নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

শাওন আহমাদ

এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।

শাওন আহমাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

গাছ আমার কথা বলার সঙ্গী

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৩



সেই শৈশব থেকেই আমি অদ্ভুত রকমের গাছ প্রেমী একজন মানুষ। অবশ্য কথাটি গাছ প্রেমী না বলে গাছ পাগল বললেও আমার প্রতি খুব একটা অবিচার করা হবে বলে আমার মনে হয় না।গাছের সঙ্গে কোথাও আমার এক অদৃশ্য সুতোর মায়ার বাঁধন রয়েছে। যে মায়ার টান আমি প্রতিটি মুহুর্তে অনুভব করতে পারি। এই গাছ প্রেমের জন্য পাড়ায় আমার বেশ বদনামও আছে। পাড়ার অনেকেই পাগল বলে আখ্যায়িত করেছেন আমাকে। অবশ্য এসব তথাকথিত সুনাম-বদনাম নিয়ে আমার মাথা ব্যথা ছিলোনা কখনোই আর এখনো নেই।

মনে পড়ে ছোটবেলায় যখন আমরা বাচ্চারা খেলার ছলে নিজদের বাড়ি বানাতাম তখন আমার বন্ধুরা ইটের টুকরো, পাটকাঠি এসব দিয়ে বাড়ি বানালেও আমি তাদের উল্টো পথে হেঁটে এদিক সেদিক খুঁজে শিকড়সমেত রঙবেরঙের বুনো গাছ আর লতাপাতা নিয়ে এসে সেগুলো পুঁতে পুঁতে বাড়ি বানাতাম। পানি ঢেলে সেই গাছ গুলো কে জীবন্ত করার মধ্য দিয়ে আমার বাড়িটাকেও জীবন্ত বাড়ি করে তুলতাম। আমি সেখানে গিয়ে একা শুয়ে-বসে থাকতাম, বই পড়তাম। সে এক অন্যরকম ভালো লাগা যা লিখে প্রকাশ করার মতো শব্দ আমার ঝুলিতে নেই।

একটা সময় আমার রুমেও অনেক গাছের আনাগোনা ছিলো। আমার পড়ার টেবিল, বুক শেল্ফ, ওয়্যারড্রপ, ড্রেসিং টেবিল, জানালার ধার এইসব জায়গায় তারা সংসার পেতে বসেছিলো। আমি নিয়ম করে তাদের গা ধুয়ে দিতাম, পানি ঢালতাম, রাতবিরেতে তাদের সঙ্গে গল্প করতাম। আমার একাকীত্ব দূর করার একমাত্র মাধ্যম ছিলো গাছেরা। শুনে নিশ্চয়ই আপনারাও আমাকে পাগল ভাবতে শুরু করেছেন? হয়তো ভাবছেন গাছের সঙ্গে আবার কথা বলা যায় নাকি? কিন্তু বিশ্বাস করুন অবাস্তব হলেও সত্য যে আমি গাছের সঙ্গে এখনো কথা বলি। আমার মনে হয় ওরা আমাদের ভালোবাসা বুঝতে পারে, আমাদের শুনতেও পারে। যদি এসব নাই হতো তাহলে ওদের সঙ্গে থেকে, কথা বলে আমার এতো শান্তি লাগে কেনো? আমি জানি আমার মতো অনেকেই আছেন যারা গাছের সঙ্গে কথা বলেন তাদের ভালোবাসা বুঝতে পারেন।

আমি বাসায় লাল শাপলা লাগাই, পদ্ম লাগাই, কচুরিপানা লাগাই। গাছ নিয়ে আমার এমন আদিখ্যেতা দেখে আমার রিলেটিভসরা মুখ টিপে হাসে আর ভাবে ছেলেটার সত্যি সত্যিই মাথাটা গেছে না হলে কি কেউ আর টবে এসব জলজ গাছ দিয়ে মশার চাষ করে? অবশ্য এসব
কানে তোলার পাত্র আমি নোই। যাতে আমার শান্তি মিলে আমি তাই করি অবশ্য তা যদি অন্যের ক্ষতির কারণ না হয় তবেই। গাছ লাগালে আর যাইহোক মানুষের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা যে জিরো পার্সেন্টও না তা আমরা সবাই জানি। আমার ভাতিজা আমাকে মাঝেমধ্যেই বিভিন্ন গাছের পাতা,ফুল ও ফল এনে দিয়ে জিজ্ঞেস করে, আচ্ছা কাকা এটা কি গাছ? ওর ধারণা আমি সব রকমের গাছের নাম জানি। যখন ফুল-পাতা দেখে ওকে গাছের নাম জানিয়ে দেই ও শুনেই বলে উঠে আমি জানতাম তুমি পারবে, তাই আমি না চিনতে পেরে তোমাকে দেখানোর জন্য নিয়ে এসেছি। আমার এক ফ্রেন্ড আছে জার্মান থাকে। সে আমার গাছের প্রতি পাগলামো দেখে বিভিন্ন জায়গায় ট্যুর করে আমার জন্য ফুল,প্রকৃতি আর গাছের ভিডিও ও ছবি পাঠায়।এসব দেখে আমার অদ্ভুত রকমের ভালোলাগা কাজ করে।

এক একটা গাছ আমার কাছে এক একটা ভালো বন্ধুর মতো। যারা নিঃস্বার্থভাবে ভালোবাসতে জানে। তবে প্রবীণ গাছ গুলোর প্রতি আমার আলাদা একটা ভালোবাসা আর কৌতূহল কাজ করে। প্রবীণ গাছ গুলোর শরীর ছুঁতে ছুঁতে মনে হয় এই গাছ গুলো কালের গর্ভে হারিয়ে যাওয়া কতশত সুখ-দুঃখের স্মৃতি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কত সকাল, কত ক্লান্ত দুপুর আর সন্ধ্যার গল্প বুকে পুষে রেখেছে। গাছের যদি মানুষের মতো কথা বলার ক্ষমতা থাকতো। তাহলে তারাও আমাদের নানী-দাদীদের মতো গল্পের ঝুলি খুলে বসতো আর আমরাও এইসব গাছেদের চারপাশে গোল হয়ে বসে ইতিহাসের গল্প শুনতাম।

গাছপালা ধ্বংস করে স্থাপনা সুন্দর করার পক্ষে আমি নোই। বরং আমি তাদের পক্ষে যারা গাছপালা বাঁচিয়ে স্থাপনা কে সুন্দর করে তুলে। আমাদের একটা খেজুর বাগান ছিলো। যে বাগানের প্রতিটি গাছ আমার দাদার নানার হাতে লাগানো। এই বাগানে আমার দাদা থেকে শুরু করে আমাদের, ইভেন আমাদের পাড়ার অনেক মানুষের অনেক সোনালী স্মৃতি জড়িয়ে আছে। খেজুরের মৌসুমে কাক ডাকা ভোরে খেজুর কুড়ানো ছিলো আমাদের দিন শুরুর প্রথম কাজ। আমরা পাড়ার ছেলে-মেয়েরা প্রতিযোগিতা করে খেজুর কুড়াতাম।বাগানে যে আগে যেতে পারতো তার দখলে থাকতো সবচেয়ে বেশি খেজুর। আর অন্যদের কপালে জুটতো পাখির আধখাওয়া খেজুর। অবশ্য সেই সময় সেটাও অমৃত ছিলো আমাদের কাছে। আমারা গাছের নিচে দাঁড়িয়ে চিৎকার করে বলতাম শালিক ভাই, শালিক ভাই, একটা খেজুর দে। যখনই পাখির ঠোঁট ফসকে খেজুর নিচে পড়তো আমারা হুমড়ি খেয়ে পড়তাম সেই খেজুরের উপর আর বলতাম পাখি আমাদের কথা শুনেছে। তারপর সেই কুড়ানো খেজুর মক্তবে নিয়ে গিয়ে অন্যদের দেখিয়ে দেখিয়ে খেতাম। সে এক অন্যরকম দিনের গল্প।

এবার বাসায় গিয়ে আমি ভীষণ রকমের মর্মাহত হয়েছি। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে বাগানের প্রত্যেকটি খেজুর গাছ কেটে ফেলে সেখানে ড্রেজার দিয়ে মাটি ফেলে ভরাট করা হয়েছে। অথচ চাইলে গাছ গুলো না কেটেই এই কাজগুলো করা যেতো। কিন্তু আমরা যে ধ্বংসলীলায় বিশ্বাসী তাই আমাদের মাথা থেকে সংরক্ষণের চিন্তারা ছুটি নিয়েছে। যেবার আমাদের পাড়ার মোড়ের সবচেয়ে বৃদ্ধ গাবগাছ টি আগুনের তাপ সইতে না পেরে একটু একটু করে মরে যাচ্ছিলো তখন ওর মরে যাওয়া দেখে ভেতরে ভেতরে আমিও মরে যাচ্ছিলাম। আমার পূর্ব পুরুষদের অনেক কাছ থেকে দেখেছে এই গাছটি। যাদের আমরা দেখিনি বা চিনিনা তাদেরও সে দেখেছে, সে তাদেরও চিনে। শুনেছি আটাশির বন্যার সময় এই গাবগাছের মস্তবড় এক ডাল কেটে রাস্তার ভাঙ্গন ঠেকানো হয়েছিলো। কি অদ্ভুত না! যে রাস্তার ভাঙ্গন ঠেকানোর জন্য তার অঙ্গ কাটা গেলো এতোগুলো বছর পর সেই রাস্তার পিচ পোড়ানো আগুনেই তাকে জীবন দিতে হলো। আমরা মানুষেরা অতিমাত্রায় নিষ্ঠুর। যে গাছের ছায়ায় বসি ,যে গাছের ফল খাই সেই গাছেরই পাতা ছিঁড়ি, ডাল ভেঙ্গে নিয়ে যাই।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য ২২ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (২২) মন্তব্য লিখুন

১| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৪০

সোনাগাজী বলেছেন:



রাস্তার পাগল কথাটা আগে শুনেছি, গাছ পাগল কথাটা আজকে শুনলাম; আপনি পাগলামী করার জন্য কি গাছে উঠে বসে থাকেন?

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৪৯

শাওন আহমাদ বলেছেন: ভাইয়া মন খারপ হলে কতো যে গাছের মগডালে উঠে বসে থাকতাম তার হিসেব নেই। স্কুল পালিয়েও গাছে ঊঠে লুকিয়ে থাকতাম। :D

২| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৩১

সোনাগাজী বলেছেন:



স্কুল পালাতেন কেন, পড়ালেখা পারতেন না?

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৩৩

শাওন আহমাদ বলেছেন: ভীষণ লেভেলের খারাপ ছাত্র ছিলাম। শুধু ঘুরে বেড়াতে ইচ্ছে করতো।

৩| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫০

ঋণাত্মক শূণ্য বলেছেন: গাছ প্রেম ভালো। গাছের সাথে কথা বলেন তাও চলে। তবে যেদিন গাছ আপনার সাথে কথা বলা শুরু করবে, কোন রকম দেরী না করে সরাসরি কোন সাইক্রিয়েটিষ্টের সাথে কথা বলবেন। সেটা আবার ব্লগে পোষ্ট করতে যাবেন না যেন!

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৩৪

শাওন আহমাদ বলেছেন: হা হা হা গাছ আমার সাথে কথা বলে তো আমি বুঝতে পাই কিন্তু শুনতে পাইনা।

৪| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৬:৫৩

সোনাগাজী বলেছেন:


আমাদের চাষীরা গাছকে ভালোবাসে, নগরের দুষ্টরা গাছ কাটে

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৩

শাওন আহমাদ বলেছেন: এই কাটাকাটির দাম দিতে হবে খুব বাজেভাবে। কিছুদিন আগে শহরের কোনো এক জায়গায় শতশত পাখির বাসা সহ একটি গাছ উপড়ে ফেলা হয়েছে। গাছ পড়ে যাবার সাথে সাথেই এতো এতো বাসার ভেতরে থাকা পাখির ছানা আর ডিম রাস্তায় মধ্যে থেঁতলে গড়াগড়ি খাচ্ছিলো। আকাশ জুড়ে মা বাবা পাখিদের হাহাকার আর উড়াউড়ি! সে এক নারকীয় দৃশ্য। প্রকৃতি এর শোধ ঠিক তুলবে।

৫| ০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:০৬

মওদুদ মান্নান বলেছেন: মাঝে মাঝে পাগলামীটাও ভাল কিছু বয়ে আনে। পাগলামী চালিয়ে যান।

০৯ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৪

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

৬| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১:৩৫

নেওয়াজ আলি বলেছেন: প্রকৃতি প্রেমিক আপনাকে ধন্যবাদ । সুন্দর লিখেছেন ।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৩৯

শাওন আহমাদ বলেছেন: আপনাকেও ধন্যবাদ মন্তব্য করার জন্য।

৭| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:২৩

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার পোষ্ট টা আমার খুবই পছন্দ হয়েছে।

মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু হচ্ছে গাছ। এই কথাটা আমি অনেককে বলেছি। কিন্তু কেউ আমার কথা বিশ্বাস করে না। হাসে। আমাকে পাগল ভাবে।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪১

শাওন আহমাদ বলেছেন: লোকে যা বলার বলুক, আমারা নাহয় তবুও গাছকেই ভালোবাসবো।

৮| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:৪৭

রানার ব্লগ বলেছেন: গাছ আমিও পছন্দ করি।

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪১

শাওন আহমাদ বলেছেন: শুভ কামনা আপনার জন্য।

৯| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:১২

গেঁয়ো ভূত বলেছেন: চমৎকার সুন্দর একটা লিখা। এত সুন্দর করে লিখার ক্ষমতা খুব বেশি মানুষের থাকে না। আমি শুধু আপনার এই দারুন লিখাটা দেখি নাই, লেখাটির পেছনে যে সুন্দর মনের মানুষটি আছেন তাকে দেখেছি মনের চোখ দিয়ে। আরো লিখুন, বেশি বেশি লিখুন। অনেক অনেক শুভকামনা।

হ্যাপি ব্লগিং!!

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৯:৪৪

শাওন আহমাদ বলেছেন: আপনার কমেন্ট পড়ে আমি সত্যিই আপ্লূত! এমন কমেন্ট আমাদের ভালো কাজের গতি বাড়িয়ে দেয়। অসখ্য ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

১০| ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৩৭

নিমো বলেছেন: গাছ আমাদের সকলেরই সঙ্গী, কেউ টের পাই,কেউ পাই না। সুন্দর লিখেছেন।

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০৩

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

১১| ১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩৩

জ্যাক স্মিথ বলেছেন: গাছের প্রতি আপনার প্রেমের কথা শুনে ভালো লাগলো। পোস্টে কিছু ছবি দিতে পারতেন, আমার মনে হয় বিষয়টা নিয়ে ইউটিউব চ্যানেল করলে খারাপ হবে না, অনেক মানুষ আপনার গাছ প্রেমের কথা জানতে পারতো।

আর হ্যাঁ আপনি কি গাছের সাথে সত্যি সত্যিই কথা বলেন, না এটা রুপক অর্থেই বলেছেন? 8-|

১১ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:০৬

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্য আর দিকনির্দেশনার জন্য। মনে মনে কথা বলি বাট আমার মনে হয় ওরা এগুলো শুনতে পায়।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.