নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।
ফেসবুকে আমাদের বাবাই ছেলের আহ্লাদ দেখে অনেকেই প্রশ্ন করেন ভাইয়া আপনি কি বিবাহিত? ভাইয়া আপনার বাচ্চা আছে? ভাবী কোথায়? সে কেমন আছে? ভাইয়া আপনার বাচ্চা কেমন আছে? ভাইয়া সত্যিই কি আপনি বিবাহিত? দোস্ত কবে বিয়ে করলি? দাওয়াত দিলিনা! আবার বাচ্চার খবরও জানালিনা! ইত্যাদি।
এবার আশার কথা এই যে, আমি বিবাহিত নোই তবে বাচ্চাটা আমার এবং আমিই বাচ্চাটার বাবাই।হুম বাচ্চাটাই আমার পৃথিবী, আমার বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা।আমি ওর মুখের দিকে তাকিয়ে সব ভুলে যাই। ওর কথায় হাসি ওর কথায় বাঁচি। ও যেদিন আমাকে প্রথম বাবাই বলে ডেকেছিলো সারারাত আমি আনন্দে কেঁদেছিলাম। ভেতরটা যে কিভাবে নাড়া দিয়েছিলো তা কোনো শব্দে প্রকাশ করার জন্য যথাযথ না।
এবার বলি বিয়ে না করেও কিভাবে আমি বাচ্চার বাবা।
আমার ভাইয়া মানে পিচ্চির লিগাল বাবা রিলেশন করে বিয়ে করে, যা আমাদের পরিবারের কেউ মেনে নিতে পারছিলেন না ইভেন আমিও না।
এই বিয়েকে কেন্দ্র করে পাহাড় সমান অভিমান নিয়ে ওদের সাথে আমাদের দূরত্ব তৈরি হয়ে যাচ্ছিলো দিনের পর দিন। এসবের মাঝেই পিচ্চিটার মা পিচ্চিটাকে গর্ভে ধারণ করে।পিচ্চিটা গর্ভে বাড়তে থাকে আর তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়তে থাকে আমাদের দূরত্ব।
আমার ভাই অপরিণত বয়সে বিয়ে করে আবার এর মধ্যেই তার বাবা হবার খবর আমাদের আরও বিরক্ত করে। যে ছেলের নিজের শরীর থেকেই বাবার গন্ধ যায়নি সেই ছেলে হবে আবার অন্যের বাবা! ভাবতেই আমাদের কেমন একটা অনুভূতি কাজ করতো।
হঠাৎ একদিন রাতে হসপিটাল থেকে পিচ্চির বাবা কল করে বলে আমি বাবা হয়েছি তোদের ভাতিজা হয়েছে। ভাইয়া পিচ্চির জন্য একটা নাম দিতে বললো। আমি আমার খুব পছন্দের একটা নাম দিলাম এবং ভাইয়া কে বললাম পিচ্চির ছবি পাঠাতে।
বাচ্চাটার কথা শোনার পর থেকেই আমার যেনো কি হয়ে গিয়েছিলো। আমি নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েই এসব করছিলাম। একেই বুঝি বলে রক্তের টান যা পাহাড় সমান রাগ অভিমান কেও সমতল উর্বর ভূমি বানিয়ে দিতে পারে।
কিচ্ছুক্ষণ পর ভাইয়া পিচ্চির ছবি পাঠালেন।
কি নিষ্পাপ মুখ! নাক, ঠোঁট, ছোটছোট হাত-পা।এসব দেখে মায়ায় পড়ে গেলাম।
দৌড়ে গিয়ে মাকে দেখালাম, মা ছবিটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।চোখ ছলছল করছে তার। এ যেনো প্রথম দাদী হবার আনন্দ!
কিচ্ছুক্ষণ পর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন বাচ্চাটার অনেক কিছুই তোর মতো। এর পর তিনি নিজ থেকেই বললেন চল সকালে গিয়ে আমরা ওকে দেখে আসি।
আমি মনে মনে ঠিক এই কথাটাই আশা করছিলাম।
আমাদের যেনো সকাল হচ্ছিলনা! কখন যাবো আর কখন পিচ্চিটাকে দেখবো।
অবশেষে সকাল হলো। আমি পিচ্চিটাকে কোলে নিয়ে হসপিটালের বেডে বসে আছি।বারবার কপালে চুমু খাচ্ছি।মনে হচ্ছে পৃথিবীর সকল সুখ আমাদের কোলে এসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
মনে হচ্ছে বাচ্চাটা সকল অভিমানের অবসান ঘটাতে এসেছে।
হলোও তাই, দিন যাচ্ছিলো আর বাচ্চাটা সব তার দখলে নিয়ে নিচ্ছিলো। আমাদের রাগ অভিমান গুলো ভেসে যাচ্ছিল খরস্রোতা নদীর ভাসিয়ে নিয়ে যাওয়া অবাঞ্চিত খড়কুটোর মতো। ও একটু একটু করে বড় হচ্ছিলো আর মা বলছিলেন দেখ ওর চোখ তোর মতো! দেখ দেখ ঠোঁট টাও তোর মতো!
ধীরে ধীরে ও পুরাটাই আমি হয়েগেছে আর আমি হয়েগেছি ও।
বাচ্চাটা ওর মা বাবার চেয়ে আমাকে বেশী ভালোবাসে,আমাকে বাবাই বলে ডাকে, এই বয়সেই আমার টেক কেয়ার করে,আমাকে ওই ছোট্ট হাতে খাইয়ে দেয়।একটা একটা করে মুখে পুরে দেয় ওষুধের দানা গুলো।
আমার মাঝেমাঝে মনে হয় ওকে আমার বুকের ভেতর ভরে রাখি যেনো কোনো আঁচড় না লাগে। একটা বাচ্চা কি করে এতোটা ঘোর হতে পারে! কি করে মায়ার হাতুড়ি দিয়ে গুড়িয়ে দিতে পারে চীনেরপ্রাচীর সম রাগ-অভিমানের দেয়াল! কিভাবে ডাকতে পারে এমন অজানে সুরে যা শুনেই হ্যামিলনের সেই বংশীবাকরের বাঁশির সুরে হারিয়ে যাওয়া বাচ্চাদের দলের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাই আমি।
হুম এটাই আমার বাচ্চা আর এটাই আমার বাবাই, আমিই এই বাচ্চার মায়ার বাঁধনে আঁটকে যাওয়া বাবাই।
ছবিঃ গুগল
২৭ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:২৪
শাওন আহমাদ বলেছেন: হুম অদৃশ্য এক টান।
২| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:৩৯
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
যাক শেষটা সুন্দর সমাপন হয়েছে। দোয়া ও ভালবাসা রইল বাচ্চার জন্য।
২৭ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:২৮
শাওন আহমাদ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ শুভ কামনা জানানোর জন্য।
৩| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:০৭
জুল ভার্ন বলেছেন: ভালো লাগলো। শুভ কামনা।
২৭ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৩৭
শাওন আহমাদ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ শুভ কামনা জানানোর জন্য।
৪| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৪৩
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
এমনটা নতুন কিছু না।
শেষ পর্যন্ত সবটাই নরম হয়ে আসে।
২৭ শে জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:২৩
শাওন আহমাদ বলেছেন: ঘটনা নতুন বা পুরাতন সেই ব্যাপারে আমার কোনো ফোকাস নেই। তবে যখন কেউ অতিপরিচিত কোনো সমস্যায়ও প্রথম পড়েন তার অভিজ্ঞতা আর অনুভুতি গুলো কিন্তু নতুনই থাকে। আমার ফোকাস ছিলো বাচ্চাটাকে নিয়ে আর তার পরবর্তী সময় নিয়ে। ধন্যবাদ আপনার মতামতের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ২৭ শে জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:৩৭
সৈয়দ মশিউর রহমান বলেছেন: রক্তের একটা আলাদা টান থাকবেই।