না করবেন না । মানুষ হয়ে মরা মানুষকে ঘেন্না করবেন এ ক্যামন কথা ?
আপনার সাথে মজা করেছি । মরা মানুষ না । আমি মাছের ব্যবসা করি । একটু আগে দুই টুকরি মাছ কারওয়ান বাজারে দিয়ে এসেছি । সেই গন্ধ রয়ে গেছে ।
লোকটা সিএনজি থামালো না কথা বলেই ঝড়ের গতিতে সিএনজি চালিয়ে নিয়ে যেতে লাগলো । আমি বা পাশের দরজায় সামনে মুখ নিয়ে ওয়াক, ওয়াক করে সিএনজির ভেতরেই বমি করে দিলাম ।
নিস্তব্ধ রাত্রির অন্ধকার ভেদ করে সো সো শব্দ করে সিএনজিটা এগিয়ে যাচ্ছে । দুপাশ দিয়ে বাহির থেকে আসা বাতাসও যেন ভেতরের গন্ধটা সরাতে পারছেন না । লোকটার কথায় মৃত মানুষের ভীতিটা কেটে গেলেও গন্ধটা একেবারে সহ্য হচ্ছে না । কাপুনি শরীর গুলাচ্ছে ।
সারাদিনে তেমন কিছু খাওয়া হয়নি। বমি হয়ে পেট থেকে পানিটুকুও বেড় হয়ে যাওয়ায় শরীর যেন নেতিয়ে পরল । কান্ত শরীর নিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে রইলাম । মনে হলো অনাধী অনন্ত কাল ধরে অদৃশ্য কারো ইশারায় আমি ছুটে চলেছি অজানা অচেনা কোন শহরের ভেতর দিয়ে । কার সাথে যাচ্ছি কোথায় যাচ্ছি তার কিছুই জানিনা । কোন কিছুই নিয়ন্ত্রনে নেই আমার। কোথায়,কখন কিভাবে শেষ হবে এ যাত্রা আমি তার কিছুই জানিনা ।
হঠাৎ মনে হলো চার পাশ স্তব্ধ হয়ে গেলো । কোথায় আছি বুঝতে না পেরে চোখ খুলে তাকালাম । তাকিয়ে দেখি লোকটা সিট থেকে নেমে সিএনজির দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে । আমাকে চোখ খুলে তাকাতে দেখে সে সিএনজির দরজাটা খুলতে খুলতে বলল, নামেন স্যার, চলে এসেছি ।
কোথায় এসেছি , কেন এসেছি কিছুই যেন বুঝতে পারলাম না । মনে হলো মাথার ভেতরের সবকিছু যেন হুট করে শূন্য হয়ে গেছে ।চিন্তা শক্তি কাজ করছে না। কিছুই মনে করতে পারছি না । তবে ধীরে ধীরে সব পরিষ্কার হয়ে আসতে লাগলো। বুঝতে পারলাম প্রচণ্ড ক্লান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । সিএনজির ভেতরের গন্ধটা এখন একেবারেই নেই । নিজেকে আর একটু সামলে নিয়ে নাকে, মুখে হাত চাপা দিয়ে সিএনজি থেকে নামতে নামতে বললাম, কত দিতে হবে ?
আমার নাকে হাত দেওয়া দেখে লোকটা খিক খিক করে হেসে বলল, এখনো গন্ধ লাগছে নাকি স্যার ? আমি কিন্তু মিথ্যা বলেছি .....
আমি আরো একটু ধাতস্থ হয়ে বিরক্তি নিয়ে বললাম, আর রসিকতা করতে হবে না । একবার বলেছো তো মরা নয় তুমি মাছ নিয়ে গিয়েছিলে । সেই গন্ধই রয়ে গেছে।
আমার কথায় লোকটা এবার হো হো করে হেসে উঠে ফ্যাসফ্যাসে গলায় বলল, না , না স্যার । আপনি সবটা জানেন না । ভয় পাবেন বলে তখন মিথ্যা বলেছিলাম । কথাটা বলে লোকটা আবারো বিশ্রী ভাবে হেসে সিএনজির দরজা বন্ধ করে চালকের আসনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলো । আমি লোকটার সস্তা রসিকতায় কান না দিয়ে তাকে থামিয়ে বললাম, "ভাড়া নেবেন না ? কত দিতে হবে বলেন ।"
লোকটা এবার ভয়ানক লাল টকটকে দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকাল। তারপর, আমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে বলল, "একটা পয়সাও দিতে হবে না স্যার । আমি সবার কাছ থেকে পয়সা নেই না । আপনার কাছ থেকেও নিবো না ।
আমি তাকে বাঁধা দিয়ে কিছু একটা বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু লোকটা সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে , আগের চেয়েও বিশ্রী ভাবে খিক খিক করে হেসে উঠে বলল, "ওটা কিন্তু মাছের গন্ধ ছিলো না স্যার , ওটা ছিলো লাশের গন্ধ ..... । লাশের গন্ধ, কাউকে একবার ধরলে আর ছাড়ে না স্যার ......... আর ছাড়ে না । কথাটা বলেই সে খিক খিক করে হাসতে হাসতে সিএনজি স্টার্ট দিয়ে বনানীর দিকে চলে গেলো ।
লোকটার কথার আগামাথা কিছু বুঝলাম না । কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে সেই পচা,ভোঁটকা গন্ধটা এসে নাকে লাগলো । ওয়াক ওয়াক করে নাড়িভুড়ি উল্টো রাস্তার পাশে বমি করে দিলাম ।
বমির চাপটা কমে যেতে উঠে দাড়িয়ে মুখ মুছতে মুছতে বিকার গ্রস্তের মতো লোকটার চলে যাবার পথের দিকে তাকিয়ে রইলাম। লোকটা নির্ঘাত পাগল । তা না হলে মৃত মানুষ নিয়ে এমন রসিকতা করে না । বিরবির করে বলে উঠলাম, জাহান্নামে যা ব্যাটা ।.....
সিএনজি থেকে নামার সময়ই টের পেয়েছিলাম ঝিরঝির করে বৃষ্টি পড়ছে । এবার মুখ তুলে আকাশের দিকে তাকালাম। অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই দেখা গেলো না । বাসার সামনের ল্যাম্পপোস্টের বাতিটা নিভু নিভু করে জ্বলছিল আমি বাসার দিকে হাটা শুরু করতেই সেটা হুট করে নিভে গেলে চারপাশে অন্ধকার নেমে এলো ।
আশে পাশে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম পুরো এলাকার বিদ্যুৎ চলে গেছে । মুহূর্তে যেন একরাশ ঘুটঘুটে অন্ধকার ঝেঁকে ধরল আমায় । এক হাত দুরেও কিছু দেখতে পাচ্ছি না । দু হাতে চোখ কুচলে আবার তাকালাম। এতে অবশ্য আবছা আবছা সব কিছু দেখতে পাচ্ছি। অন্ধকার চোখে সয়ে এসেছে। তখন কি জানতাম, কি ভয়ানক এক মুহুর্ত অপেক্ষা করে আছে আমার জন্য ।
কিছুক্ষন দাডিয়ে থাকার পর অন্ধকারে টলতে টলতে বাসার দিকে এগুতেই টের পেলাম আমার পেছন পেছন কেউ একজন আসছে । পায়ের স্পষ্ট শব্দ শুনতে পাচ্ছি । চট করে পেছনে ঘুরে তাকালাম কিন্তু কাউকে দেখতে পেলাম না। মনের ভুল ভেবে আবার হাটতে শুরু করতেই আবারো শুনতে পেলাম সেই রকম পায়ের শব্দ৷
না, এবার আর ভুল হবার কিছু নেই। স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি৷ কেউ একজন আমার পেছন পেছন হাটছে৷ চটি স্যান্ডেল পরে শক্ত কিছুর উপর দিয়ে হাটলে যেমন চট চট শব্দ হয়। ঠিক সেই রকম।
আবারো পেছন ঘুরে গলির দিকে তাকালাম। শুনশান নিস্তব্ধ অন্ধকারে আমি ছাড়া আর কেউ নেই। অন্ধকারটা ইতিমধ্যে চোখে সয়ে এসেছে৷ আবছা ভাবে গলির শেষ মাথা পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। জন-মানবহীন গলিটা রাত্রির অন্ধকারে খা খা করছে । কি করবো বুঝতে না পেরে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে ঠায় দাড়িয়ে রইলাম ।
চলবে ............
©somewhere in net ltd.
১| ০২ রা এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:৫৩
রাজীব নুর বলেছেন: এই ধারাবাহিক প্রথম থেকেই পড়ছি। ভালো লাগছে।