নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।
আত্মিক সম্পর্ক গড়ে তুলতে একসাথে চলা কিংবা রক্তের সম্পর্ক থাকাটা খুব বেশী জরুরি ভূমিকা পালন করে বলে আমি মনে করিনা।
এসবকিছুর বাইরে গিয়েও সুন্দর একটা সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারে এবং গড়ে উঠে।
বাসা থেকে এক কিলোমিটারের দূরত্বে একটা টঙ দোকান আছে। আমি নিয়ম করে প্রতিদিন বাসায় ফেরার পথে সেখান থেকে টুকটাক কিছু খাবার খেয়ে বাসায় ফিরতাম।
দোকানী প্রত্যেক দিন আমার মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি একটা হাসি দিয়ে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করতেন কেমন আছেন ভাই? বলেই আমাকে চা দিতেন। চা-টা খেতে খেতে উনার সাথে টুকটাক কথা হতো আমার।
কখনো নির্দিষ্ট সময়ের চেয়ে একটু দেরি হলেই বলতেন ভাই আজ এতো দেরী করলেন যে! আমি আপনার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। শুনে ভেতরটা নাড়া দিয়ে উঠতো।
একজন অপরিচিত মানুষ একজন কাস্টমারের জন্য অপেক্ষা করছে! আমি যে খুব বড় মাপের কাস্টমার ছিলাম তাও না। টুকটাক খাবারে আর কয় টাকাই বা বিক্রি হতো! আর তাছাড়া আমি একাই তো তার কাস্টমার না। তার আরও অনেক কাস্টমার আছে তবে আমার জন্যই কেনো তার এতো মায়া!
বেশকিছু দিন হয়ে গেছে ব্যস্ততার কারণে তার দোকানে যাওয়া হয় না। আজ হঠাৎ ওদিকে গিয়েছিলাম তো ভাবলাম তার সাথে দেখা করে যাই। দোকানের সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই তার চোখে মুখে আনন্দের প্রতিচ্ছবি। না না প্রশ্ন কেমন আছি, দোকানে কেনো যাই না ইত্যাদি ইত্যাদি।
কথা প্রসঙ্গে বললেন, ভাই আমি মালোশিয়া চলে যাচ্ছি। সমস্তকিছু রেডি হয়ে গেছে। কয়েকদিনের ভেতরেই চলে যাব। আপনাকে খুব মিস করছিলাম আর ভাবছিলাম যাবার আগে যদি আপনার সাথে একবার দেখা হতো। যাক আপনার সাথে আমার দেখা হয়ে গেলো। যখন মানুষ টি কথা বলছিলো তখন তার পুরো মুখ জুড়ে আনন্দের স্রোত বয়ে যাচ্ছিলো।
আমার হাত ধরে বলছিলো ভাইজান কোনো ভুল হলে মাফ করে দিয়েন আর আমার জন্য দোয়া কইরেন। আমি জাস্ট প্যারালাইজড হয়ে তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছি কিন্তু কিছু বলতে পারছিনা। শুধু মনে মনে মনে ভাবছিলাম কিছু মানুষের দোয়া চেয়ে নিতে হয় না তারা তাদের কর্মের মাধ্যমে দোয়া আদায় করে নেয়।
তার হাত থেকে হাত ছাড়িয়ে নিয়ে পকেট থেকে বিলটা বের করে তার ডেস্কের উপর রাখলাম। দেখি উনি টাকাটা আমার দিকে ফিরিয়ে দিচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম কেনো? সে বলছে ভাই আজ বিল নিবো না। বারবার জোর করছিলাম টাকাটা রেখে দিতে কিন্তু সে নাছোড়বান্দা টাকা নিবেনা তো নিবেই না তার একটাই কথা টাকাটা না দিলে উনি খুশি হবেন। দোকানের অন্যান্য কাস্টমাররা উৎসুক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি তার হাত থেকে টাকাটা নিয়ে, তাকে বিদায় বলে সামনের দিকে হাঁটতে লাগলাম।
খুব ইচ্ছে করছিলো পিছনে ফিরে শেষ বারের মতো মানুষ টিকে একটু দেখি কিন্তু তাকালাম না। মায়া বড় অদ্ভুত জিনিস। আমি পিছন ফিরে না তাকিয়ে মায়া টাকে অতৃপ্ত করে রাখলাম যাতে করে একে আমি আমার নিজস্ব স্মৃতির বয়ামে ভরে রাখতে পারি।
কি অদ্ভুত আমরা মানুষেরা! কেউ কেউ তোষামোদি করে টাকা লুটিয়েও এমন সলিড ভালোবাসা পায় না। আবার কেউ কেউ মূল্যের বাইরে গিয়েও স্বার্থহীন ভালোবাসার অংশ হয়ে যায়।
আমাদের জীবনের এগুলোই আমাদের অর্জন। আমার ঝুলি মানুষের ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে দিন থেকে দিন আর আমিও ঋণী হয়ে যাচ্ছি দিন থেকে দিন। যে ঋণ শোধ করার কোনো উপায় নেই কারণ কিছু ঋণের কোনো শোধ হয় না। ভালো থাকুক পৃথিবীর ভালো মানুষ গুলো...
ছবি গুগল
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:২২
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাই আপনার মন্তব্যের জন্য।
২| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:২৩
ফুয়াদের বাপ বলেছেন: মায়া বড়ই অদ্ভূত। খুবই চমৎকার ভাবে লিখেছেন মায়ার রসায়ন।
- নিজ হাতে খাইয়ে-নাইয়ে বড় করা গৃহপালিত পশু বিক্রির সময় তাকে জড়িয়ে ধরে কিশোরীর অঝরে কাঁন্না-"মায়া"।
- মনিবের মুত্যুতে পালিত কুকুরটির কান্না-"মায়া"
- মুসলিম বন্ধুর মৃত্যুতে জানাজার পাশে দাঁড়িয়ে হিন্দু বন্ধুর অঝরে কান্না-"মায়া"। এই "মায়া" সমাজকে চোখে আঙুল দিয়ে বুঝিয়ে দেয় ভালোবাসার কাছে ধর্ম কোন বাঁধা নয়।
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:২৭
শাওন আহমাদ বলেছেন: সত্যিই মায়া বড় অদ্ভুত জিনিস! সকল কিছুকে ছাপিয়ে এর বয়ে চলা।
৩| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:২০
হাসান জাকির ৭১৭১ বলেছেন: হ্যাঁ, মায়া বড়ই অদ্ভুত! তা রক্তের সম্পর্ক বোঝে না!!
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৫৬
শাওন আহমাদ বলেছেন: একদম কোনো দেয়ালও মানেনা।
৪| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৫:২১
ককচক বলেছেন: মায়া জিনিসটা আসলেই অদ্ভুত। আমরা আমাদের অজান্তেই কারো কারো মায়ায় পড়ে যাই।
আপনার লেখাটা খুব সুন্দর হয়েছে।
১৮ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৮
শাওন আহমাদ বলেছেন: আসলেই মায়া গুলো অজান্তেই সৃষ্টি হয়। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:১১
মোহাম্মদ গোফরান বলেছেন: ফুলটি সুন্দর। লেখাও ভালো হয়েছে।