নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......
আঁধারে একা আমি :
মসজিদের চাবিটা আমার কাছে রাখা আছে ক'দিন ধরে। মোয়াজ্জিন সাহেব অসুস্থ তাই কয়েকদিন ফজরের আজান দেয়া এবং মসজিদ খোলার দায়িত্ব পড়েছে আমার ওপর । খারাপ লাগেনা। ফজরের ওয়াক্তের অনেক আগেই ঘুম ভেঙে যায় আর ঘুম হয়না। আজ তার ব্যতিক্রম হলো না। ঘুম ভেঙে গেলো। পাশ ফিরে খেয়াল করলাম পিঠের দিকটা অনেক ভেজা। ঘামে ভেজা। ঘামে ভিজে যাওয়ার মত গরম কি পড়েছে ? নাহ ! ফুল স্পিডে ফ্যান চললে শেষ রাতে রীতি মতো পাতলা কাঁথা গায়ে দেয়া লাগে। ফ্যান চলে ঝড়ের বেগে , পায়ের কাছে আলুথালু পাতলা কাঁথা।
ভেজা গায়ে অস্বস্তি লাগছে। খেয়াল করলাম, মনের ভেতর কেমন একটা অস্থিরতা। দুঃস্বপ্ন দেখেছি কোন? মনে করার চেষ্টা করলাম। নাহ , ঠিক মনে পড়লো না। বেশি মাথা না ঘামিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম । ফজরের আজান দিতে হবে। দেয়াল ঘড়িতে ফজরের ওয়াক্ত হবো হবো। ক্যালেন্ডারের পাতা উড়ছে ১৪ মার্চ , ২০০২ , বৃহস্পতিবার।
নওদাপাড়া জামে মসজিদ টা জিকে প্রজেক্টের ( গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প) ক্যানেলের ধারে। এই সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোর জেলার ১৩টি থানায় সেচ সুবিধা দেয়া হয়।জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান পানির উৎস পদ্মা নদী।এই পদ্মা নদী দিনে দিনে হয়ে যাচ্ছে মরা খাল।
আব্বা আম্মা ঘুমাচ্ছে। গেটে তালা লাগিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। আমাকে দেখে সদা সতর্ক পোষা কুকুরটা দাঁড়িয়ে গেলো।আমার সাথে কিছুটা হেঁটে লেজ নাড়তে নাড়তে ফিরে গেলো তার জায়গায়। একবার ভাবলাম সাথে এলে ভালোই হতো। আমি যখন বাড়ি থেকে ঢাকায় আসতাম , কুকুরটা ঠিক পেছন পেছন যেত কোচ স্যান্ড কিংবা স্টেশন পর্যন্ত। গাড়ি না ছাড়া পর্যন্ত ঠিক অপেক্ষা করতো।
আমি হেঁটে এসেছি বাড়ির পুকুর পর্যন্ত। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। মাঝে মাঝে নারিকেল গাছের পাতায় ঝিরিঝিরি বাতাস। আমি অন্ধকারে গুটিগুটি পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি। অন্ধকার আমার মোটেও ভালো লাগে না। ঘামে ভেজা পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে আমাকে । পুনরায় অস্থিরতাবোধ করছি। আমি কি ভয় পাচ্ছি? কিন্তু কেন? মসজিদ আর মাত্র ১৫ মিনিটের রাস্তা। ছোট একটা শালবাগান পেরিয়ে উঠে যেতে হবে সোজা ক্যানেলের রাস্তায়।
শালবাগান , বন হয়। গোটা পঞ্চাশেক গাছ সারি সারি লাগানো , ঘন। তার মাঝে সরু রাস্তা। এই রাস্তা হরে চলে যেতে হবে সোজা ক্যানেলের রাস্তায়। শালবাগান পেরিয়ে এসেছি মাত্র। হটাৎ জানি কেমন মনে হলো! আচ্ছা , আমার পেছনে কেউ কি আছে? কেউ কি হাটছে ? ইচ্ছে হলো ফিরে তাকায়। আমার সাদা পাঞ্জাবি ভিজে উঠলো , দাড়িতে বিন্দু বিন্দু ঘাম , কখন জমেছে খেয়াল করিনি।
' আসলামুআলাইকুম ! ' পেছনে তাকানোর আগেই সালামের শব্দ। কোথায় ছিলেন এত্তক্ষন ইনি ? সাদা আলখাল্লা , সাদা পাগড়ি আর সাদা দাঁড়িয়ালা মানুষটাকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ালাম। মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো। প্রচন্ড পিপাসায় গলা শুকিয়ে গেলো।
' আসলামুআলাইকুম ! ' দ্বিতীয়বার সালামে সতবিত ফিরে পেলাম।
'ওয়ালাকুমুসসালাম' ! কোনমতে সালামের উত্তর দিলাম। লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে। দৃষ্টি অপলক। কে ইনি। কোথা থেকে এলেন ? প্রশ্নের পর প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অসার হয়ে আসছে হাত পা।একটু হাঁটলেই ক্যানেলের রাস্তা। আমি ঠায় ধরিয়ে আছি।
'মসজিদের রাস্তা কোনদিকে ?' জানতে চাইলেন। অদ্ভুত এক দৃষ্টি অসার করে রেখেছে আমাকে। যেন এক সম্মোহনী দৃষ্টি।শান্ত। মায়াময়। আমি হুট্ করে চোখ ফেরালাম।
' মসজিদ সামনেই , আসুন আমার সাথে। ' নিজের কণ্ঠ নিজের কাছেই অচেনা মনে হলো। মনে হলো অন্য কারো কণ্ঠ আমার দেহে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
' জ্বী , আপনি যান আমি আসছি। ' মানুষটি স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো।
আমি পা বাড়ালাম। পেছনে আসছে মানুষটি। সামনেই ক্যানেলের রাস্তা , তার বামপাশেই জামে মসজিদ। পেছনে পায়ের শব্দ পাচ্ছি। মানুষটি পেছন পেছন হেটে আসছে। আয়াতুল কুরসি মুখস্ত ছিল। এখন আর মাথায় আছে না। হুট্ করে সব কেন জানি ভুলে গেলাম। সূরা ফাতিহা পড়তে পড়তে এগুচ্ছি। পেছনে পায়ের শব্দ। মসজিদের ঢালে নামতেই পেছন ফিরলাম । থেমে গেল পায়ের শব্দ।পেছনের মানুষটি নেই। হারিয়ে গেলো অদ্ভুত এক আঁধারে।
আর দেরি না করে ছুটে এলাম মসজিদের বারান্দায়। দেয়ালে ঘেমো পিঠ লাগিয়ে হাঁফাতে লাগলাম। আমার পকেটে চাবি। মসজিদের দরজা খুলতে হবে। আজান দিতে হবে। আঁধার কাটিয়ে সে ধ্বনি মিলিয়ে যাবে সুদূরে। ভোর হবে।
মুসল্লি আসতে শুরু করেছে। আজান দিলাম। নামাজ হলো। আমি এশরাক এর নামাজ শেষ করে মসজিদের চাবি দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এরপর রাত থেকে জ্বর আসলো। দুদিন পরে পক্স। আমি বিছানায় শুয়ে থাকি আর ওই রাতের কথা ভাবি।
ডাক্তার , মনোরোগ , ঔষুধ অনেক কিছু গেলো। ধীরে ধীরে সুস্থ হলাম। কিন্তু মাথার মধ্যে সেই ঘটনাকে নিয়ে বড় হচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয় ১৪ মার্চের রাতে ফজরের ওয়াক্তের আগে ওই রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবো। আরো একটি অদ্ভুত আঁধারের অপেক্ষায়। দেখা পাবো একদিন। -- "যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা!"
একজন ভালো সাইক্রিয়াটিস্ট এর সাথে আমার বসা উচিত :
“প্রথমে ভোঁতা ছুরি বিদ্ধ করা হবে সরাসরি বুকে
আটকে থাকবে হৃদপিণ্ডে
শুনেছি ওখানে নাকি হৃদয় থাকে!
এরপর পোঁচ দেয়া হবে গলায়
কণ্ঠনালীতে , ফিনকি দিয়ে ছিটকে বের হবে রক্ত
ভয়ার্ত রক্ত, নীল রক্ত।“
ভাবছি, চমকে দেব নাকি? আমি চুপচাপ বসে আছি সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ আসগরের কক্ষের বাইরে। সিরিয়াল এলেই ঢুকবো। ডাঃ আসগর নামকরা কোন ডাক্তার নন । তবু বেশ রুগী বসে আছে আশে পাশে। আমাদের সমাজে মানসিক ডাক্তারের কাছে যাওয়া বেশ লজ্জার ব্যাপার। মানুষজন এমন ভাবে তাকায় যেন রুগী হয়তো পাগল নয়তো ড্র্যাগ এডিক্টেড।
আমি ভাবছি আমার কবিতার ওই কয়টা লাইন কোন ভাবে ডাক্তার কে শোনাবো। ডাক্তার শুনে নিশ্চয় জানতে চাইবেন এই কবিতার মানে কি । আমি তখন রহস্যময় হাসি দেব যাতে ডাক্তারের কৌতূহল আরো বাড়ে। নাকি বলে দেব এই কবিতা কেন লিখেছিলাম ?
কবিতাটা আমার মাথায় এসেছিল ২০০৭ সালে। জামিম ভাইয়ের দোকান থেকে গোল্ডলিফ সিগারেট কিনে মাঠের পাশের বাঁশঝাড়ে বসে বসে সিগারেট টানছি আর পিকুর জন্য অপেক্ষা করছি। জীবনের প্রথম আব্বার পকেট থেকে ১০ টাকা চুরি করলাম আজ তাও আবার সিগারেট কেনার জন্য। মনের ভেতর কেমন যেন খচ খচ করছে। সিগারেট বিস্বাদ লাগছে। কিন্তু দুপুরের খাওয়ার পর সিগারেট টানতে সবচে ভালো লাগার কথা ! সিগারেট ড্যাম নাকি? না তা হবার কথা না। জামিম ভাই দিনের সিগারেট দিনে বিক্রি করে। আরেকটা সিগারেট পকেটে আছে ওটা ধরিয়ে পরীক্ষা করা যেতে পারে। আমি অপেক্ষা করছি পিকুর জন্য। ওর আসার নাম নেই। দ্বিতীয় সিগারেট টানতে টানতে মাথায় কবিতার লাইন গুলো এলো। মনের ভেতর খুব খারাপ লাগছে। বিবেক কে আজ খুন করলাম , ভোঁতা ছুরি বিদ্ধ করলাম সরাসরি হৃৎপিন্ডে।আব্বার পকেট থেকে চুরি করা ১০ টাকা বিঁধে থাকলো হৃদয়ে। এটাই ছিল প্রথম এবং শেষ চুরি !
ঐযে পিকু আসছে। হেলতে দুলতে একটা গা ছাড়া ভাব। কমান্ডোজ গেমস একটা ক্রিটিক্যাল পজিশনে রেখে এসেছি। একা একা খেলতে ভালো লাগে না।
আচ্ছা এগুলো কি ডাক্তার কে বললো? কি লাভ? তার চেয়ে মুচকি হাসা বেশ ভালো। একটা রহস্য রহস্য ভাব থাকে।
ডাক্তারের সাথে কথোপকথন:
-- 'আপনার কি ধরনের সমস্যা হয় ?' ডাক্তার আসগর সরাসরি আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন।
আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। কারো চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলতে অস্বস্তি লাগে।
-- মাঝে মাঝে মনে হয় আমি আসলে আমি না , অন্য কেউ। চারপাশের পরিচিত পরিবেশটাও অপরিচিত মনে হয়, মনে হয় অচেনা জগৎ , যে জগতে আমি একা । রাতে ঘুম হয়না , অস্থির লাগে। মনে হয় ঘুমালে আর জাগবো না। হাত পা অসার হয়ে আসে। জোর পাই না। ভয় লাগে খুব।
--- আর কি মনে হয় ?
-- পুরাতন কথা মনে হয়। ফেলে আসা দিন , সময় , স্মৃতি । আমার ভয়ানক স্মৃতিকাতরতা আছে।
-- কয়বার এমন হয়েছে ?
-- বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে , কিছুক্ষন পরেই ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু একবার সাতদিন ছিল। ঠিক হয়ে গেলেও রেশ কাটতে সময় লেগে গেছে। আরেক বার হয়েছিল দুই এক দিনের জন্য তারপর ঠিক হয়েছিল।
-- আপনি কি কখনো ভয় পেয়েছিছিলেন ?
--- হ্যা। পেয়েছিলাম। অনেক ভয় পেয়েছিলাম।
-- কিসের ভয় ?
--- জানি না কি ছিল। খুব ভয় পেয়েছিলাম। ঐটা মাঝে মাঝে খুব মনে হয়। কিছু একটা ছিল।
--- কিছু দেখেছিলেন ? কি দেখেছিলেন ?
---- “আমি তখন মসজিদে গিয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম। মুখে দাঁড়ি ছিল। সামনের কাতারে দাঁড়াতাম। আজানও দিয়েছি। তাহাজ্জুদ পড়তাম মাঝে মাঝে। একদিন ফজরের আগে মসজিদে যেতে গিয়ে রাস্তায় ভয় পেয়েছিলাম। একটা সাদা আলখাল্লা আর দাঁড়িওয়ালা আগন্তক দেখেছিলাম।’’
---- “দেখতে কেমন ছিল ? মানে চেহারা ? পরিচিত ? কারো মত কি ?’’
--- “চেহারা শান্ত , মায়াময়। চোখ দুটোতে বেশি মায়া। আমার দিকে যখন তাকিয়ে ছিল যখন চোখ দেখেছি। চেহারা ..... ’’
আমি চুপ হয়ে গেলাম। এই প্রশ্ন কখনো মাথায় আসে নি। চেহারা কি পরিচিত কারো মত? কিংবা সে কি ... থাক। আমি ব্যাপারটা এড়িয়ে গেলাম।
--- “শান্ত মায়াময় চেহারা। এখানে ভয়ের কি ? চেহারা তো ভয়ংকর না। তবে ভয় পেলেন কেন ? ’’
--- “আসলে পরিস্থিতি স্বাভাবিক ছিল না।’’ আমি সেই রাতের অভিজ্ঞতা কথা ডাক্তারের কে বললাম। ডাক্তার কেবল শুনলো। তেমন কোন ভাবান্তর লক্ষ্য করলাম না।
--- “আপনার কি মনে হয়। এই আগন্তুক টা কি ছিল ? জ্বীন বা অন্যকিছু ?’’
--- জানিনা। আমিও জানতে চাই।
--- হতে পারে না ? সেটা পুরোটায় আপনার কল্পনা। যেটা আপনার কাছে সত্যি মনে হচ্ছে।
--- না , কিছু একটা ছিল। আমি দেখেছি। আমার সাথে মসজিদের রাস্তা পর্যন্ত গেছে।
--- মসজিদ পর্যন্তই যাবার কথা ছিল। কারণ আপনি বিশ্বাস করেন মসজিদে ঢুকে গেলে সে আর আপনার সাথে আসবে না। পিছু ছেড়ে দেবে। সে কিন্তু আগেই পিছু ছেড়ে দিতো , যদি আপনি আয়াতুল কুরসী পড়তে পারতেন। কারণ আপনি বিশ্বাস করেন আয়াতুল কুরসী পড়লে সেই আগুন্তক চলে যাবে।
আপনি অনেকদিন ধরেই এমন একটা পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে চেয়েছিলেন। আপনার সেই সময়ের লেবাস , ধ্যান ধারণা , পোশাক , চাল চলন আপনাকে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেয়েছিলো যেটা কিনা একটা আধ্যাত্মিকতার পরিবেশ খুঁজত। মনে প্রাণে চাইতেন এমন আধ্যাত্মিক কিছু আমার সাথে ঘটুক।
ঘটনার দিন রাতে হয়তো আপনি অসুস্থ ছিলেন এবং আপনি দুঃস্বপ্ন দেখেছিলেন। মনের ভেতর ভয় আর অস্থিরতা নিয়ে আপনি ঘর থেকে বের হলেন। মসজিদ খোলা আর আজান দেয়ার একটা পবিত্র এবং মহান দায়িত্ব আপনার উপর পড়েছে। এই ব্যাপারটাও আপনার উপর একটা মনস্তান্তিক প্রভাব ফেলেছে। যেটা আপনার আধ্যাত্মিক জগৎটাকে আরও সুগঠিত করেছিল। আপনার কল্পনা আর বিশ্বাস এতোই দৃঢ় ছিল যে , পরিবেশ আর সার্বিক পরিস্থিতি ওই ঘটনাটাকে আপনার সম্মুখীন করতে বাধ্য হয়েছে। ওই ঘটনা আপনার কল্পনা এবং সেটা একেবারেই সত্যের মত।
--- আপনি কল্পনা বলছেন কিন্তু আমি জানি সেটা কতটা ভয়াবহ বাস্তব। যে সম্মুখীন হয়েছে সে বিশ্বাস করবে। আমি ভয় পেয়েছিলাম এবং অসুস্থ হয়েছিলাম। পরবর্তীতে আমার পক্স হয়েছিল।
-- “ভয় আপনি ঠিকই পেয়েছিলেন। এবং আপনি চেয়েছিলেন তার সাথে আরো কিছুক্ষন কথা হোক। প্রচন্ড ভয়ের কারণে আপনি সেটা পারেন নি। এটা কিন্তু আপনার জন্য ভালোই হয়েছে। বলতে পারেন আপনি বেঁচে গেছেন। তানাহলে আজ পর্যন্ত সে আপনার পিছু ছাড়তো না।যখন ইচ্ছে তখন তার সম্মুখীন হতেন আপনি। এমন কি একটা সময় আপনি তার সাথে কথা বলতেন এবং যেকোন সময় তাকে ডেকে আনতেন। আমার কথা কি আপনি বুঝতে পারছেন?” -ডাক্তার মুচকি হেসে জানতে চাইলেন।
--- “বুঝতে পড়েছি। আপনি আপনার মত যুক্তি দিতে পারেন। সমাধান দিতে পারেন। আমি হলে হয়তো সেটাই করতাম। পৃথিবীতে অনেক অদেখা সত্য আছে। যতক্ষণ না দেখবেন ততক্ষন মিথ্যা মনে হবে। অদেখা জগত একদিন হয়তো আপনাকেও স্বাগতম জানাবে। ’’
-- 'আচ্ছা , আপনার জীবনে কোন ভয়ংকর অধ্যায় আছে ?' ডাক্তার আমার চোখের দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলেন।
ডাক্তার সরাসরি আমার চোখের দিকে আছেন। কারণ কি ? উনি চোখের দিকে তাকিয়ে কোন কিছু বোঝার চেষ্টা করছেন। সত্য মিথ্যা কিংবা যা আমি বলতে চাচ্ছি না। না , আমি কিছু গোপন করবো না। আমি তো বলতেই এসেছি।
-- ' হ্যা , আছে।' আমি আবার চোখ নামিয়ে ফেললাম। মাথায় নামিয়ে নিলাম একটু।
-- ' বলুন। মাথা নিচু করবেন না। আমি খেয়াল করছি বারবার আপনি এই কাজটা করছেন। নিজেকে চেনার চেষ্টা করুন। নিজেকে জানুন। '
আমি খানিকটা নড়ে বসলাম। ঠোঁট টিপে একটু হাসলাম।
--- ' ইন্টারমিডিয়েটে আমি ভর্তি হই ২০০০ সালে। প্রথমবার প্রিপারেশন ভালো ছিলো না তাই পরীক্ষা দেয়নি। দ্বিতীয় বার পড়াশোনা করিনি , পাশ করতে পারিনি। পড়াশোনা বাদ দিয়েছিলাম। দুই বছর পর বিজনেস ম্যানেজমেন্ট (কারিগরি) থেকে এইচএসসি করি। রেজাল্ট বেশ ভালো ছিল।'
--- এটাই আপনার জীবনের ভয়ংকর অধ্যায়? ডাক্তার আসগর কে খানিকটা কৌতূহলী মনে হলো।
--- ' হ্যা ! ' গলাটা কেঁপে উঠলো। -- “ওই কয়টা বছর খুব খারাপ কেটেছে। নিজেকে আটকিয়ে রাখতাম। ঘরের মধ্যে। আব্বা আম্মার মুখের দিকে তাকাতে পারতাম না।তারা কোন সময় বকাবকি করেননি এইসব নিয়ে। নিজের ভেতর অপরাধবোধ বাড়তে থাকতো। একসময় আমার ঘরটায় ছিল আমার জগৎ। নামাজ পড়তে যেতাম আর বাড়ির পিছনের আমগাছতলায় ক্রিকেট খেলাম। শুধু এই দুইটাই ভালো লাগতো। বাড়ি থেকে বের হতাম না। আমার আরো একটা জগৎ ছিল। সেটা হচ্ছে বই। আমার মনে হয় নামাজ , খেলা আর বই না থাকলে আমার বেঁচে থাকা কঠিন হত সেই সময়। এরপর হুট করে নামাজ বাদ হয়ে গেল। এরপর বাড়ির বাইরে চলাচল শুরু হল। কয়েক বছর বাদে আবার পড়াশোনা শুরু করলাম। পাশ করলাম। এরপর ভার্সিটি। তারপর চাকুরী।"
--- এটা আপনার ঘুরে দাঁড়ানোর অধ্যায়। এটাকে ভয়ঙ্কর বলছেন কেন?
--- আমার মনে হয় , ইন্টারমিডিয়েট লেভেলটা ভালো হলে আজ আমার জীবন অন্যরকম হতে পারতো।
--- তবে হয়তো আপনি এমন কিছু পেতেন না , যেগুলো আপনার জীবনে খুবই দরকার ছিল। যেগুলো আপনার আগামীর রসদ হবে।
আমি ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে হেসে বললাম , 'হয়তো। '
--- আপনার এই অবস্থা থেকে ফিরে আসার পেছনে কারো কি অবদান ছিল।
--- 'আমার আব্বা আম্মা, পরিবার। আরেকজন আছে স্পেশাল একজন। সে না থাকলে হয়তো এভাবে ফেরা হতো না। আমার জীবন সম্ভব ২০০০ সালেই আটকে থাকতো।'
ডাক্তার একটু হেসে জানতে চাইলেন , -- কে উনি ?
আমি বললাম , ভবিষ্যতে আমি তাকে বিয়ে করবো।
--- আপনি আসলে যে সমস্যা নিয়ে এসেছেন সেটা জটিল কিছু না। এটা নিয়ে বেশি চিন্তা করার কিছু নেই। কিছু অপরাধবোধ , হতাশা সেই সাথে বিষণ্নতা এইগুলো আপনাকে মানসিক সমস্যায় ফেলছে।আপনি অতি আবেগপ্রবন এবং আপনার কল্পনা শক্তি ভালো।হুট্ করে নামাজ ছেড়ে দেয়া এবং পড়াশোনার বিষয় টা নিয়ে আপনি অপরাধবোধ ভোগেন। সেই সাথে বাড়ে হতাশা আর বিষণ্নতা। এই সমস্যা থেকে উত্তরণের দায়িত্ব আপনার , আপনি চাইলেই পারবেন। আমি শুধুমাত্র কিছু ওষুধ দিতে পারি , তবে কেন জানি মনে হচ্ছে লাগবে না। আপনার কল্পনাশক্তি আর আবেগ আপনাকে সাহায্য করবে।
আপনি প্রচুর বই পড়েছেন এবং হয়তো কিছু কিছু ক্যারেক্টর প্লে করার চেষ্টা করেন। কল্পনা শক্তি যাদের প্রবল তাদের মধ্যে এই প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়।
আপনি বলেছিলেন , আপনি প্রচন্ড স্মৃতিকাতর। এটা তো আশীর্বাদ মনে হয় আমার কাছে। যার ভালো স্মৃতি থাকে সেই স্মৃতি নিয়ে কাতরতা থাকবে। আপনি কি আপনার ভালো কোন স্মৃতির কথা বলবেন ?
-- আমার একটা খুব সুন্দর স্মৃতি মনে পরে গেল। সেই সাথে ভিজে উঠলো চোখ। গলাটা ধরে আসলো । অস্ফুট কণ্ঠে বললাম , "না। ''
-- “আর হ্যাঁ , আরেকটা কথা। সেই রাতের আগুন্তক বিষয়ে একটা প্রশ্ন কিন্তু আপনি এড়িয়ে গেছেন। ওই আগন্তুকের চেহারা কার মত ? শান্ত চেহারা। মায়াময় চোখ। ’’
আমি উত্তর দেই না। শুধু নোনতা জলে চোখ ভিজে ওঠে। গাল বেয়ে নেমে আসতে চায়। আমি জামার হাতায় চোখ মুছি।
--ডাক্তার আসগর প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিয়ে বললেন , '' আপনার চোখেও কিন্তু অনেক মায়া। ''
আমি নেমে এলাম রাস্তায়। কুটিকুটি করে ছিড়ে ফেললাম প্রেসক্রিপশন। কেন জানি মনে হচ্ছে লাগবে না। ডাক্তার কে আমি অনেক কথায় বলিনি। কবিতাটা শোনানো হয়নি।
যে অদেখা জগৎ আমি সাথী করে ঘুরে বেড়ায় জানি, একদিন সাড়া দেবে।
আমি কি আসলেই ক্যারেক্টার প্লে করে যাচ্ছি , যে ক্যারেক্টারে কখনো আমি এক কর্পোরেট যুবক যার উদ্যানে আর ঘাস নেই , কংক্রিটে বাসা বাঁধছে কর্পোরেট স্বপ্ন। কখনো জলাভাবে জরাগ্রস্থ কোন খ্যাপাটে কবি যার মেধা আর মননের নিদারুন অপচয় হয়েছে দিস্তা দিস্তা কাগজে।অথবা ভীষণ স্মৃতিকাতর আর বিষাদগ্রস্ত এক যুবক যার গলা আটকে আসে ফেলে আসা কোন নিস্তব্ধ দুপুরের জন্য। নাকি উদ্ধত ভোঁতা ছুরি হাতে উন্মাদ খুনি যে নিজের বিবেককে কে টুকরো টুকরো করার জন্য অপেক্ষা করছে। কিংবা রোদ ঝলমলে দুপুরে ভাসতে ভাসতে হাসতে হাসতে আনমনে বলে ফেলে - ' এতো চমৎকার জীবন আমার। ' কোনটা আমি ? কি আমি ?
“কোথায় খুঁজিবো আমারে
বসন্তের পাতায় , নক্ষত্র পাড়ে
উর্দ্ধ আকাশ
অতল সমুদ্র , অনন্ত জলে
আমিতো রয়েছি আমাতেই বুঝি
তবু কেন হায় আমারেই খুঁজি !”
কবি জীবনানন্দ দাশ কি আত্মহত্যা করেছিলেন ? :
''ওগো পাখি, ওগো নদী,
এতোকাল ধরে দেখেছ আমারে- মোরে চিনে থাকো যদি,
আমারে হারায়ে তোমাদের বুকে ব্যথা যদি জাগে ভাই,-
যেন আমি এক দুখ-জাগানিয়া, -বেদনা জাগাতে চাই!
পাই নাই কিছু, ঝরা ফসলের বিদায়ের গান তাই
গেয়ে যাই আমি,- মরণেরে ঘিরে এ মোর সপ্তপদী।।''
১৪ই অক্টোবর, ১৯৫৪। গুনগুন করতে করতে কোলকাতা শহরের বালিগঞ্জের ব্যস্ত রাস্তা ধরে কবি হেঁটে যাচ্ছেন। এই ব্যস্ত লোকারণ্য শহরে কবি সম্ভবত একা। তিনি একা বলেই পাখি , নদী , প্রকৃতিকে সাথী করেন। কথা বলেন , গল্প করেন। নদীর স্রোত ঢেউ খেলে , কবিও সেই ঢেউয়ে ভাসেন। নির্জন দুপুরে পাখির কলতান কবিকে ঘুম পাড়ায়। এই নিঃসঙ্গ জাগতিকতায় এরাই কবির আপনজন , কাছের মানুষ।
রাস্তার পাশের ডাব বিক্রেতার কাছে থমকে দাঁড়ালেন কবি। ডাব কেনা কি খুব জরুরি ? এই অক্টোবরে ডাবের পিপাসায় কবি কি তৃষিত ? নাকি অন্য কিছু ?
দুই হাতে ডাব নিয়ে কবি রাস্তা ধরলেন। ঠিক করলেন ট্রাম লাইন পার হবেন।
''ওগো পাখি, ওগো নদী,
গেয়ে যাই আমি,- মরণেরে ঘিরে এ মোর সপ্তপদী।।''
ট্রামের ক্যাচারে আটকে যায় কবির শরীর , ভেঙ্গে যায় ঊরু ,পাঁজরের হাড়। দলিত শরীর নিয়ে কবি পড়ে থাকেন কোলকাতার রাস্তায়। পরজন্মে শঙখচিল , হাঁস হয়ে কলমীর গন্ধভরা জলে ভাসার তীব্র আকাঙ্খায়, কবি এই জাগতিক নিঃসহায়তাকে বিদায় জানান -- ২২শে অক্টোবর, ১৯৫৪। কোলকাতা ইতিহাস বলে , গত একশ বছরে ট্রাম দুর্ঘটনায় কোলকাতায় মৃত্যুর সংখ্যা মাত্র একটি এবং তিনি হচ্ছেন কবি জীবনানন্দ দাশ।
আমরা যাকে 'রূপসী বাংলার কবি ' বলে আমার কাছে তিনি 'বিষণ্ণতার কবি'। আমি বিশ্বাস করি তিনি আত্মহত্যা করেছিলেন। তাঁর কল্পনার জগৎ সম্ভবত আরো সুন্দর ছিল। জাগতিক নিঃসঙ্গতা তার বেঁচে থাকার ইচ্ছাকে শূন্য করে দিয়েছিল। তিনি কি যেতে চেয়েছিলেন অন্য কোনো জগতে , তিনি কি অন্যকিছু কল্পনা করতেন ?
আমি জানি না। তবে কল্পনা , বিষন্নতা , নির্জনতা , একাকিত্ব আমাকে তাড়া করে। খুব। রাতে ঘুম হয় না, একা লাগে , ভয় হয় । এই গুলো কারো সাথে শেয়ার করতে ইচ্ছে হয় না আর। এই বিষয়ে সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ আসগরের গিয়েছিলাম একবার। তিনি কয়েকটা ওষুধ দিয়েছিলেন। দুয়েকদিন খেয়েই ছেড়ে দিয়েছি।তবে ডাক্তার কে আমি অনেক কথা বলতে চেয়েছিলাম। শেষ পর্যন্ত বলা হয়ে ওঠেনি। ডাক্তার জানেনা আমি কবিতা লিখি। যে কবিতা গুলো বিষাদমাখা। ডাক্তার কে আমি একটা কবিতার কয়েক লাইন শোনাতে চেয়েছিলাম। শোনাতে আর ইচ্ছা হয়নি। ডাক্তার আমার একটা সুন্দর স্মৃতির কথা শুনতে চেয়েছিলেন। আমি বলিনি। কিছু কথা আমি আটকে রাখবো কাউকে আর বলবো না।
ইদানিং আমার রাস্তা পার হতে ভয় হয়। যদিও আমি ফুটওভার ব্রীজ ব্যবহার করি। ভয় হয় এ কারণে , মাঝে মাঝে আমি আনমনে গুনগুন করি। ছাপার অক্ষরের কবিতা গুলো মাথায় ঠাঁই নিয়েছে , দখল করে নিচ্ছে ক্রমশ। আমি যখন আনমনে হাঁটি তখন আমার পাশে কেউ থাকে না। মনে হয় ইরেজার দিয়ে আশেপাশের সব কিছু মুছে দেয়া হয়েছে। এটাই সম্ভবত প্রকৃত জগৎ । মানুষ আজন্ম একা , আশেপাশের মানুষ গুলো শুধু মায়া -- বিভ্রম।
আচ্ছা , 'বিষণ্ণতার কবি' আমাকে কি সম্মোহন করছে ? শুনেছি বিষণ্ণ মানুষ গুলো অন্য মানুষের বিষণ্নতাকে ভালোবাসে , রপ্ত করে।
নাকি তাঁর আমি ক্যারেক্টার প্লে করতে চাচ্ছি? জীবনানন্দ দাশের 'নির্জনতা ' , 'বিষণ্নতা ' আমাকে কি আড়ষ্ট করে রাখছে ?
ডাক্তারের ' ক্যারেক্টার প্লে ' এর ব্যাখ্যাটা আপনাদের কেমন লেগেছে ?। আমার কিন্তু মাথায় ঢুকে গেছে। পরিচত কিছু ক্যারেক্টার নিয়ে নিজেকে যাচাইয়ের চেষ্টা করি। এই নিয়ে ভাবছিও খুব।
যেমন ধরুন হুমায়ূন আহমেদের ' আমি এবং কয়েকটা প্রজাপতি ' আমার বহু পঠিত একটা বই। অনেক প্রিয় বলতে পারেন। সুযোগ পেলেই পড়ি। লাল , কালো আর সাদা মলাটের একটা বই। পড়েছেন নিশ্চয় ?
এটা কিন্তু প্রথম সারিতে রাখার মত একটা বই। কিন্তু আপনারা তো হিমু হিমু করতে করতে পাগল। বইয়ের নাম শুনে কি প্রেম প্রেম ভাব মনে হচ্ছে ?
গল্পের প্রধান চরিত্র ফখরুদ্দিন চৌধুরী। একদিন বর্ষায় বইয়ের পাতায় চোখ বুলাতে বুলাতে হঠাৎ মেয়ে কন্ঠ শুনতে পান। গল্পরের শুরু সেখান থেকেই। একসময় তারা কথা বলতো। আমিও কিন্তু একরাতে মেয়ে কণ্ঠ শুনেছিলাম। ডাক্তার কে সেদিন সেই গল্প বলিনি। আসলে আমার জীবনে কোন গল্প নাই। ফখরুদ্দিন চৌধুরীর জীবনে যেটা আছে।
একবার জানালার ওপাশ থেকে মেয়ে কণ্ঠ নাম ধরে ডেকে উঠলো। প্রথমে চমকে উঠলাম। বেল গাছতলার ঘুটঘুটে অন্ধকারে কেউ কি দাঁড়িয়ে আছে? দ্বিতীয় বার ডাকার সাথে সাথে জানলার পাল্লা খুলে দিলাম। না কেউ নেই , থাকার কোথাও না। কারণ পরিচিত হলে তো অবশ্যই থাকতো। যে ছিল সে সম্ভবত অপরিচিত , অচেনা কেউ - অদেখা । তবে নিশ্চয় সে আমাকে চেনে , তানাহলে নাম জানবে কিভাবে। আচমকা এক শীতল বাতাস বয়ে গেলো গা জুড়ে , ঘোর অন্ধকারে অদেখাকে দেখার চেষ্টা করলাম।
না আমার সাথে কিন্তু ফখরুদ্দিন চৌধুরীর ঘটনার কোন মিল নেই।
ফখরুদ্দিন দুটো খুন করে ঠান্ডা মাথায়। অবশ্য সেটা ফিজিক্যালি খুন নয় । সাইকোলজিক্যালি খুন এবং সেটা ছিল তার এক্সপেরিমেন্টেরই একটা অংশ।
ফখরুদ্দিন চৌধুরী আর ‘আমি এবং কয়েকটি প্রজাপতি’ বই নিয়ে আমি খুব ভাবি। ফখরুদ্দিন চৌধুরী আমাকে খুব আকৃষ্ট করলেও, আমি কিন্তু ফখরুদ্দিন চৌধুরীর 'ক্যারেক্টার প্লে ' করছি না। ফখরুদ্দিন চৌধুরী একজন সিজোফ্রেনিক ।
চলবে ....
লেখাটা শেষ করার খুব ইচ্ছা ছিল। খুব আতঙ্কের ভেতর আছি।
১৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আমি বিষাদগ্রস্ত , প্রিয় ভাই। তবে আধুনিক হলেও হতে পারি কিছুটা।
লেখা চলুক ! -- অনুপ্রেরণায় ভালোবাসা।
২| ১৯ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৫৪
ভুয়া মফিজ বলেছেন: লেখাটা ভালো হয়েছে।
পিকুর ঘটনাটা ২/১ লাইনে শেষ করতে পারতেন। পাঠকের ডিরেইলড হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে। শুধু বিবেকের দংশনের ব্যাপারটা বলেই শেষ করতে পারতেন। কবি জীবনানন্দ দাস আর হুমায়ুন আহমেদের প্রসঙ্গটাও তেমনি, পাঠক বিভ্রান্তিতে পড়বে আপনি আসলে কি বলতে চাইছেন, সেটা ভেবে। এগুলোকে সংক্ষেপ করে আপনার লেখার সাথে মিলিয়ে দিলেই এই লেখায় আপনার মুন্সিয়ানা পুরোপুরি ফুটে উঠবে।
একান্তই আমার ভাবনা.....মনে যা এলো, বলে ফেললাম।
১৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:০৯
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
পরামর্শ ভালো লেগেছে। একসময় ঘষামাজা করবো। লেখাটা এগিয়ে নেয়ার ইচ্ছা আছে।
অনেক ধন্যবাদ। ভালো থাকবেন।
৩| ১৯ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:২১
নেওয়াজ আলি বলেছেন: খুব সুন্দর হয়েছে
১৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:১০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাই আপনাকে।
ভালো থাকবেন।
৪| ১৯ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ২:৪৯
ঠাকুরমাহমুদ বলেছেন:
স্বপ্নবাজ সৌরভ ভাই,
মানুষের স্বপ্ন যতো বড় সে নিজে ততো বড়। মানুষকে বড় করে তার স্বপ্ন। আশাকরি আপনি আমার কথা ধরতে পেরেছেন। আমার পক্ষ থেকে আপনার জন্য সামান্য উপহার।
১৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:০৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
অনেক ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ঠাকুর মাহমুদ স্যার ।
মন্তব্য বুঝে নিলাম। চমৎকার ছবির জন্য অনেক ধন্যবাদ। দুইহাত প্রসারিত করে স্বপ্ন ধরার একটা ছবি আছে আমার।
ভালো থাকবেন।
৫| ১৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:১৯
মালিহা তাবাস্সুম বলেছেন: যে না থাকলে স্বাভাবিক জীবনে ফেরা যেত না লিখেছেন তার জন্য হলেও জীবনের জয়গান গাওয়া উচিত। একান্ত নিজস্ব মতামত, তবে বেশ ভালো লিখেন আপনি ।
১৯ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৪:০৪
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
চমৎকার মতামতের জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু। তার জন্যে কিছু একটা লিখতে চেয়েছিলাম।
ব্লগে স্বাগতম। শুভকামনা রইলো।
লেখা ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো।
৬| ২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ১:২৬
নিভৃতা বলেছেন: এত বড় লেখা। কিন্তু পড়তে পড়তে যেন নিমেষে শেষ হয়ে গেলো। দারুণ লাগছে। পরবর্তী পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ৯:৫৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
অপেক্ষায় থাকতে হবে অনেকদিন। লেখা আপাতত বন্ধ আছে কিন্তু লেখাটা আমি শেষ করতে চাই। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো। গল্পটা আমার নিজের। কোনো মিথ্যা নেই। ভালো লেগেছে জেনে ভালো লাগলো নিভৃতা আপু।
৭| ২০ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৩:২৪
শের শায়রী বলেছেন: অতীত আর বর্তমান পাশাপাশি রেখে গল্প লিখতে চেয়েছেন। ভালো প্রচেষ্ঠা ভাই। পরের পর্বের অপেক্ষায়।
২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১০:০২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
কিছু ভয়ঙ্কর সময় পার করেছি প্রিয় ভাই। মাঝে মাঝে ভাই , এই যে আমি কর্পোরেট অফিসে বসি , অফিস করি। ফাঁকতালে ব্লগিং করি। এটা হয়তো সম্ভব ছিল না একসময়।
তারপরেআমি স্মৃতিকাতরতা নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসা প্রয়োজন। খুব খারাপ লাগে মাঝে মাঝে।
লেখা আপাতত বন্ধ আছে কিন্তু লেখাটা আমি শেষ করতে চাই।
৮| ২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:১৬
মিরোরডডল বলেছেন: ইয়াং ম্যান জীবনতো মাত্র শুরু । এখনি কিসের হতাশা আর বিষাদ !
কোন চিকিৎসা না , অল ইউ নীড ইজ সেলফ মোটিভেশন ।
এই লেখাটাতেই দেখুন আগের কতকিছুই বর্তমানে কাটিয়ে উঠেছেন ।
যেটুকু বাঁধা ও টানাপড়েন , সামনে সেটাও কাটিয়ে উঠবেন ।
লাইফ ইজ বিউটিফুল ! অমাবস্যা দেখে হতাশ হলে হবেনা ।
সামনেই আসবে পূর্ণিমা । চাঁদের আলোয় প্লাবন হবে ।
ইউ হ্যাভ টু এক্সপ্লোর ।
২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:২৫
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
চুল দাড়িতে পাক ধরেছে।
গলার তেতো স্বাদটা অনুভূত হচ্ছে খুব।
আমার গল্প অনেক বাকি আছে। মসজিদের ওই ঘটনার কথা মনে পরে খুব। কত বছর হয়ে গেলো। ফজর পড়তে মসজিদে যায়না। অনেকবছর পর আজান দিলাম , সেটা আমার নবজাতকের কানে।
সামনেই আসবে পূর্ণিমা । চাঁদের আলোয় প্লাবন হবে ।
বাকি গল্পটা একদিন লিখে ফেলবো।
-- “আর হ্যাঁ , আরেকটা কথা। সেই রাতের আগুন্তক বিষয়ে একটা প্রশ্ন কিন্তু আপনি এড়িয়ে গেছেন। ওই আগন্তুকের চেহারা কার মত ? শান্ত চেহারা। মায়াময় চোখ। ’’
আমি উত্তর দেই না। শুধু নোনতা জলে চোখ ভিজে ওঠে। গাল বেয়ে নেমে আসতে চায়। আমি জামার হাতায় চোখ মুছি।
--ডাক্তার আসগর প্রেসক্রিপশন এগিয়ে দিয়ে বললেন , '' আপনার চোখেও কিন্তু অনেক মায়া। ''
ডাক্তারের কথাটা মাথা থেকে যায়না।
৯| ২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৪৮
মিরোরডডল বলেছেন: পুরো বিষয়টা নট সিউর বাট হ্যালুসিনেশন হতে পারে ।
আর ওই যে শান্ত মায়াময় চোখ , ওটা মনে হয়েছে সেলফ রিফ্লেকশন ।
ডাক্তারও মনে হয় সেরকমি বলতে চেয়েছেন ।
পরের লেখার অপেক্ষায় থাকলাম ।
২১ শে মার্চ, ২০২০ সকাল ১১:৫৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আমি ওই ব্যাপারটা নিয়ে অনেক ভাবি।মাঝে মাঝে মনে হয় লোকটা কি আমিই !!
বেশ কিছু অদ্ভুত ব্যাপার ঘটেছিলো আমার সাথে। বাকি টা ধীর ধীরে বলবো।
১০| ২১ শে মার্চ, ২০২০ রাত ৯:২৫
আহমেদ জী এস বলেছেন: স্বপ্নবাজ সৌরভ,
বেশ চমৎকার সিরামিক ইটের গাঁথুনি গল্পটাতে। শুধু গল্পই বা বলি কেন! কিছুটা হয়তো নিজ জীবনের গল্পও । উপরের একটি প্রতিমন্তব্যে তেমন কথাই ভাসছিলো।
আপনার নিকের ছবিতেও মায়াময় চোখ। বিষাদগ্রস্থতার ছাঁপ, ভালো করে দেখলেই বোঝা যায়। ফাঁকা দৃষ্টি- যেন কিছু দেখছেনা এমন। সম্বিত রহিত।
যাক, ছবি দিয়ে তো আর সবসময় মানুষকে সবটা মাপা যায়না, কিছুটা আঁচ করা যায় হয়তো। সে অর্থে আপনাকে " লোনলী" মনে হচ্ছে। আপনার অনেক লেখাতেও সেই নির্জনতার - একাকীত্বের স্বাদ। এটা হতেই পারে - হাযারো মানুষের ভিড়ে প্রতিটি মানুষই মনে হয় - একাকী। তারপরেও মানুষই তো সামাজিক জীব হয়ে ওঠে, জীবনকে রাঙায় ছন্দে আনন্দে। একাকী থেকেও মিশে যায় হাযারো মানুষের ভিড়ে। সেটাই তার "মনুষ্য জনম"।
ব্যক্তি স্বপ্নবাজকে এমন করে তুলে ধরার জন্যে ক্ষমাপ্রার্থী। তবে তিনি যেন সবখানেই- কি জীবনে , কি লেখাতে, সৌরভ ছড়িয়ে যেতে পারেন তেমন শুভকামনা থেকেই মন্তব্যটি।
ভালো থাকুন আর প্রানে ভরপুর.................
৩০ শে মার্চ, ২০২০ বিকাল ৩:২৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: সঠিকভাবেই তুলে ধরেছেন। জীবনে ভীষণ আক্ষেপ আছে। মাঝে মাঝে ভীষণ একা লাগে। গভীররাতে চোখ ভিজে ওঠে মাঝে মাঝে ।
চমৎকার মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ স্যার।
©somewhere in net ltd.
১| ১৯ শে মার্চ, ২০২০ দুপুর ১:৫৪
রাজীব নুর বলেছেন: আপনি মোটেও বিষাদগ্রস্ত নন।
আপনি একজন আধুনিক মানুষ।
চলুক---