নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

স্বপ্নপূরণই জীবনের একমাত্র লক্ষ্য নয়।তাই বলে স্বপ্নকে ত্যাগ করে নয়,তাকে সঙ্গে নিয়ে চলি।ভালো লাগে ভাবতে, আকাশ দেখে মেঘেদের সাথে গল্প পাততে, বৃষ্টি ছুঁয়ে হৃদয় ভেজাতে, কলমের খোঁচায় মনের অব্যক্ত কথাগুলোকে প্রকাশ করতে...

শাওন আহমাদ

এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।

শাওন আহমাদ › বিস্তারিত পোস্টঃ

শীত এবং আমার সোনালী স্মৃতি

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ দুপুর ১:৫৯



ইট-কাঠের শহরে শীতের হাওয়া বইছে। মফস্বল বা গ্রামাঞ্চলে শীতের শুরু থেকে ঠান্ডা অনুভূত হলেও— এই দূষণ আর কার্বন ডাই-অক্সাইডের শহরে শীতের হাওয়া বয় অনেক দেরিতে। ডিসেম্বর রেইনের পর থেকেই শহরবাসী শীতের শীতল পরশ টের পাচ্ছে। সারাদিনের মিঠে রোদে মিশে থাকছে আলস্য— বেলা গড়াবার সাথে সাথেই উত্তরের হিমেল হাওয়া এসে গায়ে ঠান্ডা পরশ বুলিয়ে দিচ্ছে। রাস্তার পাশের ভ্রাম্যমাণ পিঠাপুলি আর মহল্লার মোড়ের চায়ের দোকানগুলোতে উপচেপড়া ভিড়, যেন উৎসব লেগেছে। শীত এলেই এসব দোকানগুলোতে নিয়মিত খদ্দেরের পাশাপাশি মৌসুমি খদ্দেরের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে। শীতে উষ্মতা খুঁজতে কেউ মুখ ডোবায় ধোঁয়া ওঠা চায়ের কাপে কেউবা আবার মশগুল থাকে চুলা থেকে সদ্য নামানো চিতই কিংবা ভাপাতে।


শীতে শহরের প্রকৃতি-পরিবেশের তেমন একটা পার্থক্য চোখে না পড়লেও গ্রামাঞ্চলের প্রকৃতি-পরিবেশে এক ভিন্নমাত্রা যুক্ত হয়— ধান কাটা, ধান মাড়াই করা, পৌষ-পার্বণের পিঠা তৈরি, শীতের সবজি চাষ, বিয়ের ধুম, চড়ুইভাতি, যাত্রাপালা সহ আরও নানা কাজে মানুষ মেতে থাকে। মফস্বলে থাকার কারণে খুব গভীরে শীত উপভোগ করার সুযোগ হয়েছে। কত সুখের স্মৃতি জড়িয়ে আছে আমার শৈশবের শীত ঘিরে। কাকডাকা ভোরে যখন গাছের পাতা বেয়ে শিশির টুপ টুপ করে টিনের চালে পড়ত; তখন আমরা কচিকাচার দল বরফধোয়া পানিতে অযু করে, কাঁপতে কাঁপতে মক্তবে যেতাম। আমাদের শরীরের কাঁপুনি দাঁতকপাটিতে লেগে কিটকিট আওয়াজ তুলে মিলিয়ে যেত ভোরের নিস্তব্ধতায়।


মক্তব থেকে ফিরে, বেতে বোনা শের ভরে মুড়ি আর পাটালি খেজুরের গুড় নিয়ে টুল পেতে বসে যেতাম উঠনে। পিঠে রোদ লাগিয়ে মচমচ করে গুড়-মুড়ি খেতাম আর পাঠশালার পাঠ ঠোঁটস্থ করতাম। পাঠ ঠোঁটস্থ শেষে, গরম গরম ভাতের সাথে নানা পদের ভর্তা মেখে খেয়ে— হেলেদুলে চলে যেতাম পাঠশালায়। শুক্রবারের সকাল ভিন্ন আঙ্গিকে শুরু হতো। আমরা কচিকাচার দল ঘুম থেকে উঠে, চোখ কচলাতে কচলাতে মল্লিকদের বাগানে জড় হতাম; তারপর জলপাই,বরই কুড়িয়ে— কে কত বড় জলপাই,বরই কুড়িয়েছে তা নিয়ে প্রতিযোগিতায় মেতে উঠতাম। কখনো কখনো খোলা মাঠে ঘন হয়ে পড়ে থাকা কুয়াশার ভিতর লুকোচুরি খেলতাম। কুয়াশা এত ঘন হয়ে পড়ে থাকত— এক ফুট দূরে কী আছে তা দেখা যেত না। আমরা খুব সহজেই রুপকথার যাদুকরের মতো— আবরা কা ডাবরা বলে কুয়াশার বুকে হাওয়া হয়ে যেতাম। লুকোচুরি খেলা শেষে, স্যান্ডেল ভরতি এক গাদা শিশিরভেজা মাটি নিয়ে বাড়ি ফিরতাম।


আমাদের নিজস্ব সবজি বাগান ছিল। প্রায় সকল ধরণের শীতকালীন সবজি চাষ হতো সেখানে। ইচ্ছেমতো তরতাজা সবজি তুলে চড়ুইভাতির আয়োজন করতাম। একপাশে চড়ুইভাতি আর অন্যপাশে মল্লিকদের বাগান থেকে কুড়িয়ে আনা জলপাই,বরইয়ের মিশেলে ভর্তা বানানোর আয়োজন চলত। ক্ষেত থেকে তুলে আনা তাজা ধনে পাতা দিয়ে মাখানো সেই ভর্তা, অমৃতের স্বাদকেও হার মানাবে বলে আমরা বিশ্বাস করতাম। আমাদের প্রচুর গোল আলু হতো, খাবার সুবিধার্থে— সেগুলোকে বাছাই করে বড় থেকে ছোট কয়েকটি ভাগে আলাদা করে রাখা হতো। আমরা বড় আকারের আলুগুলোকে মাটির চুলায় পুড়িয়ে খেতাম। রাতের রান্না শেষে, আলু পোড়াতে দিয়ে চুলার চারপাশে বসে আগুন তাপাতাম। আলু পোড়া হয়ে গেলে, সুন্দর একটা গন্ধ বের হতো। পোড়া আলুগুলোকে গরম ছাই থেকে তুলে ফুঁ দিয়ে দিয়ে খেতাম।


শীতের সবচেয়ে মজার দিক ছিল, পিঠাপুলি তৈরির উৎসব। প্রতিদিনই পাড়ায় কারো না কারো বাড়িতে পিঠার আয়োজন চলত। সকাল হতেই ইতি-উতি থেকে আসা ঢেঁকির শব্দে পাড়াসুদ্ধ গমগম করত। শীতে আমাদের বাড়িতে যখন ফুফা-ফুফুরা আসতেন তখন খুব ঘটা করে পিঠার আয়োজন হতো— দিনের শুরু থেকেই সবাই নানা কাজে ব্যস্ত হয়ে যেতেন, বাজার করে আনা, ঢেঁকিতে চাল গুড়ো করা, পিঠা তৈরির সরঞ্জাম গোছানো সহ আর কত কি! বাড়িতে তখন উৎসবের হাওয়া বইত। মাঝরাত অব্দি চলত পিঠা তৈরির কাজ। সিদ্ধ-পুলি, দুধ-পুলি, দুধ-চিতই, মাংস-সিঙ্গারা সহ আরও নানা পদের খাবার রান্না হতো। আব্বার ভয়ে আমরা পড়ার টেবিলে বসে বই-খাতা নাড়াচাড়া করতাম। পিঠাপুলির গন্ধ নাকে সুড়সুড়ি দিয়ে ডাকত; কিন্তু পাঠ মুখস্ত না করে যাওয়া সাধ্য ছিল না। পাঠ মুখস্ত হলে, গলা অব্দি খেয়ে ঘুমিয়ে যেতাম।


ভোরবেলা হাড়ি-পাতিলের টুংটাং শব্দে ঘুম ভাঙত; বিছানায় শুয়েই টের পেতাম ভাপাপিঠা বানানো হচ্ছে। লোভ সামলাতে না পেরে, লেপের ওম ছেড়ে এক ঝটকায় উঠে পড়তাম; তারপর কলপাড়ে গিয়ে কোনো রকম চোখে-মুখে পানির ঝাপটা দিয়ে সোজা চলে যেতাম পাকের ঘরে। দাদি প্লেটে গরম গরম পিঠা তুলে দিতেন, আমরা দাদির পাশে পিড়ি পেতে বসে তুলতুলে নরম ভাপাপিঠা খেতাম। দাদির হাতে বানানো ভাপাপিঠার মতো পিঠা আমি আর কোথাও খাইনি। পিঠা খাওয়া শেষে নতুন চালের ভূনা-খিচুড়ির সাথে ঝাল ঝাল গরুর মাংস গাপুস-গুপুস পেটে চালন করে দিয়ে, উঠনের মিঠে রোদে পাটি পেতে শুয়ে থাকতাম।
দিন বদলের সাথে পাল্লা দিয়ে, পরিবর্তনের হাওয়া বইছে সর্বত্র। আবহাওয়া পরিবর্তনের পাশাপাশি পরিবর্তন এসেছে— মানুষের জীবনযাত্রা, বাসস্থান, খাদ্যাভ্যাস, পোশাক-পরিচ্ছেদ সহ আরও অনেক কিছুতে। এত এত পরিবর্তনের ভিড়ে আমাদের স্মৃতিগুলোকে হাতরে বেড়াই। মানুষ স্মৃতিকাতর প্রাণী, তাইতো পরিবর্তনের মোড়কে মুড়িয়ে গেলেও ফেলে আসা সোনালী দিনগুলোর কাছেই ফিরে যেতে চায় বারবার।

ছবিঃ গুগল

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৩:৫১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখছেন।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৩০

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ ভাইয়া

২| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:০৫

মিরোরডডল বলেছেন:




Excellent writing!


২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৪

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ!

৩| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৫:৪১

নাহল তরকারি বলেছেন: সুন্দর।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০৪

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ!

৪| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:১৪

সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: শীতকালে গ্রামে গেলে এই ধরণের পরিবেশ দেখি। লেপের মধ্যে থেকে বের হতে ইচ্ছে করে না। সন্ধ্যার পরে ঘরের মেয়েরা বাইরের রান্না ঘরে মাটির চুলায় পিঠা বানায় আর গল্প করে। আশে পাশের বাসার প্রতিবেশীরা এসে জড়ো হয়। বেশ ভালো লাগে। গ্রামে বেড়ানোর জন্য শীতকাল ভালো। প্রতি বছর একবার যাওয়ার চেস্টা করি।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১৩

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য

৫| ২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:০৩

কামাল১৮ বলেছেন: চোট বেলায় খেজুর গাছ কাটা দেখতে পেলে শীত আসছে বুঝতে পারতাম।

২৩ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ রাত ৯:১৩

শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য

৬| ২৪ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ সকাল ৯:৩৬

জুন বলেছেন: আপনাকে একটা সত্যি কথা বললে আপনি হয়তো কষ্ট পাবেন আর সেটা হলো শীত আমার একদম অপছন্দের একটা ঋতু। সেটা গ্রামেই হোক আর এম্পায়ার স্টেট বিল্ডিং এর মাথার উপরেই হোক। আমার ভাই বলে "শীতে খেয়ে আরাম"। কোন যুক্তিতে! যে সময় ফ্যান ছিল না, এসি ছিল না তখন। এখন তো ফ্যান ধনীদের বাসায় না, গরীব মানুষের বাসায়ও একটা ফ্যান থাকে। আর শীতের সব্জি সারা বছর পাওয়া যায়। আর খেজুরের রসে নিপাহ ভাইরাস, গুড় ভেজাল :(

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:০৭

শাওন আহমাদ বলেছেন: শীত আমরাও পছন্দের ঋতু নয় কিন্তু স্মৃতিগুলো মধুর ছিল। ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য।

৭| ২৫ শে ডিসেম্বর, ২০২৩ বিকাল ৪:৪৪

রাজীব নুর বলেছেন: পোষ্টে আবার এলাম। কে কি মন্তব্য করেছেন সেটা জানতে।

৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৪ দুপুর ১:০৯

শাওন আহমাদ বলেছেন: আমার লেখার পাঠক সংখ্যা খুব বেশী নয় আর আপনার মতো সবাই লেখা পড়ে অনুভূতি জানায় না।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.