নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।
আমরা আমাদের আব্বাকে এতোটাই ভয় পেতাম যে আমাদের সম্পর্ক ছিল চিল আর মুরগির ছানার মতো।
মুরগির ছানারা যেমন চিলের আনাগোনা পেলে দৌড়ে গিয়ে মায়ের ডানার নিচে লুকায় আমরাও তেমন বাবার সাড়াশব্দ পেলে দৌড়ে গিয়ে মায়ের আঁচলের নিচে লুকাতাম বা বাসার এমন কোনো জায়গায় গিয়ে চুপ করে থাকতাম যেখানে আব্বা খুব একটা যেতেন না।
এই ভয়ের কারণেই আব্বার সাথে আমাদের দূরত্ব ছিল অনেক।আমাদের কাছে আমাদের আব্বার উপস্থিতি আনন্দের চেয়ে ভয়েরই ছিল বেশি।আব্বা তার ব্যবসার কাজ ছাড়া যতোটা সময় বাসায় থাকতেন এই পুরোটা সময় আমাদের শ্বাস বন্ধ হবার উপক্রম হয়ে থাকত। ভয়ে আমরা পড়ার টেবিলে বা অন্য কোনো জায়গায় জড়সড় হয়ে বসে থাকতাম।
লেখাপড়ার প্রথম টিচার আব্বাই ছিলেন। আমাদের অক্ষর চিনানো হাতে ধরে লিখা শিখানো সব আব্বার কাছ থেকেই হয়েছে। অবশ্য আব্বার কাছে পড়তে বসলে যতোটা না আমরা পড়তাম তার চেয়ে বেশি ভয়ে কাঁপতাম। একটু এদিক রেখে ওদিক হলেই ঠাস ঠাস পড়তো গালে। পড়ালেখার বাইরে কোনো অপরাধ করলে তার শাস্তি আরও ভয়ংকর ছিল। আমরা তখন মায়ের ডানার নিচে লুকাতাম। মা আমাদের বুক দিয়ে আগলে রাখতেন আর সমস্ত ঝড় তার উপর দিয়ে যেতো। ঝড় শেষে প্রকৃতি শান্ত হয়ে গেলে আমারা ডানার নিচ থেকে বেরিয়ে এদিক ওদিক চলে যেতাম।
আব্বার কথা ছিল একটাই। খাওয়া ঘুম আর পড়া। এর বাইরে কিছুই করা যাবেনা। আমার আব্বার ভয়ে মহল্লার ছেলেপুলেরাও আমাদের সাথে মিশত না খুব একটা। আব্বা যখন আব্বার ব্যবসার কাজে কিছুদিনের জন্য দূরে কোথাও যেতেন আমরা তখন আমাদের নিজস্ব রাজ্যের রাজা বাদশা হয়ে যেতাম। সারাক্ষণ খেলাধুলা আর লাফালাফি তে ব্যস্ত থাকতাম পুরোটা সময়। তিনি বাসায় ফিরে এলে সব আবার আগের মতো।
আব্বার একটা নীল রঙের সুজুকি বাইক ছিল। এর শব্দটা ছিল অন্য সব বাইকের চেয়ে আলাদা। আব্বা যখন বাইক নিয়ে বাসায় আসত আমরা বাইকের শব্দ শুনে সুবোধ ছেলের মতো শান্ত হয়ে পড়ার টেবিলে বসে থাকতাম। কিন্তু আমরা ডালে ডালে চললে আব্বা চলতেন পাতায় পাতায়। মাঝেমাঝে আমাদের পরীক্ষা করার জন্য অফিসে বাইক রেখে বাসায় আসতেন আর এসেই যদি আমাদের এলোমেলো দেখতেন শুরু হয়ে যেতো ধুমধাম। অবশ্য অন্য ভাইয়েদের চেয়ে আমি ভাগে কম পেতাম কারণ আব্বা বলতেন আমার চোখের দিকে তাকালে নাকি তার মায়া হয় খুব এ জন্যই আমি বরাবর বেঁচে যেতাম। যদিও আমি আমার কোটেরে ঢোকা ডার্ক সার্কেল পরা চোখে মায়ার ছিটেফোঁটাও খুঁজে পাইনা।
আব্বা আসলে এসব করতেন কারণ তার বাচ্চারা যেনো অন্য বাচ্চাদের চেয়ে আলাদা হয়। তার বাচ্চারা যেনো সুন্দর একটা ভবিষ্যৎ পায়। আমাদের জন্যই তিনি দিনরাত খাটতেন। কিন্তু ছোটবেলায় বাবা কে ভয় পাবার কারণে আমাদের মাথায় তাকে অন্যভাবে দেখা ছাড়া আর কিছু কাজ করত না।
যেদিন সকালবেলা আব্বা মারা গেলেন মা আমাদের জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কাঁদছিলেন। আমরাও মা'র সাথে হাউমাউ করে কাঁদছিলাম। যাকে আমরা সবমসময় চাইতাম দূরে থাক সেই মানুষটাই যখন চিরতরে দূরে চলে গেল তখন তাকে ছাড়া কিভাবে বেঁচে থাকব এই ভেবেই হাউমাউ করে কাঁদছিলাম। এতোগুলো বছর পরেও কাঁদি।
বাবারা আসলে এমনই হয় তারা খুব একটা ভালোবাসা প্রকাশ করেনা। তারা বুকে ভালোবাসা জমিয়ে রেখে সন্তানের জন্য ভবিষ্যৎ গড়ায় ব্যস্ত থাকে।
২| ২১ শে জুন, ২০২২ সকাল ১০:২৭
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ!
৩| ২১ শে জুন, ২০২২ সকাল ১০:৩৬
কাজী ফাতেমা ছবি বলেছেন: আল্লাহ আপনার বাবাকে জান্নাতে ঠাঁই দিন
৪| ২১ শে জুন, ২০২২ সকাল ১১:৪৮
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমীন
৫| ২১ শে জুন, ২০২২ দুপুর ১:৪১
রাজীব নুর বলেছেন: আমার আব্বা দেড় বছর আগে মারা গেছেন।
আব্বা আমার বট গাছ ছিলেন।
২১ শে জুন, ২০২২ দুপুর ২:৩১
শাওন আহমাদ বলেছেন: প্রত্যেক বাবাই তার সন্তানদের জন্য বটগাছের মতো। আপনার বাবার জন্য দোয়া রইলো।
৬| ২১ শে জুন, ২০২২ দুপুর ২:১৫
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: বাবারা সব ক্ষেত্রে ভালোবাসা প্রকাশ করেনা এটা মনে হয় কিছু কিছু ক্ষেত্রে সঠিক নয়।
২১ শে জুন, ২০২২ দুপুর ২:৩৭
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমার দেখা অধিকাংশ বাবাই তাদের সন্তানদের লুকিয়ে ভালোবাসেন। আর অধিকাংশ সন্তানই তদের বাবা কে ভয় করে গুটিয়ে থাকে। তবে এর মধ্যে কিছুটা তো ব্যতিক্ক্রম আছেই।
©somewhere in net ltd.
১| ২১ শে জুন, ২০২২ সকাল ৯:৩৭
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: বাবারা এমনই হয়। আপনার বাবার আত্নার শাস্তি কামনা করছি।