নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......
১.
কেন তোরা প্রোটেকশন নিস্ নাই ?
না , ভেবেছিলাম কিছু হবে না !
পাগল নাকি ? এমন করতে গেলি কেন ? এখন বাদ দে। কিছুদিন পরেই তো তোদের বিয়ে। এখন এমন সিদ্ধান্ত নিস্ না, বাচ্চাটাকে পৃথিবীতে আন। ভাইয়া কি বলে ?
তোদের ভাইয়া কিছুই বলে না। চুপ থাকে। যেন সব সিদ্ধান্ত আমার।
বান্ধবীদের অনুরোধ তাদের সিদ্ধান্তকে থামাতে পারিনি। তাদের সিদ্ধান্ত তারায় নিয়েছিল। তাদেরকেই নিতে হয়েছে।
নুমাদের বিয়ে হয় এই ঘটনার আড়াই মাস পরে। ওদের বিয়ের ৫ বছর হয়ে গেছে। নুমা এখনো কনসিভ করতে পারেনি। সদা হাসিখুশি নুমা নিয়মিত সামাজিক মাধ্যমে ছবি আপলোড দেয়। তাদের জীবনটা বেশ স্বাভাবিক ,আনন্দময় বলেই ধরে নেয় সবাই। যদিও গোপন অবসরে বৃষ্টির মত লোনা জল ঝরে নুমার চোখে।
২.
নতুন সংসার। টাকা পয়সার টানাটানি। এই মুহূর্তে বাচ্চার আগমন। কি ভাবে কি করবে ভেবে পায় না নীলা আর রুবেল। এই মুহূর্তে বাচ্চাকে পৃথিবী আনার অবস্থা কি তাদের আছে ? বাড়তি খরচ কোথা থেকে আসবে ? তারপর নীলাকে চাকুরী করতে হবে। এখন বাচ্চা নেয়ার সময় না। সাময়িক মন খারাপ হলেও বাস্তবতাকে মেনে নেয়া উচিত। বাস্তবতা খুব কঠিন।
সেই কঠিন বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে নীলার শরীর থেকে ফিটাস আলাদা করা হয়। সেটা ছেলে না মেয়ে ছিল নীলা বা রুবেল কেউই জানতে পারেনি।
কয়েক বছর পরে নীলা একটা মেয়ে জন্ম দেয় । ভাগ্যবানদের নাকি আল্লাহ নেয়ামত হিসাবে কন্যা সন্তান দান করেন। নীলা রুবেল খুব খুশি। তাদের সংসারে কোন অভাব নেই।
সেই ফিটাসের নিষ্পাপ প্রস্থান নিয়ে হয়তো তারা আর ভাবে না। কিংবা কে জানে আমরা যা দেখি সেটা সঠিক নাও হতে পারে।
আধাঁরে হারিয়ে যাওয়া সেই ফিটাসের কান্না কিংবা মা ডাক নীলা নিশ্চয় শুনতে পান কখনো কখনো।
৩.
'দুঃখিত , আমি আবরোশন করা করাই না । একটি ভ্রূনকে বাচ্চা রুপে পৃথিবীতে আনতে আমি চিকিৎসা দিয়ে থাকি। ভ্রুণকে চলে যেতে নয়।'
দেশসেরা গাইনিকোলজিস্ট ডাঃ কামরুন্নেসা কথাগুলো বেশ কঠিন ভাবেই বললেন। এই কথা তিনি অনেকবার বলেছেন।
তার সামনে তরুণ-তরুণী বসা । তারা তাদের ভ্রূণকে বড় হতে দিতে চাননা। বিয়ে নিয়েও তারা আপাতত ভাবছে না। । তাদের সাথে কথা বাড়াতে ইচ্ছা হচ্ছে না।
আপনার সমস্যা কি? আমরা তো টাকা দিয়ে চিকিৎসা নেবো। - মেয়েটা বেশ ঝাঁঝালো কন্ঠ বলে উঠলো। ছেলেটার কপাল কুঁচকানো। নামকরা ডাক্তারের কাছে আসা ঠিক হয়। এদের দাম বেশি।
'টাকা নিয়ে যেখানে এবরোশন করায় আপনারা সেখানে যান। ডাক্তারের অভাব নাই। আর যাবার আগে ফীসটা রিটার্ন করে নিবেন। '
ডাঃ কামরুন্নেসা বেল টিপলেন। তিনি কিছুক্ষন রুগী দেখবেন না। সেলফে রাখা পত্রিকার পাতা উল্টাচ্ছেন। তার মনটা বিষণ্ণ।
মেডিক্যাল কলেজে প্রথমে যেদিন তিনি ল্যাব রুমে ঢোকেন তখন বয়ামে মাতৃগর্ভে শিশুর প্রতিকৃতি দেখেছিলেন। ভেবেছিলেন এগুলো মোমের পুতুল। পরে জানলেন যেসব শিশু জন্মের আগে মারা যায়। তাদের বাবা মা এখানে দান করে দিয়ে যায়।
ডাঃ কামরুন্নেসার মনখারাপ হতে শুরু করেছে। আগেও হয়েছে। ভবিষ্যতেও হবে। ডাঃ কামরুন্নেসা নিঃসন্তান অথচ তিনি হাজার শিশুকে পৃথিবীর আলো দেখতে সাহায্য করেছেন।
৪.
বাংলাদেশের লেজেন্ডারি ব্যান্ড অর্থহীন। তাদের নিজেদের অর্থহীন দাবি করলেও ভীষণ অর্থবহ গান তৈরি করেছে 'ফিটাসের কান্না' শিরোনামে। ফিটাসের কান্না জন্মাবার আগেই হারিয়ে যাওয়ার গান , নাড়ি ছিন্নের গান। গর্ভপাত নিয়ে গান। আবরোশন নিয়ে বাংলা ব্যান্ডের ইতিহাসে আর কোন গান আছে নাকি আমার জানা নেই। অর্থহীনের একটা আন্ডাররেরেড গান বলা চলে এটাকে। গানটা আমার প্রিয় গানের একটা। গীটারিস্ট শিশিরের গিটার সোলো আমার মোবাইলের রিং টিউন হিসাবে রাখা আছে।
ফিটাসের কান্না
বেঁচে ছিলাম জন্মাবার স্বপ্ন নিয়ে
মিশে ছিলাম তোমার রক্তস্রোতে,
আলোর পথে হোঁচট খেয়ে দেখি
হারিয়ে গেছি আধাঁরে
কালো জলে…..কালো জলে।
বেঁচে ছিলাম জন্মাবার স্বপ্ন নিয়ে
মিশে ছিলাম তোমার রক্তস্রোতে,
আলোর পথে হোঁচট খেয়ে দেখি
হারিয়ে গেছি আধাঁরে
কালো জলে…..কালো জলে।
ঝরবো আমি নোনা জলে
বৃষ্টি হয়ে তোমার গোপন অবসরে,
অলস চোখে ভাঙ্গবো আমি
ভোরের ঐ শিশির বিন্দু
কষ্টে গড়া সূর্যের আর্তনাদে….আর্তনাদে।
কষ্টের এই নষ্ট সময়ে
ছায়ার মাঝে বন্দী এ হৃদয়,
মায়ার শূন্যতায় লুকাবো তোমায়
কষ্টে গড়া আলোর আর্তনাদে….আর্তনাদে।
ঝরবো আমি নোনা জলে
বৃষ্টি হয়ে তোমার গোপন অবসরে,
অলস চোখে ভাঙ্গবো আমি
ভোরের ঐ শিশির বিন্দু
কষ্টে গড়া সূর্যের আর্তনাদে….আর্তনাদে।
ভালোবাসার তীব্র জোসনা দিয়ে
পারোনি তুমি মমতায় বাঁধতে,
নিষ্পাপ আমার প্রস্থান লিখা থাকবে না
সাজানো কোন এপিটাফে…………
ছবিঃ ইন্টারনেট
২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:৩৩
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
দেশে কি অকারণে অনেক গর্ভপাত হয়?
যারা গর্ভপাত করায় তারা নিশ্চয় কারণ ছাড়া করে না। যুক্তরাষ্ট্রে একটা আইন হয়েছিল :
"একজন নারী শুধু তখনই গর্ভপাত করাতে পারে যদি ডাক্তাররা নিশ্চিত করেন যে 'নারীর জীবন রক্ষা বা স্বাস্থ্যের জন্য এটা প্রয়োজন।"
এটা এখনো বলবৎ আছে কিনা জানা নেই।
আপনার বাবাকে নিয়ে পোস্টগুলি সুন্দর ছিলো।
আমার বাবা আর স্মৃতিচারণ মূলক পোস্ট গুলো বেশ কয়েকজন পছন্দ করে।
আপনাকে ধন্যবাদ।
২| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:০০
সোনাগাজী বলেছেন:
স্কুল ও কলেজে মেয়েদিগকে নারী বিষয়ক ক্লাশে শিক্ষা দেয়ার দরকার, জিং জিং'কে যেন ভালোবাসা বলে ভুল না'করে।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:২১
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
সবকিছু কি আর মুখস্ত করিয়ে শেখানো যায় ?? ভুল করবেই।
তবে এবরশন এখন ডালভাত হয়ে গেছে।
বিয়ের পর অনেক মেয়েরা 'সঠিক সময়ে'র আগে কনসিভ করলে এবরশন করতে চায়। আবার অনেকের হাজার চাওয়ার পর কনসিভ করতে পারে না।
৩| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সন্ধ্যা ৭:৫৬
সাড়ে চুয়াত্তর বলেছেন: বাংলাদেশে গর্ভপাত বেআইনি কিন্তু ১৯৭৪ সাল থেকে গর্ভপাতকে কৌশলে ভিন্ন নামে আইনসম্মত করা হয়েছে। এটার ডাক্তারি নাম দেয়া হয়েছে Menstrual Regulation (MR)। অর্থাৎ মাসিক সমস্যার সমাধানের জন্য এটা করা হয়। ১০ সপ্তাহের মধ্যে MR করা বৈধ। তবে সব MR যে গর্ভপাত এমন না। অনেক গর্ভপাতকে MR বলে চালিয়ে দেয়া হয়। বাংলাদেশের পরিবার পরিকল্পনা প্রোগ্রামে এই পদ্ধতি কাজে লাগানো হয়েছিল গর্ভপাতের বিরুদ্ধে ধর্মীয় এবং সামাজিক বাঁধার কারণে।
আপনার দেয়া গানটা ভালো লাগলো।
২৯ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:২৫
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
মন্তব্যের জন্য অনেক ধন্যবাদ সাচু ভাই।
কাল বেশকিছু আর্টিকেল পড়েছি।
বাংলাদেশে 'নীরব গর্ভপাতের' হার বাড়ছে কেন?
আমি নিজে অর্থহীন ব্যান্ডের একজন একনিষ্ট ভক্ত। গানটাও আমার অনেক পছন্দের।
৪| ৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ রাত ১২:১৬
রাজীব নুর বলেছেন: বাস্তব লেখা।
আপনি কি বাস্তববাদী মানুষ?
৩০ শে জানুয়ারি, ২০২৩ সকাল ৯:৪৭
স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
বাস্তববাদী এর বিশ্লেষণটা বড়। সম্ভবত আমি বাস্তববাদী নয়। ভীতু। বাস্তবকে সামনা করতে ভয় পাই , মানতে পারিনা।
লেখাটা বাস্তবতা থেকেই লেখা। কিছুদিন আগে আপনার লেখায় ডাস্টবিনে মৃত শিশু পাওয়া গিয়েছিলো। এবরোশন নিয়ে এই লেখাটি অনেক আগেই পোষ্ট করতে চেয়েছিলাম। যতবার অর্থহীনের ফিটাসের কান্না গানটা শুনি ততোবার মনে হতো ব্লগে এটা নিয়ে দুলাইন লিখি।
ধন্যবাদ রাজীব ভাই।
©somewhere in net ltd.
১| ২৮ শে জানুয়ারি, ২০২৩ বিকাল ৫:১৮
হাসান জামাল গোলাপ বলেছেন: অপবার বাবাকে নিয়ে পোস্টগুলি সুন্দর ছিলো। দেশে কি অকারণে অনেক গর্ভপাত হয়?