নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।
আমার দাদী যখন আমাদের বাড়ির বউ হয়ে আসেন তখন তিনি নাবালিকা ছিলেন। আমার দাদীদের খান্দানী বংশ ছিলো, সেই সাথে সামাজিক মর্যাদা আর প্রতিপত্তিও ছিলো ঢের। লোকমুখে শোনা, অনুমতি ব্যতীত মানুষ তো দূরের কথা কাকপক্ষীও তাদের বাড়ির উপর দিয়ে উড়ে যেতে দুইবার চিন্তা করতো। সেইসময় যেহেতু বিয়ে সহ অন্যান্য বিষয়ে বংশমর্যাদার আলাদা একটা প্রভাব ছিলো সমাজে তাই আমার দাদার নানা তার নাতীর জন্য এমন বাড়ির মেয়েই খুঁজছিলেন। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হলে যা হয় আর কি! তিনি বংশও পেয়েছিলেন সাথে পরীর মতো নাতবোউ।
দাদীর মুখে শোনা, আমাদের বাড়ি থেকে দাদী কে প্রথম যেদিন দেখতে যায় সেদিন তিনি তার খেলার সাথীদের সাথে তাদের বাড়ির পাশ ঘেঁষে বয়ে চলা খালের পানিতে আদুল গায়ে ঝাঁপাঝাপি করছিলেন। হঠাৎ দাদী খেয়াল করলেন তার দাদা একটা বাঁশের কঞ্চী হাতে খালের পাড়ে দাঁড়িয়ে তাকে ডাকছেন। দাদী মারের ভয়ে দ্রুত পানি থেকে উঠে খালের পাড়ে খুলে রাখা জামা নিয়ে দৌড়ে বাসায় ঢুকলেন।
দাদী ওই অবস্থায় বাসায় ঢুকেই পড়লেন তার নানা শ্বশুরের চোখের সামনে। মানে আমার দাদার নানার সামনে। যিনি তার একমাত্র নাতীর জন্য পরীর মতো নাতবউ খুঁজতে গিয়ে আমার দাদীর দেখা পেয়েছিলেন।বয়সকালে দাদী আগুনের মতো সুন্দরী ছিলেন যা তার বর্তমান সৌন্দর্য দেখেই অনুমান করতে পারবে যে কেউ। এই বয়সেও তিনি আহামরি সুন্দরী, দুধে আলতা গায়ের রঙ, তীরের মতো নাক, মায়াবী চোখ আর মাথাভর্তি চুল। চামড়ায় বয়সের ভাঁজ পড়লেও সৌন্দর্য ম্লান হয়ে যায়নি। আমরা নাতী, নাতনীরা তাকে মাঝেমধ্যেই বলতাম, তুমি দেখতে এতো সুন্দরী কিন্তু দাদার মতো কালো মানুষ কে কেনো বিয়ে করলে? দাদী তখন হেসে উত্তর দিত, মাগি-মর্দারা আমগো কালে পছন্দ করে বিয়া করার সুযোগ আছিলোনা। বাড়ি থিকা যার কাছে বিয়া দিতো তার কাছেই বিয়া বইয়া জীবন পাড় হইয়া যাইতো। এগুলাই ছিলো ভালো বংশের মাইয়াদের ভালো গুণ। এই যুগের মাগিদের মতন বারো ভাতার ধরার সুযোগ আর ইচ্ছাও আছিলো না আমাগো। আমরা এসব শুনতাম আর হেসে গড়াগড়ি খেতাম।
তো যা বলছিলাম, ওই অবস্থায় দেখেই দাদার নানা তার নাতবউ কে পছন্দ করে ফেলেন। সেইদিনই বিয়ের দিনক্ষণ সব ঠিক করে দাদী কে আশীর্বাদ করে আসেন। এর কিছুদিন পরেই দাদী আমাদের বাড়ির বউ হয়ে আসেন। যে মেয়ে আদুল গায়ে খালের পানিতে নেমে ঝাঁপাঝাপি করে সেই মেয়ের আর যাইহোক স্বামী সংসার বোঝার কথা না। হলোও তাই। তিনি আমাদের বাসায় এসে স্বামী সংসার শিকেয়তুলে রান্নাবাটি আর পুতুল খেলায় ব্যস্ত হয়ে গেলেন। আমার দাদার মা মানে আমার দাদীর শাশুড়ি মাটির মানুষ ছিলেন। যার গল্প এর আগে আপনাদের সাথে শেয়ার করেছি। তিনি আমার দাদীর এসব ছেলেমানুষীকে প্রশ্রয় দিতেন সবসময়। দাদীদের বাড়ির সামনে দিয়ে যে খাল বয়ে গেছে সেই খালের উজানে আমাদের বাড়ি। মাঝেমধ্যেই দাদীর খেলার সাথীরা সেই খালে সাঁতার কাটতে কাটতে দাদীর সঙ্গে দেখা করতে আসতেন। দাদীও কাউকে কিছু না বলে তাদের সাথে সাঁতার কাটতে কাটতে নিজের বাড়িতে গিয়ে উঠতেন। দাদীর এবং আমাদের বাড়ি এ পাড়া ও পাড়া হওয়ায় সাঁতরে আসা যাওয়া করা সহজ ছিলো। যখন তিনি সাঁতরে গিয়ে তাদের বাড়ি উঠতেন তখন তার দাদার একটা পরিচিত কথা তিনি সবসময় শুনতেন। কথাটি এরকম ছিলো, হায়! হায়! এই মাইয়া আমার মানসম্মান শ্যাষ কইরা ফালাইবো। নিশ্চয়ই কাউরে না জানাইয়া সাঁতরাইয়া আইয়া পড়ছে! এরপর দাদীকে তার দাদা যত্ন করে খাবার খাইয়ে বুঝিয়ে আমাদের বাসায় দিয়ে যেতেন।
দাদী দাদাকে ভীষণ ভয় পেতেন। সেই বিয়ের রাত থেকে সাবালিকা হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি তার শাশুড়ির সাথে এক বিছানায় ঘুমাতেন। দাদা যখন বাসায় থাকতেন না উনি তখন রান্নাবাটি আর পুতুল খেলায় ব্যস্ত থাকতেন। যখনই দাদার শব্দ কানে আসতো তখনই তিনি দৌড়ে গিয়ে আমাদের বাড়ির শস্য রাখার মাচাতে থাকা বড় বড় মাটির কোলার ভেতরে গিয়ে লুকাতেন। দাদা চলে যাবার পর তার শাশুড়ি তাকে সেখান থেকে বের করে নিয়ে আসতেন। এভাবে লুকোচুরি করতে করতে দাদা এবং দাদীর মধ্যে ভালোবাসারা দানা বাঁধতে শুরু করে। আর সেই ভালোবাসার ফসল হিসেবে প্রথম তাদের কোল জুড়ে আমার বাবার আগমন ঘটে। এভাবে একে একে তারা দশ জন সন্তানের জনক জননী হয়। কিভাবে তারা দশ সন্তানের জনক জননী হয়েছিলেন সে গল্প অন্য একদিন শেয়ার করব আপনাদের সাথে।
আমাদের পূর্বপুরুষদের ভিটেমাটি আসাম হওয়ায় দাদা কে জমির দেখাশোনা আর ফসল উৎপাদনের জন্য বছরের অনেকটা সময় আসাম থাকতে হতো। এরকম হয়েছে আমাদের কোনো কাকা বা ফুপু দাদীর পেটে অথচ দাদা সেই সম্পর্কে অবগত ছিলেন না। উনি আসাম গিয়ে পড়ে আছেন তো আছেন। যখন তিনি কাজকর্ম শেষ করে নৌকা ভরে ফসল নিয়ে বাড়ি ফিরতেন তখন দেখতেন তাদের ঘরে নতুন আরও একটি ভালোবাসার ফসলের আগমন ঘটেছে। এরকম করে দাদা যে দাদী কে ফেলে এতোদিন করে আসাম গিয়ে পড়ে থাকতেন অথচ দাদীর এ নিয়ে অভিযোগ ছিলো শূন্যের কোঠায়। অথচ আমাদের এই সময়ের মানুষের সংসারে পান থেকে চুন খসলেই শুরু হয়ে যায় লঙ্কা-কান্ড।
দাদীর দাদাকে নিয়ে অভিযোগ শূন্যের কোঠায় থাকলেও তিনি বেশ অভিমানী ছিলেন এবং যখন তিনি অভিমান করতেন তখন বেশ আয়োজন করেই অভিমান করতেন। অভিমান প্রকাশ করার চিহ্ন হিসেবে তিনি বাপের বাড়ি গিয়ে পাড়ি জমাতেন। ভাইয়েরা বোনের মুখ দেখেই টের পেয়ে যেতেন বোনের অভিমানের খবর। তারা তখন দলবেঁধে আমাদের বাসায় এসে আমার দাদাকে কোলে তুলে তাদের বাসায় নিয়ে বোন-দুলাভাইয়ের অভিমান ভাঙ্গাতেন। শেষের দিকে দাদী একটু বেশীই অভিমানী হয়ে গিয়েছিলেন। একটু কিছু হলেই দাদার সঙ্গে কথা না বলে, নাওয়া খাওয়া ভুলে আলাদা বিছানায় গিয়ে ঘুমাতেন। দাদাকে দেখতাম একদিন, দুইদিন,তিনদিন দাদীর পিছনে ঘুরে ঘুরে দাদীর অভিমান ভাঙ্গাতেন। দাদা দাদী কে চোখে হারাতেন আর দাদীও দাদার জন্য কোথাও গিয়ে থাকতে পারতেন না। আমরা মজা করে বলতাম দাদা মারা যাবার পর তুমি এদিক সেদিক ইচ্ছেমতো ঘুরে বেড়িয়ো। দাদী এসব শুনে আমাদের দিকে তেড়ে আসতেন।
দাদা মারা গেছেন দুইবছর হতে চলেছে, দাদী এখনো দাদার বিছানাপত্র জড়িয়েই বসে থাকেন। কোথাও গিয়ে থাকতে পারেন না। আমরা বলি তুমি দাদার জন্য কোথাও গিয়ে থাকতে পারেতে না, এখন তো দাদা নেই, ফুপুরা নিয়ে রাখতে চায় গিয়ে থেকে তো মন ভালো করে আসতে পারো। তার উত্তর একটাই এই ঘর ছেড়ে গেলে নাকি তার ভেতর হু হু করে। এই হচ্ছে ভালোবাসা! এতো বয়সের পার্থক্য ছিলো দুজনের মধ্যে, চেহারার দিক দিয়ে দাদা কখনোই দাদীর যোগ্য ছিলেন না,এই যে দাদী কে রেখে দাদা দীর্ঘদিন করে আসাম গিয়ে পড়ে থাকতেন তবুও দাদী দাদাকেই ভালোবাসতেন। আর আমাদের সময়ের মানুষের মধ্যে এতো এতো অভিযোগ, এতো হতাশা, এতো না পাওয়া। অধিকাংশ পরিবারের মধ্যেই বৈবাহিক কলহ লেগেই থাকে। মা-বাবার এমন আচরণ দেখে সন্তানেরা বিপথে চলে যায়। চারদিকে এতো এতো বিবাহবিচ্ছেদ যা অকল্পনীয়। আমাদের এই সময়ের সমাজে এমন ঘটনা অগণিত যে পাঁচ থেকে ছয় বছর একটা সম্পর্কে থেকে, একজন আরেকজন কে জেনেশুনে বিয়ে করার পর বছর না ঘুরতে ভাঙ্গনের সুর বেজে উঠেছে। আমার বাসার আশেপাশে তাকালে আমি শুধু ডিভোর্সি দেখি এমনকি যাদের চোখের সামনে বড় হতে দেখেছি তাদেরও কয়েকদফা বিয়ে হয়েগেছে কিন্তু সংসার টিকেনি! অথচ আমাদের দাদা-দাদীরা তাদের দাদা-দাদীরা একজন আরেকজন কে না দেখেই পরিবারের নেয়া বিয়ের মতো এতো বড় একটা সিদ্ধান্তে রাজি হয়ে যেতেন এবং সারাটা জীবন ভালোবেসে একজন আরেকজন কে লতার মতো পেঁচিয়ে থাকতেন জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত। অথচ আমরা স্বাধীন হতে হতে কখন যে নিজেদের পরাধীন করে ফেলেছি, কখন যে জীবনের সঠিক মানে থেকে ছিটকে পড়েছি-পড়ছি তা টের ই পাচ্ছিনা!
সংসার বলতে আমি আমার দাদা-দাদী কে দেখে যা শিখেছি তা হলো মানিয়ে নেয়া, মেনে নেয়া। সংসার করতে গেলে বাঁধাবিপত্তি আসবে এটাই স্বাভাবিক। কারণ প্রতিটা মানুষের স্বভাব আর চিন্তাভাবনা এক না। আমি যে ভাবে চিন্তা করছি বা ভালোবাসা প্রকাশ করছি অন্য জনের কাছে এর ভিন্ন সংজ্ঞা থাকতেই পারে এটাই তো স্বাভাবিক। আমরা যখন মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতে পারব তখন আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে সেই সাথে ভালোবাসারাও বেঁচে থাকবে। ভালোবাসা গুলোর আসলে মৃত্যু হয় না, আমারা নিজেরাই এগুলোকে গলা টিপে হত্যা করি। পারিবারিক কলহ, পারিবারিক ভাঙ্গন আসলে কোনো সমস্যার সমাধান নয় বরং বড় সমস্যার সূত্রপাত। মানিয়ে নেয়া আর মেনে নেয়া বলতে আমি অবশ্যই অন্যায় কে মেনে নেবার কথা বলিনি। যদি কেউ প্রতিবাদযোগ্য কোনো অন্যায় করে তবে তার প্রতিবাদ করেই সমাধান বের করতে হবে। কিন্তু এটাও মাথায় রাখতে হবে, ছোট ছোট অন্যায়ের জন্য যেনো বড় প্রতিবাদ করে জীবনের ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে না ফেলি। দিনশেষে আমরা কেবল আমাদের জন্যই বাঁচি না বরং তাদের জন্যও বাঁচি যারা আমাদের ভালো দেখার তৃপ্তি নিয়ে বেঁচে থাকেন।
ছবিঃ গুগল
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৫৬
শাওন আহমাদ বলেছেন: আসলেই, দাদীর মুখে এসব গল্প শুনে আমি ইমাজিন করার চেষ্টা করতাম দিন গুলো কতোটা সুন্দর ছিলো।
২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৫২
সোনাগাজী বলেছেন:
আপনি অনেক বনেদী ঘরের লেখক।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:০০
শাওন আহমাদ বলেছেন: হা হা হা! না ভাই, আমি মোটেই বনেদী ঘরের লেখক না। কিন্তু আমার লিখতে ভালো লাগে অথচ আমি অলস।
৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২০
জুল ভার্ন বলেছেন: লেখা ভালো লেগেছে।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:২৩
শাওন আহমাদ বলেছেন: মন্তব করে সেটা আমাকে জানিয়েছেন, এটা আমার ভালো লেগেছে।
৪| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৩৫
অনামিকাসুলতানা বলেছেন: আসলে মানুষ তখন অন্য রকম ছিল।
ভালবাসা, মায়ায় ভরা দিনগুলি আর রই লো না।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫৩
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমরা ধুনিনিকতা আর স্বাধীনতার মোড়কে সব মুড়িয়ে ফেলেছি।
৫| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৫৭
কবিতা ক্থ্য বলেছেন: মানুষ নামের মানুষ আছে দুনিয়া বোঝাই,
এই মানুষের ভিড়ের মাঝে সেই মানুষ নাই।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:০০
শাওন আহমাদ বলেছেন: সত্যিই আমরা কিসের পেছনে ছুটছি, কি যে চাই আমরা তা আমরা নিজেরাও জানিনা। সুখী হতে চেয়ে অজানা স্রোতে ভেসে যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।
৬| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫০
মোস্তফা সোহেল বলেছেন: লেখাটি পড়ে বেশ ভাল লাগল।সত্যি আগেকার দিন গুলোই ভাল ছিল।
আপনি তো ভাগ্যবাদ ,আপনার দাদিকে পেয়েছেন।আমার দাদা - দাদি কারও কথা মনে নেই।
মাঝে মাঝে মনে হয় তাদের সহচার্যে বড় হতে পারলে ভাল হত।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৩
শাওন আহমাদ বলেছেন: আলহামদুলিল্লাহ! আমি দাদা-দাদী, নানা-নানী সবাইকেই পেয়েছি। জি ভাইয়া এই মানুষ গুলোর সহচার্যে বড় হবার অনেক তৃপ্তি আর আনন্দ আছে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।
৭| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৫০
গেঁয়ো ভূত বলেছেন: তাড়াহুড়া করে পড়লাম। সময় নিয়ে পরে আবার পড়বো।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:০৪
শাওন আহমাদ বলেছেন: জি সময় নিয়ে পড়ার দাওয়াত রইলো।
৮| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৩২
ফুয়াদের বাপ বলেছেন: দাদীর গল্প বলতে বলতে অনেক চমৎকার কিছু শিক্ষনীয় দিক রেখে গেছেন -
- অল্প বয়সে বিয়ে হলেও শশুড় বাড়ীতে নিজের বাড়ির মতো বসবাস করার সুযোগ (পুতুল খেলা, বন্ধুদের সাথে সাঁতার কাটা)।
- বয়স কম বলে সঠিক বয়সের আগ পর্যন্ত শাশুড়ীর সাথে ঘুমানে যেমনটা মায়ের সাথে ঘুমাতো।
- স্বামীকে রাজার মতো মেনে মান্য করা
- ত্বক কালো ফর্সা যাই হোক দাদা মানুষটা ভালো বলে আলতা-সুন্দরী দাদীও সুখে ঘর করেছে। মানে ত্বক যেমনই হোক মানুষ হওয়া চাই।
- যৌথ পরিবারের সুখ-দ:খ। মান-অভিমানে পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশে পাওয়া। একক পরিবারগুলোতে অভিমানগুলো প্রশ্রয় পেয়ে অপ্রীতিকর সমস্যা সামনে আনে।
- তাদের ভালোবাসা ছিল শতভাগ বিশুদ্ধ। দাদা থাকতে দাদী পিছু ছাড়তেন না।আর দাদা চলে যাবার পর দাদার ঘর ছেড়ে দাদী কোথাও গিয়ে থাকেন না। দাদার ঘ্রাণ খুঁজে বেড়ান দাদী প্রতিক্ষন।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৫৮
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমি আসলে এখানে দাদার গায়ের রঙের কথা উল্লেখ করে এটাই বোঝাতে চেয়েছি যে এসব রঙ টঙ কিছুই না আসলে, ভেতরের মানুষ টাই আসল যার সাথে দিনশেষে তৃপ্তি নিয়ে বেঁচে থাকা যায়। জি যৌথ পরিবার থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। আমি নিজেও যৌথ পরিবারে বড় হয়েছি। হারানোর চেয়ে প্রাপ্তির সংখ্যা অনেক বেশী।
৯| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: বোউ না বউ হবে।
আমার নানা নানী আসামে ব্যবসা করতেন।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ২:০১
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ বানান ঠিক করে দেবার জন্য। আমি "বৌ" এভাবে লিখতে চেয়েছিলাম প্রথমে। যাইহোক নিজের বউ নেই তো তাই বানান নিয়ে সচেতন ছিলাম না আরকি।
১০| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৩৩
রানার ব্লগ বলেছেন: তখনকার কিছু বিষয়ে আমার ঘোর আপত্তি এবং হাসি পায় । ওই যে বললেন পাখিও বাড়ির উপর দিয়ে উড়ে যেতে পারতো না , জানি এটা কথার কথা তাই বলে সেই সব কথার কথার ধরন বিশ্বাসযোগ্য হওয়া উচিৎ । সেই লোক যদি জানতো কতো পাখি রোজ তার বাড়ির উপর দিয়ে উড়ে যেতে যেতে পুটু করে দিয়েছে তার হিসাব ও নাই ।
এইবার আমার নিজের কথা বলি আমার বাবার কাছে শোনা আমারদের বাড়ির সামনে দিয়ে কেউ নাকি ছাতা মাথায় আর জুতা পায়ে যেতে পারতো না । আমি হা হা হা করে হেসে দিয়েছিলাম এই গাল গপ্প শুনে । একজন মানুষ জুতা পরবে রোঁদে ছাতা মাথায় দেবে এটাই স্বাভাবিক , অতচো একজন বিত্তবানের ফালতু অহমিকায় সেই লোক জুতা পরতে পারবে না। আমি হলে সকাল সন্ধ্যা তার বাড়ির সামনে দিয়ে জুতা পায়ে ছাতা মাথায় হাটতাম ।
একটা বাজে এবং ভয়ানক গল্প বলি শুনুন আমার দাদার বাবার বাবার নাকি একবার মাছ ধরার শখ হয়েছিলো তো সেই লোক ছিলো হাঁপানির রুগী তার পক্ষে মাছ তো দুরের কথা সামান্য মাছি ধরার সাধ্য ছিলো না তাই তার চামচারা নাকি কিছু লোক পানিতে নামিয়ে দিয়েছিলো তারা ডুব দিয়ে থাকতো আর পানিতে পোতা খুটি নাড়া দিতো আর সেই আমার পুর্ব বংশধর বড় ট্যাটা বা কোঁচ দিয়ে সেই সব অসহায় লোকের দিকে ছুড়ে দিতো এতেই সে নাকি মাছ ধরার আনন্দ পেতো । ন্যাক্কার জনক ঘটনা। এই কাহিনী আমার এলাকার বৃধ্যরা আমাকে শুনায় , আমি ঘৃনা ভরে উঠে চলে যাই । অসভ্য মানুষ । যাদের আত্মীয় স্বজন ওই ঘটনায় মারা গিয়েছিলো তারা আজো আমাদের ঘৃনা করে । পথে দেখলে ঘৃনার দৃষ্টিতে তাকায় ।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৩
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া গল্পের পেছনের গল্প তুলে আনার জন্য। সত্যিই সেই সময় ক্ষমতাবান মানুষেরা তাদের খেয়াল-খুশিমতো অনেক কিছুই করতেন কিন্তু ভয়ে কেউ প্রতিবাদ করতেন না। এখনো ক্ষমতাবান রা তাদের খেয়াল-খুশি মতোই সবকিছু করে অথচ আমরাও প্রতিবাদ করতে পারিনা। কাকাপক্ষীও উড়ে যেতে পারতো না, কাকপক্ষীও জানতোনা এইসব কথা গুলো তখন প্রবাদ হিসেবে ব্যবহার করা হতো।কাকাপক্ষীও উড়ে যেতে পারতো না কথাটি অধিক নিরাপত্তা বোঝাতে ব্যবহার করা হয়েছে।
১১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৩:৫৪
ঢাবিয়ান বলেছেন: আপনার লেখাগুলো খুব ঝরঝরে ।পড়তে ভাল লাগে।
সেকালের মানুষেরা আসলেই অনেক ধৈর্যশীল ছিলেন।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৪:০১
শাওন আহমাদ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আমার স্মৃতির পাতায় মন্তব্য জুড়ে দেয়ার জন্য। ধৈর্যশীল ছিলেন বলেই তারা ভালো থাকার মন্ত্র জানতেন এবং অন্যকেও ভালো রাখার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিলো তাদের।
১২| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:২৯
মনিরা সুলতানা বলেছেন: ধৈর্য জিনিসটা সব সম্পর্কের বেলায় জরুরী।
লেখা ভালো লেগেছে।
১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৩৮
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আমার স্মৃতির পাতায় মন্তব্য জুড়ে দেবার জন্য।
১৩| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ১১:৪৯
শায়মা বলেছেন: অনেক সুন্দর একটা লেখা।
দাদীর একটা ছবি দেখতে চাই ভাইয়া।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:০৮
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আমার লেখায় মন্তব্য জুড়ে দেয়ার জন্য। দেখানোর সুযোগ থাকলে অবশ্যই দেখাতাম কিন্তু সে সুযোগ নেই।
১৪| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:০৯
নীল আকাশ বলেছেন: আগের দিনগুলো সব দিক থেকেই ভালো ছিল। এখন সব মেকি আর ফালতু অভিনয়ের পালা।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:১৪
শাওন আহমাদ বলেছেন: আধুনিক আর স্বাধীন হতে গিয়ে আমরা সব হারিয়ে বসে আছি।
১৫| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১১:৪৪
মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন:
সেকালের সম্পর্কগুলো ছিল বেশ মজবুত। একালের সম্পর্ক নড়বেড়ে।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ দুপুর ১২:৩১
শাওন আহমাদ বলেছেন: আমরা এখন শুধু আমাদের নিয়েই ভাবতে আর ব্যস্ত থাকতে চাই। এভাবেই আমরা সবকিছু নড়বড়ে করে ফেলছি দিন থেকে দিন।
১৬| ১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৫২
মিরোরডডল বলেছেন:
কারণ প্রতিটা মানুষের স্বভাব আর চিন্তাভাবনা এক না। আমি যে ভাবে চিন্তা করছি বা ভালোবাসা প্রকাশ করছি অন্য জনের কাছে এর ভিন্ন সংজ্ঞা থাকতেই পারে এটাই তো স্বাভাবিক। আমরা যখন মেনে নিতে আর মানিয়ে নিতে পারব তখন আমাদের সকল সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে সেই সাথে ভালোবাসারাও বেঁচে থাকবে।
সহমত।
আর আমাদের সময়ের মানুষের মধ্যে এতো এতো অভিযোগ, এতো হতাশা, এতো না পাওয়া। অধিকাংশ পরিবারের মধ্যেই বৈবাহিক কলহ লেগেই থাকে।
খুবই দুঃখজনক, এরকমটা কখনো কাম্য না।
আগের দিনের মানুষের ধৈর্য বেশি ছিলো। ভালোবাসা, পারস্পরিক সম্মানবোধ ছিলো, সেটা ঠিক আছে কিন্তু সবার জীবন কিন্তু গল্পের দাদাদাদির মতো সুখকর ছিলোনা। অনেকে জুলুমের শিকার ছিলো। ভালোবাসাহীন দীর্ঘজীবন একসাথে কাটিয়েছে।
কিন্তু মুক্তির অপশন ছিলোনা, সমাজ কি বলবে এটা বেশি ভাবাতো। এভাবে কত নারী নিভৃতে কষ্ট পেয়ে ওভাবেই জীবন শেষ করেছে, কোনো প্রাপ্তি ছিলোনা তাদের। শাওন কি এখন তার বাচ্চা মেয়েটাকে বা বাচ্চা বোনটাকে বিয়ে দিবে গল্পের দাদীর যে বয়সে বিয়ে হয়েছিল, কখনোই না। ওটা বিভীষিকাময় ছিলো।
এখন খারাপ দিকটা হচ্ছে মানুষের ধৈর্য কম, অস্থির জীবন। অনুভূতির গভীরতা কম, আরো অনেক এরকম বলার মতো সমস্যা আছে । কিন্তু ভালো দিক হচ্ছে যেখানে ভালোবাসা নেই, সেই জীবন থেকে মানুষ বের হয়ে আসে। যেটা আগে সহজ ছিল না।
সুখী সুন্দর ভালোবাসাময় রেস্পেক্টফুল জীবন এখনো আছে কিন্তু সংখ্যায় কম। কেনো কম?
কারণ অসুখী আনহেলদি রিলেশনশিপ মানুষ কন্টিনিউ করে না। করা উচিতও না।
এভরিওয়ান ডিজার্ভস হ্যাপিনেস।
১৫ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ রাত ৮:৫৯
শাওন আহমাদ বলেছেন: ভাইয়া মানুষ থাকবে আর সমস্যা থাকবেনা তা হয় না। সমস্যা তখনও ছিলো এখনো আছে। তখনকার অনেক বর্বর কাহিনীও আমি আমার দাদীর কাছে শুনেছি। অন্যায় কেউ করলে অবশ্যই এর সমাধান করতে হবে, তবে ছোট সমস্যার যেনো বড় সমাধান না হয়ে যায়। ভাইয়া দিনশেষে আমারা কেবল আমাদের জন্যই বাঁচি না। ওই সময়ে আর্লি এইজে বিয়ে হওয়াটা সমাজের রীতিনীতি ছিলো তাই হয়েছে কিন্তু এখন তো সে রীতিনীতি নেই আর সেই সময় মানুষ অনেক কিছু জানতোও না। আমার দাদীর আর্লি এইজে বিয়ে হলেও কিন্তু আমার ফুপুদের আর্লি এইজে বিয়ে হয়নি। আমি আমার প্রতিবেশীদের মধ্যেই বেশ কয়েকটি বিবাহ বিচ্ছেদ দেখেছি যা সত্যিই সামান্য ছিলো। সংসার করতে গেলে এরকম সমস্যা হয় আবার এর সমাধানও হয়ে যায়। কিন্ত তাই বলে বিচ্ছেদের মতো এতবড় সিদ্ধান্ত এতো দ্রুত নেয়া ঠিক না। তবে সত্যিই যদি একসাথে আর না থাকা যায় তবে অবশ্যই বিচ্ছেদের মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। আমরা একটুতেই ধৈর্যহারা হয়ে যাই। এটাই আনাদের মূল সমস্যা।
©somewhere in net ltd.
১| ১৪ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ সকাল ১০:৪৮
সামিউল ইসলাম বাবু বলেছেন: আসলেই সুন্দর দিন ছিল তখন