![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মৃতি-স্মরণে সাভারে নির্মিত জাতীয় স্মৃতিসৌধের ভিত্তি প্রস্তরে শহীদ সংখ্যা ‘৩০ লাখ’ এড়িয়ে গিয়ে ‘লক্ষ লক্ষ’ উল্লেখ করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।
মুক্তিযুদ্ধে শহীদ সংখ্যা নির্দিষ্টভাবে ‘৩০ লাখ’ হওয়া না হওয়া নিয়ে যখন দেশে তুমুল বিতর্ক চলছে এবং এই ইস্যুতে তিন বারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হচ্ছে তখন স্মৃতিসৌধের ভিত্তি প্রস্তর থেকে জানা গেল বঙ্গবন্ধু কিভাবে শহীদ সংখ্যা বিতর্কে এড়িয়েছেন।
সাভারের স্মৃতিসৌধের বেদীতে বসানো ভিত্তি প্রস্তরে খোদাইকৃত লেখা থেকে জানা গেছে, ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর মোতাবেক ১৩৭৯ বঙ্গাব্দের পহেলা পৌষ তারিখে স্মৃতি সৌদের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করেন বঙ্গবন্ধু।
ভিত্তি প্রস্তরের ফলকে বলা হয়েছে, “স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ লক্ষ শহীদের পুণ্য-স্মৃতি-স্মরণে প্রথম বিজয় দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই স্মৃতি-সৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করিলেন।”
এই ফলকে পষ্ট যে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে শহীদের নির্দিষ্ট ৩০ লাখ সংখ্যাটি এড়িয়ে গিয়ে ‘লক্ষ লক্ষ’ বলেছেন।
এর আগেও শহীদ সংখ্যা নির্দিষ্ট করে না বলার ব্যাপারে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টিভঙ্গি ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর বাংলাদেশের জাতীয় সংসদে গৃহীত সংবিধানের প্রস্তাবনাতেও প্রতিফলিত হয়।
প্রস্তাবনায় বলা হয়, “আমরা অঙ্গীকার করিতেছি যে, যে সকল মহান আদর্শ আমাদের বীর জনগণকে জাতীয় মুক্তি সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও বীর শহীদদিগকে প্রাণোৎসর্গ করিতে উদ্বুদ্ধ করিয়াছিল -জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার সেই সকল আদর্শ এই সংবিধানের মূলনীতি হইবে।”
এতে দেখা যাচ্ছে ‘শহীদগণ’ বলা হয়েছে, ’৩০ লাখ শহীদ’ নয়।
অথচ ৭২ সালের ১০ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু তার ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিনে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে লাখো মানুষে সামনে বলেছিলেন, “আমার বাংলায় আজ এক বিরাট ত্যাগের বিনিময়ে স্বাধীনতা এসেছে। ৩০ লক্ষ লোক মারা গেছে। ”
তাহলে প্রশ্ন হলো, বঙ্গবন্ধু ৩০ লাখ উল্লেখ করার পর সংবিধানে কেন সংখ্যার বদলে ‘শহীদগণ’ এবং স্মৃতিসৌধের ফলকে কেন ‘লক্ষ লক্ষ’ বলা হলো?
এর নেপথ্য কারণটি জানিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, “লন্ডনে বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি (শেখ মুজিব) ৩ মিলিয়ন বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ৩ মিলিয়ন লোকের আত্মাহুতি হয়েছে। উনি ১০ জানুয়ারি ঢাকাতে এসে বলেছিলেন, সেখানেও ৩০ লাখের কথা রয়েছে।”
জাফরুল্লা বলেন, “মুজিব ভাইয়ের (বঙ্গবন্ধু) বড় গুণ ছিল মহানুভবতা। তিনি উপলব্ধি করেছিলেন- মুক্তিযুদ্ধে যারা মারা গেছেন, তাদের সঠিক তথ্যটা উপস্থাপন করা দরকার। উনি বাহাত্তরের ১৩ জানুয়ারি দায়িত্বভার নেওয়ার পরে ড. সাত্তারকে দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে কতজন মারা গেছেন, মুক্তিযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নিরূপনের জন্য কমিটি করেছিলেন। এখনও ড. সাত্তারের জুনিয়র আসাফুদ্দৌলা সাহেব জীবিত। উনি তো কমিটিতে ছিলেন, তিনি জানেন সেই কমিটিতে কী হয়েছে। উনার এটা দায়িত্ব জানানোর।”
মুক্তিযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যা নির্ধারণে সে সময় আরেকটি কমিটি করা হয়েছিল বলেও জানান ডা. জাফরুল্লাহ। তিনি বলেন, “শেখ মুজিবুর রহমান আরেকটা দ্বিতীয় মহান কাজ করেছিলেন, উনি তৎকালীন আইজি আবদুর রহীম সাহেবের নেতৃত্বে একটা ১০ জনের কমিটি করেছিলেন মুক্তিযুদ্ধে হতাহতের সংখ্যাটা নিরূপনের জন্য- ইউনিয়ন থেকে শুরু করে এই পর্যন্ত।”
ডা. জাফরুল্লাহর কথা থেকে পষ্ট যে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধে নিহতদের একটি নির্দিষ্ট সংখ্যা বললেও পরবর্তীতে এই সংখ্যা যাচাই করতে দুটি কমিটি গঠন করেছিলেন।
সেই কমিটির পরিণতির বিষয়টি জানা যায় মার্কিন সাংবাদিক লরেন্স লিফৎ শুলজের ২০১৪ সালের ৯ অক্টোবর লেখা একটি নিবন্ধ থেকে।
এতে লরেন্স বলেন, “১৯৭৪ সালে আমি যখন ‘ফার ইস্টার্ন ইকোনমিক রিভিউ’র আঞ্চলিক প্রতিনিধি ছিলাম তখন মুক্তিযুদ্ধে নিহতর সংখ্যা সমন্ধে হিসাব করার জন্য স্বরাষ্ট মন্ত্রনালয় থেকে একটি কমিটি গঠন করা হয়। ভাগ্যক্রেমে এই কমিটির একজন সদস্যের সাথে আমার খুব ভাল আন্তরিকতা গড়ে উঠে। সেই সদস্য আমাকে জানিয়েছিলেন, এই কমিটির মাধ্যমে মাঠ পর্যায়ে কর্মী নিয়োগ করে সুনির্দিষ্ট পদ্ধতি অবলম্বন করেই অনুসন্ধানমূলক জরিপ চালানো হয়েছিল। গ্রামে গ্রামে গিয়ে পরিবারগুলোর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল যুদ্ধের সময়ে সেই গ্রামগুলোতে ঠিক কতজন মানুষ, কিভাবে মারা গিয়েছিলেন। ধীরে ধীরে তারা পুরো দেশের একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্র দাঁড় করাচ্ছিলেন।”
লরেন্স জানান, “আকষ্মিকভাবে ১৯৭৪ সালে এই কমিটির কাজ স্থগিত ঘোষণা করে কমিটি বিলুপ্ত করা হয়।” তার দাবি ৩০ লাখ সংখ্যার চেয়ে কমিটি নিরূপিত প্রকৃত সংখ্যা কয়েক গুণ কম হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এদিকে তথ্যানুসন্ধানে দেখা গেছে, একাত্তরে বাংলাদেশে ৩০ লাখ মানুষ নিহত হওয়ার সংখ্যাটি আলোচনায় আসে মূলতঃ পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে সামরিক শাসক ইয়াহিয়া খানের “Kill 3 million of them and the rest will eat out of our hands”.। মূলতঃ ৩০ লাখ বাঙালিকে হত্যার এই নির্দেশই পরবর্তীতে ৩০ লাখ নিহত হওয়া সংখ্যা হিসেবে প্রচার পায়।
পরবর্তীতে দেখা যায়, পাকিস্তানীরা বাংলাদেশে ত্রিশ লাখ মানুষকে হত্যা করেছে বলে মে মাসের প্রথম সপ্তাহেই মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়।
মুজিবনগর সরকারের ভ্রাম্যমাণ কূটনৈতিক প্রতিনিধি মুহাম্মদ নূরুল কাদির তার ‘দুশো ছেষট্টি দিনে স্বাধীনতা’ শীর্ষক বইয়ে জানান, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ এম কামরুজ্জামানের নির্দেশে সুইজারল্যান্ডের রাজধানী জেনেভাতে রেডক্রসের সদর দপ্তরে পাঠানোর জন্যে ১৯৭১ সালের ৫ মে বাংলাদেশ রেডক্রস সোসাইটির সেক্রেটারী এম. ফখরুল হোসেনের লেখা টেলিগ্রামে ৩০ লাখ শহীদ হওয়ার কথা লেখা হয়।
এমনকি একাত্তরের ১০ সেপ্টেম্বর ইরানের শাহেনশাহ মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলবী বরাবর লেখা এক পত্রে নিহতের সংখ্যা ৪০ লাখ দাবি করেছিলেন মুহাম্মদ নূরুল কাদির।
এদিকে দেখা যায় মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই নিহতদের সংখ্যা লাখ লাখ বলে পশ্চিমা গণমাধ্যমে প্রচারিত হতে থাকে। এর মধ্যে ১৯৭১ এর এপ্রিলের শুরুতে নিহতের সংখ্যা ‘তিন লাখ’ ছাড়িয়েছে এবং ‘বাড়ছে’ বলে দাবি করেছিল টাইমস। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে নিহতের সংখ্যা ‘সাত লাখ’ বলে দাবি করেছিল নিউজ উইক। ১৪ মে নিহত সংখ্যা ‘পাঁচ লাখ’ বলে জানায় দ্য বাল্টিমোর সান। দ্য মোমেন্টো জুনের ১৩ তারিখে জানায় নিহত সংখ্যা ‘পাঁচ লাখ থেকে দশ লাখ’। ২৩ জুলাইয়ের এক প্রতিবেদনে ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানায় নিহত সংখ্যা ‘দুই থেকে দশ লাখ’। সেপ্টেম্বরে টাইমস জানায় ‘দশ লাখেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে’।
অন্যদিকে সোভিয়েত ইউনিয়নের (বর্তমান রাশিয়া) কমিউনিস্ট পার্টির মুখপত্র ‘প্রাভদা’ ১৯৭১ সালের ডিসেম্বরে দাবি করে, “দখলদার পাকিস্তানী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের ৩০ লাখ মানুষ নিহত হয়েছে।”
প্রাভদার প্রতিবেদনের পর বাংলাদেশি পত্রিকাগুলোতে একের পর এক দাবি জানানো শুরু হয় যে নিহত সংখ্যা ৩০ লাখ। ২১ ডিসেম্বর দৈনিক পূর্বদেশ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে লেখা হয়, “হানাদার দুশমন বাহিনী বাংলাদেশে প্রায় ত্রিশ লক্ষ নিরীহ লোক ও দু শতাধিক বুদ্ধিজীবীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে।”
এরপর বাহাত্তরের ৫ জানুয়ারি ঢাকার অবজারভার ও মর্নিং নিউজ দাবি করে, “৩০ লাখেরও বেশি মানুষ পাক বাহিনীর হাতে নিহত হয়েছে।”
এরপর ১৯৭২ সালের ৯ জানুয়ারি দৈনিক বাংলা-র ‘হুশিয়ার আন্তর্জাতিক চক্রান্ত’ শিরোনাম খবরে লেখা হয়, “দখলদার পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশে যে তাণ্ডব চালিয়েছে তাতে ‘৩৫ লক্ষাধিক’ বাঙালি প্রাণ হারিয়েছে।”
১৬ ডিসেম্বর মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ পাকিস্তানী দখলদারিত্ব মুক্ত হলেও বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানী কারাগারে বন্দী ছিলেন। বাহাত্তরের ৩ জানুয়ারি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভুট্টো করাচিতে ঘোষণা দেন, “শেখ মুজিবকে বিনা শর্তে মুক্তি দেওয়া হবে”।
তার এই ঘোষণার সংবাদটি রাত ১১ টা ৫০ মিনিটে টেলিভিশনে দেওয়া চার মিনিটের ভাষণে জাতিকে অবহিত করেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমেদ। এই ভাষণে মুক্তিযুদ্ধে নিহত সংখ্যা ১০ লাখেরও বেশি বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তাজউদ্দীন বলেন, “দশ লক্ষাধিক মানুষের আত্মাহুতির মাঝ দিয়ে আমরা হানাদার পশুশক্তির হাত থেকে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা বিধৌত বাংলাদেশকে স্বাধীন করে ঢাকার বুকে সোনালী রক্তবলয়খচিত পতাকা উত্তোলন করেছি। কিন্তু আমাদের স্বাধীনতা লাভের আনন্দ অপূর্ণ রয়ে গেছে। কেননা আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা মুক্তির দিশারী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এতদিন পর্যন্ত শত্রুর হাতে রয়েছেন।”
এই ভাষণের বিষয়টি পর দিন ৪ জানুয়ারির দৈনিক বাংলায় প্রকাশিত প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছিল।
এদিকে ৮ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে পিআইয়ের একটি বিশেষ বিমানে লন্ডনে রওনা করেন। সেখানে হিথরো বিমানবন্দরে নেমে বঙ্গবন্ধু ক্ল্যারিজেস হোটেলে ওঠেন।
ক্ল্যারিজেস হোটেলে এক সংবাদ সম্মেলনে স্বাধীন বাংলাদেশের নেতা বঙ্গবন্ধু একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের ক্ষয়ক্ষতির কথা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, “মিলিয়নস অব পিপল ডায়েড... থাউজেন্ডস অব ভিলেজেস হ্যাভ বিন বার্ন্ট।” অর্থাৎ ‘লাখ লাখ’ মানুষের মৃত্যুর কথা বলেছিলেন বঙ্গবন্ধু।
কিন্তু ওই সময় সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্টকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বঙ্গবন্ধু নিহতের সংখ্যা ‘থ্রি মিলিয়ন’ বা ৩০ লাখ বলে উল্লেখ করেন। লন্ডন থেকে দিল্লী হয়ে ১০ জানুয়ারি স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করে দেওয়া ভাষণেও বঙ্গবন্ধু ৩০ লাখ বলেন।
কিন্তু এরপর আর বঙ্গবন্ধু ৩০ লাখ বলেছিলেন কিনা তার তেমন কোনো বরাত পাওয়া যায় না। বরং তিনি নিহতের প্রকৃত সংখ্যা জানতে যেমন কমিটি করেছিলেন, তেমনি তিনি নিহত সংখ্যা ‘লাখ লাখ’ বলতেন।
১৯৭৪ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কে জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে দেওয়া ভাষণেও বঙ্গবন্ধু ‘লাখো লাখো শহীদের’ কথা বলেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু তার ভাষণের শুরুতেই বলেন, “জাতিসংঘ সনদে যে মহান আদর্শের কথা বলা হয়েছে তা আমাদের জনগণের আদর্শ এবং এ আদর্শের জন্য তারা চরম ত্যাগ স্বীকার করেছে। এমন এক বিশ্ব-ব্যবস্থা গঠনে বাঙ্গালী জাতি উৎসর্গীকৃত, যে ব্যবস্থায় মানুষের শান্তি ও ন্যায়বিচার লাভের আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হবে এবং আমি জানি আমাদের এ প্রতিজ্ঞা গ্রহণের মধ্যে আমাদের লাখো লাখো শহীদের বিদেহী আত্মার স্মৃতি নিহিত রয়েছে।”
প্রসঙ্গত, গত ২১ ডিসেম্বর এক আলোচনা সভায় খালেদা জিয়া মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা না করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা সাজিয়ে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হচ্ছে এমন সমালোচনা করে বক্তৃতা করেন।
এক পর্যায়ে তিনি জানান, মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের তালিকা ও পরিচিতি আজ পর্যন্ত সংরক্ষিত নেই। এ কারণে স্বাধীনতার পক্ষ-বিপক্ষ বিভিন্ন শক্তি ও ব্যক্তির পক্ষ থেকে শহীদদের সংখ্যা নিয়ে নানা ধরনের তথ্য ও বিতর্ক উপস্থাপন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এই অভিযোগকে খণ্ডিতভাবে গণমাধ্যমে উপস্থাপন করার পর সরকার সমর্থকরা এক যোগে খালেদা জিয়ার সমালোচনা করতে থাকে। বাড়ি ঘেরাওয়ের চেষ্টা থেকে শুরু তার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলাও করা হয়।
গত ২৩ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বক্তব্যে ‘দেশদ্রোহী’ মনোভাব পাওয়া যাচ্ছে অভিযোগ করে তা প্রত্যাহার করতে উকিল নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সাবেক সম্পাদক ড. মোমতাজ উদ্দিন আহমদ মেহেদী।
নোটিশের জবাব না পাওয়ায় ফৌজদারি কার্যবিধির ১৯৬ ধারা মোতাবেক রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা অনুমোদনের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন জানান তিনি।
চলতি বছরের ২১ জানুয়ারি রাষ্ট্রদ্রোহ মামলার অনুমোদন দেয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর সোমবার ঢাকা মহানগর হাকিম রাশেদ তালুকদারের আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হয়।
আদালত মামলা গ্রহণ করে আগামী ৩ মার্চ খালেদা জিয়াকে আদালতে উপস্থিত থাকতে সমন জারি করেছেন।
তাৎপর্যপূর্ণ ব্যাপার হলো খালেদা জিয়ার বক্তৃতার কোথাও ‘৩০ লাখ’ কথাটির উল্লেখ নেই। তারপরেও সরকারি মহলের অভিযোগ তিনি নিহতের সংখ্যা ৩০ লাখ নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু ‘৩০ লাখ’ সংখ্যাটি প্রথমে বলার পর বঙ্গবন্ধু নিজেই পরিহার করেছে ‘লাখ লাখ’ বলেছেন।
গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, ৩০ লাখ সংখ্যাটি বাংলাদেশের কোনো আইন দ্বারাও নির্দিষ্ট নয়। সংবিধানেও ৩০ লাখের পরিবর্তে ‘শহীদগণ’ বলা হয়েছে। কিন্তু বঙ্গবন্ধ সরকার পরবর্তী সময়ে সরকারসমূহের ভাষ্যে ও সংবাদ মাধ্যমে ক্রমাগতভাবে মুক্তিযুদ্ধের শহীদ সংখ্যার মতো সম্পর্শকাতর বিষয়ে আন্দাজের উপর ‘৩০ লাখ’ সংখ্যাটিই বলা হচ্ছে।
এখন প্রশ্ন হলো দূরদর্শী নেতা শেখ মুজিবুর রহমান নিজে যখন ‘৩০ লাখ’ সংখ্যা থেকে সরে ‘লাখ লাখ’ নিহত হয়েছেন বলে বিতর্ক এড়ানোর চেষ্টা করেছেন সেখানে একটি মহলের আন্দাজ-অনুমানকে সঠিক বিবেচনা করে কিভাবে একজন নাগরিকের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের অভিযোগ আনা হলো যার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড।
১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলেছিল ৮মাস ২২দিন মানে ২৬২ দিন, শহীদ হয়েছে ৩০ লক্ষ!
সুতরাং একদিনে শহীদ হয়েছে, ৩০ লক্ষ ÷ ২৬২ দিন = ১১,৪৫০ জন।
তার মানে যুদ্ধে গড়ে দৈনিক ১১,৪৫০ জন করে শহীদ হয়েছে!
উল্লেক্ষঃ ইরাকে ১০ বছরব্যাপী ইঙ্গ- মার্কিন হামলায় প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছিলো আর গোটা ইরাক ধংসস্তুপে পরিনত হয়েছিলো।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৪
সামছুল কবির মিলাদ বলেছেন: আসলেই তাই ওরা জেগে জেগে ঘুমাচ্ছ! আর এই 'ঘুম' কখনোই ভাঙবে না।
২| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৫৬
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: তথ্যপূর্ণ পোষ্ট!
চোরের মার বড় গলা বলে একটা কথা আছে না.. তাই ঘটছে সূর্যের চেয়ে টিন গরম নেতা নামের চামচাদের!
৭৫এ ট্যাংকের উপর লাফানো ইনু তো বেশী কথা বলবেই-কারণ ঐ পাপকে ঢাকতে... মতিয়া বঙ্গবন্ধুর চামড়া দিয়ে ডুগডুগি বাজানোর ডায়ালগ ঢাকতেই বেশী বেশি চামচামী করবে... বাকী সবেরও সেই একই দশা!!
দেশ মুক্তি পাক চোর আর চামচাদের হাত থেকে।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:২৪
সামছুল কবির মিলাদ বলেছেন: অতীব সত্য বলিতে নাই।
হানিফ সাহেবতো বলেই দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন তুললেই আইনি ব্যবস্থা।
৩| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০৩
হাসান নাঈম বলেছেন: ভাই এটাতো একটা ওপেন সিক্রেট।
সেদিন হানিফ সাহেবও বল্লেন: সকল গনহত্যার সংখ্যাই আনুমানিক। তার মানে ওনারাও জানেন এটা একটা আনুমানিক সংখ্যা।
কিন্তু তারপরও হয়ত এই ইসুতেই খালেদা জিয়াকে কঠীন সাস্তি দেয়া হবে।
গ্রামে একটা কথা আছে: কচু গাছ কাটতে কাটতে মানুষ ডাকাত হয়। এই সরকার গুম খুন বিচারিক হত্যাকান্ডে যেভাবে হাত পাকিয়েছে তাতে তাদের পক্ষে কোন কিছুই অসম্ভব নয়।
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১:০৯
সামছুল কবির মিলাদ বলেছেন: অসাধারণ একটা কথা "কচু গাছ কাটতে কাটতে মানুষ ডাকাত হয়" আসলেই তাই।
৪| ৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ২:৩৫
ডেড আকাশ বলেছেন: হয়ত মডারেটর একটু পরেই আপনাকে ব্যান করে দেবে
তবে এভাবে তারা সত্য লুকাতে পারবে না
ধন্যবাদ আপনাকে সাহসী পোস্টের জন্য
ধন্যবাদ এমন বিরুপ পরিবেশেও মিথ্যার বিরুদ্ধে লড়াইয়ের জন্য
৫| ০১ লা ফেব্রুয়ারি, ২০১৬ সকাল ১০:৫৫
বিদ্রোহী ভৃগু বলেছেন: ১৯৭১ সালে যুদ্ধ চলেছিল ৮মাস ২২দিন মানে ২৬২ দিন, শহীদ হয়েছে ৩০ লক্ষ!
সুতরাং একদিনে শহীদ হয়েছে, ৩০ লক্ষ ÷ ২৬২ দিন = ১১,৪৫০ জন।
তার মানে যুদ্ধে গড়ে দৈনিক ১১,৪৫০ জন করে শহীদ হয়েছে!
উল্লেক্ষঃ ইরাকে ১০ বছরব্যাপী ইঙ্গ- মার্কিন হামলায় প্রায় ৭ লক্ষ মানুষ নিহত হয়েছিলো আর গোটা ইরাক ধংসস্তুপে পরিনত হয়েছিলো।
আপনার এই যুক্তিটা গ্রহণযোগ্য নয়। ইরাকের জনসংক্যার ডেনসিটি আর বাংলাদেশের কি এক?
বহু দেশের পুরা দেশের চেয়ে শুধূ আমাদের ঢাকার লোকই বেশী! তাই এটা হাস্যকর।
হ্যা সংখ্যা নিয়ে বাকী যে তথ্য দিয়েছেন তা ভাবনার বিষয় বটে! তাজউদ্দিন সাহেবের উদ্বৃতি.. স্মৃতিসৌধের এপিটফের তথ্য!
©somewhere in net ltd.
১|
৩১ শে জানুয়ারি, ২০১৬ দুপুর ১২:৪২
বিজন রয় বলেছেন: “স্বাধীনতা সংগ্রামের লক্ষ লক্ষ শহীদের পুণ্য-স্মৃতি-স্মরণে প্রথম বিজয় দিবসে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই স্মৃতি-সৌধের ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করিলেন।”
ভাল লেখা। কিন্তু ওরা শুনবে না। কারণ ওরা জেগে জেগে ঘুমাচ্ছ।