নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

নিঃসীম নীল আকাশে পাখী যেমন মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, কল্পনার ডানায় চড়ে আমিও ভেসে চলেছি মনের আনন্দে--রূঢ় পৃথিবীটাকে পিছনে ফেলে।

খেয়ালের বশে কোন পথে চলেছো পথিক...

শামছুল ইসলাম

পাখী ডানায় ভর করে মুক্ত নীল আকাশে মনের আনন্দে উড়ে বেড়ায়, আমিও কল্পনার ডানায় চড়ে মনের গহীন আকাশে .......

শামছুল ইসলাম › বিস্তারিত পোস্টঃ

গল্প : বড় আপা

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:২৯



১।
আফনান চুপি-চুপি রান্না ঘরে ঢুকে, রুটি বানানোর জন্য আটা সিদ্ধ করে আটার মন্ড বানানো হয়েছে, বড় আপা মার ডাকে সাড়া দিয়ে ঘরে গেছে-এই সুযোগ!!! আফনান ওর ছোট মুঠোয় যত টুকু আঁটে, ততটুকু আটার দলা নিয়ে পড়ি-মড়ি দৌড় লাগায়। রান্না ঘর থেকে বেরোনোর মুখে বড় আপার সাথে ধাক্কা খায়, তার পর এক দৌড়ে বারান্দায়।রান্না ঘর থেকে বড় আপার গলা শোনা যায়ঃ
-আফনান, কি নিয়েছো?
ওদিক থেকে কোন উত্তর নেই, রুটি বেলতে বসে আটার মন্ডের গায়ে ছোট্ট হাতের ছাপ দেখে বড় আপা হাসে।
আফনান ততক্ষণে ব্যস্ত হয়ে গেছে ছোট ছোট আটার গুল্লা বানানোতে। একটু পরে শুরু হবে তার অভিনব খেলা, বারান্দার জানালা দিয়ে ছোট-গোল আটার টুকরো ছুঁড়ে দিবে আকাশের দিকে। তার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে তার খেলার সাথীদের জন্য। কা কা শব্দে ওরা উড়ে এসে সানসেটে বসে, আফনান মিটি মিটি হাসে আর আটার ছোট্ট গোল টুকরা উপরে ছুঁড়ে দেয়, কাকটা দ্রুত সানসেট থেকে নীচের দিকে উড়াল দেয়, উড়ন্ত টুকরোটা ঠোঁটে নিয়ে আবার ফিরে আসে সানসেটে, ঠোঁটটা একটু ফাঁক করে আটার দলাটা পায়ের কাছে ফেলে, তারপর ঠুঁকরে ঠুঁকরে খায়। খাওয়া শেষে কাক ভায়া এদিক-ওদিক চায়, তখন আফনান আরও একটা টুকরো ছুঁড়ে দেয়।মাঝে মাঝে দু’একটা টুকরো ওরা ঠোঁটে নিতে পারে না, মাটিতে পড়ে ঘাসের আড়ালে লুকায়, তখন পা দিয়ে ঘাস খুঁটে খুঁটে গোল আটার দানা বের করে।

আফনানের খেলায় মাঝে মাঝে অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিরতি দিতে হয়। বাবা বাসা থেকে অফিসের দিকে বের হয় সাত টায়। কিন্তু মা হাই প্রেসারের রুগী হওয়ার সকালে উঠতে পারেন না, বড় আপা বাবাকে সকালের নাস্তা দেন আবার অফিসে দেওয়ার জন্য খাবারও প্রস্তুত করেন। অনেক দিনই অফিসের খাবারটা তৈরী হতে হতে সাতটা দশ-পনোরো হয়ে যায়, তখন বাবা দরজার কাছে যেয়ে বলেনঃ
- আজ খাবার লাগবে না, আমি গেলাম।
- এই হয়ে গেছে, হয়ে গেছে- বলে বড় আপা আশ্বাস দেয়।
আসলে তখনো খাবার প্রস্তুত হতে মিনিট দশেক লাগার কথা।
সুতরাং বাবা অস্থির ভাবে পায়চারী করতে করতে একই রকম ভাবে হুমকি দেন এবং বড় আপাও সান্ত্বনার বাণী দিয়ে উনাকে আটকে রাখেন। এই সময়টায় আফনান ঘরে মার বিছানার কাছে চলে যায়, একটা অনিশ্চয়তা নিয়ে মার পাশে বসে থাকে-যদি বাবা দুপুরের খাবার না নিয়ে যায়! মা এক পাশ ফিরে নির্জীব পড়ে থাকেন, তার একটা হাত জড়িয়ে আছে দুই পেরুনো সবার ছোট আফরোজাকে। মাঝে মাঝে এমনও হয়, বাবা ছাতা নিয়ে খাবার ছাড়াই রওনা দেন। তখন আফনানের সিক্স পড়ুয়া ভাই আফরাদকে খাবারটা নিয়ে ছুটতে হয়।
পিছন থেকে হাঁপাতে হাঁপাতে আফরাদ ডাকেঃ
- আব্বা।
ছাতা মাথায় হন হন করে হেঁটে চলা বাবার গতি একটু কমে আসে, থেমে পিছন ফিরে কটমট করে তাকায় বড় ছেলের দিকে।বাম হাতে ছাতা, ডান হাতে খাবারের বাক্সটা নিয়ে শ্মশ্রুমন্ডিত বাবা আবার হাঁটা দেন।

সংসারের চাপটা সামলে ক্লাস নাইনের পড়াশুনা গুছাতে হিমশিম খেতে হয় বড় আপাকে।বিশেষ করে অংকটাতো কিছুতেই মাথায় ঢুকে না- একটু বেশী সময় দেওয়া দরকার। ওঘর থেকে মার গলা শুনতে পায়,
- আয়েশা, একটু এদিকে আয়।
বড় আপা আফরাদ, আফনানকে নাস্তা দিচ্ছিল রান্না ঘরে। ওরা তিন জন পিড়িতে বসে খাচ্ছিল। আয়েশা রুটি ছিঁড়ে আলু ভাজির সাথে মিশিয়ে মুখে পুরে দেয়, মার কথার কোন জবাব দেয় না। ছোট্ট আফরোজার উপর বড় আপার খুব রাগ, ও হওয়ার পর থেকেই মার শরীরটা ভাল যাচ্ছে না। মাকে আয়েশা প্রায়ই বলে,
-মা, তুমি ওকে ফেলে দিয়ে আস।
মা স্মিত হাস্যে বলেন,
-তুই আমাকে খুব ভালবাসিস?
আয়েশা তখন মাথা নাড়ে।
মা আফরোজাকে আর একটু বুকের কাছে নিয়ে একটা মৃদু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন,
-মা হ, তখন বুঝবি।
না, আয়েশা কিছু বুঝতে চায় না---ও ফিরে পেতে চায় হাসি-খুশী প্রাণবন্ত মাকে।

সাড়া না পেয়ে মা এবার একটু জোরে ডাকেন,
-আয়েশা।
-আসছি মা, বলে বড় আপা খাওয়া শেষ না করেই উঠে পরে।
বড় আপা মার পাশে যেয়ে বসে, কোমর ছাড়ানো মার ঘন কালো চুলে বিলি কেটে দেয়, মা অপলক তার শ্যাম বর্ণের দীঘল কালো চুলের মিষ্টি মেয়েটার দিকে তাকিয়ে থাকেন-কেন যেন নিজের মেয়ের কাছেই নিজেকে অপরাধী মন হয়।বড় আপাই নীরবতা ভাঙ্গে,
-মা, আজও মাথাটা ভার ভার লাগছে?
-হ্যা রে, তোর বাবা অফিস গেছে?
-হ্যা, আফরাদ পিছে পিছে যেয়ে..
মা বড় আপাকে থামিয়ে দেন।
বিয়ের এত গুলো বছর হয়ে গেল, স্বামীর রাগটা উনি কমাতে পারেননি।নিজেকে মার খুব অসহায় মনে হয়, উনার কোন স্বভাবই তো স্ত্রী হয়ে পরিবর্তন করতে পারেননি।মানুষকে এত বিশ্বাস করে, অফিস থেকে প্রভিডেন্ড ফান্ডের টাকা তুলে ভাগ্নে-চাচাত ভাইয়ের হাতে দেয়। ওরা ব্যবসা করে লাভের ভাগ উনাকে দিবেন।লাভের টাকা তো দূরে থাক, আসলই নেই হয়ে যায়। ভাগ্নে-ভাইয়ের এ বাসায় যাতায়াত কমে আসতে থাকে।তারপর যখন বেতন থেকে টাকা কাটতে থাকে, মাস চালানো দুষ্কর হয়ে যায়, পাড়ার দোকানে বাকীর হিসাবটা লম্বা হতে থাকে। আজকাল মা বেশী ভাবতে পারেন না, মাথাটা ঝিম ঝিম করে উঠে।তাই কাজের কথায় আসেন,
-যা, চুলায় একটু পানি গরম দে, ওর জন্য দুধ বানিয়ে নিয়ে আয়।
-ও কি বোতলের দুধ খাবে? ও কে তো তোমার দুধ খাওয়া এখনো ছাড়াতে পারলে না।
-সে আমি দেখব, তুই যা।
বড় আপা উঠে পড়ে। আফরোজা ক্ষীণ কন্ঠে কেঁদে উঠে, মা ডান হাত দিয়ে হালকা করে মেয়ের পিঠ চাপড়ে দেন,
-ও ও, আমার সোনা কাঁদে না, বলে সান্ত্বনা দেন মেয়েকে।
আফরোজা চুপ করে যায়। মার চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে ছোটটাই বেশ দুর্বল, জন্মের সময় থেকেই। তাই মার মায়াটাও ছোটটার প্রতি একটু বেশীই।

২।
সাধারণতঃ বেলা দশটা নাগাদ মার মাথা ব্যথাটা কমে আসে। কাজের ছুটা বুয়াটা আসে, মেয়েকে দুপুরের রান্নায় কি কি হবে, বলে দেন- দুপুরে স্কুলে যাবার আগে আয়েশাই সব করে দেয়। কেরোসিনের চুলার সামনে মা এখন আর বেশীক্ষণ থাকতে পারেন না। সংসার চালাতে মাকে হিমশিম খেতে হয়, অল্প অল্প করে বাজার করেন। তাই মাঝে মাঝে বাধ্য হয়ে আফরাদকে বাজারে পাঠান। মা জানালার কাছে যেয়ে হাফ প্যান্ট পরা আফরাদের পিছনটা দেখতে পান, স্নেহের দৃষ্টিটা আফরাদের পিঠে আছড়ে আছড়ে পড়ে।

বাজার থেকে ফিরে আফরাদ গোসল করে, খেয়ে স্কুলে যায়। তবে হাইস্কুলে উঠার পর তার নতুন বন্ধু জুটেছে। ছুম্মা, বিহারি ছেলে, লেখাপড়ার বালাই নেই- ইংরেজী সিনেমা দেখার নেশা। আজকাল প্রায়ই স্কুল ফাঁকি দিয়ে ছুম্মার সাথে সিনেমা দেখতে যায় আফরাদ- দু’জনের টিকেট খরচা ছুম্মাই দেয়, ওর বাবার অনেক টাকা। একা একা সিনেমা দেখতে ভাল লাগে না, তাই সংগী হিসাবে আফরাদকে বেছে নেয় ছুম্মা।
আফরাদের ছোট একটা গোপন খাতা আছে। সেই খাতায় সিনেমার নাম গুলো সে ক্রমিক নাম্বার দিয়ে গোটা গোটা অক্ষরে লিখে রাখে। এই খাতাটাই বড় আপা একদিন দেখে-১৪৯ টা ছবির নাম, উর্দু এবং ইংলিশ মিলিয়ে।
-আফরাদ, এত গুলো ছবি তুই দেখেছিস?
আফরাদ কাঁদো কাঁদো স্বরে স্বীকার করে,
-হ্যা আপা, তুমি আব্বা-আম্মাকে বলো না।
-কখন দেখিস, স্কুল পালিয়ে?
আফরাদ মাথা নাড়ে।
-স্কুল টের পায় না?
-না, টিফিন পিরিয়ডে স্কুল পালিয়ে দেখি।
-ঠিক আছে, আব্বা-আম্মাকে বলব না, কিন্তু তোর স্কুল পালিয়ে সিনেমা দেখা ছাড়তে হবে।
আফরাদ বড় আপার হাত জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে ওঠে।
আয়েশা ছোট ভাইয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়, ভাবে - সংসারের অনেক ঝামেলার মধ্যে আবার নতুন ঝামেলায় আব্বা-আম্মাকে জড়ানো ঠিক হবে না।
হাতাকাটা গেঞ্জি গায়ের আফরাদ অনুভব করে তপ্ত দু’ফোটা অশ্রু ওর পিঠে পড়ছে।

৩।
ঘুমন্ত আফরোজার কপালে কাজলের টিপটা দিয়ে আলতো করে ওর গালে একটা আদর দিয়ে গায়ের ওপর পাতলা একটা বালিশ দেন। মেয়ের ঘুম খুব পাতলা, তাই আফনানকে ওর কাছে বসিয়ে মা গোসল করতে যায়। আয়েশা, আফরাদ স্কুলে গেছে-আফনানটাকেও আগামী বছর স্কুলে পাঠাতে হবে।অনেকক্ষণ সময় লাগিয়ে গোসল করা মার পুরনো অভ্যাস। পদ্মাপারের মেয়ে, গাঁ ছেড়ে ঢাকা এসেছে সেই কবে-তবুও অভ্যাসটা যায়নি।
কয়েক মগ পানি মাথায় ঢালতেই শুনতে পায় আফনানের গলা,
-মা, আফরোজার ঘুম ভেঙ্গে গেছে।
মা মেয়ের ক্ষীণ গলার কান্নার আওয়াজ পান।
-ঠিক আছে, তুই ওকে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাক।
মার কথা শুনে ছোট আফনান যেন মুহুর্তেই বড় হয়ে উঠে, ছোট্ট আফরোজার ছোট্ট হাতটা নিজের ছোট্ট হাতের মধ্যে শক্ত মুঠো করে ধরে,ওর চোখের পানি মুছিয়ে দেয়—আফনান যে বড় ভাই।
গোসল শেষ করে দু’ভাই-বোনের লক্ষী ভাবটা দেখে মার চোখ জুড়িয়ে যায়, দু’জনকে দু’কোলে নিয়ে ঘরে এসে জানালার পাশে দাঁড়ান, একটুও মাথা ব্যথা নেই-শরতের আকাশে সাদা মেঘের ভেলা। মা ভাবেন –আহ্, জীবনটা যদি সবসময় এমনিই হতো।

৪।
আজ রবিবার, সরকারি ছুটির দিন; পূর্ব-পাকিস্তানের রাজধানী ঢাকার একজন অধিবাসী ভোর না হতেই ছুটছেন তাদের পারিবারিক ডাক্তারের বাড়ির দিকে। কাউকে কিছু বলতে হয়নি- আয়েশা, আফরাদ, আফনান, আফরোজা সবাই জেগে বসে আছে; মাকে মেঝেতে একটা চাঁদর পেতে শুইয়ে দেওয়া হয়েছে, প্রতিবেশী রুমির মা অচেতন মার মাথায় অনবরত পানি ঢেলে চলেছেন, কেউ একজন সরিষার তেল গরম করে মার পায়ে ঢলছেন।ছোটরাও বোধ হয় অবচেতন মনে বিপদের গন্ধ পায়- আজ অন্যান্য দিনের মত আফরোজা মায়ের পাশে শোয়ার জন্য কান্নাকাটি করছে না, আফনান দু’হাত তুলে বসে আছে মোনাজাতের ভঙ্গিতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ডাক্তার সাহেব আসলেন, প্রেশার মেপে চিন্তিত মুখে বাবার দিকে তাকালেন, সহজ-সরল লোকটাকে নিষ্ঠুর সত্যটা কি ভাবে বলবেন ভাবছেন।এমন সময় আয়েশার বড় চাচা ঘরে ঢুকলেন। ছোট ভাইয়ের বউয়ের সংকটাপন্ন অবস্থা শুনেই এসেছেন, সাথে আয়েশার চাচীও এসেছেন।চাচীকে কাছে পেয়ে আয়েশার এতক্ষণের জমে কান্না বাঁধ ভাঙ্গা জোয়ারের মত ওকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল,বাবা মেয়ের পাশে চুপ-চাপ বসে, সান্ত্বনার কোন বাণী খুঁজে পাচ্ছেন না।দু’ই ভাইয়ের এই পরিবার দু’টির সাথে ডাক্তারের বহুকালের পরিচয়, উনাদের কারো অসুস্থতায় উনি ডাক পাবেনই। বড় চাচাকে টেনে এক পাশে নিয়ে ডাক্তার ফিস ফিস করে,
-মুকিম সাহেব, অবস্থা ভাল নয়, শেষ চেষ্টা হিসাবে কোরামিন ইনজেকশন দিতে চাচ্ছি।
বড় চাচা একটু ভেবে বলেন,
-দেখেন, শেষ চেষ্টা করে।
না, কোন চেষ্টাই মাকে ফেরাতে পারল না।
ডাক্তার মার গায়ের সাদা চাদরটা দিয়ে মুখটা ঢেকে দিলেন।
হঠাৎ করে আশার প্রদীপটা যেন এক দমকা হাওয়ায় নিভে গেল-সারা বাড়িতে কান্নার রোল পড়ে গেল।
বড় চাচা ডাক্তারকে ফিস দিতে চাইল, উনি নিলেন না।

৫।
খারাপ সংবাদ ছড়াতে সময় লাগে না।পরিচিত-আধাপরিচিত-অপরিচিত অনেকেই আসে আয়েশাদের বাসায়।কখন কারা যেন মার লাশটা ঘর থেকে বারান্দায় এনে রাখে।এই তো নিয়ম, গত ১৫টি বছর যে ঘর তার একান্ত আপন ছিল, আজ তিনি তার কেউ না।ছোট আফরোজা কিছু বুঝে না, তাই সে সাদা চাদরে আপাদ-মস্তক ঢাকা মায়ের পাশে বসে থাকে। আফনান ওকে এখান থেকে নিয়ে যেতে চায়, কিন্তু ও জীদ ধরে, যেতে চায় না, পাশে বসে থাকে। আফনান বড় আপাকে ডেকে নিয়ে আসে।বড় আপা ছোট্ট বোনটাকে কোলে নিতে চায়, ও কোলে চড়বে না, মুখ ভার করে বসে আছে।বড় আপা নরম গলায় বলে,
-ঘরে যাবে না?
-না, দুধ খাব।
বড় আপা আর সহ্য করতে পারে না, ছোট্ট বোনটাকে দু’হাতে বুকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে উঠে।
পাশেই লাশ হয়ে থাকা মা কি অনুভব করতে পারে, তার ফেলে/রেখে যাওয়া আদরের ছোট্ট মেয়েটি আর একটি মা পেয়েছে।

মো: শামছুল ইসলাম

রি-পোস্ট ।

নোট: রাকু হাসান ভাইয়ের অনুরোধে গল্পটা আবার পোস্ট করলাম । রাকু হাসান ভাইয়ে প্রতি কৃতজ্ঞতা উনি গল্পটা পড়তে চেয়েছেন ।


মন্তব্য ২০ টি রেটিং +৭/-০

মন্তব্য (২০) মন্তব্য লিখুন

১| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ৯:৫৭

মোস্তফা সোহেল বলেছেন: গল্প ভাল হয়েছে।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৩০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ মোস্তফা সোহেল ভাই ।

২| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:২০

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: মধ্যবিত্ত পরিবারের চিরায়িত সত্য ফুটে উঠেছে ধারাবাহিক আলোচনায়। খুব সুন্দর হয়েছে তবে অনেক চেনা গল্প মনে হল, হামেশাই এমন ঘটছে আমাদের আশেপাশে, ঘটবেও।
গল্প শুধু গল্প হলেই হয়না, হতে হয় প্রাণবন্ত, যেখানে সুখ থাকে, দুঃখ থাকে, বেঁচে থাকার আকুতি থাকে আবার চলে যাবার আশংকায় একটি চরিত্রকে নিয়ে সবাই তটস্থ থাকে। তার সবকটি উপাদানই রয়েছে আপনার এই গল্পে। গল্পটি অসম্ভব সুন্দর হয়েছে। বলে ফেলি গল্পের লেখককে একবার দেখতেও ইচ্ছা করছে। যদি সুযোগ হয় সেই সুযোগটা দিবেন আশা করি। পায়ের ধুলি নেব। ধন্যবাদ।
পুনশ্চঃ আমার ফেইজবুকে এটা শেয়ার করে দিলাম। ভালকিছু করতে অনুমতি নিতে হয় না।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১০:৪৩

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ খুরশীদ ভাই ।

গল্পটা নিয়ে সুন্দর মন্তব্য পড়ে ভালো লাগছে ।

কোথাও দেখা হলে নিশ্চয়ই কোলাকুলি করবো, হাতে-হাত মেলাবো - একজন বন্ধু আর এক জন বন্ধুর সাথে দেখা হলে যা করে আর কি ।

ধন্যবাদ শেয়ার করায় ।

৩| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৩১

মোঃ খুরশীদ আলম বলেছেন: না ভাই দেখা হলে বেশী কিছু করার দরকার নাই। কোলাকুলি আর হাত মেলালেই যথেষ্ট। খরচ-বরচকে আমি নিজেও ভয় পাই।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৩১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ।
এক কাপ চা, একটা শিঙারা - সামান্য আয়োজনে তেমন খরচের ভয় নেই ।

৪| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১:২৫

রাকু হাসান বলেছেন:


সামাজিক গল্প যা আমার সব সময় ভালো লাগে । এটা এ দেশের প্রায় অনেক মধ্যবিত্তদের চিত্র । গল্প জীবনের কথা বলে এই গল্পটি সেই জীবন চিত্রের কথা বলেছে । উপরে মোঃ খুরশীদ আলম ভাই খুব সুন্দর বলেছেন । একেক টা চরিত্র খুব জীনন্ত । এখনও এমন দেখা যায় । আপনান,আফরোজা,আফরাদ ,আয়েশা তার বাবা-মামা সব গুলো চরিত্র খুব চমৎকার । সাধারণত গল্পে দু থেকে তিনটা চরিত্র বেশি দেখি কিন্ত এ গল্পে একটু বেশি হওয়াতে গল্পটা আরও গ্রহণযোগ্য পেয়েছে । সস্তা ন্যাকিমির গল্প পড়ে অনেক সময় ক্লান্তি আসে ,এই গল্পটি আমাকে সেসব থেকে স্বস্তি দিয়েছে । যখন জানা আপুর পোস্টে জানলাম গল্প কোনো একটা প্রযোগিতায় অংশ গ্রহণ করছে ,তখনই ভাবছিলাম গল্পটি অনেক অনেক ভালো হবে ,তাই পড়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা । আমি হতাশ হয়নি । আমি গল্পটি আপনার ব্লগে খুঁজে দেখেছি । পাইনি কোনো কারণে ।

কৃতজ্ঞতা তো আমি জানাবো শামছুল ইসলাম ভাই ! আমাকে পড়ার জন্য সুযোগ করে দিয়েছেন । শুধু আমিই নয় অন্যরাও পড়ার সুযোগ পেয়ে নিশ্চয় একটি ভালো গল্প পড়ার সুযোগ মিস করবে না । আপনার আন্তরিকতায় আমি মুগ্ধ ,হাজারো কৃতজ্ঞতা ও ভালোবাসা । গল্পটি প্রিয়তে স্থান দিলাম । আপনার কাছ থেকে গল্প আশা করছি আরও । অনুসরণও আমিও করছি আপনাকে ।
অনেক বেশি ভালো থাকবেন । শুভকামনা জানবেন ।

১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:৫৭

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাকু হাসান ভাই ।

"সস্তা ন্যাকিমির গল্প পড়ে অনেক সময় ক্লান্তি আসে ,এই গল্পটি আমাকে সেসব থেকে স্বস্তি দিয়েছে । " - সস্তা ন্যাকামির গল্প আমারও অপছন্দ । আপনি আমার ব্লগে এসে ছিলেন জেনে ভালো লাগছে । "বড় আপা" গল্পটা ২০১৫ সেপ্টেম্বর/অক্টোবরের দিকে লেখা । তাই হয়তো আপনি পান নি ।

গল্পটা প্রিয়তে স্থান দিয়ে আমাকে কৃতজ্ঞতা পাশে আবদ্ধ করলেন ।

চেষ্টা করছি আবার গল্পে ফিরে আসতে ।

আপনিও ভালো থাকুন । শুভ কামনা নিরন্তর ।

৫| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:০৮

রাজীব নুর বলেছেন: সহজ সরল সুন্দর গল্প।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ রাজীব ভাই ।

৬| ১৮ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সন্ধ্যা ৬:১৬

মনিরা সুলতানা বলেছেন: অনেক মায়া ! অনেক চেনা গল্প ;
দারুণ করে তুলে এনেছেন !!!
ভালোলাগা .

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ সকাল ১১:৪৩

শামছুল ইসলাম বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ।

আপনার মায়াময় মন্তব্যও খুব ভালো লাগলো ।

৭| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫০

আহমেদ জী এস বলেছেন: শামছুল ইসলাম ,





আপনার এই রিপোস্ট লেখাটিতে আমার আগের বারে করা মন্তব্যটিই রিপিট করলুম -----


ছিমছাম একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের ছিমছাম একটি বাস্তব কাহিনী । যেখানে একজন বড়আপা থাকেন কিম্বা বড়ভাই । এরা এমন পরিবারে "মা" হয়ে ওঠেন ; হয়ে ওঠেন "বাবা" ।
গল্পে ঘরোয়া আমেজটি শুরু থেকে শেষ অবধি বজায় থেকেছে । সেটা লেখার গুন ।
এমন ছবিই দেখা যেতো একসময় । আজও কি এমন মিষ্টি মধুর বড়আপাদের দেখা মেলে ?


ভালো থাকুন নিরন্তর ।

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ১২:৫৮

শামছুল ইসলাম বলেছেন: আহমেদ জী এস ভাই,
শুধু ধন্যবাদে আমার মনের অবস্থাটা প্রকাশ হবে না কোনো ভাবেই।

সেই কবে কার ২০১৫ সালের পোস্ট থেকে আপনি আপনার চমৎকার মন্তব্যটাকে ফিরিয়ে এনে আমাকে অভিভূত করে ফেলেছেন ।
সত্যি বলছি, আমার চোখ ছল ছল করছে ।

আল্লাহ আপনাকে, আপনার পরিবারকে ইহকাল ও পরকালে সম্মানিত করুন ।
আমীন ।

৮| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৪:৩৬

খায়রুল আহসান বলেছেন: গল্পটা পুনরায় পড়লাম, পুনরায় ভাল লাগলো। তবে গল্পটা পড়ে পুনরায় মনটাও ভারাক্রান্ত হলো!
গল্পে ভাল লাগা + +

১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ বিকাল ৫:২০

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ খায়রুল আহসান ভাই ।

গল্পটা পড়ে আপনার মনটা আবার ভারাক্রান্ত হয়েছে জেনে ভালো লাগছে ।
আমারও আপনার মতোই যখনই গল্পটা পড়ি, মনটা বেদনার্ত হয় ।
গল্পের এই আবেদনটা ধরে রাখতে পারাই আমার ভালো লাগার কারণ ।

গল্পে ++ পেয়ে আনন্দিত ।

৯| ১৯ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ রাত ৮:১১

জুন বলেছেন: গল্পটি দ্বিতীয়বার পড়লেও আগেরবারের মতই একইরকম অনুভূতি হলো শামসুল ইসলাম।
অনেক ভালোলাগা।
+

২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৮ দুপুর ২:২১

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ ।

গল্প পড়ে আপনার অনুভূতির কথা জেনে খুব ভালো লাগছে ।
আবার নিজের কাছেই আফসোস লাগছে, তিন বছর পেরিয়ে গেল, তেমন গল্প আর লেখা হলো না ।
অনেক খেলোয়াড় যেমন খেলার ছন্দ খুঁজে পায় না, আমিও যেন লেখার ছন্দ খুঁজে ফিরছি ।
দোয়া করবেন, যেন ছন্দটা খুঁজে পাই ।

১০| ০৫ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৮:৪৬

সুমন কর বলেছেন: কাল রাতেই ভেবে রেখে ছিলাম, সকালে এসে আপনার গল্পটি পড়ব। পড়লাম এবং মুগ্ধ। মধ্যবিত্ত জীবনের কাহিনীগুলো এমনই হয় !! বর্ণনা আর শেষটা হৃদয়কে স্পর্শ করলো। শুভ সকাল।
+।

০৭ ই অক্টোবর, ২০১৮ সকাল ৯:২৯

শামছুল ইসলাম বলেছেন: ধন্যবাদ সুমন দা।

মধ্যবিত্ত জীবনের কাহিনীগুলো এমনই হয় !! - খাঁটি কথা বলেছেন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.