নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমার ব্লগ আমার বাসার ড্রয়িং রুমের মত, আমি এখানে যেকোনো কিছু দিয়ে সাজাতে পারি আপনার পছন্দ না হলে বলতে পারেন আমার কোন আসবাবটির অবস্থান বা ডিজাইন আপনার পছন্দ হয় নি এবং কেন হয় নি। তবে তা অবশ্যই ভদ্র ভাষাতে। ভাষার ব্যবহার করতে জানা অনেক বড় একটি গুন

শেখ এম উদ্‌দীন

আমি বাংলাদেশি ....আমি বাঙালী....আমি মুসলিম....আমি বাংলার জন্য জীবন দিতে সর্বদা প্রস্তুত ।

শেখ এম উদ্‌দীন › বিস্তারিত পোস্টঃ

সততাই সর্বোৎকৃষ্ট পন্থা

১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ৮:৩৭

২০১২ সালের জুন মাসের প্রচণ্ড গরমের মধ্যে একদিন বদলী ক্লাস সহ ছয়টি ক্লাস নিতে হল। শেষ ঘণ্টাতে কোন এক ক্লাসে ইংলিশ ভার্সন রসায়ন পড়াতে হবে। যথারীতি ক্লাসে গেলাম, পড়াচ্ছি ইলেকট্রন বিন্যাস। নিজের কষ্ট হলেও ছাত্রদের বুঝতে দিচ্ছিলাম না যে আমি ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত। ৪০ মিনিটের ক্লাসে কখনোই চেয়ারে বসতাম না যদি খুব জরুরি না হত। পড়াচ্ছি এবং বলছি দেখ বাবারা এই ইলেকট্রন বিন্যাস আমরা এইচ এস সি লেভেলেও এত ভালো ভাবে শিখতে পারি নি, আমি তোদের যে ভাবে পড়াচ্ছি একটু মনোযোগ দিলে জিবনে যতদিন রসায়ন পড়বি ততদিন আর ইলেকট্রন বিন্যাস মুখস্ত করা লাগবে না।

সারাদিনের ক্লাসের চাপে শিক্ষার্থীরাও যথেষ্ট ক্লান্ত এর পরেও সবাই খুব মনোযোগের সাথেই বিষয়গুলো বুঝতেছিল। কোয়ান্টাম সংখ্যা যখন বুঝাচ্ছি তখন দেখলাম এক ছেলে বেশ কয়েকজনকে রাবার দিয়ে কাগজের টুকরা দ্বারা আঘাত করছে। পড়া থামিয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কি পড়াচ্ছি এবং সামনে কি পড়াব? ছাত্র আমার কোন কথার জবাব না দিয়ে মাথা নিচু করে দাড়িয়ে রইল (এটা সেন্ট যোসেফ স্কুলের এক ঐতিহ্য বলা যায়, যে ওরা কখনো শিক্ষকের চোখে তাকিয়ে কথা বলে না)। আমি বললাম তুমি মনযোগী না হলে তো তোমার একার ক্ষতি, কিন্তু তুমি যা করছ সেখানে তুমি আরও ১০ জনের ক্ষতি করছ এটার কি ব্যাখ্যা? জবাবে ও যা বলল তার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। ও বলল "স্যার বাবা বলেছে এস এস সি পাশ করতে পারলেই বাইরে পাঠিয়ে দিবে, আর মায়ের ইচ্ছা আমি ভবিষ্যতে ব্যারিস্টার হব, তাহলে এই ইলেকট্রন বিন্যাস আমার কি কাজে আসবে"। মেজাজ খারাপ হয়ে গেল, গালে একটা কষিয়ে চড় দিয়ে বললাম যে দিন ব্যারিস্টার হবি সেই দিন এই চড়ের মর্ম বুঝতে পারবি।

পরদিন টিফিনের আগের ক্লাস গ্যাপ ছিল তাই লাইব্রেরিতে বসে পরীক্ষার খাতা নিরীক্ষণ করছিলাম, এক স্যার এসে বলল কোন এক সরকারী উচ্চ পদস্থ দম্পতি এসেছেন আমার সাথে দেখা করতে! আমি ধরেই নিলাম ঐ ছেলের পিতা-মাতা এসেছেন এবং পূর্বের অভিজ্ঞতা বলে এখন আমার বিরুদ্ধে কেস করার ভয় দেখানোই হবে ওনাদের ভদ্রোচিত জবাব। বসার রুমে ওনাদের নিয়ে বসে বললাম বলেন আমি আপনাদের জন্য কি করতে পারি? ভদ্রলোক চুপ ছিলেন, কিন্তু ভদ্র মহিলা অনেকটা আবেগের সাথে যা বললেন তার সারমর্ম হল, উনারা বুঝতে পেরেছেন ওনার ছেলে আমাকে খুব শ্রদ্ধা ভক্তি করে, কারন কালকের চড়ের বিষয় সে বাসাতে পুরো চেপে গিয়েছে এবং বাসাতে নাকি আমার অনেক গল্পের উদাহরণ দিয়ে বাবা মাকে বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান দেয়। এখন আমি যদি ওকে সঠিক পথে আনতে ওনাদের সাহায্য করি তবে ওনারা চির কৃতজ্ঞ থাকবেন। আমি বললাম, কি সমস্যা একটু খুলে বলুন যেন আমি পারব কিনা তা ভেবে দেখতে পারি। এবার বাবা মুখ খুললেন "স্যার ও সারাদিন আড্ডা দিয়ে বেড়ায়, স্কুলের সার্কেলের বাইরেও ওর অনেক বন্ধু আছে, এদের নিয়ে কে এফ সি, পিজ্জা হাট এই সব বড় বড় রেস্টুরেন্ট চষে বেড়ায়, শুধু তাই নয় স্যার সকল ছেলে মেয়েদের সে নিজের পয়সাতে প্রতিদিন ট্রিট দেয়, তার ক্রেডিট কার্ডের বিল দিতে দিতে আমাদের নাভিশ্বাস হয়ে যাচ্ছে। আমি বললাম ও ক্রেডিট কার্ড কিভাবে পেল আর মাসে কত টাকাই বা বিল তুলে? জবাবে উনি বললেন, নিজেদের স্ট্যাটাস বজায় রাখতেই ওকে ক্রেডিট কার্ড দেয়া, আর প্রতি মাসে সে এভাবে অন্তত এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা নষ্ট করে! উনি আরও বললেন মাসে ৫০ হাজার বা এর কাছা কাছি খরচ করলেও ওনাদের আপত্তি ছিল না। কিন্তু ১২০/১৫০ হাজার ওনাদের জন্য অনে বেশী হয়ে যায়।

আমি কিছুক্ষন চিন্তা করে বললাম কিছু মনে না করলে আমি কি জানতে পারি আপনাদের দুইজনের মিলিত বেতনের পরিমান কত? উনারা বললেন স্যার বেতন তো দুজনে ৮০ হাজারের মত পাই তবে আমাদের অন্যান্য অনেক ইনকাম আছে! আমি যা বুঝার বুঝলাম, বললাম এত আয় থাকলে একমাত্র ছেলে একটু ব্যয় করবে এটাই তো স্বাভাবিক তাই নয় কি? সুতরাং আয় কমিয়ে দিন দেখবেন ব্যয় এমনিতেই কমে যাবে, বলে আমি উঠে পরলাম। ক্লাস শেষে ছেলেকে নিয়ে বসলাম। জানতে চাইলাম ওর প্রতিদিনের রুটিন। প্রথম কয়েকদিন সাধারন আলচনা এবং কাউন্সেলিং দিয়েই ছেড়ে দিতাম। এর পরে একদিন ওকে বললাম তুমি যে পরিমাণ খরচ করছ এটা বহন করার খমতা তোমার পিতামাতার আছে কিনা তা কি তোমার ভেবে দেখা উচিত না? ও আমাকে যা বলল তা আমার কাছে সিনেমার গল্পের মতই মনে হল, ওর মতে ওরা দাদা খুব ধর্মভীরু মানুষ ছিলেন, কিন্তু তাঁর ছেলে বা ছেলের বউ অবৈধ পথে আয় করাকে অন্যতম বৈধ কাজ ভাবে। আমার ছাত্র তার কোন এক বন্ধুর বাবার মারফত বিষয় গুলো জানতে পারে যখন ও ক্লাস সেভেনের ছাত্র, এর পর থেকে সে এমন জীবন যাপন করছে। ও স্বীকার করল যে ও ক্রেডিট কার্ডে অনেক বিল উঠায়, কিন্তু ঐ টাকার প্রায় ৭৫-৮০% ভাগ সে বিভিন্ন চ্যারিটেবল কাজে ব্যয় করে। আসলে বন্ধুদের বিল দিয়ে সেই টাকা ও সংগ্রহ করে এবং ঐ টাকা দিয়েই এই সকল কাজ করে। ছাত্রের যুক্তি হল, এতে করে অন্তত পিতা-মাতার কিছু অন্যায়ের প্রায়শ্চিত্ত করছে এবং তার মৃত দাদার আত্মাকে খুশী করছে। এই পর্যন্ত জানার পরে আমি ওকে বললাম, আমি তোমাকে বিশ্বাস করলাম, এবং এখন যেই মন মানসিকতার তোমাকে আমি দেখছি জিবনে যে পর্যায়েই আবার মিলিত হই না কেন আমি যেন তোমার মানসিকতার কোন পরিবর্তন না দেখি। যত দিন বাংলাদেশে ছিলাম ওকে তত দিন ক্রমাগত পড়াশুনাতে মনযোগী হতেই দেখেছি। জানিনা এখন ও কেমন আছে।

গল্পটি বলার উদ্দেশ্য একটাই, আর তা হল যে সন্তানের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আজ ঘুষ, দুর্নীতি বা অবৈধ আয় করছেন সে সন্তানই হয়ত এই কাজের জন্য আপনাকে ওদের জিবনের চরম ঘৃণিত একজন ব্যক্তিত্ব হিসেবে মূল্যায়ন করছে! এই কথা যদি সত্য হয় তাহলে আপনার বেঁচে থাকা বা সম্পদের পাহাড়ের কি আদৌ কোন মূল্য আছে?

আসুন এই রমজানে অন্তত অবৈধ পথের সকল আয়কে চিরতরে না বলি, লাল কার্ড দেখাই। এর চেয়ে বড় ইবাদত হয়ত এই রমজানে আর কিছুই হবে না। আর বলা তো যায় না পরবর্তী রমজান পর্যন্ত আমাদের হায়াত রয়েছে কিনা?

মন্তব্য ১৮ টি রেটিং +৪/-০

মন্তব্য (১৮) মন্তব্য লিখুন

১| ১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:১১

রাজীব নুর বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন।

এই সমাজে সৎ থাকাও অনেক কষ্টের।

১৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ
কেষ্ট পেতে কষ্ট তো একটু করাই লাগবে ভাই, তাই নয় কি?

২| ১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ৯:৩৮

ফারহানা সুন্দর মন বলেছেন: ভাল লাগল,

১৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:১৯

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ

৩| ১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৫৪

মোহাম্মদ নুরুজ্জামান বলেছেন: মহান আল্লাহ যেন আমার পিতামাতাগনকে, আমাকে এবং সকল বিশ্বাসীদেরকে বিচার দিবসে ক্ষমা করে দেন । আমিন ।

১৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২০

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: আমিন

৪| ১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ১০:৫৪

আবুহেনা মোঃ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন: ভালো লিখেছেন।

১৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২০

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ

৫| ১৭ ই মে, ২০১৮ সকাল ১১:৩৪

খালেদা শাম্মী বলেছেন: ভাল লেগেছে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে লেখাটা। অনৈতিক কাজ করার প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে সমাজে।

১৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২২

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: আমরাই সমাজের অংশ এবং আপনার উপলব্ধি অনুযায়ী আসলে প্রবণতাটা আমাদের মধ্যেই বেড়ে যাচ্ছে!
আল্লাহ্‌ আমাকে এবং সকলকে প্রবৃত্তির এ প্রতারণা থেকে মুক্ত রাখুন।

৬| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ১২:০৯

সমুদ্রচারী বলেছেন: খুব ভালো লাগলো।অবৈধ আয়ের টাকায় কেউ কোন সময় সুখি হতে পারে না। বাইরে থেকে তাদের সুখি দেখালেও একটু গভীরে গেলে বোঝা যায় তারা আসলে পারিবারিকভাবে সুখে নেই । পরম করুনাময় আমাদের সবাইকে মাহে রমজানের উসিলায় হেদায়াত দান করুক।

১৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: সহমত। আমীন

৭| ১৭ ই মে, ২০১৮ দুপুর ২:০৭

আল ইফরান বলেছেন: লেখাটা ভালো লেগেছে। অর্থের মধ্যে যে প্রকৃত সুখ থাকে না তা আবারও প্রমাণিত হল।

১৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৩

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ

৮| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:২৯

জগতারন বলেছেন:
লেখাটি সময়োপযোগি!
সমাজে সৎ হয়ে থাকা খুবই কষ্টদায়ক।

১৭ ই মে, ২০১৮ সন্ধ্যা ৭:২৫

শেখ এম উদ্‌দীন বলেছেন: ধন্যবাদ
এই কষ্টের মধ্যে কিংবা কষ্টের পরে যে অনাবিল সুখ রয়েছে তার তুলনাতে মনে হয় কষ্ট টুকুন সামান্যই। কি বলেন?

৯| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:২৯

জগতারন বলেছেন:
লেখাটি সময়োপযোগি!
সমাজে সৎ হয়ে থাকা খুবই কষ্টদায়ক।

১০| ১৭ ই মে, ২০১৮ বিকাল ৩:৩৬

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: শিরোনামটি ভালোলাগার । :)

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.