নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......
সে বছরটা যেন চৈত্রে আটকে গেলো। চৈত্রের দহন তীব্র থেকে তীব্রতর হল। ভীষণ অস্থির সময়। রাত বিরেতে পুলিশের বাঁশি , সাইরেন , দৌঁড়ে পালানোর পদ শব্দ , গুলির শব্দ আর সকালবেলা এখানে ওখানে , গলির মুখে , ডাস্টবিনের পাশে পরে থাকা লাশ , গুলিবিদ্ধ লাশ , যারা পালাতে পারেনি তাদের লাশ, গোঙরানির শব্দ , আর্তনাদ । কতশত মায়ের বুক খালি হলো , কত কত লাশ বেওয়ারিশ হিসেবে চুল্লিতে জ্বললো সেই খোঁজ নিশ্চয় চৈত্রের বিকেল রাখিনি। প্রশ্ন গুলো বেওয়ারিশ লাশের মত হয়তো পুড়েছে !
সেই বয়সে যাদের মায়ের আঁচলে , প্রেমিকা নামক মমতাময়ীর ওড়নায় মুখ মোছার কথা... তারা ছুটে বেড়ালো দিকবিদিক। পেছনে ধেয়ে আসা বুলেট থেকে অনেকেই নিস্তার পেলো না। বনবীথিতলে পড়ে রইলো বনের অন্তরালে।
সেই বছর চৈত্র এসেছিলো কিন্তু বসন্ত আসেনি। পুরো সময়টা মোড়ানো ছিল "চৈত্রের কাফনে"।
আমি নকশাল আন্দোলনের কথা বলছি।
যে আন্দোলনে হাজার হাজার তাজা মেধাবী ছাত্র ছাত্রী অকালে ঝরে গিয়েছিলো। কেনইবা তারা এতো দ্রুত এই আন্দোলনের সাথে যুক্ত হয়েছিল সেটা আমার কাছে ধোঁয়াশার মত লাগে, অবাক লাগে । ছেলে হারা মায়ের চিৎকার , ছাত্রদের জীবন নিয়ে ছুতে বেড়ানো ,পুলিশের সাইরেন আর গুলির শব্দ ! দৃশ্যপট মনে হলেই বুকের ভেতর চিনচিন করে ।
কোলকাতার ব্যান্ড মহিনের ঘোড়াগুলি চৈত্রের কাফন শিরোনামে একটি গান প্রকাশ করে ১৯৭৯ সালে। প্রেক্ষাপট ছিল নকশালে প্রাণ হারানো তাজা প্রাণগুলো। মহীনের ঘোড়াগুলির গৌতম চট্টোপাধ্যায় নিজেও এই নকশাল আন্দোলনের সাথে সরাসরি জড়িত ছিলেন। জেল খেটেছিলেন।
এই গানের শুরুতে এবং শেষে ফিউরাল (Funeral) সংগীতের সুর বাজানো হয়েছে। কেউ মারা গেলে চার্চের শোভসভায় এই সুর বাজানো হয়। এটা শোকের সুর। পুরো গানটার সাথে এই ফিউরালের সংযোজনটা বুকের শূন্যতা আরো বাড়িয়ে দেয়। মূলতঃ এটাই শিল্পের শৈল্পিকতা কিংবা নিদারুন সার্থকতা।
গান- চৈত্রের কাফন
কথা- রঞ্জন ঘোষাল
সুর- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়
রেকর্ডিং
প্রথম প্রকাশ- ১৯৭৯
অ্যালবাম- দৃশ্যমান মহীনের ঘোড়াগুলি
শিল্পী- মহীনের ঘোড়াগুলি (তপেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়, রঞ্জন ঘোষাল)
যে গেছে বনমাঝে চৈত্র বিকেলে
যে গেছে ছায়াপ্রাণ বনবীথিতলে,
যে গেছে ছায়াপ্রাণ বনবীথিতলে।
বন জানে অভিমানে গেছে সে অবহেলে
যে গেছে অশ্রুময়, বন-অন্তরালে
যে গেছে অশ্রুময়, বন-অন্তরালে।
আকাশে কেঁপেছে বাঁশিসুর
আঁচলে উড়েছে ময়ূর
চলে যাই, বলেছিলে চলে যাই
মহুল তরুর বাহু ছুঁয়ে
যে গেছে অশ্রুময়, বন-অন্তরালে
সে বুঝি শুয়ে আছে চৈত্রের হলুদ বিকেলে
সেখানে চূর্ণ ফুল ঝরে তার আঁচলে
সেখানে চূর্ণফুল ঝরে তার কাফনে।
ভিডিও: চৈত্রের কাফন গানের অফিসিয়াল কোন ভিডিও নেই, লিরিক ভিডিও পাওয়া যায়। ২০১৫ সালের নকশাল সিনেমার কিছু অংশের সাথে গান যুক্ত করে আড়াই মিনিটের একটা ভিডিও পাওয়া যায়। মূল গানটা ৪ মিনিটের।
আমি নকশাল আন্দোলনের পক্ষে বিপক্ষে বলবোনা। সেই ব্যাপারে কিছু বলার জন্য আমি পোষ্ট লিখছি না। কিশোর বয়সে খুব আগ্রহ ছিল। তবে জানার জন্য পর্যাপ্ত তথ্য আমার কাছে ছিল না। পেপার পত্রিকা , আর্টিকেল পরে সে সময় হালকা ধারণা নিতে নিয়েছিলাম।
বছর দুয়েক আগে নকশাল আর চারু মজুমদার নিয়ে গুগলে সার্চ দিলাম। সামু ব্লগার রাইসুল জুহালা এর লেখায় চোখ আটকে গেলো। উনি এখন কি নিকে ব্লগিং করেন জানিনা। আদৌ করেন কিনা সেটাও জানি না। পোস্টটা উনাকে উৎসর্গ করলাম। তার সেই পোস্ট এবং প্রতিউত্তর গুলো পড়লে সেসময়কার ব্লগ এবং ব্লগিং সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়।
পোষ্টটা আমি চারু মজুমদারের মৃত্যু দিয়েই শেষ করতে চাই। একজন বিদ্রোহীকে চিনে ছিলাম সেই কৈশোরে। যেই কৈশোরে দুরন্ত ছেলে গুলো বাঁচার আশায় ছুটে বেরিয়েছিল। চারু মজুমদারের সাথে সেই কৈশোরো হয়তো 'চৈত্রের কাফনে' মোড়ানো।
চারু মজুমদার গ্রেফতার হন ১৯৭২-এর ১৬ জুলাই । তার এক সহযোগী তার আত্মগোপনকারী বাসার ঠিকানা পুলিশ কে দেয়। কলকাতার এন্টালী রোডের এক বাড়িতে তিনি আত্মগোপন করেছিলেন। ২৮ জুলাই পুলিশ হেফাজতে হৃদরোগে তার মৃত্যু হয়েছে বলে ভারত সরকার প্রচার করে । নকশালপন্থী রাজনীতিবিদ ছাড়াও অনেকে মনে করেন, তাঁকে জেলে হত্যা করা হয়েছিল। সশস্ত্র পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর প্রহরায় চারু মজুমদারের মরদেহ কেওড়াতলা মহাশ্মশানে দাহ করা হ্য় , অগোচরে।
ছবিঃ ইন্টারনেট
০৭ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৫৯
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আমার ভীষণ প্রিয়। গানের প্রেক্ষাপট জানলে শুনতে আরো ভালো লাগে। Funeral মিউজিক নিশ্চয় নাড়া দিয়েছে ?
আসলে উপলব্ধি আর প্রেক্ষাপট মিলিয়ে কিছু লিখতে চেয়েছিলাম। মন্তব্যে ধন্যবাদ।
২| ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:০২
ককচক বলেছেন: নকশাল আন্দোলন সম্পর্কে আমার ধারণা নেই। আপনার লেখাটা পড়ে আগ্রহ তৈরি হয়েছে।
০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:০৯
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
এখন জানার অনেক সুযোগ আছে। ব্লগার রাইসুল জুহালা লিংক দেখতে পারেন। প্রাথমিক ধারণা পাবেন আশাকরি।
অনেক ধন্যবাদ আপনাকে।
৩| ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:৩৮
নূর মোহাম্মদ নূরু বলেছেন:
এবছর গ্রীষ্ম এসেছে
বর্ষা আসে নি!
০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৩:৪৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ঠিক ! কিন্তু ফাল্গুন আর চৈত্র মিলেই বসন্তকাল!
৪| ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:১০
মিরোরডডল বলেছেন:
সুনীল গাঙ্গুলির পূর্ব পশ্চিম উপন্যাসটা পড়বে, যদি আগে না পড়া হয়ে থাকে ।
তরুণ প্রজন্ম কেমন করে নকশাল আন্দোলনে জড়িয়ে গিয়েছিলো সেইসময়ের কাহিনী ।
মহীনের ঘোড়াগুলির শুরুর এ্যালবাম শোনা হয়নি যেটা ইভান শেয়ার করলো ।
কিন্তু পরবর্তী কিছু গান খুব ভালো লাগে ।
আবার বছর পরে কুড়ি এ্যালবামের
ভেবে দেখেছো কী ?
তারারাও যত আলোকবর্ষ দূরে
তারো দূরে
তুমি আর আমি যাই ক্রমে সরে সরে
ঝরা সময়ের গান এ্যালবামের
ঘাস ফুল আর ধানের গন্ধ
স্নিগ্ধ যা কিছু দুহাত ভরে
আজ ফুসফুস খোঁজে পোড়া ডিজেলের
আজন্ম আশ্বাস
তোমায় দিলাম আজ
০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:২৫
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
নকশাল নিয়ে সবচেয়ে ভালো ধারণা পেয়েছিলাম ওখান থেকেই। পূর্ব পশ্চিম আমার কৈশোরে পড়া বই।
মহীনের ঘোড়াগুলি আমার প্রিয় ব্যান্ড। মহীনের ঘোড়াগুলি আর দেশের শিরোনামহীনের গানগুলো আমি সবচেয়ে বেশি শুনেছি।
পৃথিবীটা নাকি আর তোমায় দিলাম টপ টেনে সবসময়ই রাখি। আপনি চৈত্রের কাফন শুনতে পারেন। ফেসবুক ভিডিও এর লিঙ্ক দিয়েছি। ব্লগে ভিডিও এড করা যায় কি জানি না। জানলে ভিডিও যুক্ত করতাম।
ধন্যবাদ মিররডল। প্রতিদিন এই ব্লগে কিছু না কিছু লিখতে ইচ্ছা করে। আজ প্রিয় একটা গান নিয়ে লিখলাম যার প্রেক্ষাপট আমাকে খুব ভাবায়।
৫| ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:১৩
মিরোরডডল বলেছেন:
এ্যালবামের নামটা হবে
আবার বছর কুড়ি পরে
০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:২৪
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ঠিক আছে মিরোরডল। ধন্যবাদ,
আমার ভালোবাসার ব্যান্ডের গান শেয়ার করা জন্য।
৬| ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৩৬
মিরোরডডল বলেছেন:
চৈত্রের কাফন শুনেছি লিংক থেকে ।
তাইতো বললাম আগে শোনা হয়নি ।
ইভান সামনে আরও এমন সুন্দর গানের ইতিহাস নিয়ে লিখবে ।
০৭ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৪৪
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
এই গানের Funeral মিউজিক টা অন্য মাত্রা দিয়েছে।
হমম। অনেক গান নিয়েই লিখতে ইচ্ছা হয়। চেষ্টা থাকবে। ফিডব্যাক পেলে আগ্রহ বাড়ে। অনেক ধন্যবাদ মিরোরডল।
৭| ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৭:৫৮
জুল ভার্ন বলেছেন: চমৎকার লিখেছেন।
২০০৮ সনে আমি চারু মজুমদারের বাড়িতে গিয়েছিলাম..... যা নিয়ে এই ব্লগেই একটা পোস্ট লিখেছিলাম "দেখে এলাম চারু মজুমদারের বাড়ি...." শিরোনামে।
০৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:২০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ব্লগার মনজুরুল হক এর দুর্দান্ত পোষ্টে আনার মন্তব্য আছে। এমন ব্লগার আর লেখেন না। উনি কোথায় আছেন? স্ট্যালিন কে নিয়েও পোষ্ট পড়েছিলাম।
৮| ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৩৭
কামাল৮০ বলেছেন: চারু মজুমদারের কিছু লেখা আমি পড়েছিলাম।৬৯/৭০ এর দিকে।পরে আজিজুল হকের লেখা পড়ে তাদের সম্পর্কে অনেক জেনেছি।৭২ থেকে ৭৬ পর্যন্ত নিয়মিত অনীক পড়তাম।সেখানেও অনেক তথ্য পেতাম।৭৭এর পর বামপন্থি আন্দোলেন থেকে সম্পুর বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই।সমর্থন থাকবে আজীবন।
০৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৩৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: আমি সেইদিনকার ছেলে। কৈশোরের নকশাল নিয়ে পড়েছিলাম হালকা। আগ্রহ বাড়লো , হাতে পেলাম সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ব পশ্চিম। ইন্টারনেট ছিল না। তেমন কোন বই সহজলভ্য ছিলো না।
মহীনের ঘোড়াগুলির এই গানটা অনেকবার শুনেছি। কিন্তু প্রেক্ষাপট জেনেছি অনেক পড়ে। গানটা খুব ভাবায়।তাই কি মনে করে লিখলাম। বামফ্রন্ট আদর্শ ধরে রেখেছেন আপনি। শ্রদ্ধা জানাই।
৯| ১০ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:১৭
ৎঁৎঁৎঁ বলেছেন: এই পোস্টে ভালোলাগা জানাতে লগইন করতে হলে। গানটা খুবই প্রিয়, এই গানের সাথে নকশাল মুভমেন্টের সম্পর্ক আছে জানতাম, কিন্তু এত পরিস্কারভাবে জানা ছিল না। পোস্টের জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
১০ ই আগস্ট, ২০২২ বিকাল ৪:৪৮
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ভালো কিছু জানাতে ভালো লাগে। আর যদি ভালো লাগা মিলে যায় কারো সাথে তখন পোস্টটাকে সার্থক মনে করি।
ভালো থাকবেন আপনি। হয়তো আবার দেখা হবে নতুন কোন ভালো লাগায় ....
©somewhere in net ltd.
১| ০৭ ই আগস্ট, ২০২২ দুপুর ২:৫২
দেশ প্রেমিক বাঙালী বলেছেন: অত্যন্ত প্রিয় একটা গান।