![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
সারা বিশ্বের সুন্দরীদের হৃদয় হরণ করা ভুবন ভুলানো অকৃত্রিম হাসির অধিকারী ‘টম ক্রুজ’ সামান্য একটু ভুলের কারণেই আজ হলিউডের সুপারস্টার হিসেবে নিজেকে পরিণত করতে পেরেছেন। সেদিন যদি তিনি সেই ভুলটি না করতেন তাহলে তিনি টম ক্রুজ হতে পারতেন না। ছোটবেলায় তার অভিনতে হওয়ার কোনো স্বপ্ন ছিল অন্য কিছু। ছোটবেলায় তিনি চেয়েছিলেন ধর্মযাজক হতে।
জন্ম ও পরিবার:
প্রকৌশলী ৩য় থমাস ক্রুজ ম্যাপোথার ও স্কুল শিক্ষিকা মেরি লি এর ঘর আলোকিত করে ১৯৬২ সালের ৩ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন টম ক্রুজ। টম ক্রুজের প্রকৃত নাম থমাস ক্রুজ ম্যাপোথার চতুর্থ। ক্রুজের বাবা থমাস মাপোথার ৪৯ বছর বয়সে ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ১২ বছর বয়সে ক্রুজের মা ক্রুজ ও তার বোন লি অ্যানিকে নিয়ে তার বাবাকে ছেড়ে চলে যান। ক্রুজ স্কুলজীবনে অ্যাথলেট হিসেবে যথেষ্ট সক্রিয় ছিলেন, আর প্রায় প্রতি রাতেই ফোর হকি খেলতেন। টম ক্রুজের পূর্ব পুরুষরা ছিলেন জার্মান, আইরিশ ও ইংরেজ গোত্রের।
ছোটবেলার সেই স্বপ্ন:
আজ আমরা পর্দা কাপানো যেই টম ক্রুজকে দেখছি, সেই টম ক্রুজের ছোট বেলায় স্বপ্ন ছিল ক্যাথলিক গির্জার যাজক হওয়ার। সেই ভাবেই সবকিছু এগোচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় সেন্ট ফ্র্যান্সিস সেমিনারিতে নিয়মিত যাতায়াত করতেন টম ক্রুজ। সেমিনারিতে শিক্ষার্থী হিসেবে ছিলেন প্রায় তিন বছর। হঠাৎই একদিন টম ক্রুজ ও তার বন্ধুরা কয়েক বোতল অ্যালকোহল পায় এবং সেগুলো তারা লুকিয়ে রাখে। তাদের পরিকল্পনা ছিল পরে তারা কোনো একসময় এগুলো খাবে। কিন্তু তাদের পরিকল্পনার কথা আগেই জেনে যায় সেমিনারির অন্য কিছু ছেলে। তারা সেগুলো পান করে মাতাল হয়। মাতাল অবস্থায় ধরা পড়ে যাজকদের হাতে এবং সেই ছেলেরা টম ক্রুজদের নাম বলে দেয়। এরপর সেমিনারি স্কুল থেকে তাদের বাবা-মায়ের কাছে চিঠি লেখা হয়। পরে তারা বের হয়ে চলে আসে। কিন্তু অনেকেই মনে করেন টম ক্রুজকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। সেটা ঠিক না। পরে ওই স্কুলে যাওয়া সুযোগ পেলেও টম আর সেখানে ফিরে যায়নি। তারপরই টম ক্রুজ নিজের ক্যারিয়ার নিয়ে অন্য কিছু ভেবেছেন।
রেসলার টম ক্রুজ:
এক সময় রেসলারও হতে চেয়েছিলেন টম ক্রুজ। কিন্তু এখানে স্বপ্ন ভঙ্গ। একসময় হাই স্কুলের রেস্লিং টিমের সদস্যও হয়েছিলেন। কিন্তু হাঁটুতে আঘাত পাবার কারনে তিনি রেস্লিং ছেড়ে অভিনয় শুরু করেন।
অভিনয় জীবন:
হেনরি মুনরো মিডল স্কুলে পড়াকালে ক্রুজ নাটকের সাথে জড়িত হন। তার অভিনীত প্রথম নাটকের নাম আইটি। ১৯৮১ সালে ‘ক্রুজ অ্যান্ডলেস লাভ এ ট্যাপস’ ছবিতে সহকারী চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে চলচ্চিত্র জীবন শুরু করেন। ১৯৮৩ সালে ‘অল দ্য রাইট মুভস’ এবং ‘রিস্কি বিজনেস’ ছবির মাধ্যমে টম ক্রুজের বর্ণাট্য অভিনয়-জীবনের সাফল্যগাথা শুরু হয়। ১৯৮৬ সালে ‘টপ গান’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে তারকা খ্যাতি পেয়ে যান এ তারকা। ১৯৯৬ থেকে ২০১১ এ সময়টিতে মিশন ইমপসিবল ছবির সিরিজগুলোতে অভিনয় করেন হলিউডের এই তারকা।
সংসার জীবন:
অভিনয় দিয়ে টম ক্রুজ যেমন আলোচিত তেমনি বিয়ে নিয়েও বিশ্ব মিডিয়ায় সমানভাবে আলোচিত। টম ক্রুজ প্রথম বিয়ে করেন ১৯৮৭ সালে মিমি রজারসকে। তিন বছর সংসার করার পর তাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর ডে’স অব থানডার ছবির সেটে নিকোল কিডম্যানের সাথে পরিচয় এবং ১৯৯০ সালে বিয়ে করেন। এ সময় ইসাবেলা জেন ও কনর এনটনি নামে দুটি সন্তান দত্তক নেন। কিডম্যানের সাথেও ছাড়াছাড়ি হয়ে যায়। এরপর পেনেলোপ ক্রুজের সাথে টানা তিন বছর প্রেম করার পর ছাড়াছাড়ি। এরপর ২০০৫-এ কেটি হোমসের সাথে সম্পর্কের শুরু, যার ফসল হিসেবে ক্রুজকে বিয়ে করার আগেই কেটি হোমস একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। অবশেযে ২০০৬-এর ১৮ এপ্রিল ইতালির একটি প্রাসাদে জাকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন দুজন। ‘সুরি’ নামে তাদের সাত বছর বয়সী একটি শিশু সন্তান আছে। মেয়ে সুরিকে নিয়ে দুজনের মধ্যে মতবিরোধের জের ধরে ২০১২ সালের ২০ আগস্ট বিচ্ছেদ ঘটে ক্রুজ-হোমস জুটির।
ব্লকবাস্টার ছবিগুলো:
ক্রুজ অভিনীত প্রায় সব ছবিই ব্লকবাস্টার হিট। তার হিট ছবিগুলো হল রেইন ম্যান (১৯৮৮), এ ফিউ গুড ম্যান (১৯৯২), জেরি ম্যাগুইরো (১৯৯৬), ভ্যানিলা স্কাই (২০০১), মাইনরিটি রিপোর্ট (২০০২), দ্য লাস্ট সামুরাই (২০০৩), কোলাটেরাল (২০০৪), ওয়ার অব দ্য ওয়ার্ল্ড (২০০৫), ট্রপিক থানডার (২০০৮), জ্যাক রিচার (২০১২)।
উল্লেখযোগ্য পুরস্কার ও সম্মাননা:
তার অভিনয়ের স্বীকৃতিও কম নয়, এখন পর্যন্ত তিনটি গোল্ডেন গ্লোব অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন এবং তিনটি একাডেমি অ্যাওয়ার্ডের জন্য মনোনয়ন পেয়েছেন। ১৯৯০, ১৯৯১ এবং ১৯৯৭ সালে পিপল ম্যগাজিন ক্রুজকে বিশ্বের ৫০জন সুন্দরতম মানুষের মধ্যে স্থান দিয়েছে।
১৯৯৫ সালে এমপায়ার ম্যগাজিন তাকে চলচ্চিত্র ইতিহাসে ১০০ জন যৌন-আবেদনময় তারকার মাঝে স্থান দেয়। এমনকি ২০০৬ সালে ফোর্বস ম্যাগাজিন ও প্রিমিয়ার ম্যগাজিন তাকে বিশ্বের সবচে শক্তিশালী তারকা হিসেবে আখ্যায়িত করে।
২০১৩ সালের বিশ্বের সেরা ধনী অভিনেতাদের মধ্যে টম ক্রুজ ছিলেন ৫ নম্বরে। তিন তিন বার অস্কার জয়ী এই তারকার ঝুলিতে রয়েছে ২৫০ মিলিয়ন ডলার। সিল্ভেস্টার স্ট্যালনের মতোই ৩৫ মিলিয়নের একটি প্রাসাদের মালিক এই মিশন ইম্পসিবল তারকা টম ক্রুজ।
বক্স অফিস ফ্লপ ছবি:
টম ক্রুজের সব ছবিই যে ব্যবসাসফল হয়েছে এমনটি নয়। ব্যর্থতার মুখ তাকেও ছাড়ে নি। টম ক্রুজের ব্যবসা অসফল ছবিগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ‘নাইট অ্যান্ড ডে’ ছবিটি। এক সপ্তাহে ছবিটি মাত্র ২০.৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। মুক্তি পাওয়ার দ্বিতীয় দিনেই টিকেট বিক্রির পরিমাণ ৯ শতাংশ কমে যায়। এজন্য তাকে কড়া সমালোচনার শিকার হতে হয়েছিল। ছবিটির ব্যর্থতার জন্য অনেকে টম ক্রুজকেই দায়ী করেন।
প্রযোজক টম ক্রুজ:
শুধু অভিনয় নয়, প্রযোজক হিসেবেও ভালো মুন্সিয়ানার পরিচয় রেখেছেন টম ক্রুজ। মিশন ইমপসিবল ছবিটি তারই উদাহরণ। ২০০৫ সালে হলিউড সাংবাদিক এডওয়ার্ড জে এপস্টিন দাবি করেন, খুব কমসংখ্যক প্রযোজক আছেন, যিনি টম ক্রুজের মতো বিলিয়ন-ডলার চুক্তির চলচ্চিত্রে সাফল্যের নিশ্চয়তা দিতে পারেন। ক্রুজ/ওয়াগনার প্রডাকশনস ক্রুজ ও তার অংশীদার ওয়াগনারের ফিল্ম প্রোডাকশন কোম্পানি।
জীবনের বিতর্কিত দিক:
সফলতার পাশাপাশি টম ক্রুজের জীবনেও বিতর্ক ছিল। ‘চার্চ অব সায়েন্টেলজির’ প্রতি টম ক্রুজের এক ধরনের অন্ধ বিশ্বাস ছিল। ক্রুজ ‘সায়েন্টেলজিকে’ ইউরোপে ধর্ম হিসেবে প্রতিষ্ঠার জন্য প্রচার চালিয়ে এই বিতর্কের জন্ম দেন। প্রথম স্ত্রী মিমি রোজারসের মাধ্যমেই ক্রুজ সায়েন্টেলজির সাথে জড়িত হন। অনেকেই মনে করেন সায়েন্টেলজি তার ক্যারিয়ারে খুব নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। আবার সাইন্টোলজি ধর্মে বিশ্বাস করার জন্যও সর্বাধিক পরিচিত তিনি।
মামলা:
টম ক্রুজের বিরুদ্ধে ১ বিলিয়ন ডলার ক্ষতিপূরণের একটি মামলা রয়েছে। চিত্র নাট্যকার ‘টিমথি প্যাট্রিক লানাহান’ অভিযোগ করেন ‘টম ক্রুজ’ তার লেখা ‘হেড অন’ কাহিনী অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে টম ক্রুজের জনপ্রিয় সিনেমা ‘মিশন ইম্পসিবল: ঘোস্ট প্রটোকল’। ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারিতে তার বিরুদ্ধে এই মামলাটি করা হয়। টম ক্রুজের বহুল জনপ্রিয় সিনেমা ‘মিশন ইম্পসিবল: ঘোস্ট প্রটোকল’র কাহিনী সাজানো হয়েছে ১৯৯৮ সালে ম্যাকলানাহানের লেখা ‘হেড অন’ গল্পটি অনুকরণ করেই।
ক্যান্সারে আক্রান্ত:
বাবার মতো টম ক্রুজেরও কি একই পরিণতি হবে? ১৯৮৪ সালেন ৯ জুন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে টমের বাবা মারা যান। নিজের মৃত্যু নিয়ে যতটা উদ্বিগ্ন ক্রুজ, তার চেয়ে বেশি উদ্বিগ্ন একমাত্র শিশু কন্যা সুরি ক্রুজের ভবিষ্যৎ নিয়ে। কেটি হোমস এর সঙ্গে ছাড়াছাড়ি হওয়ার পর ১৫ পাউন্ড ওজন কমে যায় ক্রুজের।
ডেইলি মেইলের খবরে জানা গেছে, বর্তমানে টম ক্রুজ মৃত্যু আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। মানসিক এ সমস্যার কারণে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। শুধু তাই নয়, ধীরে ধীরে তার ওজন কমে যাচ্ছে। তবে এ বিষয়ে তিনি তার পরিবারের সঙ্গে আলোচনা করছেন না।
এ প্রসঙ্গে টম এক টুইটার বার্তায় লিখেছেন, 'খুব শিগগিরই আমিও বাবার মতো ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যাব।'
অজানা তথ্য:
• জন্মের পর তিনি ডিসলেক্সিয়া বা অক্ষর অন্ধত্ব রোগে আক্রান্ত ছিলেন।
• জাপানের মেমোরিয়াল ডে অ্যাসোসিয়েশান ১০ অক্টোবরকে টম ক্রুস দিবস ঘোষণা দিয়েছে।
• টম ক্রুস একজন ভেজিটেরিয়ান ও ননএলকোহলিক।
ফিল্ম ক্যারিয়ারের খুঁটিনাটি:
• টম ক্রুজ অভিনীত ২১টি ছবি প্রথম স্থান দখল করেছে ওপেনিং উইকে।
• ডোমেস্টিক বক্স অফিসে ১৭টি ছবি ১০০ মিলিয়নেরও বেশি আয় করেছে।
• টানা ৫টি ছবিতে ১০০ মিলিয়নেরও বেশি আয় করেছে যেগুলোর মধ্যে রয়েছে ‘৯২-এর আ ফিউ গুড মেন ও ‘৯৬-এর জেরি ম্যাগুইর।
• নর্থ আমেরিকায় সবচেয়ে বেশি আয় করা ছবি ছিল ২০০৫-এ মুক্তি পাওয়া ওয়ার অফ দ্য ওয়ার্ল্ডস যেটি আয় করেছে ২৩৪.৩ মিলিয়ন ডলার।
• নর্থ আমেরিকায় তার সর্বমোট আয় ছিল ৩.৫ বিলিয়ন ডলার!
এগুলোও দেখতে পারেন -
* চার্লি চ্যাপলিন: অনবদ্য এক মুকাভিনয় শিল্পীর রহস্যঘেরা জীবনের গল্প
* মেরিলিন মনরো: বিশ্ব মাতানো এক অভিনেত্রীর জীবনের গল্প
* জেমস বন্ড: কাল্পনিক এক চরিত্রের বিশ্ব জয়ের গল্প
* স্টিভেন স্পিলবার্গ: শৌখিন এক চিত্র পরিচালকের গল্প
* জে. কে. রাউলিং: জনপ্রিয় এক কাল্পনিক চরিত্রের জননী
©somewhere in net ltd.
১|
১১ ই জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৮
দেওয়ান কামরুল হাসান রথি বলেছেন: আমার প্রিয় অভিনেতার একজন।