নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।
আমার পছন্দের ঋতু শরৎ তবে বর্ষা আর শীতের আগমনী বার্তাও খারাপ লাগেনা। ছেলেবেলা থেকেই আমার কাছে অপার এক বিষ্ময় আর মুগ্ধতার নাম ছিল শরৎ। শরতের আকাশের মতো এতো সুন্দর ঘোর লাগানো আকাশ অন্য কোনো ঋতুতে খুব একটা দেখা যায় না। এ সময় আকাশ এতোটাই স্বচ্ছ আর গাঢ় নীল থাকে যে অনেক দূরের আকাশে ডানামেলা সোনালী চিলও খুব সহজে দৃষ্টিগোচর হয়; ক্ষণে ক্ষণে সোনালী ডানার চিলের সাথে পাল্লা দিয়ে স্বচ্ছ গাঢ় নীল আকাশে আল্পনার বেশে থোকায় থোকায় ভেসে বেড়ায় শুভ্র মেঘ। ছেলেবেলায় এই মেঘ গুলোকে আমার কাছে তুলোর টিলা মনে হত। আমার দাদী যখন উঠানে শিমুল তুলো শুকাতেন, আমরা ভাই-বোনেরা তখন রোদের তাপে ফুলে ফেপে উঠা সেই শিমুল তুলোর উপর গাড়াগড়ি খেতাম। শরতের আকশে শুভ্র মেঘ দেখলেই তাই আমার দাদীর রোদে শুকাতে দেওয়া তুলোর মতো মনে হত, ইচ্ছে করত মেঘের ভেলায় চড়ে গড়াগরি দিতে। আবার কখনো বা এই শুভ্র মেঘের দলা গুলোকে পাড়ায় বিক্রি করতে আনা হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো লাগত, ভাবতাম মেঘ গুলোকে ধরে মুখে পুড়ে দিলেই হাওয়াই মিঠাইয়ের মতো মিলিয়ে যাবে।
আমাদের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাথে লাগোয়া সাপের মতো এঁকেবেঁকে বয়ে গিয়েছিল ছোট একটি নদী, ঠিক যেন রবীন্দ্রনাথের ‘আমাদের ছোট নদী’ কবিতার মতো। শরৎকালে নদীর পানি নেমে গিয়ে তলার দিকে চলে যেত, কমে আসত স্রোতের গতিবেগও। গলা কিংবা বুক পানি ভেঙ্গে মানুষ সোনারঙা ধানের বোঝা মাথায় করে নদী পাড় হতেন, সাঁতরে পাড় হতো গরুও— খানিক বাদে-বাদে দূরের মাঠ থেকে বয়ে আনা আখ ভর্তি ডিঙি নৌকা গুলো ঘাটে এসে ভীড়ত। ঘাটের পাশেই ছিল গুরের খোলা, সেখানে দিনমান আখের গুড় বানানোর কাজ চলত। প্রথমে আখ গুলোকে মেশিনের মাধ্যমে পিষে রস বের করা হত; তারপর সেই রস বিশাল দৈত্যাকার চুলা ও লোহার কড়াইয়ে জ্বালিয়ে গুড় বানানো হত।
আমরা ছেলেপুলেদের দল বিকেলে রোদ পড়ে এলে, গুড়ের খোলা থেকে গুড় কিংবা আখ খেতে-খেতে নানা রঙ-বেরঙের ফড়িং ধরায় নিযুক্ত হয়ে যেতাম। ফড়িং ধরার জন্য আমাদের বিশেষ ধরণের হাতিয়ার ছিল, পাটকাঠির মাথায় কাঁঠাল কিংবা জিগা গাছের আঠা লাগিয়ে বসে থাকা ফড়িংয়ের উপর ছোঁয়া লাগাতেই তারা আঠার মধ্যে আটকে যেত— কেউ কেউ আবার পাটকাঠির মাথায় মাকড়োসার জাল পেঁচিয়েও ফড়িং ধরত, এতো এতো রঙের ফড়িংয়ের মধ্যে আমার পছন্দের ছিল, গাঢ় লাল আর গাঢ় হলুদ রঙের ফড়িং।সবুজ রঙের হেলিকপ্টারের মতো দেখতে বড় এক ধরণের ফড়িং ছিল, যাকে আমরা রাজা ফড়িং বলে ডাকতাম; কিন্তু রাজা বলে তাকে ডাকা হলেও সে ছিল ভীষণ বোকা কিসিমের ফড়িং, খুব সহজেই তাকে ধরে ফেলা যেত। আমরা দস্যি ছেলে-মেয়েদের দল, নদীর পাড় আর কশবনের ভেতর ঘুরে-ঘুরে ফড়িংদের পাকড়াও করতাম।
কমে আসা নদীর পানিতে পাট গাঁজন দিয়ে, পাটকাঠি এবং পাটের আঁশগুলোকে আলাদা করা হত— তারপর সেই পাটকাঠি গুলোকে ছোট-ছোট আঁটি বেঁধে গোলাকৃতি ঘরের মতো করে ছড়িয়ে রোদে শুকাতে দেওয়া হত। আমরা মাঠভর্তি করে রোদে শুকাতে দেওয়া পাটকাঠির ঘরগুলোর ভিতরে লুকোচুরি খেলতাম, পাঠকাঠির গা থকে অদ্ভুত এক গন্ধ আসত— আমি চোখবন্ধ করে গভীর শ্বাস নিয়ে পাটকাঠির গায়ে লেগে থাকা গন্ধ শুকতাম, এই গন্ধ আমার পছন্দের ছিল এবং এখনো এই গন্ধ পেলে আমি শৈশবে ফিরে যাই, মাটির গন্ধ পাই।
শরতে রোদ্র-ছায়ার লুকোচুরি আমাদের খেলায় ভিন্নমাত্রা যুক্ত করত, আমরা ছেলে-মেয়েদের দল ছায়া থেকে দৌড়ে রোদের সাথে-সাথে যাবার প্রতিযোগিতা করতাম; কিন্তু কখনোই রোদের সাথে পেরে উঠতাম না। রোদ সবসময় আমাদেরকে হারিয়ে জয়ী হয়ে যেত। শরতে আমাদের আরেক বিষ্ময় ছিল, বুড়ির সুতো নামে পরিচিত সাদা মাকড়োসার জালের মতো দেখতে এক বস্তু যা বাতাসে ভেসে বেড়াত— বড়দের জিজ্ঞেস করলে বলত এগুলো চাঁদের বুড়ির চরকার সুতো, বুড়ি চরকা ঘোরাবার সময় এগুলো উড়ে-উড়ে পৃথিবীতে চলে আসে। এই সুতো মাথায় পেঁচিয়ে রাখলে নাকি চুল সুন্দর হয়। আমরাও সেই কথা বিশ্বাস করে বাতাসে উড়তে থাকা সেই সুতো গুলোকে ধরে-ধরে মাথায় পেঁচাতাম। (এই সুতো নামক বস্তু এখনো আমার কাছে এক বিষ্ময়, এগুলো ঝাঁকে-ঝাঁকে আসলে কোথায় থেকে উড়ে আসতো? যদি কারো কাছে এই তথ্য থাকে তাহলে জানাবেন প্লিজ)
এখন ঢের বড় হয়েছি, আশেপাশে সবকিছু দুর্বার গতিতে পরিবর্তন হয়েগছে; তবুও শরৎ এলেই কেমন বাচ্চা হয়ে যাই! খুঁজতে থাকি কাশেরবন। আজ অফিসে আসার সময় দেখলাম বিভিন্ন ফাঁকা প্লটে কাশফুল ফুটে সাদা হয়ে আছে, বাতাসে দোল খেয়ে তারা শরতের জানান দিচ্ছে। অফিসে এসে এক প্রকৃতিপ্রেমী সহকর্মীর সাথে কথা বললাম, একদিন অফিস থেকে আর্লি বের হয়ে দুজন কাশের বন থেকে ঘুরে আসব, কথা পাকা হয়েছে এখন যাওয়ার অপেক্ষায়…
ছবিঃ গুগল
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:২১
শাওন আহমাদ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ ভাইয়া!
২| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৫
রাজীব নুর বলেছেন: আরেকটা কথা- বিলাস করুণ। বিলাসিতা করবেন না।
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:২২
শাওন আহমাদ বলেছেন: বিলাসই করছি, বিলাসিতা করার মতো কিছুই নেই আমার।
৩| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৩
ইসিয়াক বলেছেন: কী চমৎকার লেখা! আমি ছোটবেলায় যখন গ্রামে দাদা বাড়িতে বেড়াতে যেতাম। বিশেষ করে পুজোর ছুটি পড়লে। আকাশ, মেঘ, কাশফুল,দিগন্ত জোড়া ফসলের মাঠ,নাম না পাখিদের কলকাকলী আমায় মাতাল করে তুলতো,বিশেষ করে ঘুঘুর ডাক।যদিও পাট জাগ দেওয়া পানির গন্ধ আমার কোনদিন পছন্দ নয় তবে শুকাতে দেওয়া পাটকাঠির মধ্যে লুকোচুরি খেলা আমার দারুণ পছন্দ ছিল।
শুভকামনা রইলো।
০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৫
শাওন আহমাদ বলেছেন: আপনি নিজেও ঢের ভালো লিখেন। গ্রাম সত্যিই অনেক আপন আপন একটা জায়গা। এই গন্ধ ভালো লাগে এমন লোক পাওয়া খুঁজে পাওয়া আসলেই মুশকিল; কিন্তু কেন যেন এই গন্ধটা আমার খুব চেনা আর মায়া মায়া লাগে, হয়ত এর পিছনে কোন কারণ আছে যা আমার জানা নেই।
অসংখ্য ধন্যবাদ! পোস্ট পড়ে মন্তব্য করার জন্য।
৪| ১০ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ১০:০৫
রাজীব নুর বলেছেন: বিরক্ত না হয়ে আমার মন্তব্যের উত্তর দিয়েছেন। এজন্য আপনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ।
১১ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১০:১২
শাওন আহমাদ বলেছেন: বিরক্ত হবার তো কিছুই ছিল না। মন্তব্যের উত্তর পেয়ে ফের মন্তব্য করার জন্য আপনাকেও ধন্যবাদ।
৫| ২০ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৫১
জুন বলেছেন: অনেক ভালোলাগার একটি লেখা। প্রাঞ্জ্যবর্ননায় এক গ্রামীন চিত্র পট । পাটকাঠির গন্ধটা এসে নাকে ঝাপটা দিয়ে গেল। আমাদের প্রাচীন ভেংগে পড়া বড় ঘরের চারিদিকে হেলান দিয়ে রাখা হতো। কয়েকদিনের জন্য দাদার বাড়ি বেড়াতে গেলে পিঠেপুলির সাথে সেই পাট শুকানোর গন্ধও সাথে করে নিয়ে আসতাম শাওন আহমেদ। ভালো লাগা রইলো।
+
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৭
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
৬| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৩
খায়রুল আহসান বলেছেন: সুন্দর শিরোনাম, সুন্দর ছবি আর সুন্দর বর্ণনাসমৃদ্ধ একটি পোস্ট, ভালো লাগল। + +
ছোটবেলায় আপনার দাদীর শুকোতে দেয়া শিমুল তুলোর উপর আপনার এবং আপনার ভাই বোনদের গড়াগড়ি খাওয়ার দৃশ্যটা যেন চোখের সামনে দেখতে পেলাম। রোদে শুকাতে দেয়া পাটকাঠির গন্ধ আমারও ভালো লাগতো।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৮
শাওন আহমাদ বলেছেন: যাক আমি ভেবেছিলাম এই অদ্ভুত গন্ধের প্রেমিক মনে হয় আমি একাই আছি কিন্তু আরও কেউ আছে জেনে ভা্লো লাগছে। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
৭| ২২ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ রাত ৮:৩৯
খায়রুল আহসান বলেছেন:
আমিও শরতের আকাশের একটা ছবি দিলাম। ছবিটা তোলা হয়েছিল ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩ তারিখে, দুপুর একটা ৩৬ মিনিটে।
২৩ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:১৯
শাওন আহমাদ বলেছেন: চোখের শান্তি!
৮| ২৬ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ দুপুর ২:৫১
নিবর্হণ নির্ঘোষ বলেছেন: শরতের মত এমন আকাশ আরেকটি ঋতুতে দেখা যায় , সেটা হলো চৈত্র মাস । চৈত্রে এমন আকাশ দেখতে পাওয়া যায় ।
আপনার এই স্মৃতিচারণটা অনেক সুন্দর হয়েছে । আপনি কিন্তু দারুণ লেখেন !!
২৭ শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ সকাল ১১:২৭
শাওন আহমাদ বলেছেন: অসংখ্য ধন্যবাদ আমার পোস্টে মন্তব্য জুড়ে দেওয়ার জন্য। ভালোবাসা জানবেন।
©somewhere in net ltd.
১| ০৯ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৩
রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।
শরতকাল আমার ভীষন প্রিয়।