নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

যাযাবরের ভুবনে সবাইকে স্বাগম

পথহারা যাযাবর

পথহারা যাযাবর › বিস্তারিত পোস্টঃ

ইবোলা ভাইরাস: নিজে সতর্ক হউন অন্যকে সতর্ক করুন

১৬ ই আগস্ট, ২০১৪ সন্ধ্যা ৬:০৫

বর্তমান সময়ে সারা বিশ্বের মানুষের জন্য মূর্তমান আতঙ্ক হিসেবে দেখা দিয়েছে একটি ভাইরাস। উৎপত্তিস্থলের সাথে নামানুসারে চিকিৎসাবিজ্ঞানীগণ মরণঘাতি এই ভাইরাসটির নাম দিয়েছেন ‘ইবোলা’। কঙ্গোর প্রত্যন্ত অঞ্চলে ইবোলা নদীর তীরে এ ভাইরাসের সংক্রমণ দেখা দিয়েছিল বলে নদীর নামানুসারে ভাইরাসটির নাম রাখা হয় ইবোলা ভাইরাস। ১৯৭৬ সালে কঙ্গোর জিয়েরা এলাকায় প্রথমবারের মত এ রোগটি ধরা পরে। সেখানে ৩১৮ জন আক্রান্ত হয় যার মধ্যে ২৮০ জন (৮৮%) মারা যায়। পরবর্তীতে সুদানে তা ছড়িয়ে পরে এবং সেখানে ২৮৪ জন আক্রান্ত হয়ে ১৫১ জন মারা যায়। তবে চলতি বছরের মার্চে নতুন করে এই রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।



‘ইবোলা’ কী?

ভাইরাসটির নাম খুব সংক্ষিপ্ত হলেও চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের মতে, এটি প্রতিষেধকবিহীন ছোঁয়াচে জ্বর যার মৃত্যুহার ৯০ শতাংশ পর্যন্ত। ২০১৪ সালের এপ্রিলের শুরুর দিকে জানান দিয়ে ইতিমধ্যেই আফ্রিকার কঙ্গোতে ভাইরাসটি তার তান্ডব চালিয়েছে। পাশের দেশ গিনি, লাইবেরিয়া ও সিয়েরা লিওন ছেড়ে এখন এশিয়া এবং ইউরোপের দিকে ধীরে ধীরে এগোচ্ছে ইবোলা। ইবোলা জ্বর ভাইরাসজনিত, আগে এটি Ebola hemorrhagic fever (EHF) নামে পরিচিত ছিলো। ইবোলা ভাইরাস গোত্রের পাঁচটির মধ্যে তিনটি প্রজাতি মানুষের শরীরে সংক্রামিত হয়ে গুরুতর অসুস্থ করবার ক্ষমতা রাখে। বাকি দুটি মানুষের জন্য তেমন ক্ষতিকর নয়। এদের মধ্যে সবচেয়ে মারাত্মক হচ্ছে জাইরে(Zaire) ইবোলা ভাইরাস।



যেভাবে এই রোগটি ছড়ায়:

ছোয়াচে রোগ মানেই একজনের দেহের স্পর্শ কিংবা দেহ নি:সৃত কোনো পদার্থের মাধ্যমে তা অন্য একজনের দেহে ছড়ায়। ‘ইবোলা’র ভাইরাসটি আক্রান্ত রোগীর শরীরের ঘাম, বমি, ডায়রিয়া প্রভৃতির মাধ্যমে ছড়িয়ে থাকে। এছাড়া আক্রান্ত রোগীর বীর্যের মাধ্যমেও এই রোগ ছড়াতে পারে। এমনকি এই রোগে আক্রান্তের শেষকৃত্যে অংশ নিলেও সুস্থ ব্যক্তির আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। মৃতের শরীরে ইবোলা জীবানু সক্রিয় থাকে।



‘ইবোলা’র লক্ষণ:

আগেই বলেছি এটি একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। প্রথমদিকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ধরনের কিছু লক্ষণের মাধ্যমে এই ভাইরাস জ্বরের শুরু হয়। তারপর ধীরে ধীরে তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা, শরীরের গিঁটে ব্যথ্যা, দুর্বলতা, অরুচি, গলাফোলা ইত্যাদি। রোগের তীব্রতা বৃদ্ধির সাথে সাথে রোগ হলে শরীরের ভেতরে ও বাইরে রক্তপাত হতে পারে। বিশেষ করে নাক, কান এবং চোখ দিয়ে রক্ত পড়তে পারে। বমি কিংবা কাশির সাথে কিংবা মলত্যাগের সময় রক্ত দেখা যেতে পারে। সেই সাথে চামড়ায় গুটি দেখা যেতে পারে। ইবোলা ভাইরাস মানব কোষে প্রবেশ করে খুব দ্রুত সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে থাকে। একসময় এদের চাপে কোষ ফেটে যায়, নতুন ভাইরাসগুলো নতুন নতুন কোষকে আক্রান্ত করে এবং ৬ থেকে ১৬ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে। এই ভাইরাসটি আক্রান্ত ব্যক্তির লিভার, কিডনি, হৃদপিন্ড অকেজো করে দেয়, যার ফলে রোগীর মৃত্যু ঘটে।



এই ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়:

কিছুদিন আগেও এই ভাইরাসটি নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভয় পাওয়ার কিছু ছিল না। কিন্তু বর্তমান সময়ে এসে আফ্রিকা মহাদেশের গন্ডি পেরিয়ে এখন ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক দেশে এই ভাইরাসটির দেখা মিলেছে। বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ ভারতেও ইবোলা ভাইরাস আক্রান্ত সন্দেহে বেশ কিছু রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাই বাংলাদেশেও রয়েছে ঝুঁকির মধ্যে। বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে এ বিষয়ে সতর্ক অবস্থা জারি করা হয়েছে। তবে ভারত কিংবা আক্রান্ত দেশ ভ্রমণে গেলে অবশ্যই সতর্ক অবস্থায় থাকতে হবে। সতর্কতাই হচ্ছে এই রোগ থেকে বাঁচার একমাত্র উপায়। এই ভাইরাস থেকে বাঁচতে ব্যক্তিগতভাবে কিছু সতর্ক ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়। যেমন -



 শরীরের যথাযথ নিরাপত্তা আচ্ছাদন থাকতে হবে (পোষাক, দস্তানা, নিরাপদ চশমা, মাস্ক প্রভৃতি)।

 যাবতীয় সরঞ্জাম যথাযথ ভাবে পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

 ইবোলা রোগের লক্ষণযুক্ত আক্রান্ত ব্যাক্তিকে অন্যদের কাছ থেকে পৃথক অবস্থায় রাখতে হবে। এবং অন্যদের সংস্পর্শে যেন না আসতে পারে সেই দিকে কড়া দৃষ্টি রাখতে হবে।



‘ইবোলা’ জ্বরের চিকিৎসা:

কোনো প্রকার প্রতিষেধক নেই বলেই বিশ্ববাসীর এই ভাইরাস জ্বরটিকে নিয়ে এতো মাথাব্যাথা। তবে চিকিৎসকগণ এই ভাইরাস দ্বারা আক্রান্তরোগীদের বিভিন্নভাবে চিকিৎসা প্রদান করছে। যেমন - ডায়রিয়াজনিত পানিশুন্যতায় স্যালাইনের ব্যবস্থা করা, জ্বর নিয়ন্ত্রণে রাখা, ব্যথার জন্য রোগীকে পেইন কিলার খাওয়ানো, পর্যাপ্ত অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা এবং ব্লাডপ্রেশার মনিটর করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। কারো উপরোক্ত কোনো উপসর্গ দেখা দিলে যত দ্রুত সম্ভব রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। রক্ত পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে যে এটা ম্যালেরিয়া, হ্যাপাটাইটিস, কলেরা বা অন্য কোনো রোগের জীবাণুর কারণে হচ্ছে কিনা।



চিকিৎসার সুফল:

‘ইবোলা’ ভাইরাস আক্রান্ত রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা ৯০% পর্যন্ত। তবে সংক্রমণের হার খুব বেশি এবং খুব দ্রুত সনাক্ত করা গেলে এক্ষেত্রে বাকি ১০% সম্ভাবনা রয়েছে সুস্থ হওয়ার। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ‘ইবোলা’র লক্ষণ অন্য অনেক রোগের সাথে মিলে যাওয়ায় এই রোগটি সনাক্ত করা সম্ভব হয় না। তাই সঠিক রোগ সনাক্ত করতে না পারার কারণে সঠিক চিকিৎসা প্রদান করা সম্ভব হয় না।



এই রোগের উৎপত্তি

সঠিকভাবে এই রোগের উৎপত্তি কোথায় বা কিভাবে, তা জানা না গেলেও ধারনা করা হয়-বাদুরের দেহ অভ্যন্তরে এই রোগের ভাইরাস বংশবিস্তার করে। পরবর্তীতে মানুষ বা অন্য স্তন্যপায়ী প্রাণি আক্রান্ত বাদুর খাওয়ার মাধ্যমে নিজের দেহে ভাইরাসটি বহন শুরু করে।



* পোস্ট সৌজন্য: অনলাইন ঢাকা গাইড

মন্তব্য ০ টি রেটিং +০/-০

মন্তব্য (০) মন্তব্য লিখুন

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.