নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।
আমরা কাজিনরা আমাদের দাদার মা কে বড় মা বলে ডাকতাম। মানুষ টা মায়ের মতোই ভালো আর মমতাময়ী ছিলেন। তার সারল্য, ভালোবাসা আর বাচ্চাদের মতো মুখ টিপে হাসি আমাদের সবমসময় তার পাশাপাশি থাকতে বাধ্য করতো।
বাসার সবার প্রতি অফুরন্ত ভালোবাসা জমা ছিলো তার বুকের গভীরে। এতো বয়স হয়ে যাবার পরেও তার ভালোবাসার দেয়ালের রঙ বিন্দু পরিমাণও বিবর্ণ হয়েছিলো না। সে রাত জেগে ঠুকঠুক করে লাঠিতে ভর দিয়ে সবার রুমে রুমে গিয়ে খবর নিতেন কে বাসায় এসেছে আর কে এখনো আসেনি। সবার চিন্তায় সবসময় ফ্যাঁকাসে হয়ে থাকতেন। সে যেমন সবাইকে স্নেহ আর ভালোবাসার চাদরে জড়িয়ে রাখতেন, সবাই তেমন তাকেও লতার মতন পেঁচিয়ে থাকতেন। যেভাবে বটের ঝুরি গুলো বটবৃক্ষকে পরম মমতায় পেঁচিয়ে থাকে।
আমার ফুপু আর বাবা-কাকারা বড় হয়ে যাবার পরে পরবর্তী প্রজন্ম মানে আমরা কাজিনরা বড় মা'র সাথে রাতে ঘুমানোর জন্য এক প্রকারে যুদ্ধ লাগিয়ে দিতাম। যে জিতে যেতো সেই বড় মা'র সাথে ঘুমানোর সুযোগ পেতো।অধিকাংশ সময় আমিই তার সাথে ঘুমানোর সুযোগ পেতাম। তার সাথে ঘুমানোর রাত মানেই সারারাত রূপকথার রাত।
তার রূমের এক কোনো টিমটিম আলোয় হ্যারিকেন জ্বালানো থাকতো। সেই সময় মফস্বলে প্রচুর বিদ্যুৎ সমস্যা করতো। যখন তখন বিদ্যুৎ চলে যেতো। তাই বারবার অন্ধকারে দিয়াশলাই হাতড়ে হ্যারিকেন জ্বালানোর ঝামেলা এড়াতেই মূলত টিমটিম করে হ্যারিকেন জ্বালিয়ে রাখা হতো।
হ্যারিকেনের টিমটিম আলো এবং কেরোসিন মেশানো হ্যারিকেনের সলতে পোড়ার অদ্ভুত এক গন্ধ ঘরটিকে সম্মোহনীয় করে তুলতো।সেই সম্মোহনীয় পরিবেশে আমরা বুঁদ হয়ে তার রূপকথার গল্প শুনতাম। উনি গল্প বলার সাথে সাথে এক হাতে আমাদের মাথায় বিলি কেটে দিতেন আর অন্য হাতে ক্যাঁচক্যাঁচ আওয়াজ করে ঘুরাতে থাকতেন হাতপাখা। আমরা গল্প শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে আবার জেগে উঠে দেখতাম উনি নিরলসভাবে এক হাতে আমাদের মাথায় বিলি কেটে যাচ্ছেন আর অন্য হাতে ঘোরাচ্ছেন পাখা। আমরা তখন অবাক হয়ে ভাবতাম আচ্ছা এই মানুষটার হাত ব্যথা করেনা! কিভাবে একাধারে দুই হাতে কাজ করে যান? আবার মনে মনে ভাবতাম বড়দের হয়তো হাত ব্যথা করেনা। কিন্তু এখন বুঝতে পারি মানুষটার ঠিকই হাত ব্যথা করতো কিন্তু আমাদের যাতে গরমে কষ্ট না হয় সে জন্যই তিনি ব্যথা ভুলে পাখা ঘোরাতেন।
শুধু আমরা ছোটরাই না বড়দেরও আড্ডার কেন্দ্রবিন্দু ছিলো বড় মা'র ঘর। বিশেষ করে সন্ধ্যার পর সবাই একত্র হয়ে মনোমুগ্ধকর এক আড্ডার পসরা সাজিয়ে বসতো বড় মা'র ঘরে। শীতের সময় এই আড্ডায় এক ভিন্নমাত্রা যুক্ত হতো। বড় মা ভীষণ শীতে কাবু ছিলেন সেই সাথে আগুন তাপানোর তীব্র নেশাও ছিলো তার। মাটির চুলোয় রাতের রান্না শেষে গনগনে কাঠের কয়লা গুলো তিনি একটি মাটির গামলায় তুলে ঘরে নিয়ে যেতেন এবং ঘুমানোর আগ পর্যন্ত সেই কয়লার আগুন তাপাতেন। তার সাথে আমরা সবাই সেই গনগনে কাঠের কয়লা ভর্তি মাটির গামলার চারপাশে গা ঘেঁষাঘেঁষি করে বসে বিভিন্ন গল্পে মেতে উঠতাম। গল্প করতে করতে যখন আগুনের আঁচ কমে আসতো তখন একটা লম্বা কাঠি দিয়ে সেই কাঠের কয়লা গুলোকে উসকে দিয়ে আবার আমরা গল্পে মেতে উঠতাম। অনেক রাত অবধি চলতো এই গল্প আর আড্ডার খেলা।
বড় মা'র রান্নার হাতে আধ্যাত্মিক এক ক্ষমতা ছিলো। খুব ভালো রান্না করতেন মানুষটি। পুরো বাড়িসুদ্ধ মানুষ তার রান্না করা খাবারের জন্য পাগল ছিলো। উনি শাক, লতাপাতা যাই রান্না করতেন আমরা মাছ-মাংস রেখে সেই খাবারের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তাম। তিনি যে খুব গুছিয়ে বনেদি আঙ্গিককে রান্না করতেন তা কিন্তু নয়। খুব সাদামাটা ভাবেই তিনি রান্না করতেন। চুলায় তরকারি বসানোর পর থেকে শুরু করে রান্না শেষ হওয়া পর্যন্ত তিনি তরকারি চেখে চেখে দেখতেন আর মশলা যুক্ত করতেন। কখনো লবন, কখনো হলুদ আবার কখনো বা মরিচ। এতো সাদামাটাভাবে রান্না করার পরেও তার রান্না আমাদের কাছে অমৃতের মতো লাগতো।
মানুষ টা শীত ভয় পেতেন, মানুষ টা মৃত্যুও ভয় পেতেন। এতো ভয়ের পরেও পৌষের কোনো এক কনকনে শীতের বিকেলে তিনি আমাদের এবং এই পৃথিবীর মায়া ছিন্ন করে অজানা এক পৃথিবীতে পাড়ি জমালেন। সেই সাথে ভাঙলো আমাদের আড্ডাখানা, শেষ হলো এক অধ্যায়ের।
ছবিঃ গুগল
১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:৪৪
শাওন আহমাদ বলেছেন: উনি মরতে রাজি ছিলেন না বা পর জন্ম নিয়ে তার আকর্ষণ ছিলোনা ব্যাপার টা এমন না। উনি ভয় পেতেন রবের সামনে দাঁড়ানো নিয়ে।
২| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:০৭
সৈয়দ মোজাদ্দাদ আল হাসানাত বলেছেন: আল্লাহ বড়মাকে ওপাড়ে ভালো রাখুন।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:৪৪
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমীন
৩| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২৩
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: শৈশবে ফিরে গেলাম। পড়তে ভালো লাগল।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ৮:৪৫
শাওন আহমাদ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ!
৪| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:৩৮
কামাল৮০ বলেছেন: এই পৃথিবীতেই আছেন,প্রকৃতিতে মিশে।এটা প্রমানিত।অজানা পৃথিবীর কোন প্রমান নাই। স্মৃতি সব সময় সুখের হয়।ভালো লাগলো আপনার স্মৃতি কথা শুনে।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:০৫
শাওন আহমাদ বলেছেন: তিনি আমাদের স্মৃতিতে বেঁচে আছেন এটা সত্য। আমরা প্রমাণ ছাড়াও অনেক কিছু বিশ্বাস করি। আমি সেদিকে যাচ্ছিনা। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
৫| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ৯:১৪
সোনাগাজী বলেছেন:
লেখক বলেছেন: উনি মরতে রাজি ছিলেন না বা পর জন্ম নিয়ে তার আকর্ষণ ছিলোনা ব্যাপার টা এমন না। উনি ভয় পেতেন রবের সামনে দাঁড়ানো নিয়ে।
-আগে যারা রবের কথা বলেছিলো, তাদের কথায় বুঝা গেছিলো যে, রব সামান্য কয়েকটা গ্রহ ট্রহ বানায়েছেন; এখন বিজ্ঞানীরা বলছেন যে, ইউনিভার্স এত বড় যে, রব ভাত খাবার সময়ও পাচ্ছেন না; ফলে, কে সামনে এলো, কে এলো না, এগুললো ব্যাপার নয়।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:১২
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমাদের আলাদা আলাদা বিশ্বাসে যেহেতু কারো কোনো ক্ষতি হচ্ছেনা সেহেতু যে যার বিশ্বাস নিয়েই থাকুক। দিনশেষে কেউ লাভবান হবে আবার কেউ ক্ষতিগ্রস্ত সেটাও যার যার নিজেরই থাকবে। তাই এই টপিক নিয়ে কথা বলার আগ্রহ দেখাচ্ছিনা।
৬| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ৯:৩৪
ঢাবিয়ান বলেছেন: বেশ ঝরঝরে আপনার লেখা। ভাল লাগল আপনার অতীতের স্মৃতি রোমান্থন ।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:০৭
শাওন আহমাদ বলেছেন: আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার স্মৃতিতে মন্তব্য জুড়ে দেবার জন্য।
৭| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ৯:৫০
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন: এ্ভাবেই বড় মারা চলে যান, আর শূন্যস্থান পূরন হবার সম্ভবনা থাকে না।
১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:০৮
শাওন আহমাদ বলেছেন: ঠিক বলেছেন ব্রো। কেউ কারো শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেনা।
৮| ১৬ ই অক্টোবর, ২০২২ সকাল ৮:২২
কামাল৮০ বলেছেন: প্রমান সহ বিশ্বাস হয় না।প্রমান সহ সত্য বলে জানা হয়।
৯| ১৬ ই অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১০:১১
জুল ভার্ন বলেছেন: খুব সুন্দর পরিচ্ছন্ন বর্ণনা। শুভ কামনা নিরন্তর।
১৬ ই অক্টোবর, ২০২২ সকাল ১০:৩৫
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। শুভ কামনা আপনার জন্যেও।
১০| ১৬ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১১:১২
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: আপনার বড় মা'র জন্য দোয়া রইল। আল্লাহ যেন ওনাকে বেহেশত নসীব করেন।
১৭ ই অক্টোবর, ২০২২ রাত ১০:১০
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমীন! অসংখ্য ধন্যবাদ আমার স্মৃতিতে মন্তব্য করার জন্য।
©somewhere in net ltd.
১| ১৫ ই অক্টোবর, ২০২২ বিকাল ৫:০৪
সোনাগাজী বলেছেন:
মানুষ মরতে চাহে না কেন? পরের জন্ম নিয়ে কি উৎসাহী নন?