নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

শাওন আহমাদ

এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।

শাওন আহমাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার মা

১০ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:১২



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন।কারণে অকারণে অনেক কথা বলতেন।কথা বলাটাই যেন তার শ্বাস ছিল।অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল অনেক।
কে খায়নি, কে কি খেতে চায়না, অন্যের বাচ্চারা সবকিছু খায় তার বাচ্চারা কেন খায় না, তার বাচ্চারা কেন মাছের কাটা বেছে খেতে পারেনা,তার বাচ্চারা কেন দুধ খায় না, কেন তার বাচ্চারা বেলা গড়িয়ে খাবার খায়, কেন তার বাচ্চারা এক কথায় সমস্ত কাজ করেনা, কেন তার বাচ্চারা মন ভোলা , কেন তার বাচ্চারা এতো অগোছালো, বাবা কেন এটা করেনা, ওটা করেনা।এসব কারণ সহ তার কথা বলার আরও অনেক কারণ ছিল।জীবন বলতে তার শুধু ওটুকুই ছিল স্বামী, সন্তান আর সংসার।এর বাইরে গিয়ে তিনি কিছু ভাবতেই পারতেন না।তাই সারাক্ষণ এসব নিয়েই কথা বলতেন।

বাবা মার অনেক আদুরে মেয়ে ছিলেন আমার মা।মায়ের মুখে শুনেছি নানা নাকি মায়ের সমস্ত আবদার পূরণ করতেন।খুব যত্ন করে বড় করেছিলেন মাকে।নানা নিজ হাতে মায়ের চুল আঁচড়ে দিতেন যাতে করে মা চুল আঁচড়াতে গিয়ে না আবার চুল ছিঁড়ে একাকার করে ফেলেন।
নানাজানের এতো আদুরে মেয়ে একদিন আমাদের মতো একান্নবর্তী পরিবারের বৌ হয়ে আসে। যে মেয়ে নিজ হাতে তুলে খাবার খেত না সে মেয়ে এতো বড় বাড়ির বড় ছেলের বৌ দায়িত্ব তার অনেক!
মা গুটি গুটি হাতে সংসার সামলানো শুরু করেন। এভাবে সংসার করতে করতে মা কখন যে তার বাবা মার আদুরে মেয়ে থেকে একটা একান্নবর্তী পরিবারের কুলুর বলদ কিসিমের বৌ হয়ে গিয়েছিল মা টের ও পায়নি।

নানাজান হুটহাট তার আদুরে মেয়ে আমার মাকে দেখতে বা সাথে করে নিয়ে যাবার জন্য আমাদের বাসায় চলে আসতেন।কিন্তু মা সংসারের কাজের বাইরে গিয়ে নানাজানের সাথে দেখা করা বা আমাদের বাড়ির চৌকাঠ মাড়িয়ে নানাজানের সাথে বাবার বাড়ি যাবার অনুমতি পেতেন না।নানাজান কেঁদে বুক ভাসিয়ে মার কাছ থেকে বিদায় নিতেন মা ও আঁচলে মুখ ঢেকে ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতেন।

মা যখন অসুস্থ হয়ে চুপ করে যেতেন আমার খুব খারাপ লাগত।সারা বাড়িটা কেমন খাঁখাঁ করত।মনে হত বাড়িতে কোন মানুষ নেই,পুরো বাড়ি পরিত্যক্ত হয়ে গেছে।
আমি তখন মার পাশে বসে মাকে বিভিন্ন কথা শুনিয়ে তাকে কথা বলানোর চেষ্টা করতাম।যেমন কে আমাকে বকা দিয়েছে বা আমার অন্য ভায়েরা কে কি বাজে কাজ করেছে কিংবা মাকে নিয়ে কে কে বাজে উক্তি করেছে, বাবা কীসব উল্টাপাল্টা করেছে এসব আরকি।আমার উদ্দেশ্য একটাই মাকে দিয়ে কথা বলাতে হবে।কারণ আমার বিশ্বাস ছিল কথা বললেই মা ভালো হয়ে যাবে।
তারপর মা কথা বলতে শুরু করতেন সবাইকে বকা দিতেন।আমি আনন্দ নিয়ে ওসব গিলতাম আর ভাবতাম আমার মা ভালো হয়ে গেছে।
কিন্তু শেষের দিকে আমার এ বিদ্যা আর কাজে লাগেনি।শত চেষ্টা করেও আমি আমার মাকে কথা বলাতে পারিনি।আমার মা আর কথা বলেনি।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য ১০ টি রেটিং +৩/-০

মন্তব্য (১০) মন্তব্য লিখুন

১| ১০ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৫২

সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: আমার নিজের মা এর কথা মনে করিয়ে দিলেন। আমি কাল রাতেও কেদেছি, অনেক রাত পর্যন্ত ঘুমাতে পারিনি, বিছানায় এপাশ আর ওপাশ। খুব অস্থির লাগছিল, নিঃস্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছিল একসময় বুকে ব্যাথা শুরু হয়ে যায় । বারান্দায় কিছুক্ষন পায়চারী করলাম । ঘুমানোর জন্য ওষুধ খেয়ে তারপর ঘুমিয়েছি ।

১০ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:৩০

শাওন আহমাদ বলেছেন: দুঃখিত! আপনাকে স্মৃতিকাতর করার জন্য। ভাইয়া আমার অন্যান্য ভাইদের চেয়ে আমার সাথে মায়ের সম্পর্ক ছিল একেবারে গভীর। যখনই আমার মায়ের কথা মনে হয় আমার ভেতরটা ভেঙ্গেচূড়ে যায় মনে হয় তামাম দুনিয়া খুঁজে মাকে নিয়ে আসি। কিন্তু চাইলেই তো আর সব পারা যায় না!

২| ১০ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩০

কামাল৮০ বলেছেন: সব মায়েদের একই অভিযোগ।অন্য বাচ্চারা গপ গপ করে,কেবল তার বাচ্চা খায় না।

১০ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:০৪

শাওন আহমাদ বলেছেন: মায়ের মন বলে কথা। তবে আসলেই আমরা কেউ খাবার প্রেমী ছিলাম না। এখন ও না। খাবার খাওয়াটা নিয়ম করে কাজের মত মনে হয়।

৩| ১০ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৪৫

মনিরা সুলতানা বলেছেন: সত্যি চাইলেই সব আর পাওয়া যায় না, ভালো থাকুন আমাদের বাবা মেয়েরা যেখানেই থাকুক।
রাব্বির হামহুমা কামা রাব্বাইয়ানি সাগীরা।

১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:১৬

শাওন আহমাদ বলেছেন: হুম চাইলেই সব পাওয়া যায় না! ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

৪| ১০ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১১:০০

শেরজা তপন বলেছেন: মন খারাপের কাহিনী- আমার বেশী কষ্ট লাগছে আপনার নানাজানের জন্য!

১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:২২

শাওন আহমাদ বলেছেন: নানাজান এবং আমার মা দুজনেই অসহায় ছিলেন। নানাজান ছিলেন গৌরীশঙ্কর বাবু আর মা ছিলেন হৈমন্তী। সেই ছোট্ট বেলাতেই এই ঘটনা গুলো আমাদের হৃদয়ে বেদনার দাগ বসিয়েছিলো।

৫| ১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ৯:০১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: মন খারাপের লেখা পড়তেও কষ্ট লাগে লিখতেও কষ্ট লাগে।

১১ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:২৫

শাওন আহমাদ বলেছেন: পৃথিবী দীর্ঘশ্বাসের বাতাসে ভারী হয়ে যাচ্ছে দিন থেকে দিন।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.