নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
এটা আমার ক্যানভাস। এখানে আমি আমার মনের কোণে উঁকি দেয়া রঙ-বেরঙের কথাগুলোর আঁকিবুঁকি করি।
আগস্টের প্রথমদিন বিকেল বেলা। ফাঁকা রাস্তায় শোঁ শোঁ শব্দে ছুটে চলছে বাস। জানালার পাশে বসে বাইরে তাকিয়ে আছি। আকাশ মেঘলা। হালকা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। জানালার অল্প ফাঁক দিয়ে বৃষ্টির ছাঁট এসে গায়ে লাগছে। কিন্তু জানালা বন্ধ করতে ইচ্ছে করছে না। আজ আর বৃষ্টির সাথে কোনো আড়ি নেই, নেই ভিজে যাওয়ার ভয়। ঠান্ডা-কাশির চিন্তাও মাথা থেকে ছুটি নিয়েছে। আকাশের চেয়েও ঢের কালো আজ আমার মনের আকাশ। বাচ্চাদের মতো চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে কিন্তু কাঁদতে পারছি না। পুরুষের কাঁদতে নেই।
কাঁদতে না পারলেও কিছুক্ষণ আগে ঘটে যাওয়া ঘটনার কথা কোনো অবস্থাতেই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছি না। যে ঘটনা এক মুহূর্তের মধ্যে আমি সহ আরও মানুষের জীবনের চিত্র বদলে দিয়েছে। ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে একটু একটু করে সাজানো স্বপ্নের জগৎ। চাইলেই তা মাথা থেকে সরিয়ে ফেলা যায় না।
সকাল থেকে অফিসের কাজে ব্যস্ত সবাই। প্রতিদিনের মতো নাশতা বিরতি, দুপুরের খাওয়ার সময় সবাই মিলে হাহাহিহি। রোজকার মতোই চলছিল সব। বিকেলের দিকে ‘বস’ আমাদের ডিপার্টমেন্টের সবাইকে মিটিং রুমে উপস্থিত হতে বললেন। আমরা যথা সময়ে সেখানে উপস্থিত হলাম। ‘বস’ আসলেন এবং প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বললেন। তাঁর কথার বিষবস্তু তাদের বিজনেস ভালো যাচ্ছে না। তাই তাঁরা আমাদের ডিপার্টমেন্ট বন্ধ করে দিতে চাচ্ছেন। আমরাও আর কথা না বাড়িয়ে তাঁর প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে মিটিং রুম থেকে বের হয়ে এলাম। আজই আমাদের অফিসের শেষ দিন। হুট করে এমন একটা সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না কিন্তু মেনে নিতে হচ্ছিল।
ডেক্সে এসে প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র গুছিয়ে নিচ্ছিলাম যাতে করে দ্বিতীয়বার এখানে আর না আসতে হয়। এর মধ্যে আমাদের এইচআর রুমে এলেন অফিসের কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য। তখন আমাদের ডিপার্টমেন্টের এক ভাই তাঁকে বললেন, ‘ভাইয়া আমাদের ডিপার্টমেন্ট ক্লোজ করে দেওয়া হয়েছে।’ কাল থেকে আমরা আর অফিসে আসছি না। এটা শোনার সাথে সাথে উনার মুখ একদম লাল হয়ে গেল। কিছু সময়ের জন্য নিশ্চুপ দাঁড়িয়ে রইলেন। আমাকে জড়িয়ে ধরে আছেন তিনি, মনে হচ্ছে এখই হু হু করে কেঁদে ওঠবেন। আমার ভেতরেও জলোচ্ছ্বাস হচ্ছে কিন্তু বাইরে হাসি হাসি মুখ নিয়ে ভাইয়াকে বললাম, ‘ভাইয়া কিচ্ছু হয়নি, আমাদের সম্পর্ক তো আর নষ্ট হচ্ছে না। আমাদের যোগাযোগ হবে ইন শা আল্লাহ।
বাস-স্টপে দাঁড়িয়ে আছি। একের পর এক আমার রুটের বাস চলে যাচ্ছে কিন্তু ওদিকে আমার কোনো খেয়াল নেই। বেশ কিছুক্ষণ পরে একটি বাসে উঠে বসলাম। এই রাস্তা দিয়েই প্রতি বৃহস্পতিবার অফিস শেষ করে বাড়ি ফিরি। কাজের দিনগুলোতে অফিসের কাছেই ভাড়া বাড়িতে থাকি যাতে একটু আয়েশে অফিস করা যায়। এক বৃহস্পতিবারের আনন্দের কথা চিন্তা করে সারা সপ্তাহ কেটে যায় আমার। অন্যান্য দিনগুলোতে বাড়ির রাস্তা দীর্ঘ মনে হলেও আজ খুব দ্রুত শেষ হয়ে যাচ্ছে। যদিও আমি চাইছি এই রাস্তা যেনো না ফুরায়। এভাবেই চলতে থাকুক বাসের চাকা আর আমিও চলতে থাকি গন্তব্যহীন।
একটা সময় বাস গন্তব্যে পৌঁছালো। একরাশ হতাশা নিয়ে বাড়ির দিকে হাঁটছি, ওদিকে নানা চিন্তাতারা এসে সমস্তকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। আমি অসহায়ের মতো সব গুছিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না।
বাড়িতে এসে ঠোঁটের কোণে শুকনো হাসি টেনে সবার সাথে কথা বলছি। তবে তাতে কোনো প্রাণ নেই। ক্ষণে ক্ষণেই অন্যমনস্ক হয়ে যাচ্ছি। বাড়ির লোকেরা কিছু আন্দাজ করতে পেরে জিজ্ঞেস করল, ‘কি হয়েছে?’ আমি, শরীর খারাপ বলে কাটিয়ে নিলাম। কারণ অফিসের ঘটনা বাড়িতে বলার সাহস আমার নেই। কখনো হবেও না।
শনিবার যথারীতি আমার ভাড়া বাসার উদ্দেশ্যে বের হয়ে এলাম। কিন্তু বাড়ির লোক জানে, আমি অফিসে যাচ্ছি। এভাবেই দিনের পর দিন যাচ্ছে। আমি আমার সাথে যুদ্ধ করছি। বিভিন্ন জায়গায় সিভি আর ইন্টারভিউ দিয়ে বেড়াচ্ছি। মিথ্যে অভিনয় করছি কিন্তু কাছের মানুষদের কিছুই বলতে পারছি না। আমার ভাড়া বাসার ছাদ আর ওই দূরের আকাশ ছাড়া কেউ জানে না, ভেতরে আমি কি বিষাদের তীর নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
মহাদেব সাহার ওই কবিতার মতো বলতে হয়,
‘কেউ জানে না একেকটি মানুষ বুকের মধ্যে কী গভীর দীর্ঘশ্বাস
নিয়ে বেড়ায়-
কোনো বিষণ্ন ক্যাসেটেও এতো বেদনার সংগ্রহ নেই আর,
এই বুকের মধ্যে দীর্ঘশ্বাসের পর দীর্ঘশ্বাস
যেন একখানি অন্তহীন প্রগাঢ় এপিক!’
০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৪
শাওন আহমাদ বলেছেন: আপনার মন্তব্যের জন্য ধন্যবাদ।
২| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:২৭
দর্পণের প্রতিবিম্ব বলেছেন: আমারও একই অবস্থা! ভিতরটা ভেঙে চুরমার আর চিন্তায় চুল রং পরিবর্তন করছে এবং ত্যাগ করছে তার প্রিয় স্থান মাথা থেকে। সিভি ফরওয়ার্ড হচ্ছে ফরমালি কিন্তু কেউ গ্রহণ করছে না। এদিকে আধার ছাড়া কান্নার কোনো উপায় নেই।
০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৬
শাওন আহমাদ বলেছেন: আই ফিল ইওর পেইন। আল্লাহ আমাদের জন্য সহজ করুন।
৩| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ২:৩৫
ফিনিক্স! বলেছেন: জব হারানোর ঘটনা যদিও প্রতিদিনই ঘটছে আর এই সংখ্যা কিন্তু অনেক, ২০২২ এর একটা রিপোর্ট মতে প্রতি মাসে প্রায় ছয় মিলিওন মানুষ জব হারাচ্ছে। কিন্তু এখন এই সংখ্যা অনেক বেশি হবে পৃথিবীর সব জায়গায়। এই জব না থাকা মুহূর্তগুলো আসলেই,
দমবন্ধ করা কষ্ট বুকে নিয়ে অভিনয় করে চলা।
০১ লা নভেম্বর, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮
শাওন আহমাদ বলেছেন: ধন্যবাদ আপনার মন্তব্যের জন্য। আল্লাহ আমাদের সবার জন্য সহজ করুন।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে অক্টোবর, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৫
জুল ভার্ন বলেছেন: লেখাটা খুব ভালো লেগেছে।