নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......
ছবি : ইন্টারনেট
"অদ্ভুত আঁধার এক এসেছে এ-পৃথিবীতে আজ,
যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা; "
অদ্ভুত আঁধার
মসজিদের চাবিটা আমার কাছে রাখা আছে ক'দিন ধরে। মোয়াজ্জিন সাহেব অসুস্থ তাই কয়েকদিন ফজরের আজান দেয়া এবং মসজিদ খোলার দায়িত্ব পড়েছে আমার ওপর । খারাপ লাগেনা। ফজরের ওয়াক্তের অনেক আগেই ঘুম ভেঙে যায় আর ঘুম হয়না। আজ তার ব্যতিক্রম হলো না। ঘুম ভেঙে গেলো। পাশ ফিরে খেয়াল করলাম পিঠের দিকটা অনেক ভেজা। ঘামে ভেজা। ঘামে ভিজে যাওয়ার মত গরম কি পড়েছে ? নাহ ! ফুল স্পিডে ফ্যান চললে শেষ রাতে রীতি মতো পাতলা কাঁথা গায়ে দেয়া লাগে। ফ্যান চলে ঝড়ের বেগে , পায়ের কাছে আলুথালু পাতলা কাঁথা।
ভেজা গায়ে অস্বস্তি লাগছে। খেয়াল করলাম, মনের ভেতর কেমন একটা অস্থিরতা। দুঃস্বপ্ন দেখেছি কোন? মনে করার চেষ্টা করলাম। নাহ , ঠিক মনে পড়লো না। বেশি মাথা না ঘামিয়ে বিছানা থেকে উঠে পড়লাম । ফজরের আজান দিতে হবে। দেয়াল ঘড়িতে ফজরের ওয়াক্ত হবো হবো। ক্যালেন্ডারের পাতা উড়ছে ১৪ মার্চ , ২০০২ , বৃহস্পতিবার।
নওদাপাড়া জামে মসজিদ টা জিকে প্রজেক্টের ( গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প) ক্যানেলের ধারে। এই সেচ প্রকল্পের মাধ্যমে কুষ্টিয়া, মেহেরপুর, চুয়াডাঙ্গা, ঝিনাইদহ, মাগুরা ও যশোর জেলার ১৩টি থানায় সেচ সুবিধা দেয়া হয়।জিকে সেচ প্রকল্পের প্রধান পানির উৎস পদ্মা নদী।এই পদ্মা নদী দিনে দিনে হয়ে যাচ্ছে মরা খাল।
আব্বা আম্মা ঘুমাচ্ছে। গেটে তালা লাগিয়ে বাসা থেকে বের হলাম। আমাকে দেখে সদা সতর্ক পোষা কুকুরটা দাঁড়িয়ে গেলো।আমার সাথে কিছুটা হেঁটে লেজ নাড়তে নাড়তে ফিরে গেলো তার জায়গায়। একবার ভাবলাম সাথে এলে ভালোই হতো। আমি যখন বাড়ি থেকে ঢাকায় আসতাম , কুকুরটা ঠিক পেছন পেছন যেত কোচ স্যান্ড কিংবা স্টেশন পর্যন্ত। গাড়ি না ছাড়া পর্যন্ত ঠিক অপেক্ষা করতো।
আমি হেঁটে এসেছি বাড়ির পুকুর পর্যন্ত। চারিদিকে নিস্তব্ধতা। মাঝে মাঝে নারিকেল গাছের পাতায় ঝিরিঝিরি বাতাস। আমি অন্ধকারে গুটিগুটি পা ফেলে এগিয়ে যাচ্ছি। অন্ধকার আমার মোটেও ভালো লাগে না। ঘামে ভেজা পরিস্থিতি ভাবাচ্ছে আমাকে । পুনরায় অস্থিরতাবোধ করছি। আমি কি ভয় পাচ্ছি? কিন্তু কেন? মসজিদ আর মাত্র ১৫ মিনিটের রাস্তা। ছোট একটা শালবাগান পেরিয়ে উঠে যেতে হবে সোজা ক্যানেলের রাস্তায়।
শালবাগান , বন হয়। গোটা পঞ্চাশেক গাছ সারি সারি লাগানো , ঘন। তার মাঝে সরু রাস্তা। এই রাস্তা হরে চলে যেতে হবে সোজা ক্যানেলের রাস্তায়। শালবাগান পেরিয়ে এসেছি মাত্র। হটাৎ জানি কেমন মনে হলো! আচ্ছা , আমার পেছনে কেউ কি আছে? কেউ কি হাটছে ? ইচ্ছে হলো ফিরে তাকায়। আমার সাদা পাঞ্জাবি ভিজে উঠলো , দাড়িতে বিন্দু বিন্দু ঘাম , কখন জমেছে খেয়াল করিনি।
' আসলামুআলাইকুম ! ' পেছনে তাকানোর আগেই সালামের শব্দ। কোথায় ছিলেন এত্তক্ষন ইনি ? সাদা আলখাল্লা , সাদা পাগড়ি আর সাদা দাঁড়িয়ালা মানুষটাকে পেছনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে থমকে দাঁড়ালাম। মাথাটা ঝিমঝিম করে উঠলো। প্রচন্ড পিপাসায় গলা শুকিয়ে গেলো।
' আসলামুআলাইকুম ! ' দ্বিতীয়বার সালামে সতবিত ফিরে পেলাম।
'ওয়ালাকুমুসসালাম' ! কোনমতে সালামের উত্তর দিলাম। লোকটা আমার দিকে তাকিয়ে। দৃষ্টি অপলক। কে ইনি। কোথা থেকে এলেন ? প্রশ্নের পর প্রশ্ন মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে। অসার হয়ে আসছে হাত পা।একটু হাঁটলেই ক্যানেলের রাস্তা। আমি ঠায় ধরিয়ে আছি।
'মসজিদের রাস্তা কোনদিকে ?' জানতে চাইলেন। অদ্ভুত এক দৃষ্টি অসার করে রেখেছে আমাকে। যেন এক সম্মোহনী দৃষ্টি।শান্ত। মায়াময়। আমি হুট্ করে চোখ ফেরালাম।
' মসজিদ সামনেই , আসুন আমার সাথে। ' নিজের কণ্ঠ নিজের কাছেই অচেনা মনে হলো। মনে হলো অন্য কারো কণ্ঠ আমার দেহে চাপিয়ে দেয়া হয়েছে।
' জ্বী , আপনি যান আমি আসছি। ' মানুষটি স্বাভাবিক ভাবে উত্তর দিলো।
আমি পা বাড়ালাম। পেছনে আসছে মানুষটি। সামনেই ক্যানেলের রাস্তা , তার বামপাশেই জামে মসজিদ। পেছনে পায়ের শব্দ পাচ্ছি। মানুষটি পেছন পেছন হেটে আসছে। আয়াতুল কুরসি মুখস্ত ছিল। এখন আর মাথায় আছে না। হুট্ করে সব কেন জানি ভুলে গেলাম। সূরা ফাতিহা পড়তে পড়তে এগুচ্ছি। পেছনে পায়ের শব্দ। মসজিদের ঢালে নামতেই পেছন ফিরলাম । থেমে গেল পায়ের শব্দ।পেছনের মানুষটি নেই। হারিয়ে গেলো অদ্ভুত এক আঁধারে।
আর দেরি না করে ছুটে এলাম মসজিদের বারান্দায়। দেয়ালে ঘেমো পিঠ লাগিয়ে হাঁফাতে লাগলাম। আমার পকেটে চাবি। মসজিদের দরজা খুলতে হবে। আজান দিতে হবে। আঁধার কাটিয়ে সে ধ্বনি মিলিয়ে যাবে সুদূরে। ভোর হবে।
মুসল্লি আসতে শুরু করেছে। আজান দিলাম। নামাজ হলো। আমি এশরাক এর নামাজ শেষ করে মসজিদের চাবি দিয়ে বাড়ি ফিরলাম। এরপর রাত থেকে জ্বর আসলো। দুদিন পরে পক্স। আমি বিছানায় শুয়ে থাকি আর ওই রাতের কথা ভাবি।
ডাক্তার , মনোরোগ , ঔষুধ অনেক কিছু গেলো। ধীরে ধীরে সুস্থ হলাম। কিন্তু মাথার মধ্যে সেই ঘটনাকে নিয়ে বড় হচ্ছি। মাঝে মাঝে মনে হয় ১৪ মার্চের রাতে ফজরের ওয়াক্তের আগে ওই রাস্তায় গিয়ে দাঁড়াবো। আরো একটি অদ্ভুত আঁধারের অপেক্ষায়। দেখা পাবো একদিন। -- যারা অন্ধ সবচেয়ে বেশি আজ চোখে দ্যাখে তারা!
** লেখাটি পুনরায় পোষ্ট করা হলো। সোজা কথায় রিপোস্ট।
১৬ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:০৮
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: এটা সত্য ঘটনা। আমার সাথে ঘটেছিল। হমম ঠিক ধরেছেন, ইঙ্গিত একটা আছে।
২| ১৭ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১০:৫২
শাওন আহমাদ বলেছেন: পড়ছিলাম আর গায়ে কাটা দিচ্ছিলো। মনে হচ্ছিলো আমার চোখেরব সামনেই ঘটছে ঘটনাটি। আমার সাথেও এমন একটা ঘটনা ঘটেছিলো সেই শৈশবে।
২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৪৮
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ভয়াবহ অভিজ্ঞতা ছিল।
৩| ১৭ ই আগস্ট, ২০২২ সকাল ১১:৪৫
সেলিম আনোয়ার বলেছেন: জীবন বাবু দারুন বলেছেন।
চমৎকার লিখেছেন ।
২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৪৮
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
জীবনবাবু কম দায়ী নন।
৪| ১৭ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৮:০৯
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: পরহেজগার জীন মনে হয়। ভয় পাওয়ার কিছু নাই।
২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৪৯
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
মায়াময় চোখ। শান্ত। অদ্ভুত মায়া ছিল। ভয় পাওয়া উচিত হয়নি।
৫| ১৭ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ১০:১৪
মনিরা সুলতানা বলেছেন: আমার অভিজ্ঞতায় ও দেখেছি মাথা শূন্য হয়ে যায়।
২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৪৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: পরের বার ঘটলে বেঁচে থাকা কঠিন হবে।
৬| ১৮ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ২:১৮
জুনায়েদ বি রাহমান বলেছেন: কঠিন অভিজ্ঞতা। আমি অবশ্য কখনো এমন অভিজ্ঞতার মুখামুখি হইনি, তবে অনেক গল্প শুনেছি।
২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৫০
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
না হওয়াই ভালো। আমি নিজেও চাইনা। তবে দেখা হবে।
৭| ২০ শে আগস্ট, ২০২২ সন্ধ্যা ৬:২২
জটিল ভাই বলেছেন:
তাহলে এমন অভিজ্ঞতাও হয় স্বপ্নবাজদের? জটিলবাদ।
২১ শে আগস্ট, ২০২২ রাত ১২:৫১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: কে জানে, তাঁরাও হয়তো ব্লগিং করে।
©somewhere in net ltd.
১| ১৬ ই আগস্ট, ২০২২ রাত ৯:৪১
কামাল৮০ বলেছেন: এটা কি স্বপ্নবাস্তবতার গল্প না কি পরাবাস্তবার গল্প ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।তবে গল্পে একটা ইঙ্গিত আছে।