![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
দোহাই তোমার হে মহাকাল,আর একটু সময় দাও, বৈষ্যমের বেড়াজাল থাকবেনা, থাকবেনা বর্ণের বিভাজন; শুভ সত্তার কান্না বন্ধ হবে সেদিন, আর প্রতিশোধ প্রতি বিন্দু কান্নার, দেখো সেদিন বাতাসে থাকবে শুভ্রতা আর স্বর্ণালী নিমন্ত্রণ।
কালের দেয়ালে মূহূর্ত জমে শিশিরের মত , একটু একটু করে;
ওরা সঙ্গোপনে খসে পড়ে , মহাকালের দীঘিতে।
যা ছিল অসাবধান বেশ্যার গর্ভপাতের মতই স্বাভাবিক; অকপট।
তবুও থামলনা বেদূঈন, মৃত্যুর বুকে হাত ;
আততায়ীর মত নিঃশব্দ পায়ে আসে রাত।
তার বয়স বাড়ে, অজানা কোন আশে ;
নোংরা গুমোট ঘরে কসবির দীর্ঘশ্বাসে।
রাত গভীর হয়, গভীর থেকে গভীরতর;
সেই গভীরতায় হার মানে, শেষ ঝিঁঝিঁ পোকাটার স্বর;
আড়মোড়া ভাঙে পেঁচারা।
মুখে শ্মশানের নীরবতা নিয়ে বসে থাকে যে সাধক,
সেও ঢিমেতালে উঠে দাঁড়ায়; হাঁটা ধরে শুঁড়িখানার পথে।
এক দমকা বাতাস তখন খুনসটি করে তরুনীর চুলে;
ওতে মিশে থাকে নিশিকন্যার সস্তা পারফিউমের গন্ধ,
ক্লান্ত ফেরীওয়ালার ঘামের গন্ধ।
ওদিকে বিশ্বপ্রভুর মুখোশ ভিজেছে ঘামে;
ভক্তেরা তার ঘুমিয়ে পড়েছে, ভন্ডামি তাই থামে।
শুরু হয় তার রাত্রিবেলার কারবার;
শুরু হয়ে যায় কুজ্ঝটিকায় অভিসার।
মত্ত হয়ে মুখ গোঁজে, হুরপরীর স্তনের খাঁজে;
তাই দেখে চিৎকার করে গলা ফাটায় শয়তানের পোষা কুকুর ;
জাহান্নামের চৌরাস্তায় চলে বিক্ষোভ মিছিল।
ধরনীর একপ্রান্তে তখন অন্য আরেক যজ্ঞ ।
একটা ব্যস্ত শহর, যার দম ফেলার ফুসরত নেই;
ফুসরত নেয় ঘাড় ফেরানোর;
সে ভুলেছে তার দাইমার কথা।
যে দাইমা তাকে পালন করেছে জীবন যৌবন ক্ষয়ে;
সে আজ দাঁড়িয়ে মৃত্যুদুয়ারে, কাঁপছে মৃত্যু ভয়ে;
দেহ তার কুষ্ঠরোগীর মত, দূষিত, দূর্গন্ধযুক্ত। ।
অনেক অভিমান তাই বুড়িগঙ্গার মনে;
আরেকবার জলোগর্জনে ফুঁসে উঠতে চায় ,বিগতযৌবনা বুড়িগঙ্গা।
তখন হয়তো চলনবিলের পাশের কোন গাঁয়ে;
দুষ্ট ছেলের ঘুম আসে না, গল্প শোনায় মায়ে।
রাখাল ছেলে বাজায় বাঁশি বসিয়া ডিঙ্গি নায়ে;
বাঁশির সুরে জোছনা নামে আলতা রাঙ্গা পায়ে।
আর আমি ?
আমি আর জোনাকি, বসে আছি একাকী;
অপেক্ষা করছি ঘুমের দেবীর।
মাথার ভেতর উন্মাদপোকা হুটোপুটি করে।
হয়তো ভাবি, সেই মানবীর কথা,
যে চলে গিয়েছিল এমনই এক রাতে;
চোখে ছিল টলটলে বৃষ্টির আভাস;
বুকে নিয়ে আস্ত একটা ভিসুভিয়াস।
কখনো ভাবি, ছেলেবেলার সেই গুপ্তধনের কথা;
সেই রঙিন মার্বেলের কথা;
এক টুকরা ভাঙা চুম্বকের কথা;
ঘুর্নায়মান লাটিমের কথা;
এভাবেই কাটে আমার বিনিদ্র রাত;
ঘুমের দেবীর দেখা নেই।
কিন্তু আমি তার উপর রাগ করি না; একটুও না।
আমি জানি, সে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে;
ব্যস্ত হয়ে পড়েছে,
পঙ্গু ভিখারির চোখে,
বৃদ্ধ শাঁখারীর চোখে,
ছানি পড়া হকারের চোখে,
দিশেহারা বেকারের চোখে,
ঘুম এনে দেবে বলে।
তাইতো আমার তাড়া নেই;
আমি তেমনি করে বসে থাকি; নিরালায়;
একটা রাত জাগা অচিন পাখি,
ডানা ঝপটে উড়ে যায়।
যেতে যেতে ঘাড় ঘুরিয়ে বলে-
হে কবি, তোমার এই খেয়ালিপনার সময় নেইতো আর;
চেয়ে দেখ ঐ, অরূন আলোয় খুলছে ঊষার দ্বার।
অমনি আমার ঘোর কাটে;
টুকরো আমিকে একত্র করি;
সিঁড়িতে ঐ কার পদধ্বনি?
এক চিলতে হাসি ছলকে ওঠে আমার ঠোঁটে;
সেই পা, সেই নূপুর, সেই ধ্বনি; এতো আমার চেনা;
মায়ের শরীরের গন্ধের মত চেনা।
সমগ্র হৃদয়মন্দিরে ঘন্টা বেজে ওঠে;
কে যেন কিন্নরকণ্ঠে ঘোষণা করে-
সে এসেছে! সে এসেছে!
অবশেষে, বধূবেশে।
দেবী মোর লজ্জা পেয়ে হাসে;
চেয়ে থাকে অতল চোখে অতুল মমতা নিয়ে;
স্বর্গলোকের দেবকন্যার শূদ্রের সাথে বিয়ে।
আমি সম্মোহিত হই;
তলিয়ে যেতে থাকি; অতলে, গহীনে।
ওদিকে বুড়িগঙ্গা, ভগবান, লাটিম, ঝুলে থাকে দরজার চৌকাঠে;
বিষাক্ত দৃষ্টি মেলে।
আগামীকাল হয়তো ওরাই এসে দাঙ্গা বাঁধাবে;
আমার মাথার ঘিলুর দখল নিতে।
কিংবা ওরা নয়, অন্য কোন কিছু।
আজ তবে যাই; বিদায়!
©somewhere in net ltd.