নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

অনেকের তীব্র আপত্তি থাকা সত্ত্বেও জোর করে নিজেকে একজন সাদা মনের সহজ-সরল মানুষ হিসেবে ঘোষণা করলাম।www.facebook.com/shashish.shamikamal

শাশীশ

শাশীশের ব্লগ

শাশীশ › বিস্তারিত পোস্টঃ

কুকুর বা ডগ : From London With Love (পর্ব-৭)

১৬ ই এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:২১

কুকুর বা ডগ


আমার কুকুরভীতি রয়েছে। প্রথমেই, কুকুরপ্রেমীদের বলে নেই যে আমি মোটেও কুকুর-ঘৃণা করিনা। বরং আমি কুকুর ভালোবাসি। কুকুরভীতি এবং কুকুর-ঘৃণার মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। দূর থেকে কুকুর দেখতে আমার ভা্লো লাগে। কুকুর আপনার সাথে খেলছে, ঘেউ ঘেউ করছে আর দৌড়াদৌড়ি করছে- এসব জিনিস দেখতে আমার ভালো লাগে। সমস্যা শুরু হয় কুকুর কাছে আসলে।

এই কুকুরভীতির কারণ আমার ছোটবেলার এক বাজে অভিজ্ঞতা। ছোটবেলা মামার সাথে হাঁটতে বের হয়েছিলাম। মামা কি বুঝে বলেছিল- দেখি তুমি কত জোরে দৌড়ে ওই লাল গাড়িটার দিকে যেতে পার দেখব। আমি কিছু না বুঝেই দৌড় দিলাম। দৌড় দেয়ার সাথে সাথে কোথা থেকে ৩ টা কুকুর আমাকে কামড়ানোর জন্য আমার দিকে ধেয়ে আসলো। আমি ভাবলাম কুকুরগুলো মনে হয় আমাকে ধরে খেয়ে ফেলবে। আমি আরও জোরে দৌড় দিলাম। কিন্তু এক পর্যায়ে তারা আমার অনেক কাছে চলে আসলো। আমার ভয় দেখে আশেপাশে থাকা কিছু কন্সট্রাকশন শ্রমিক আমার জীবন রক্ষা করল। তারা ঢিল মেরে কুকুরগুলোকে দূর করল। অনেক ভয় পেয়েছিলাম সেদিন। তাই আমাকে বাসায় নিয়ে লবণ পানি খাইয়ে শান্ত করা হয়েছিল। পরে আমাকে মামা ও পরিবার মিলে বোঝানোর চেষ্টা করেছিল যে কুকুরগুলো নাকি আমার সাথে খেলা করার জন্য আমার পিছু নিয়েছিল। কর্তৃপক্ষের তথ্যের ওপর সেই যে আমার বিশ্বাস উঠে গেছে এখন পর্যন্ত আর ফিরে আসেনি।

দেশে ও বিদেশে এই কুকুরভীতির কারণে আমি এলিট সমাজের কাছে অসভ্য ও নির্দয় হিসাবে বিবেচিত হই।

>অসভ্যঃ ধানমন্ডি এলাকায় অনেকেই কুকুর বা ভদ্র ভাষায় ডগ যাকে বলা হয়, সেটা নিয়ে চলাচল করে। বিশেষ করে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ডগ লালন-পালন করা অনেক জনপ্রিয়। কম বাজেটের ডগ হল বিড়াল বা ক্যাট। কিন্তু বিড়াল নিয়ে কেউ তেমন একটা হাঁটতে বের হয়না। হাঁটতে বের হয় ডগ নিয়ে। একবার আমাদের বাসায় ঢোকার মূল গেটের সামনে কয়েকটা ছেলে খুব সুন্দর একটা বিদেশী ডগ নিয়ে খেলা করছে। এই ডগ দেখে আমি আর আর গেটের ভেতর ঢুকতে পারছিলামনা। আমার অবস্থা দেখে ছেলেরা খুবই বিরক্ত হয়ে বলল- এইটা ত দেশী কুকুর না, বিদেশী কুকুর! অর্থাৎ, আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করল যে এই কুকুর খুবই নম্র-ভদ্র স্বভাবের। মানুষের ক্ষতি করবে না। কিন্তু আমি দেশী-বিদেশী সব ধরনের কুকুরকে সমানভাবে ভয় পাই। কোন ডিসক্রিমিনেশন নাই। পরে আমার অবস্থা দেখে তারা এই ব্যাটা কোথা থেকে আইসে? - টাইপের একটা লুক দিয়ে চলে যায়। এই কুকুরভীতির কারণে বাংলাদেশের সভ্য সমাজের অংশ হতে পারিনি।

>>নির্দয়ঃ সভ্য আমি নই। তাই সভ্য সমাজের অংশ হতে না পারায় আমার কোন আফসোস নেই। তবে আমি নির্দয় নই। মানুষজন নির্দয় ভাবলে তাই আমার খারাপ লাগে। আমাকে আমার স্ত্রী ❤ ছাড়া কেউ নির্দয় ভাবেনা। কিন্তু লন্ডনে এসে কুকুরভীতির কারণে আমাকে অনেকেই নির্দয় ভেবেছে সেটা আমি নিশ্চিত। লন্ডনে সাধারণ মানুষ এবং বিশেষ করে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা কুকুর নিয়ে হাঁটে। এদের কাছে কুকুর হল নিজের সন্তানতুল্ল্য। কুকুরকে নিজের পরিবারের সদস্যের মত ভালোবাসে তারা। ধরেন আপনি আপনার শিশু নিয়ে হাঁটছেন। আদরের শিশু সবাই যাকে আদর করে। হাঁটার সময় আপনার বাচ্চা আমার সামনে পড়ায় আমি আপনার বাচ্চাকে দেখে দূরে সরে গেলাম।আপনার কেমন লাগবে? নিশ্চই ভাববেন আমি কত খারাপ ও নির্দয় ! তারাও বহুবার সেটাই ভেবেছে।

টেসকো ও অন্যান্য চেইনশপে কুকুর নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। তাই তারা টেসকোতে প্রবেশের আগে কুকুর বেঁধে রেখে ভেতরে যায়। আর বাইরে কুকুর বাঁধা থাকায় আমি গেট দিয়ে ঢুকতে ভয় পাই। অপেক্ষা করি কুকুর সরানোর। তবে সাহস একটু হলেও বেড়েছে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কুকুরের সামনে দিয়েই হেঁটে গেছি কয়েকবার।

একবার বাসে উঠলাম। পাশের সিটে এক বৃদ্ধা তার কুকুর সহ বসল। সাধারণত বাসে কাউকে কুকুর নিয়ে উঠতে দেখিনা। বাসে কুকুর নিয়ে ওঠার নিয়ম আছে কিনা জানা নেই। মনে হয় নেই। সেই একদিনই দেখলাম কাউকে কুকুর নিয়ে উঠতে, আর আমার পোড়া কপাল যে আমার পাশের সিট এ এসেই বসল ! কুকুর আমার সাথে আবার খেলতে চাইল। আমার উশখুশ দেখে বৃদ্ধা কুকুরটিকে নিয়ে অন্য আরেকটি সিটে যেয়ে বসল। আমার খুব খারাপ লেগেছিল। মনে হয়েছিল আমার ফোবিয়ার কথা তাকে জানাই। কিন্তু জানানো হয়নি। জানিনা সেই বৃদ্ধা এবং তার কুকুর এখন এই সময় কোথায় আছে। আল্লাহ তাদের মঙ্গল করুক। পৃথিবীর সকল দেশের সকল প্রাণী ভালো থাকুক।

আগের পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক করুন

মন্তব্য ৮ টি রেটিং +১/-০

মন্তব্য (৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৩

নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
সোনাগাজী সাবের কাছ থেকে
কুত্তা বশিকরিণ মন্ত্র সিখে নিন
কুত্তার ভয় কেটে যাবে।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:০১

শাশীশ বলেছেন: হাহা। আচ্ছা। লিংক দিন। শিখে নেব।

২| ১৬ ই এপ্রিল, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৮

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


লন্ডনবাসী কুকুরের জন্য মাথাপিছু খরচ কত করে?

১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:০৪

শাশীশ বলেছেন: প্রতি মাসে ২৭০০০ টাকার মত খরচ করে।

৩| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ রাত ১২:৩৬

রাজীব নুর বলেছেন: প্রথম কথা হলো লেখাটা খুব সুন্দর করে লিখেছেন। পড়তে একটুও বিরক্ত লাগেনি।

বাংলাদেশের কুকুর গুলো ভালো নেই। রাস্তা ঘাটে কুকুরের অভাব নেই। ওরা খাবার পায় না। জন্মের পর থেকে অনাহারে থাকে। আদরর ভালোবাসা পায় না। ওদের মৃত্যু হয় খুব দুঃখজনক ভাবে। দেখা যায় কেউ ওদের গায়ে গতম পানি ফেলে দিয়েছে। কেউ লাঠি দিয়ে বাড়ি দিয়ে রক্ত বের করে দিয়েছে। কুকুর গুলো যখন রাস্তায় ঘুমিয়ে থাকে, তখন ওদের পায়ের উপর দিয়ে গাড়ি, রিকশা, সি এন জি চলে যায়। ওদের পা ভেঙ্গে যায়। খুড়াতে খুড়াতে কুকুর গুলোর চলতে হয়। আমার ভীষন খারাপ লাগে।

আমি রাস্তার কুকুর গুলোর জন্য কিছু কর‍্যতে চাই। ওদের জন্য কি করা যেতে পারে? আমাকে বুদ্ধি দেন।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:৩৮

শাশীশ বলেছেন: Obhoyaronno - Bangladesh Animal Welfare Foundation নামে একটি সংস্থা আছে। তাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন।

৪| ১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ দুপুর ২:১৬

বিটপি বলেছেন: @রাজীব নুর, আপনি মেয়ে কুকুরগুলোকে ধরে ধরে সিটি কর্পোরেশনে নিয়ে গিয়ে বন্ধ্যাকরণ ইঞ্জেকশন দিন। তাহলে কুকুর বিষয়ক কোন সমস্যা আর নগরবাসীকে ফেস করতে হবেনা।

আমি আসলে রাস্তার ছেলেমেয়েগুলোর জন্য কিছু করতে চাই। এদের জন্য আমার খুব কষ্ট লাগে। ইচ্ছে করে ১০ টাকা ২০ টাকা ধরিয়ে দেই। কিন্তু সেই টাকায় যদি নেশা ভাং করে - এজন্য দিতে পারিনা।

১৭ ই এপ্রিল, ২০২২ বিকাল ৩:৪১

শাশীশ বলেছেন: দারিদ্র্য দূর হলে রাস্তার ছেলেমেয়েগুলোর এই অবস্থা থাকবে না। তাদের পরিবারের দারিদ্র্য দূর করাই আমাদের মূল লক্ষ্য হতে পারে।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.