![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
বিশ্বজুড়ে সমাদৃত দ্রুতগতির এবং বিলাসবহুল গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানীগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্যের রোলস রয়েস অন্যতম। ১৯০৬ সালের ১৫ মার্চ চার্লস স্টুয়ার্ট রোলস এবং স্যার ফ্রেডরিখ হেনরী রয়েস যৌথভাবে রোলস রয়েস কোম্পানীটি প্রতিষ্ঠা করেন। গাড়ি তৈরির পাশাপাশি বিমানের ইঞ্জিন তৈরির কাজেও জড়িয়ে পড়ে কোম্পানীটি। একসময় বৃটেনের রাজা রানীরা ব্যবহার করতেন রোলস রয়েস। তখন এসব গাড়ির দাম ছিল আকাশচুম্বী। বছরে মাত্র ৫০০টি গাড়ি তৈরি হতো। এখনো কিন্তু রোলস রয়েসের দাম অনেক। রোলস রয়েসের রেইথ সিরিজের সর্বশেষ গাড়িগুলোর দাম প্রায় সোয়া তিন লাখ মার্কিন ডলার বা বাংলাদেশী টাকায় আড়াই কোটি টাকার বেশি। আর এ ধরনের বিলাসবহুল গাড়ির ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ১০০% আমদানী শুল্ক দিতে হয়। মানে বুঝুন, দাম দাঁড়াচ্ছে প্রায় পাঁচ কোটি টাকা!
অভিজাতদের গাড়ি রোলস রয়েস
উচ্চমূল্যের কারণে সাধারণের ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে রোলস রয়েস। অন্যদিকে আভিজাত্যের প্রতীক হয়ে ওঠে অভিজাত শ্রেণীর মাঝে। বৃটেনের রাজ পরিবার ডেইলমারের গাড়ি ব্যবহার করত। কিন্তু দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে পঞ্চাশের দশক থেকে তারা রোলস রয়েসের দিকে ঝুঁকে পড়ে। রাজকন্যা এলিজাবেথ (এখন বৃটেনের রানী) দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য ভেঙে রোলস রয়েসের ফ্যান্টম-৪ সিরিজের গাড়ি ব্যবহার করতে শুরু করেন। গাড়িটি রাজ পরিবার এবং রাষ্ট্র প্রধানদের জন্যই বিশেষভাবে তৈরি করা হয়েছিল। ফ্যান্টম-৪ সিরিজের এই গাড়িগুলো পৃথিবীর অন্যতম দূর্লভ গাড়ি, মাত্র ১৮টি তৈরি হয়েছিল এ ধরনের গাড়ি।
১৯৫৫ সালে সিলভার ক্লাউড সিরিজের গাড়ি নিয়ে আসে রোলস রয়েস। ৪,৮৮৭ সিসি ইঞ্জিনের এই গাড়িগুলো ঘন্টায় ১০৬ মাইল বেগে চলতে পারত। এ দশকের শেষ দিকেই আসে ফ্যান্টম-৫ সিরিজের গাড়ি যা ফ্যান্টম-৪ এর চেয়ে অনেক বেশি বিক্রি হয়েছিল।
ষাটের দশকে এসে রোলস রয়েসের আবেদন আরও বেড়ে যায়। রূপালী পর্দার তারকায় পরিণত হয় রোলস রয়েস। অভিনেতা-অভিনেত্রী, পপ তারকাসহ সেলিব্রেটিরা রোলস রয়েস ব্যবহার করতে শুরু করেন, এদের মধ্যে ছিলেন জন লেলন, রেক্স হ্যারিসন, ইনগ্রিড বার্গম্যান, ওমর শরিফের মত সেলিব্রটিরা।
যেভাবে রোলস রয়েস বিএমডাব্লিউ’র হাতে চলে গেল
১৯৭৩ সালে গাড়ি উৎপাদন বিভাগটি আলাদা করে রোলস রয়েস মোটরস প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিক্রি করে দেয় বৃটিশ সরকার। উদ্দেশ্য ছিল মূল রোলস রয়েস কোম্পানী যাতে জেট ইঞ্জিনের কাজে মনোযোগ দিতে পারে। এরপর ১৯৮০ সালে রোলস রয়েস মোটরকে অধিগ্রহণ করে ভিকারস। ১৯৯৮ সালে ভিকারসের কাছ থেকে রোলস রয়েসকে কিনে নেয় ভক্সওয়াগন, আর ২০০২ সালে আবার মালিকানা বদল হয়। এবার রোলস রয়েসকে কিনে নেয় বিএমডাব্লিউ।
১৯৯৮ সালেই রোলস রয়েসকে কিনতে চেয়েছিল বিএমডাব্লিউ। কিন্তু বেশি দর হেঁকে ভক্সওয়াগনই রোলস রয়েস মোটর্সের মালিকানা পেয়ে যায়। এদিকে গাড়ির অন্তর্দহ ইঞ্জিনের ( Internal combustion engine) জন্য তখন বিএমডাব্লিউ-এর ওপরই নির্ভরশীল ছিল রোলস রয়েস।
চুক্তি জটিলতা
চুক্তি অনুযায়ী ঐতিহাসিক ‘ক্রু ফ্যাক্টরী’,’স্পিরিট অফ একসটাসি’ মাসকট এবং রেডিয়েটর গ্রিলের স্বত্ত্ব পেয়ে যায় ভক্সওয়াগন। কিন্তু রোলস রয়েসের ব্রান্ড নেম এবং লোগো তখনো মূল রোলস রয়েস কোম্পানীর হাতে। মূল কোম্পানীটির সাথে কিছু অংশীদারিত্বমূলক কর্মকান্ডের কারণে রোলস রয়েস লোগো এবং ব্রান্ড নেম কিনতে সক্ষম হয় বিএমডাব্লিউ। এক ধরনের অচলাবস্থার উপক্রম হয়। কারণ স্বত্ত্ব, মাসকট এবং রেডিয়েটর গ্রিলের নকশা ভক্সওয়াগনের হাতে থাকলেও ব্রান্ড নেম এবং লোগো ছিল বিএমডাব্লিউ-এর হাতে। ইঞ্জিন সরবরাহের কাজটিও করত বিএমডাব্লিউ। ১২ মাসের নোটিশে ইঞ্জিন সরবরাহ বন্ধ করার সুযোগ ছিল বিএমডাব্লিউ’র। এত অল্প সময়ে রোলস রয়েস গাড়ির জন্য নতুন করে ইঞ্জিনের নকশা তৈরি করা সম্ভব ছিল না। এসময় ভক্সওয়াগন বলে তারা কেবল বেন্টলি ব্র্যান্ডটি (রোলস রয়েসের মালিকানাধীন ব্র্যান্ড) চেয়েছিল যা বাজারে রোলস রয়েসের চেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছিল।
দরকষাকষির পর ভক্সওয়াগন এবং বিএমডাব্লিউ একটি সমঝোতায় আসে। ১৯৯৮ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত বিএমডাব্লিউ ইঞ্জিন সরবরাহ করে, ভক্সওয়াগন রোলস রয়েস নাম এবং লোগো ব্যবহারের অনুমতি পায়। ২০০৩ সালের জানুয়ারি থেকে বিএমডব্লিউ রোলস রয়েস উৎপাদন শুরু করে। অন্যদিকে ‘ক্রু ফ্যাক্টরী’ বেন্টলি মোটরস লিমিটেডের ফ্যাক্টরীতে পরিণত হয়। রোলস রয়েস মোটরর্সের নতুন কারখনা চালু হয় গুডউড-এ।
রোলস রয়েস গাড়ির ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে রয়েছে ফ্যান্টম, গোস্ট এবং রেইথ সিরিজ।
রোলস রয়েস রেইথ সিরিজ
• রোলস রয়েস রেইথ সিরিজের সর্বশেষ গাড়িগুলোয় আছে ৬২৪ হর্সপাওয়ার ক্ষমতার ৬.৬ লিটার ভি-১২ ইঞ্জিন, ফলে মাত্র চার সেকেন্ডেই ঘন্টায় ৬০ মাইল বেগ তুলতে পারে গাড়িটি।
• জিপিএস প্রযুক্তির মাধ্যমে গাড়ির অবস্থান নির্ণয় করে সামনের পথের নির্দেশনা দেয়ার পাশাপাশি রাস্তার ধরন বুঝে স্বয়ংক্রিয়ভাবে গতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারে।
• মৌখিক নির্দেশের মাধ্যমে যোগাযোগ এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থাকে সক্রিয় করা যায়, এ যেন ভৃত্য যে মৌখিক নির্দেশে কাজ করে।
• ভেতরে ছাদের অংশেও পরিবর্তন এসেছে। এটি মোলায়েম এবং এক হাজারের বেশি ফাইবার অপটিক ল্যাম্প রয়েছে। রাতে গাড়িতে চড়ার সময় মনে হবে আপনি আকাশের নিচে বসে তারা দেখছেন।
রোলস রয়েস নিয়ে মজার কয়েকটি তথ্য
• ১০ হর্সপাওয়ারের প্রথম রোলস রয়েস গাড়িটির দাম ছিল ৩৯৫ পাউন্ড, আর এখন সেটির দাম আড়াই লাখ পাউন্ডের বেশি।
• এ পর্যন্ত তৈরি হওয়া রোলস রয়েস গাড়িগুলোর ৬৫ শতাংশই সচল আছে।
• রোলস রয়েসের রেডিয়েটর গ্রিল পুরোপুরি হাতে তৈরি হয়।
• রেডিয়েটরটি তৈরি করতে একজনের পুরো একদিন লেগে যায়, আর সেটি পালিশ করতে লাগে পাঁচ ঘন্টা।
• ১৯৭৪ সাল পর্যন্ত ট্রেডমার্ক হিসেবে রেজিস্ট্রেশন করা ছিল না রোলস রয়েস।
• ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় রাইফেলও তৈরি করেছে কোম্পানীটি
• ফ্যান্টম সিরিজের একটি গাড়ি তৈরি করতে দু’মাস লেগে যায়।
• রোলস রয়েস গাড়ির সামনে হুডের ওপর স্থাপিত মাসকটটি কোন সংঘর্ষের সময় স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভেতরে ঢুকে যায়।
* সূত্র: অনলাইন ঢাকা গাইড। এ ধরনের আরও লেখা দেখতে দেখুন এই লিংকে
২| ২৩ শে জুলাই, ২০১৪ সন্ধ্যা ৭:২৭
ঢাকাবাসী বলেছেন: অনেক কিছু জানলুম। ভাল জিনিস শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ।
©somewhere in net ltd.
১|
২৩ শে জুলাই, ২০১৪ বিকাল ৫:১৫
মদন বলেছেন: ++++++++++++++++