নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......
রোদের তেজ ক্রমশ বাড়ছে। বাড়ছে গরম। পুরো পরিবেশ আবদ্ধ যেন তপ্ত গোলোকে। বৃষ্টি নেই অনেক দিন। দেখা নেই কালো মেঘের। পুকুরের পানিটুকু চুষে নিচ্ছে জ্বলজ্বলে সূর্য। ছড়িয়ে দিচ্ছে সাদা রোদ। আচ্ছা সূর্য কি নিচে নেমে আসছে দিনে দিনে?
আজ বৃহস্পতিবার। হাফ স্কুল। ভেড়ামারা বোর্ড সরকারি প্রাথমিক বিদ্যায়লয়ের গেট পেরিয়ে দাঁড়িয়ে আছি লাল দক্ষিণ কেবিনে ছায়ায়। বড় ক্লাসের দু এক জন লুকিয়ে সিগারেট ফুঁকছে। আমি না দেখার ভান করি। পিঠে ঝোলানো স্কুল ব্যাগ টা গরম হয়ে গেছে। পিঠটা জবজবে ভেজা , লেপ্টে আছে গায়ের সাথে। রেললাইনের ধাতব আর পাথর ভাপ ছড়াচ্ছে আরো বেশি। সূর্যের তেজ দ্বিগুন হয়ে প্রতিফলিত হচ্ছে , শরীরে বিঁধছে গরম হাওয়া।
আমি গুটি গুটি পা চালায় ,পার হচ্ছি এবড়োথেবড়ো নুড়ি পাথর। কেউ কেউ দু হাত প্রসারিত করে ভারসাম্য বজায় রেখে হেটে যাচ্ছে রেললাইন ধরে। কাল শুক্রবার। ছুটি। তাই আনন্দ হয়তো একটু বেশীই। আমি অবশ্য দুয়েকদিন চেষ্টা করে ছিলাম , দু এক পা হেঁটে নেমে পড়তে হয়েছে। আসলে তাল সামলাতে পারিনা। কেউ কেউ রেললাইনের উপর দশ পয়সা ফেলে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। কিছুক্ষন পরেই ডাউন পড়বে ছুটে আসবে হয়তো আন্তঃনগর।
অদূরে কৃষ্ণচূড়া গাছে গনগনে আগুন। রেললাইনের উপর থেকেই দেখা যায়। গাছটা রয়েছে শহীদমিনারে পাশে। ভেড়ামারা হাইস্কুলের শহীদ মিনার। আর একটু বড় হলেই আমি ওই স্কুলে ভর্তি হবো। স্কুলের পাশে পুকুর , ওই পুকুরের পানিতেও নিশ্চয় কৃষচূড়া আগুন লাগাচ্ছে , লাল কমলা আগুনের প্রতিচ্ছবি। আচ্ছা পানিতে কি আগুন লাগে কখনো ?
পানিতে আগুন লাগে কিনা এই মুহূর্তে না জানতে পারলেও বুকের ভেতর ঠান্ডা পানির তৃষ্ণা অনুভব করলাম। আমাদের চল্লিশটা নারিকেল গাছ , সেই গাছের টলটলে ঠান্ডা মিষ্টি পানি তৃষ্ণা বাড়িয়ে দিলো দ্বিগুন। আমাদের জাম গাছটার পাড় ঘেঁষে ছোট্ট পুকুরের ঠান্ডা পানিতে গা ভেজাতে ইচ্ছে হলো খুব। পুকুরে তেলাপিয়া বাচ্চা ছেড়েছে , ছোট ছোট পুঁটির আনাগোনা। ইচ্ছে হলেই ছিপ হাতে বসে পরা যায়। আমি ছোট তাই ছিপটাও ছোট , আমার বড়শিতে শুধু ছোট মাছ ঠোকরায়। যখন বড় হবো , তখন বড়শি ফেলবো ঠিক পুকুরের মাঝখানে,ধরবো বড় বড় রুই আর মৃগেল। গত বছরের ছাড়া মাছ গুলো নিশ্চয় অনেক বড় হয়েছে।
রেল লাইন পার হয়ে নেমে গেলাম পিচের রাস্তায়। ভেড়ামারা - কুষ্টিয়ার সড়ক। রাস্তাটা পার হতে হয় খুব সাবধানে।
''রা-শা.... গাঙ শালিকের বাসা।''-- পেছনে কোলাহল শুনতে পাই। এটা নিত্যদিনের ঘটনা। ক্লাসের রাশা নামের মেয়েটাকে ক্লাসের ছেলেরা ভেঙাচ্ছে। খুব হাসাহাসি হচ্ছে। আমাকে কেউ ভেঙ্গায় না ! কেউ কিছু বলার আগেই ছলছল করে উঠে চোখ। নিজের নামের সাথে মিলিয়ে ছন্দ খুঁজি ,বিদঘুটে একটা অন্ত্যমিল মাথায় আসতেই দ্রুত পা চালাই । ছেলেদের মাথায় অন্ত্যমিলটা ঢুকলে বিপদ আছে।
সজনী সিনেমা হলের সামনে আমার সেজো চাচা দাঁড়িয়ে আছে। আমি ঠিক মত বাড়ি ফিরছি কিনা দেখার জন্য হলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকেন। আমার সেজো চাচা সজনী সিনেমা হলের ম্যানেজার। - "কিরে কিছু খাবি ?" 'কিছুটা' হল মিরিন্ডা। সেজো চাচা মাঝে মাঝে মিরিন্ডা খাওয়াতো। কাঁচের ছোট বোতলের মিরিন্ডা। সাত টাকা নিত।
- "না। থাক। আজ তাড়াতাড়ি বাড়ি যাবো।" - '' যা যা.... ছাতা আনিস নি কেন ?।'' সেজো চাচা আর আটকান না।
বাড়ি ফিরছি। কাল শুক্রবার। ছুটি। ছুটি, ফেরা এই শব্দ গুলোতে কেমন যেন আনচান করে মন। কোথায় যেন প্রশান্তি। যখন নাকি বড় হব , অফিস হবে আমার , তখনও কি এমন হবে ? আরো একটু বড় হলেই ভেড়ামারা হাইস্কুলে পড়বো আমি। সেই স্কুলের হেডমাস্টার আমার আব্বা। তখন হাফ প্যান্টের বদলে ফুলপ্যান্ট হবে। বদলে যাবে স্কুলে যাওয়ার রাস্তা। লাল দক্ষিণ কেবিনের ছায়ায় দাঁড়ানো হবে না আর। দুই হাত প্রসারিত করে ছেলেমেয়ের দল রেললাইন ধরে গাঙচিল হয়ে উড়বে কি ? আর আমার সেই মালাইওয়াল ! টাটকা , সরেস গাছে ধরা মালাই। সেই মালাইওয়ালা কি আমার জন্য অপেক্ষা করবে কি বাড়ির সামনে ? ইমরান খান লেখা ব্যাটটার কি হবে? ছোট হয়ে যাবে নিশ্চয়! স্কুল ছুটির পরে সেজো চাচা নিশ্চয় আর দাঁড়িয়ে থাকবেন না সজনী সিনেমা হলের সামনে।
অদ্ভুত সব ভাবনায় অনুভূতি গুলো কালো মেঘ হয়ে দানা বাঁধে মনের কোনো একখানে। ছায়া ফেলে। ঝাপসা হচ্ছে চোখ। কিন্তু আকাশে কালো মেঘের আনাগোনা নেই, হলুদ রোদ তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। বৃষ্টির কোনো দেখা নেই।
দশতলা অফিসের শার্সিতে দাঁড়ালেই হলুদ রোদ ঝলকানি দেয় চোখে। চোখ ধাঁধানো হলুদ রোদে খুঁজে ফিরি কবেকার হারিয়ে যাওয়া মালাইয়ালা, পুঁটিমাছ ধরা বড়শি কিংবা ইমরান খান লেখা ক্রিকেট ব্যাট। খুব ইচ্ছে হয় দুহাত প্রসারিত করে রেললাইন ধরে হেঁটে যায় দূর থেকে দূরে। ভাবতে ভাবতে ফিরে আসি ডেস্কে। অনেক কাজ বাকি আছে। আমার সামনে নিরেট অনুভূতিহীন কম্পিউটার। চোখ রাখি হলুদ ডেস্কটপ ব্যাকগ্রউন্ডে, কেমন জানি ঝাপসা লাগে । নিজেকে ইদানিং কাঠঠোকরা মনে হয়। কাজে নিমগ্ন কর্পোরেট কাঠঠোকরা।
কয়েক ঘন্টা পরে ছুটি হবে। বাসায় ফিরবো। বড় হয়েছি অনেক আগে - তবুও "ছুটি" ,"ফেরা "এই শব্দ গুলোতে আজও আনচান করে মন। ড্রয়ারে রাখা নোট বুকটা বের করি। বিক্ষিপ্ত অনুভূতি গুলো সংকলিত করি গুটি গুটি অক্ষরে ।
হয়তো কর্পোরেট কাঠঠোকরারো নিজস্ব একটা জগত আছে ।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৪১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
কর্পোরেট হলুদ ডেস্কটপ
১.
এখন মধ্যাহ্ন
বিস্তৃত হলুদ রোদ
শুকনো পাতায় বাতাসের মড়মড় শব্দ
আর সাথে লুকোচুরি খেলে গাছের ছায়া।
কোথা থেকে হঠাৎ ডেকে উঠে শালিক
কাঠবিড়ালি লাফিয়ে চলে
এ ডাল থেকে ও ডালে
কাজে নিমগ্ন কাঠঠোকরা মাথা তুলে তাকায় এদিক ওদিক ।
২.
আচমকা ঝাপসা হয়ে ওঠে
হলুদ ডেস্কটপে আটকে থাকা কর্পোরেট চোখ
ভাবনা গুলো আর ভাবনা থাকে না
শব্দের পিঠে শব্দ গুলো প্যাডেল হাঁকায় স্মৃতির বাইসাইকেল
খুঁজতে থাকে হারিয়ে যাওয়া পথের অলিগলি ।
৩.
অনেকক্ষণ যাবৎ উপরের দুটো অংশের
সন্নিবেশ করতে চাচ্ছি
কর্পোরেট এক্সেল শিটে গুটি কয়েক যোগ ভাগ ছাড়া
যুৎসই কোনো উপাত্ত পেলাম না খুঁজে ।
হলুদ রোদ আর আমার হলুদ ডেস্কটপ
দুটোই কেন জানি বিষণ্ন ,
হলদে পাতার মত।
৪.
অতঃপর কাজে নিমগ্ন কাঠঠোকরা মাথা তুলে তাকায় এদিক ওদিক !
---------------------------
কর্পোরেট ডেস্ক থেকে
স্বপ্নবাজ সৌরভ
২| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ ভোর ৪:৫৬
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: পড়তে ভালো লেগেছে। ধন্যবাদ।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৪৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ফিরতে সবাই ই ইচ্ছে হয় যে!
ধন্যবাদ ভাই।
৩| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ ভোর ৫:০০
ইফতেখার ভূইয়া বলেছেন: বাই দ্যা ওয়ে, নামটা খুবই অদ্ভুত "ভেড়ামারা" কিন্তু চেনা। কখনো ভেবে দেখিনি কিন্তু ঐখানে কি কোন বিখ্যাত "ভেড়া" মারা হয়েছিলো বা মরে পড়েছিলো? জানতে ইচ্ছে হচ্ছে, নামের হেতুটা। গুগল করে স্কুলের ছবি দেখা হলো। বেশ সুন্দর লেগেছে স্কুলটা। ধন্যবাদ।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৫৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: এই এলাকায় প্রচুর ভেড়া চড়তো। রেল ক্রসিং করার সময় অনেক গুলো ভেড়া ট্রেনে কেটে মারা গিয়েছিল। তাই নামকরণ হয়েছে।
প্রাইমারী স্কুলের পড়ার সময় ছুটি হলে এই দক্ষিণ কেবিনের ছায়া দাঁড়াতাম। কেবিনে এখন ধ্বংসাবশেষ কিন্তু স্মৃতি তরতাজা।
৪| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৭:২২
খায়রুল আহসান বলেছেন: এ ধরণের নস্টালজিয়া জাগানো লেখা পড়তে আমার ভালো লাগে। কারণ, এগুলো পড়ার সময় আমার চোখে জ্বলজ্বলে কিছু স্মৃতি ভাসে, আপন যাপিত জীবনের। রেলওয়ের এই লাল দালানগুলো, স্টেশনের নামের সাথে উত্তর ও দক্ষিণ লেখা সিগন্যালম্যানদের 'কেবিন'গুলো, স্টেশনের 'রিফ্রেশমেন্ট রুম' তথা 'ভোজনালয়' এর কক্ষগুলো আমার চোখে এখনও মাঝে মাঝে ভেসে ওঠে। আমিও কাজিনদের সাথে দেহের ভারসাম্য রক্ষার্থে দু'হাত দু'দিকে প্রসারিত করে রেলের লাইনের উপর দিয়ে পতন ব্যতীত হেঁটে যাবার প্রতিযোগিতা করতাম। গ্রীষ্মের দাবদাহে কংক্রিটের এবং রেলের লোহার পাতের তাপ অনুভব করতাম। স্টেশন মাস্টারের কক্ষে ঢুকে 'টরে টক্কা টরে টক্কা' শব্দ করে মোর্স-কোডে পাঠানো বার্তা বিনিময় প্রত্যক্ষ করতাম। আপনার বয়েসীরা হয়তো এই প্রক্রিয়ার সাথে পরিচিত নন, কারণ ততদিনে রেলবিভাগ থেকে মোর্স-কোড বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আমার বয়েসীরা এসব কথা ঠিকই স্মরণ করতে পারবেন। আমিও ট্রেন আসার ঠিক আগে আগে লাইনের উপর পয়সা রেখে পরখ করতাম, ট্রেন চলে যাবার পর চাকার ঘর্ষণে পয়সার ধাতুটা চুম্বকে পরিণত হয়েছে কিনা, কারণ তখন কেউ কেউ সেরকমই বলতো!
কিশোর বেলায় রেডিওতে শোনা 'অনুরোধের আসর' গানের অনুষ্ঠানের ঘোষিকা যখন অনুরোধ প্রেরণকারী শ্রোতাদের নাম-ঠিকানা বলতেন, তখন প্রায় সব সময় দুটো নামের আধিক্য থাকতো-- "ভেড়ামারা, কুষ্টিয়া থেকে..." এবং "শান্তাহার, নওগাঁ থেকে..."। ভেড়ামারা নামটা তখন থেকেই আমার মনে গেথে ছিল, যদিও 'হার্ডিন্জ ব্রীজ' এর কারণেও নামটা ঘন ঘন উচ্চারিত হতো। কর্মজীবনে পার্ব্তীপুর থেকে খুলনা বেশ কয়েকবার ভ্রমণ করতে হয়েছিল, তখনও ট্রেন অতিক্রম কয়ার সময় আমি 'হার্ডিন্জ ব্রীজ' এর উভয় পাড়ের স্টেশনদুটোর দিকে আমি তাকিয়ে থাকতাম।
দেখলেন তো, আপনার একটা পোস্ট আমার জীবনের কতগুলো স্মৃতিকে উস্কে দিল?
নস্টালজিক এই পোস্টে প্লাস রেখে গেলাম।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:১২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমার দাদা বেশ কিছুদিন ষ্টেশনমাস্টার ছিলেন। সেই সময় স্টেশন মাস্টারের সন্মান ছিল খুব। এখন সন্মানীদের সন্মান নেই। আমাদের বাড়ি থেকে স্টেশন দূরে না। আমার নানা অবসর নেয়া পর্যন্ত ষ্টেশনমাস্টারের চাকুরী করে গেছেন। সিরাজগঞ্জ, লাহেরী মোহনপুর, মিল্কভিটা। সেসব আমার জন্মের বহু আগের কথা।
আমার মেজনানা রেলের বড় ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন। যমুনা সেতুতে রেললাইন সংযোগ স্থাপনা এবং আনুষঙ্গিক বিষয়ে দ্বায়িত্ব দেয়া হয়েছিল। কিন্তু বিশেষ কারণে তিনি দ্বায়িত্ব নেন নি।
টরে টক্কা টরে টক্কা টরে-- শ্রদ্বেয় ব্লগার ঠাকুর, আহমেদ জিএস স্যারকে নিয়ে দারুণ একটা পোষ্ট দিয়েছিলেন কয়েকবছর আগে। প্রযুক্তি রিদম গুলো কেড়ে নিয়েছে।
হার্ডিঞ্জ ব্রীজ পাকশী রেলওয়ে ষ্টেশন আমার প্রাণের অংশ। আমার নানা বাড়ি। পাকশী পাড় হয়ে সাহাপুরে। ফেরি দিয়ে পদ্মা পাড় হলেই হয়ে যায়। কিন্তু মাঝে মধ্যে শুধু আমার জন্যেই ট্রেনে উঠতেন। ব্রীজ আর স্টেশন দেখাবেন বলে।
অনুরোধের আসরে নিজ এলাকার নাম শুনলে অদ্ভুত অনুভুতি হতো ।
আপনার মন্তব্য নিয়ে এর আগেও বলেছি। পোষ্টে অন্যরকম মাত্রা এনে দেয়।
৭ নম্বর মন্তব্যটা আপনার জন্য। আমি বললে আরেকটা পোষ্ট লেখা যাবে এবং একদিন লিখবো।
পোষ্টে প্লাস পেলাম। অনুপ্রেরণা নয় স্নেহ হিসেবে নিলাম।
৫| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ৯:০৭
জুন বলেছেন: রেলওয়ে স্টেশনের সাথে আমার শৈশব ওতোপ্রোতো ভাবে জড়িত। ব্লগার খায়রুল আহসান সাহেবের মত আমার কানেও বেজে উঠলো টরে টক্কা, স্টেশন মাস্টার কাকুর পাশে দাঁড়িয়ে কম্পিউটারের স্ক্রিনে ট্রেনের আসা যাওয়া দেখা। বাতিল দাঁড়িয়ে থাকা গার্ড রুমের বারান্দায় পা ঝুলিয়ে মানুষের গাছ থেকে কুড়িয়ে আনা শিউলি ফুলের মালা গাথা,রেললাইন ধরে হাটতে হাটতে বহুদূর যাওয়া আর আসা। আর ঐ লাল লাল কেবিন যার একটিতে ছিল ক্যান্টিন।
উফফ স্বপ্নবাজ কত কথা মনে পরে গেল আপনার লেখায়। অনেক অনেক ভালো লাগা রইলো মনের মধ্যে মধ্য দুপুরে পুটি মাছের টুস করে উকি দিয়ে যাওয়া লেখায়।
+
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:২০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: জাঁকালো শীত পড়েছে। রেল লাইনের ধারে কালাইয়ের রুটির দোকানে ভীড়। স্টেশন সরগরম - সেদ্ধডিম , ঝাল মুড়ি। অপেক্ষা আর ব্যস্ততা। জবুথুবু যাত্রীরা চায়ের দোকানে , অনবরত টুংটাং শব্দে চা চিনি আর দুধের মিশেল। কিছুক্ষন পরে হাজির হবে আন্তঃনগর। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ফের ছোট শুরু করবে। ট্রেন দীর্ঘশ্বাস ফেলে। আপনারা হয়তো খেয়াল করেননি। স্টেশন থেকে ছেড়ে যাওয়ার সময় নিঃশ্বাস ফেলার মত একটা শব্দ হয়। আমি অনেক খেয়াল করেছি। সামান্য একটু সময়ের অবসর , আবার ছুটে চলা। দীর্ঘশ্বাস বৈকি। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ভাবি খুব। স্টেশনে কোলাহল বাড়ছে। সবারই সামান্য অবসর। তারপর আবার ছুটে চলা। গৌন্তব্যে পৌঁছনো। আমি চুপচাপ বসে আছি। কিছুক্ষন পর আমিও উঠে দাঁড়াবো। আন্তঃনগরের মত দীর্ঘশ্বাস ফেলে আবার পুউউ ঝিক ঝিক.....
প্রিয়মুখ গুলো ফেলে কিংবা কে জানে ভুলে যাওয়া মুখ গুলো আচমকা স্মৃতির জানালায় আবছা আবছা আলোয়। কোনো এক আন্তঃনগর ট্রেন ছুটে চলতে চলতে এই লাইন থেকে ওই লাইনে মোড় নেয় , ঠিক যেন গল্পের মত। জীবনের গল্পের মত।
ছুটে চলা ট্রেন এক লাইন থেকে আরেক লাইনে গিয়ে নিরন্তর জীবনের গল্প বলে। সবার ই আসলে গল্প থাকে, দীর্ঘশ্বাস থাকে ! মানুষের জীবন ঠিক ছুটে চলা কোন ট্রেনের মত। ফেলে আসা শহর ছেড়ে , সুদূরের কোন আনন্দ নগরের সন্ধানে। ছুটেই চলা শুধু।
জুন আপা, কোন শীতে ভেড়ামারা রেলওয়ে ষ্টেশনে বসে ভেবেছিলাম। এটা আপনার জন্য।
৬| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১০:৩৭
লিংকন১১৫ বলেছেন: ভালো লাগলো
আমিও অনেক মিস করি , কুষ্টিয়া কুমারখালি কে,
যখনি কুমারখালি ট্রেন ষ্টেশন দিয়ে যাই বুকটা কেমন জানি হা হা কার করে
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:২৯
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: রেলওয়ে ষ্টেশন মায়ার জায়গা। এখানে বসে ট্রেন আসা যাওয়া দেখতেও ভালো লাগে।
৭| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ সকাল ১১:২৭
সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই বলেছেন:
'ফেরা' - সুন্দর সাহিত্যগুণ সম্পন্ন একটা লেখা।
খায়রুল আহসান স্যারের কমেন্টগুলো নিয়ে একটা 'ব্লগার খায়রুল আহসান কমেন্টসমগ্র' নামে একটা বইয়ের মলাট চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৩৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ সোনাবীজ ভাই ।
খায়রুল আহসান স্যারের মন্তব্য নিয়ে আপনার আপনার মত আমিও ভাবছি। আমার পোষ্টে উনার পোষ্ট গুলো সংকলিত করলে দুই তিনটা পোষ্ট হয়ে যাবে।
৮| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১২:৫৩
মনিরা সুলতানা বলেছেন: ফেরা !!!
সুন্দর শিরোনাম, আচ্ছা চাইলেই কী ফেরা যায় ? ফিরলেই কি সব আগের মত ?
আমার ট্রেন স্টেশন রেললাইন এসব নিয়ে কোন স্মৃতি নেই, আমার স্মৃতি লঞ্চ ঘাট অল্প স্বল্প বাস জীপ আর প্রচুর দৌড়, দৌড় দৌড় দৌড় এক ছুটে বন বাদাড়ের আর ঝোপ ঝাড়ের সীমানা পেরুনো।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৪১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: কিছুই আগের মত নেই। দক্ষিণ কেবিন ধ্বংসাবশেষ। সজনী হল ভেঙ্গে মার্কেট। সেজচাচাও বেঁচে নেই। এখন আর কেউ মিরিন্ডা খাওয়াই না।
পুকুরে পানি নেই, মাছ নেই, পুঁটিমাছ ধরা ছিপ হারিয়ে গেছে, অভিমানী মালাইওয়াল আর আসে না।
তবুও ফেরা। কর্পোরেট অফিসের দশতলার জানালায় হলুদ আলো ঝলকানি দেয় চোখে।
৯| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৩৮
মোগল সম্রাট বলেছেন: দারুন এক পোষ্ট। পোষ্টে ++
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৪২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে মোগল সম্রাট।
ভালো থাকবেন। আপনার দেয়া 'ভালো লাগা'টা সযতনে রেখেদিলাম।
১০| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ১:৫৩
শেরজা তপন বলেছেন: এপাড়ে ভেড়ামারা ও পাশে পাকশী। আমার ছোট বেলার স্মৃতির সাথে জড়িয়ে আছে জায়গা দুটোর নাম।
সেখানে চমৎকার একটা সেকেলে গন্ধ এখনো পাওয়া যায়!
দারুন নস্টালজিক লেখা। এমন দিন সবার জীবনেই আসে।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ দুপুর ২:৪৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: মায়া অদ্ভুত মায়া।
পাকশী ষ্টেশনটা আমার কাছে অন্যরকম লাগে। ঠিক বলেছেন , সেকেলে গন্ধ পাওয়া যায়। পাকশী কোয়ার্টার, পূরনো সব গাছ, পানির ট্যাংকি, পাঁচ শহীদের মাজার, রুপপুরের দিকে আসতে ছোট্ট একটা ট্রানেল।
কত বছর যাইনি মনে নেই। এখন কি অবস্থা জানিনা।
১১| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:০৬
সাবিনা বলেছেন: সুন্দর লিখেছেন
১৭ ই জুলাই, ২০২২ বিকাল ৩:১২
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ধন্যবাদ সাবিনা আপা।
স্মৃতিচারণ সবাই অনুভব করে।
১২| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৯:১৪
রাজীব নুর বলেছেন: ফেরা নামে হুমায়ূন আহমেদ এর একটা উপন্যাস আছে। পড়েছেন নিশ্চয়ই?
সহজ সরল ভাবে লিখে গেছেন। লেখায় কোনো ভান বা ভনিতা নেই। গুড।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:৪৫
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ফেরা আর এই বসন্তে , মাঝে মাঝে গুলিয়ে ফেলি।
আমিন ডাক্তার ছোট খাটো মানুষ। কাহিনীর শেষে গ্রামে ফিরে আসে। বিকালে সরকারবাড়ির সামনে দাঁড়ায়। ছোটখাটো মানুষ কিন্তু বিকালের সূর্যের আলোয় তার দীর্ঘ ছায়া পড়ে সরকার বাড়িতে।
আমার কোন লেখায় রাফ বা ড্রাফট করা হয় না। সরাসরি লিখে ফেলি। এই কারণে হয়তো ভনিতার সুযোগ কম থাকে।
আপনার এই পর্যবেক্ষণটা আমাকে অনুপ্রাণিত করে।
১৩| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১০:৩৩
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া লেখা।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:৪৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ।
আমাদের ব্যাচের ২০ বছরপূর্তিতে স্মরণীকায় ছাপা হয়েছিল।
১৪| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:০১
রূপক বিধৌত সাধু বলেছেন: অসাধারণ বর্ণনা! হৃদয় ছুঁয়ে গেছে।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:৪৯
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেক ধন্যবাদ রুপক সাধু।
স্মৃতিচারণ অনুভব করেছেন।
১৫| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:২২
মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
চমৎকার লেখা।
ভেড়ামারা গিয়েছিলাম আমি একবার অনেক আগে।
১৭ ই জুলাই, ২০২২ রাত ১১:৪৬
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: রাসেল আহমেদ এখন তুরস্কে থাকে!
©somewhere in net ltd.
১| ১৭ ই জুলাই, ২০২২ রাত ৩:৪২
কলাবাগান১ বলেছেন: "কর্পোরেট কাঠঠোকরা"