![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
পড়ি, পড়াই।
‘কাল আপনাকে ফোন করবো। আপনার বিশ্বভারতীর জীবনের গল্প শুনবো।’
‘আমার একলার গল্প শুনবেন?’
‘হ্যা। একদম একলার।’
‘হঠাৎ বিশ্বভারতীর জীবন শুনতে চাইলেন?’
‘চাইতে পারিনা? আপনি আমার বন্ধু না?’
‘তাহলে বরিশালের গল্প শুনতে চান। সেটা বেশি ইন্ট্রেস্টিং।’
‘একদম ছোটবেলা থেকে গল্প শুনতে চাইলে কেমন হয়?’
‘একটু বেশি বেশি জানা হয়ে যায় না সেক্ষেত্রে?’
‘তাহলে কম কমই বলবেন।’
‘হাহাহা। তারপর বলেন। কী খবর?’
আমি ল্যাপটপ ফোর্স শাট ডাউন করে শুয়ে পড়ি। গত কয়েকদিন ধরে আমি রাতে আগে আগে ঘুমিয়ে পড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটা নির্দির্ষ্ট সময়ে সকল ইলেক্ট্রনিক ডিভাইস দূরে রেখে শুয়ে পড়ি। দূর্দান্ত ফল পাচ্ছি বলা যায় না। আমার ছোটো একজনি বিছানায় মোটা মশারির চাপে আমি হাঁসফাঁশ করতে থাকি। সিলিং এ চলা আর না চলার মাঝখানে এক অদ্ভুত গতিতে দুলতে থাকা পাখার বাতাস আমার গায়ে এসে পৌছায় না। আমি ঘামতে থাকি। ডান হাতে আমি বিছানার পাশে টুলের উপরে রাখা ধূলোবালির আস্তরণ পড়ে থাকা টেবিলফ্যানটা ছেড়ে দেই। গুটগুট করে চলতে শুরু করে ওটা । কিছুটা ধূলোও ছিটিয়ে দেয় তার সামনের মশারীর গায়ে। আমার অস্বস্তি কমেনা। টিমটিম করে জলতে থাকা নীল ডিম লাইটের আলোয় আমার চোখ চলে যায় সামনের আলনায়। কয়েকটা অগোছালো হ্যাংগার আর একটা পুরোনো প্যান্টের বকলেস আমার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। আমি তাকিয়ে থাকি। একটা বোটকা গন্ধ আমার নাকে আসে। আমার দম আটকে আসতে থাকে। আমি বিছানার উপর সিগারেটের প্যাকেট হাতড়াই। পাইনা। আমার নাকে আর কপালে আমি একটা কঠিন পদার্থের অস্তিত্ব অনুভব করি। আমি দেখার জন্যে ব্যকুল হই কিন্তু দেখতে পাইনা। নাকে আসতে থাকা বোটকা গন্ধটা মিলিয়ে যায়। তারপর একটা মিষ্টি গন্ধ আমি পেতে থাকি। আমি টের পাই আমার মুখমন্ডলের সামনের কঠিন পদার্থটুকু ক্রমে নরম মাংসল হয়ে উঠছে। আমি একটা খয়েরি রঙের কাপড় দেখি চোখের সামনে। আমার নড়াচড়ায় সেটা সামান্য নড়েচড়ে। সেটা সরে গেলে আমি বাদামী রঙের নরমাংস দেখতে পাই। নাহ। নর অথবা নারী আমি নিশ্চিত হতে পারিনা। আমি একটা অদ্ভুত অনুভুতিতে শিহরিত হই। না ভয়, না কাম, এক ধরনের অপার ঔদাসীন্য। আমার শরীর অচেতন হয়ে পড়ে। আমি সেই খয়েরি শাড়ি পরা নর অথবা নারীর কোলে মাথাটা এলিয়ে দেই।
আমি দাঁড়িয়ে থাকি আমাদের পুরোনো বাড়ির ফটকের সামনে। ছোটোবেলা আমার কুকুরভীতি ছিলো। আমার বের হওয়ার পথে মাঝেমাঝে দু’তিনটে কুকুর শুয়ে থাকতো পথে। আমি ওঁদের বিরক্ত করার সাহস করতাম না। গুটিগুটি পায়ে সন্তর্পণে এগিয়ে যেতাম । একবার একটা কুকুরের সঙ্গে আমার বেশ ভাব হয়। কুকুরটা ধবধবে সাদা। গলায় একটা শেকলের মতো কালো দাগ। কপালে একগোছা চুল এমন অদ্ভুত ভংগিতে বেঁকে দাঁড়িয়ে আছে যে আমার সেটাকে শিং মনে হয়। আমি ততদিনে রুপকথার শিঙওয়ালা ঘোড়ার কথা জানি। ইউনিকর্ণ। কুকুরটির নাম আমি দিলাম ইউনিকর্ণ। ইউনিকর্ণের সাথে আমার রোজ দেখা হয়। আমি তাকে স্কুলে যাওয়ার পথে রোজ বিস্কুট খেতে দিতাম। আমাদের স্কুলে যেতে হলে বেশ কিছুদূর হেঁটে নৌকা পেরোতে হয়। ইউনিকর্ণ আমার সাথে নদীর ঘাট পর্যন্ত আসতো। আমি নৌকায় উঠে চলে যেতাম স্কুলে। কুকুরটি তাকিয়ে থাকতো। একদিন স্কুল থেকে ফিরে আমি ইউনিকর্ণকে আর পাইনা। কোথায় যেনো হারিয়ে গেছে। আমি তাকে এপাড়া ওপাড়া সবজায়গায় খুঁজেছি। কিন্তু পাইনি। মাস তিনেক পরে ইউনিকর্ণ ফিরে আসে। এবারে সে রুগ্ন। তার চামড়া পুড়ে গেছে। প্রচন্ড দূর্গন্ধে তার কাছে যাওয়া যাচ্ছেনা। সে আগের মতো এখনো ফটকে শুয়ে থাকে। কিন্তু এবারে বাড়ির লোক আর সেটা সহ্য করলো না। তিনজন বিশাল মাপের লোক দুটো বাঁশ আর একটা রড দিয়ে ইউনিকর্ণকে পেটাতে থাকলো। আমি জানালা দিয়ে দেখলাম ইউনিকর্ণ চিৎকার করছে। ধীরে ধীরে কুকুরটি মরে যায়। তিনজনে মিলে কুকুরটিকে পেছনের নালায় ফেলে দিয়ে আসে। আমি প্রায় পঁচিশ বছর পর আবার ইউনিকর্ণকে দেখি। তার শিঙ আর গলার দাগ দেখে আমি তাকে ঠিক চিনতে পারি। আমার মনে হয় সে আমার দিকে তাকিয়ে ফ্যালফ্যাল করে হাসছে।
আমি সেই নর বা নারীর কোল থেকে মুখটা তুলি। তার পেটের কাছে পৌঁছোই। এবারে তার পেটে তিরতিরে ঘাম। ঘামে খয়েরি শাড়ি ভিজে কালচে হয়ে গেছে। আমার চোখ যায় তার নাভীর কাছে। আমি তার পেট এবং নাভি চাটতে থাকি। আমার শরীরে দারুন আরাম হয়। আমি আমার জিহবা আরো উপরের দিকে ওঠাতে চাই। কিন্তু খানিকটা উপরে গিয়ে সেটা আর উঠতে চায়না। বুঝতে পারি তার ব্লাউজে আমার জিভ আটকে গেছে। আমি হাত দিয়ে ব্লাউজ খুলে দিতে চেষ্টা করি। কিন্তু আশ্চর্য! আমি আমার হাত খুঁজে পাইনা। আমার রাগ হয়। দাঁত দিয়ে আমি টেনে ব্লাউজ ছিড়ে ফেলার চেষ্টা করি। পারিনা। আমার মুখের একপাশের কোনা থেকে ফোটায় ফোটায় রক্ত বেরোয়। কিন্তু কাপড়ের টুকরাটা ছেড়েনা। আমি নিস্তেজ হয়ে পড়ি। আমার শরীর এলিয়ে পড়ে সেই নারীর কোলে।
আমি আমাদের কমলাকৃতির খাবার টেবিলে বসে ভাত খাচ্ছি। আমার প্রিয় খাবার কুচি কুচি করে কেটে ডুবোতেলে আলুভাজি আর মুগের ডাল। মা আগে প্রায়ই কুচি কুচি আলুভাজি করে খাওয়াতেন। কতগুলো আলুভাজি তার মধ্যেই অন্যরকম। লাল এবং কুড়মুড়ে। সম্ভবত পুড়ে যাওয়া। আমি সেগুলোর জন্যে আবদার করতাম। মা খুন্তি দিয়ে যত্ন করে সেগুলো আমার পাতে দিতেন। শেষদিকে মা আর নিচু হয়ে বসে আলু কাটতে পারতেন না। তার পিঠে আর বুকে ব্যাথা হতো। মা কোনোদিন বাবাকে সেসব বলতেন না। ভয় পেতেন। মেয়ে মানুষ কিছু রোগশোক নিয়ে বাঁচবে এমনটাই বাবার ধারণা ছিলো। একদিন আমি বাড়িতে চিৎকার শুরু করি মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাবো। মা যেতে চাননা বাবার ভয়ে। বাবা শুনতে পান। তারপর এসমস্ত ঠুনকো বিষয় নিয়ে মা কেন সবাইকে বলে বলে সংসারে অশান্তি আনেন জানতে চান। মা চুপ করে থাকেন। চিৎকারের এক পর্যায়ে বাবা মায়ের পিঠে লাথি মারেন। মা বমি করতে শুরু করেন। আস্তে আস্তে বমির সাথে রক্ত আসে। আমরা মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাই। সেই প্রথম আর শেষ মাকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া। মা আর ফিরে আসেন না। আজ সাত বছর পর দেখলাম, মা কড়াই আর খুন্তি নিয়ে আমার পাশে এসে দাড়ালেন। বললেন, ‘এই আলুভাজি নে একটু? ভাত নিবি?’
আমি দাঁতে ভীষণ ব্যাথা অনুভব করি। কিন্তু শক্ত কাপড়ের উপর আমার জেদ চেপে যায়। আমার সহ্য হয় না। আমি আবার এগিয়ে যাই। কামড়ে ধরি সেই কাপড়খানা। হিচকে টান মারি। এদফায় আমি আমার একটা হাত খুঁজে পাই। আমি হাতটা এগিয়ে দেই কাপড়ের উপর। আমি নরম কিছু প্রত্যাশা করি। কিন্তু হাতে নরম কিছু ঠেকে না। তবু আমি থেমে থাকিনা। হাত আর দাঁত দিয়ে সজোরে টেনে ধরি। কিছুক্ষন পরে আমার হাত আর মুখে দুখন্ড খয়েরি কাপড় চলে আসে। আমি হাতের কাপড়ের টুকরাটাও আমার নাকেমুখে ঠেসে ধরি। একটা অদ্ভুত কামমাখা গন্ধে আমি আমোদিত হই। আমি সজোরে চাটতে থাকি। আমার জিভ উপরে ওঠাতে আর কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকেনা। আমি সেটা টেনে উপরে ওঠাতে থাকি। হঠাৎ ধারালো কিছু আমার জিভে লাগে। আমার জিভ কেটে যায়। আমি রক্তের স্বাদ পাই। রক্ত আমার জিভ গড়িয়ে চিবুক বেয়ে গলা দিয়ে নামতে থাকে। আমার অবসন্ন লাগে। আমার শরীর এলিয়ে পড়ে। মাথাটা সজোরে আছড়ে পড়ে কঠিন কিছুর গায়ে। আমার মাথায় ভোঁতা আঘাত অনুভব করি। আমার নিশ্বাস ধীর হতে থাকে।
আমি আমার মুখের উপর থেকে ছোটছোট ধুলোর টুকরো সরিয়ে দেই। বালিশের নিচ থেকে ফোনটা বের করি। কনটাক্ট লিস্ট থেকে একটা নম্বর খুঁজে বের করি। তারপর ফোন করি সেই নম্বরে। রিং হয়। এক বার, দু বার, তিনবার ।
২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:২৭
সৌরভ ঘোষ শাওন বলেছেন: ধন্যবাদ। শুভরাত্রি।
২| ২৪ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:৪১
নেওয়াজ আলি বলেছেন: অত্যন্ত চমৎকার লেখনী ।
২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:২৮
সৌরভ ঘোষ শাওন বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৩| ২৪ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৩:১০
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: ভালো লিখেছেন।
২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩০
সৌরভ ঘোষ শাওন বলেছেন: ধন্যবাদ পাঠক। শুভরাত্রি।
৪| ২৪ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৪:২১
রাজীব নুর বলেছেন: লেখক বলেছেন: 'দুধের শিশুও জানে জলের কি দাম'~ সিনা হাসান।
না দুধের শিশু জানে না।
২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩০
সৌরভ ঘোষ শাওন বলেছেন: ঠিক আছে।
৫| ২৪ শে জুন, ২০২০ বিকাল ৫:২৮
বিজন রয় বলেছেন: পরিপাটী।
+++++
২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩০
সৌরভ ঘোষ শাওন বলেছেন: ধন্যবাদ
৬| ২৪ শে জুন, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:২১
অশুভ বলেছেন: অসাধারণ!!! অনেকদিন পর ঘোরলাগা একটা লেখা পড়লাম।
২৫ শে জুন, ২০২০ রাত ১২:৩২
সৌরভ ঘোষ শাওন বলেছেন: ঘোরের ভেতর নিয়ে যেতে পারে আনন্দ হচ্ছে। ভালো থাকুন। শুভরাত।
৭| ২৬ শে জুন, ২০২০ ভোর ৪:১৭
জেন রসি বলেছেন: সিম্বলিক। ভালো লেগেছে।
০৮ ই জুলাই, ২০২০ দুপুর ১:৪৯
সৌরভ ঘোষ শাওন বলেছেন: ধন্যবাদ জেন রসি
©somewhere in net ltd.
১|
২৪ শে জুন, ২০২০ দুপুর ২:১৬
লাবনী আক্তার বলেছেন:
মানুষ বা অন্যকোন প্রাণী যার প্রতি ভালোবাসা থাকে বোধহয় তাকেই স্বপ্নে দেখে থাকি আমরা।
গল্পটা ভালো লেগেছে আমার কাছে। আপনি ভালো লিখেন। শুভকামনা আপনার জন্য।