নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আপনার সুন্দর করে বলাটা জরুরী না, বরং এটা জরুরী যে আপনার সুন্দর কিছু বলার আছে।

সৌরভ ঘোষ শাওন

পড়ি, পড়াই।

সৌরভ ঘোষ শাওন › বিস্তারিত পোস্টঃ

ডায়েস

২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ বিকাল ৪:২২



মানুষ তার জীবনে বিচিত্র শখ বয়ে বয়ে বেড়ায়। একসময় এই শখগুলো নেশা হয়ে যায়। অদ্ভুতভাবে তাড়া করে ফেরে তার মনিবকে। পৃথিবীতে নানা জনের নানা বাতিক। ওয়েটমোর সাহেবের বাতিক আবার গুহা চষে বেড়ানো। ছোটবেলা থেকেই আশেপাশে ছোট বড় কত গুহা দাপিয়ে বেড়িয়েছেন, কখনো পরিবারের সাথে, কখনো বন্ধুবান্ধবের সাথে। নিউগ্রাদ শহরের অলিগলিতে কোন গুহা আর হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবেনা যেখানে এই ওয়েটমোরের পদচিহ্ন পড়েনি। এ নিয়ে মনে মনে তার একটু অহংবোধ ও আছে। সেই গর্বকে আরো একটু বাড়িয়ে নিতে ওয়েটমোর এই বুড়ো বয়েসে এসে একটি ক্লাব খুলে বসেছেন। নাম দিয়েছেন “স্পেলুন্সিয়ান সোসাইটি”। কাগজে কলমে এডভেঞ্চার ক্লাব হলেও মূল কাজটি কিন্তু ওই গুহা পরিদর্শন।

সোসাইটির বন্ধুমহল আর আগের অভিজ্ঞতার ঝুলি কাধে নিয়ে কোন এক গ্রীষ্মের মনোরম সকালে পরিবারের কাছে ৩-৪ দিনের জন্যে বিদায় নিয়ে ওয়েটমোর যাত্রা করলেন নতুন এক গুহা ভ্রমণে। নতুন কেনা জীপে গল্প করতে করতে বেশ খোশ মেজাজেই এগিয়ে চলছেন সোসাইটির সভ্যগণ। ওয়েটমোরের ঘনিষ্ঠ বন্ধু রবার্ট সাহেব নিকটস্থ এলাকার শেরিফ। গুহাপরিভ্রমন ছাড়াও তার আরো অন্ততঃ পাঁচ রকমের শখ আছে। এলবার্ট সাহেব এলাকার নাটক দলে কাজ করেন। তিনি গাড়িতে উঠেই শেক্সপিয়রের ওথেলো নিয়ে তার অভসার্ভেশন বলা শুরু করেছেন। বাকি লোকগুলো এতে বেশ বিব্রত হলেও মুখে কিছু বলছেন না। সবচেয়ে বিরক্ত হচ্ছেন থম্পসন সাহেব। এককালে পাকা শিকারী হিসেবে তার বেশ নামডাক ছিলো। এলাকায় বাঘের উপদ্রপ হলেই তার ডাক পড়তো। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তার চেহারার জৌলুশের সাথে শারীরিক শক্তিও ইতিহাস হয়ে গিয়েছে। কিন্তু বাঁক ধরা গোফটা এখনো বেশ সাফল্যের সংগেই মেন্টেইন করেছেন। নিজের বাঘ শিকারের গল্প তিনি সাজিয়ে এনেছিলেন যাত্রাকালীন সময়ে শোনানোর জন্যে। সে আশায় গুঁড়ে বালি। অতঃপর হু কেয়ারস টাইপ এটিচিউড নিয়ে তিনি একের পর এক সিগার জ্বালিয়ে বাক্স খালি করার মিশনে নেমেছেন।

সন্ধ্যার আঁধার ঘনিয়ে আসার আগেই সোসাইটির সভ্যসকল গুহা মুখে পৌঁছেছেন। আগেই বলেছি জীবনে ওয়েটমোরের পাহাড়ী গুহা ভ্রমণের অভিজ্ঞতা বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের, কিন্তু এত সুন্দর গুহা তিনি আর কখনো দেখেন নি। অন্যান্য সভ্যরাও গুহার সৌন্দর্যে মুগ্ধ। গুহার বাইরে পানাহার সেরে সন্ধ্যার দিকে তারা গুহার মধ্যে ঢুকে পড়লেন।

গুহার মধ্যে নিরেট অন্ধকার। বাইরে থেকে জ্বালিয়ে আনা মশালগুলো তাদের নির্ঘাত অন্ধত্ব থেকে বাঁচিয়েছে। ওয়েটমোর সাহেব পকেট থেকে বের করা ম্যাপখানা খুটিয়ে খুটিয়ে দেখছেন। ওনার হাটার গতি কিছুটা শ্লথ অন্যদের তুলনায়। ম্যাপ দেখে উনি বললেন, “দেখেছো বন্ধুরা, বাইরে থেকে গুহাকে যেমন সুন্দর লাগছিলো, ভেতরে তা আরো সুন্দর। একেই বলে বোধহয় ভয়ংকর সৌন্দর্য। অথচ এই গুহার প্রবেশ পথ ও বের হবার রাস্তা একটাই” ।

থম্পসন সাহেব সুযোগ পেয়ে রাগ ঝাড়লেন, “ঠিক এলবার্টের এক পোঁদঅলা ব্যারামের মতো। যেখানে সেখানে সুযোগ পেলেই ওথেলো কপচানো শুরু করে দেয়”।

কথাটা এলবার্টকে ক্ষেপিয়ে তোলার জন্যে যথেষ্ট ছিলো। “তাও তো তোমার মতো খচ্চর মেরে বাঘ শিকারের কাহিনী জুড়ে দেই না” এলবার্ট চেঁচিয়ে ওঠে অন্যদের প্রতিক্রিয়া জানার জন্যে এর ওর মুখ চাওয়া চাওয়ি করতে লাগলেন।

“উফফ... তোমরা পারো ও ... এডভ্যাঞ্চার করতে এসেও মেয়েদের মতো ঝগড়া করছো। কোথায় একটু...” ওয়েটমোর সাহেব শান্তিরক্ষা করতে গিয়েও মাঝপথে থেমে গেলেন।

বিকট শব্দে কানে তালা লেগে যাবার জো হলো। আচমকা দমকা হাওয়ায় নিভে গেলো মশালগুলো। আলোর শেষবিন্দুটি ও নজরে পড়ছে না। গুহার ভিতরকার চারটি প্রানী সম্পুর্ণ নিস্তব্ধ। সবার নিশ্বাস ও বোধহয় স্থির হয়ে এসেছে।





তিনদিনের জায়গায় সপ্তাহ কেটে গেলো। ওয়েটমোর সাহেবের স্ত্রী ও অন্যান্য আত্মীয়স্বজন তার ফিরে না আসায় খুবই দুশ্চিন্তায় আছেন। সোসাইটির অন্যান্য সভ্যদের পরিবার সমেত তারা গেলেন শহরের সেক্রেটারীর কাছে। সেক্রেটারী তার রেস্কিউ টিম নিয়ে সেই গুহার সামনে এসে হাজির হন। গুহার মুখ বিশাল পাথরে চাপা পড়ে আছে। ফায়ার সার্ভিসের ৭০ জন সদস্যের একটি টিম দিনরাত এক করে ফেলছে পাথরের টুকরোটা সরানোর জন্যে। কিন্তু পাহাড়ের উপরে কাজ করতে ভীষন সমস্যা হচ্ছে। এরই মাঝে কয়েকবার ব্যার্থ চেষ্টা করে কর্মীরা ক্লান্ত। অবশেষে আটকে পড়ার ২০ দিন পর রেডিও দিয়ে ভিতরের মানুষগুলোর সাথে যোগাযোগ সম্ভব হয়।

ওয়েটমোরের কন্ঠ শোনা যায়। ভিতরে তারা ছাড়া অন্য কোন প্রানী নেই, কোন উদ্ভিদ নেই। নিজেদের সংগে নেওয়া খাবার শেষ হয়ে গেছে অনেক আগেই। এই কদিনের অনাহারে শরীর ভেংগে পড়েছে।

মেডিক্যাল টিম তলব করা হয়। ওয়েটমোর জানতে চান, তাদের উদ্ধারে আর কত দিন লাগবে। তাকে বলা হয় যে উদ্ধার হতে আর ও ১০ দিনের মতো লাগবে।

ওয়েটমোর নিরাশ হয়ে মেডিক্যাল বোর্ডের চেয়ারম্যানের কাছে জিজ্ঞেস করেন, বাকি দিনগুলো এই শরীরে অনাহারে বেঁচে থাকা সম্ভব কিনা।

চেয়ারম্যান ব্যাথিত হয়ে বলেন, “ সম্ভবনা খুব কম”।

তারপর ভিতর থেকে আর আওয়াজ পাওয়া যায় না। নেমে আসে সুনসান নীরবতা।







মিশকালো অন্ধকারে চরম নিস্তব্ধতা ভাঙ্গেন রবার্ট।

“ নেশা আমাদের শেষ পর্যন্ত মৃত্যু উপত্যকায় তাড়িয়ে নিয়ে এলো”

এলবার্ট সেই মুহুর্তে নাটকীয়তা আনতে গিয়ে ও আনতে পারেন না। চুপ করে থাকেন।

“ না। আমরা এখনই মরছিনা” ওয়েটমোর সশব্দে বলে ওঠেন। পকেট হাতরে দুটো ডায়েস বের করে আনেন। বলেন, “আমরা এখনই সবাই মরবোনা। সকলে মরে যাওয়ার চেয়ে আসো একজন অন্যদের জন্যে জীবন উৎসর্গ করি। এই ডায়েসই বলে দিক কে সেই সুযোগটি পাচ্ছি”।

“কথাটা এখনো সবাই বুঝতে পারোনি, তাইতো? আমরা এই ডায়েস দিয়ে নির্ধারন করবো, আমাদের মধ্যে একজনের নাম। তারপর তাকে হত্যা করে তার মাংস খেয়ে বাকীরা ১০দিন বেঁচে থাকতে পারবো” ওয়েটমোর সবাইকে বুঝিয়ে বলেন।

এলবার্ট চেঁচিয়ে ওঠে, “ মানুষ খাওয়া!!! এ তো ভয়ংকর পাপ”।

“নেসেসিটি নোস নো ল মাই ফ্রেন্ড। এখন এই ডায়েস ই পারে আপাতত আমাদের মধ্যে অধিকাংশকে বাঁচিয়ে রাখতে” ওয়েটমোর বলে ওঠেন।

প্রথমদিকে সকলে অমত করলেও পরে সকলে মেনে নেন। খেলা হয়, দান ছোঁড়া হয়। ওয়েটমোরের নাম উঠে। তিনি নিজের মারা গিয়ে অন্যদের জীবন বাঁচিয়ে দেন। স্পেলুন্সিয়ান সোসাইটির অন্য সভ্যেরা প্রতিষ্ঠাতার মাংসে নিজের ক্ষিধে মেটায়।



৩২ দিন পর... বাকি লোকগুলো উদ্ধার হয়। রবার্ট, এলবার্ট আর থম্পসনের নিউগ্রাদের আইন অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ড হয়।

ডায়েস কখনো একটি সংখ্যা প্রকাশ করে না। আপাতদৃষ্টিতে উপরের সংখ্যা দেখা গেলেও বিভিন্ন পাশে আরো অনেক সংখ্যা থেকে যায়। ডায়েস যখন ডুবে যায়, সবগুলো সংখ্যা নিয়ে ডুবে যায়। একটি সংখ্যা নিয়ে নয়।



লন ফুলারের কাল্পনিক মামলা “স্পেলুন্সিয়ান এক্সপ্লোরার” অবলম্বনে।

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.