নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

ঈদের পরের দিন সকাল মানে ছেলেবেলার বাঁসি পোলাও

২৪ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ৩:২৪


আমার ছেলেবেলাকে আমি এসএসসি পরীক্ষায় আটকে রাখি। মানে জন্ম থেকে এসএসসি পরীক্ষার সাল পর্যন্ত আমার ছেলেবেলা। ৯৯ সালে মাথা নিচু করে, ছল ছল চোখে স্কুলের গেট পাড় হবার কথা মনে হলেই চোখ ভিজে উঠে। ২০০০ সালে হুট করে কেমন জানি বড় হয়ে গেলাম। তাই আমি এই পোস্টে যা লিখবো সব কিছুই আমার ছেলেবেলার ঈদ নিয়ে।

ঈদের আমেজ শুরুঃ
আমরা যখন ছোট ছিলাম। তখন আমাদের মনে ঈদের আমেজ শুরু হত শবে বরাতের দিন থেকে। শবে বরাত মানে আর কিছুদিন পর রোজা আর তারপরেই তো ঈদ। তাই শবে বরাতটা ভীষণ আনন্দের ছিল আমাদের জন্য।
শবে বরাতের সব চেয়ে আনন্দের সময় ছিল হালুয়া রুটি বিতরণ । অনেক মিসকিন আসতো বাড়িতে। তাদের মাঝে বিতরণ করা হতো আর আশেপাশের বাড়িতে আর স্থানীয় আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে।
আমরা ছোটরা কয়েকটা দলে ভাগ হয়ে যেতাম আর দুরের আত্মীয়স্বজনদের বাড়িতে কেউই যেতাম না। আমাদের এক দল বাড়িতে মিসকিনদের মাঝে হালুয়া বিতরণ করতো আরেক দল থাকতো আশেপাশের বাড়িতে বিতরণের জন্য। আশেপাশের বাড়িতে বিতরণের জন্য
এক গ্রুপ কাভার করতে পারতো না। তারাও ছোট দলে ভাগ হয়ে যেত। এইসব পরিকল্পনা আমাদের আনন্দ বাড়িয়ে দিত। তাছাড়া কয়টা রুটির বানানো হয়েছে আবার কয়টা রুটি আমরা অন্যান্য বাড়ি থেকে গ্রহন করেছি সেই হিসাবও আমাদের রাখত হতো। সারাদিনের কঠোর পরিশ্রম শেষে আমরা খেতে বসতাম মাগরিবের পরে। কারণ বড়রা রোজা রাখতো।
খাওয়া শেষে আমরা প্রস্তুতি নিতাম রাতের ইবাদতের। অনেকে সারা বছর নামাজ না পড়লেও এই দিনটার জন্য সমস্ত ইবাদত রেখে দিতাম। নতুন সুরা দোয়া মুখস্থ করতাম। কারণ আর কয়েকদিন পরেই তো রোজা আর রোজা শেষ হলেই তো ঈদ।


রোজার শুরুঃ
রোজার চাঁদ দেখা গেছে। সেহরী ইফতার। ছোটবেলার রোজা নিয়ে স্মৃতিচারণ করলে যেন শেষ হবে না। আমরা যখন সবাই এক সাথে থাকতাম মানে ঘর আলাদা হলেও রান্নাঘর ছিল একটা। আমরা ইফতার করতাম এক সাথে। ২৫৩০ জন লোক। আমাদের উঠানে আমাদের ইফতারের আয়োজন চলতো। কেউ কেউ আবার ঘরের বারান্দায় পাটি বিছাতো। উঠানে ধুলো উড়তো তাই পানি ছিটানো হতো আগে। এরপর ঝাড়ু দিয়ে পাটি বিছানো হতো। আমাদের দাদা উনার ঘরের জানালায় বসে থাকতেন আর আমাদের আয়োজন দেখতেন। রান্নাঘর থেকে একে একে আইটেম রেডি হয়ে আসতো আর আমরা টিনের প্লেটে সাজাতাম। বরফ কল থেকে বরফ কিনে আনা হতো। আমাদের ইদরায় তরমুজ ডুবিয়ে রাখা হত ঠান্ডা হবার জন্য। মনে আছে সেই সময় ইফতারে আমার সবচেয়ে পছন্দের ছিল লেবু দিয়ে আখের গুড়ের সরবত। চিনির সরবত খেয়েছি অনেক পরে। আর এখন তো আর ভালো আখের গুড়ই পাওয়া যায় না।

মসজিদের সংখ্যা কম হওয়া এবং মাইকের আওয়াজ কম হওয়ার কারণে আজান শুনতে কষ্ট হতো। ইফতারের টাইমে সাইরেন বেজে উঠতো পাওয়ার হাউজ থেকে এর পর দূর থেকে ভেসে আসতো আজান। আমরা পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে ইফতার করতাম।

একবার পাশের বাড়ি থেকে রেডিওতে ঢাকার আজান শুনে রান্নাঘরে বসে আম্মা ইফতার করে ফেলেছিলেন। তারপর কাঁদতে লাগলেন। দাদা আম্মা কে বললেন, "কেঁদোনা । আল্লাহ তোমার রোজা কবুল করবেন।"
আমার ঐদিন মন খারাপ হয়েছিল খুব।

এবাবেই একেকটা ইফতার শেষ হতো। একটা একটা রোজা শেষ হতো আর ঈদ এগিয়ে আসতো।
আমার মনে রোজা শেষ হবার কষ্ট আর ঈদ আগমনের আনন্দ, দুটো মিলিয়ে অদ্ভুত এক অনুভূতি তৈরি হতো ছোটবেলা থেকেই।

ঈদের চাঁদ দেখাঃ
২৯শে রমজান। আগামীকাল ঈদ নাকি রোজা ৩০টা হবে? দারুণ এক অনিশ্চয়তা। কোনটা হলে ভালো হবে ২৯ টা রোজা নাকি ৩০ টা রোজা? প্রশ্ন গুলো মাথায় আসতো। সেই সাথে উৎকন্ঠা।


২৯ শে রমজান। মাগরিবের আজান হয়ে গেল। ইফতার হাতে সোজা চলে এলাম খোলা প্রান্তরে।
আমার আগেই পৌঁছে গেছে অনেকে। বরাবরের মতো আমি পরে।

পশ্চিম আকাশের কোনো কোনায় চাঁদ উঠার কথা।নতুন চাঁদ। ঈদের চাঁদ! আনন্দ !!

নারিকেল গাছের দুই ডালের ফাঁকে তাকিয়ে খুঁজি। গত ঈদের ঠিক ওখানেই চাঁদ উঠেছিল। চরম উৎকণ্ঠা নিয়ে তাকিয়ে থাকি। দূরে কোথাও চকলেট বোমা ফুটে উঠে ! সবাই হৈ হৈ করে উঠে। ওরা সম্ভবত চাঁদ দেখে ফেলেছে ! আর আমরা মন মরা হয়ে তাকিয়ে থাকি।

“এইবার মনে হয় ত্রিশটা রোজা হবে।"-- কেউ একজন বলে ওঠে।
আমি মন খারাপ করে আব্বার দিকেতাকিয়ে বলি , “আব্বা ! তাই ? "
আব্বা বলেন , “চাঁদ না দেখা গেলে তো ত্রিশটা রোজাই হবে।"
আমি মন খারাপ করে বললাম , “কিন্তু ওরা যে বোমা ফুটাচ্ছে ? হৈ হৈ করছে ? ওরা কি চাঁদ দেখেছে ?”

আসলে কাল কে যে ঈদ হবে না এটা আমি কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিনা।

আব্বা বললেন , "মনে হয় উঠেনি।উঠলে তো আমরাও দেখতাম। "
"ওই যে চাঁদ .... ঐযে চাঁদ !" --- কে যেন চেচিয়ে ওঠে।
সবাই আবার হৈ হৈ করে ওঠে .... "ঐযে ! ঐযে !! নারিকেল গাছের ডালের উপরে !"

আমি তাকিয়ে বলি , “আব্বা ... কোই ?”
আব্বা হেসে বললেন , "দেখতে পাওনি ?"
"না .... " আমার চোখ ঝাপসা হয়ে ওঠে। কেঁদেই ফেলি প্রায়।
সবাই চাঁদ দেখে হৈ হৈ করছে। শুধু আমি দেখতে পাইনি।
আব্বা বললেন , "আমার আঙুলের দিকে তাকাও। নারিকেল গাছের ডালের একটু উপরে , বামপাশে। "
"কোই ... " আমার গলা কেঁপে ওঠে।
"একটু ভালো ভাবে দেখো .... আবছা , অনেক চিকন। "
আমি প্রানপনে চেষ্টা চালাই।
" দেখেছি ... দেখছি ! ঐযে চাঁদ ... ঐযে , অনেক চিকন ! ... আব্বা , চাঁদ এতো চিকন কেন ?"
" নতুন চাঁদ তো , তাই। "

কাল ঈদ। নতুন চাঁদ আমাদের দিকে তাকিয়ে হাসে। চারিদিকে হৈ হৈ আর বোমার শব্দ। চকলেট বোমা , রসুন বোমা। আমি আব্বার হাত ধরে বাড়িতে ফিরি।
হাঁটতে হাঁটতে বলি , "আব্বা ? আমি সবার আগে চাঁদ দেখবো কবে ?"
"বড় হও ... বড় হলেই দেখতে পাবে! "

আমি আব্বার হাত ধরে থাকি। হাঁটি আর বড় হওয়ার চেষ্টা করি।
আকাশের অস্পষ্ট নতুন ঈদের চাঁদটা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হতে থাকে। কাল ঈদ। ঈদ মানে আনন্দ।


ঈদের আগের রাত এবং ঈদের দিনঃ
এদিকে ওদিকে বোমা পটকা ফুটেই চলেছে।
ঈদের আগেরটা ছিল জীবনের শ্রেষ্ঠ রাত। দারুণ উৎকন্ঠা আর আনন্দের কারণে ঘুম না আসা। মাথার কাছে নতুন পাঞ্জাবী পায়জামা, সেন্ডো গেঞ্জি আর সাবান রাখা থাকতো ঘুম থেকে উঠতাম সবার আগে। ঘুম থেকে একটু দেরী করে উঠলে মন খারাপ হয়ে যেতো। ঈদের আগের রাতে রান্নাঘরে তোড়জোর চলতো। সকালে সেমাই রান্নার জন্য দুধ জাল দিতো। সকলের কর্ম ব্যস্ততা দেখতেও ভালো লাগতো।
কিছু কেনা বাদ গেছে কিনা সেই হিসাব করা হতো। সকালে উঠে কি কি করতে হবে সেই উৎকন্ঠাময় হিসাব করতে করতে আমরা বোমার শব্দ শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে যেতাম এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে ঘুম থেকে উঠেও বোমার শব্দ শুনতে পেতাম। দূর থেকে ভেসে আসা সেই শব্দ এখন আর শুনি না। অদ্ভুত সুন্দর লাগতো।

ঈদের আগের রাতটা শ্রেষ্ঠ রাত হলেও এই রাতেই আমাদের দাদা মারা যান। আমাদের দাদা মারা যান কোরবানী ঈদের আগের দিন মাগরিবের সময়। আমরা কেউ সেবার ঈদের নামাজ পড়িনি। দাদাকে উঠানের উপড় খাটিয়ায় রাখা ছিল। আমি দাদার মাথার কাছে ঠায় দাঁড়িয়েছিলাম। এরপর জানালা দিয়ে, কুটিইই ভাই বলে আর কেউ ডাকে নি।


আমরা যখন একেবারে ছোট ছিলাম। তখন আমার বড় আপা আমাদের সব ভাইবোনদের মানে চাচাতো ফুফাতো ভাইবোনদের একে একে গোসল করিয়ে দিতো। আমরা সিরিয়ালে আনন্দ নিয়ে অপেক্ষা করতাম। কেউ কেউ গোসলের সময় বড় আপার কথা না শুনলে বকা খেত। এই বকা খাওয়া দেখে আমরা সবাই হাসতাম। যে বকা খেত যেও হাসতো। শৈশব ব্যাপারটা আসলেই অন্যরকম। গোসল করানোর পর চোখে সুরমা লাগিয়ে দিতো।
বড় আপার বিয়ে পর শ্বশুর বাড়িতে গিয়ে ঈদের দিন সকালে উঠে কাঁদতে লাগলো। সকলের ধারণা ছিল তার বাবা মার জন্য খারাপ লাগছে। এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু বড় আপা কাঁদতে কাঁদতে বললো, ঈদের সকালে আমি আমার ভাইবোনদের গোসল করাতাম।

বড় আপার বিয়ের পর আমরা ঈদে গোসল করেছি ঠিকই কিন্তু কোনদিন আর চোখে সুরমা লাগায়নি।

আমরা পুরোপুরি ফিটফাট হয়ে সেমাই খেতাম রান্নাঘরে গিয়ে। অনেক মানুষ দাদার সাথে দেখা করতে আসতো তাই অনেক সেমাই রান্না করা হতো। কাগজের প্যাকেটের ফাইভ স্টার সেমাই কেনা হতো কয়েক প্যাকেট। এই সেমাই এখন আর পাওয়া যায়না।
বড় পাতিলে খিচুরি আর মাংস। রাতে পোলাও, কোরমা আর মাংস। তখন রোস্ট ছিলনা। দাদা কোরমা পছন্দ করতেন। আমার নানা লাহেরি মোহনপুরে স্টেশন মাস্টার ছিলেন তিনি মিল্কভিটা থেকে দাদার জন্য খাঁটি ঘি পাঠাতেন। সেই ঘিতে রান্না হতো।

একসময় যখন সবাই আলাদা আলাদা হয়ে খেল তখন একে একে সব চাচাদের বাড়িতে সেমাই খেতে যেতাম। আমার পছন্দের ছিল জর্দা সেমাই। ঘরে ঘরে খেতে যাওয়ার ভেতর আনন্দ ছিল।

দাদা সুস্থ থাকা কালীন আমরা ঈদগাহতে নামাজ পড়তে যাইনি। দাদা আমাদের ঈদের নামাজ পড়াতেন। আমাদের বৈঠকখানা বেশ বড় ছিল। ৪০৫০ জন লোক আমাদের সাথে নামাজ পড়তো। দাদা অসুস্থ হয়ে পড়লে দাদা আমাদের ঈদগাহে নামাজ পড়তে যেতে বলেন।
ঈদগাহতে নামাজ পড়তে যাওয়াও একটা আনন্দময় ব্যপার ছিল।
আমাদের বড় ফুফু ঈদগাহে নামাজে যাওয়ার পাটি গুলো ধুয়ে রাখতেন। উনার কাছ থেকে পাটি গুলো নিয়ে আমরা নামাজে যেতাম। বড়ফুফু মারা গেছেন ২০১৪ সালে । উনাকে নিয়ে অনেক লেখা আছে। বড়ফুফু মারা যাবার পর ঈদটা কেমন যেন খাঁখাঁ লাগে।

ঈদের নামাজ পড়ে এসে প্রথমেই সালাম করে বেড়ানো আর সালামী সংগ্রহ। এরপর খাওয়া দাওয়া করে সাত টাকা দিয়ে কাঁচের বোতলের মিরিন্ডা/ ফান্টা কিনতে যাওয়া। ঈদের আনন্দ পেতে খুব বেশি টাকার দরকার হতো না এখনকার মত।

ঈদের পান্জাবী খুলতে ইচ্ছা হতো না। মনে হতো পান্জাবী খুললেই ঈদ শেষ। মন খারাপ করা শুরু হতো বিকাল থেকে আর সন্ধ্যা তো আমার কাছে বরাবরই বিষাদময়।


ঈদের পরের দিন সকালবেলাঃ

ঈদের দিন আমার বাড়িতে খাওয়া হতো না। খেতাম চাচাদের বাড়িতে। ঈদের পরে দিন আমার ঘরে খাওয়া হতো। সকালে উঠে নাকে যেতো বাঁসি পোলাও গরম করার গন্ধ। রাতে ঘুমাতে গেছি মন খারাপ করে, ঘুম ভেঙ্গে মন ভালো হয়ে গেল।বরাবরই বাঁসি পোলাও আমার খুব প্রিয় খাবার, সেই ছোটবেলা থেকে। আগে যখন এক রান্নাঘরে সবার রান্না হতো তখনও ঈদের পরের দিন সকালে বাঁসি পোলাও খাওয়া হতো। তখন ফ্রীজ ছিল না। পোলাও বিছিয়ে রাখা হতো যাতে নষ্ট না হয়ে যায়। সেই পোলাও গরম করা হতো সকালে। ঐ টা দিয়েই আমাদের সকালের নাস্তা হতো।

আমাদের ঘরে সবাই ঈদের দিন সকালে সবাই খেতে আসতো। হৈ চৈ শুরু হতো।বাঁসি পোলাও খাওয়াটা যেন উৎসবের মত ছিল। আমাদের ওভেন ছিল না তখন। ওভেনে পোলাও গরম আর চুলায় পোলাও গরমের মধ্য পার্থক্য আছে। মুল পার্থক্যটা হচ্ছে গন্ধে।


এতো বাদে শিরোনামটা বাঁসি পোলাও নিয়ে কেন হতে হবে? এই বাঁসি পোলাওয়ের মাহাত্ম্য কি?
আসলে কিছুই না। মুলত বাসি পোলাও টা ঈদ শেষ হবার শেষ আয়োজন। শেষ ঈদের স্মৃতি। ঈদের স্মৃতিচারণ এই বাসি পোলাওয়ের গন্ধের ফিরে আসবে বারবার, ফিরে আসবে ছেলেবেলা কিংবা শৈশব।

















মন্তব্য ১৬ টি রেটিং +২/-০

মন্তব্য (১৬) মন্তব্য লিখুন

১| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৩ ভোর ৬:০২

আমি সাজিদ বলেছেন: শবে বরাত থেকে অবশ্য আমার ঈদের আমেজ শুরু হতো না। তবে, শবে বরাতে সেই আত্নীয়দের বাড়িতে রুটি হালুয়া নিয়ে যাওয়া, মসজিদে নামাজ পড়া, সারারাত জেগে ভোরে ঘুমানো এগুলো তো ছিলই। ঈদের চাঁদ দেখলে না পেলে আতশবাজির শব্দ আর টিভিতে সেই বিখ্যাত গানটির সাথে স্ক্রিনের নীচে ভেসে উঠা আপডেটই মনে খুশীর ঢেউ নিয়ে আসতো। চাঁদরাতে গ্রামের বাড়ির সামনের রাস্তায় নানা রঙ বেরঙের ঈদ কার্ড, ভিউ কার্ড, আতশবাজি, কসমেটিকস, খেলনার অস্থায়ী দোকান বসতো। সমবয়সীদের মতই আমার আগ্রহের কেন্দ্রে থাকতো কার্ডগুলো ও বাজি-পটকা। গ্রামের বাড়িতে ঈদের আগের দিনে দাদীর নানা নির্দেশনা, মা চাচীদের প্রস্তুতি, আমাদের ছুটাছুটি, বাবা চাচাদের গম্ভীর আলোচনা, সবই যেন এখনও চোখে ভেসে উঠে। সকালে উঠে লাইন ধরে গোসল, এরপর নামাজ, ফিরে এসে ফুফু ও আত্নীয়দের বাড়িতে বাড়িতে যাওয়া, বছরের পর বছর এই ধারায় আমি রোজার ঈদ উদযাপন করেছি। ক্লাস টেন পর্যন্ত সারাদিন ঘুরে ফিরে এসে সন্ধ্যায় পা দুটো প্রচন্ড ব্যাথা করতো, ক্লান্তি ভর করতো। এরপর রাতে সব কাজিনরা মিলে টিভিতে আলোচিত কোন প্রোগ্রাম দেখার মাঝপথেই আমি ঘুমিয়ে যেতাম। ঈদের দ্বিতীয় দিনে আবার খুব একটা ঘুরতাম না। গ্রামের বাড়ি থেকে বাসায় আসার সময়গুলো খুবই খারাপ কাটতো, ভাবতাম এত জলদি ঈদ শেষ হয়ে গেল!

২৬ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ২:১৪

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আপনার মন্তব্য পোষ্টটাকে সমৃদ্ধ করেছে।
স্মৃতি পড়তেও ভালো লাগে।

ধন্যবাদ।

২| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৭:০৪

কামাল১৮ বলেছেন: আস্তে আস্তে ছোটবেলা থেকে বের হয়ে আসুন কতো আর ছোট বেলায় থাকবেন।

২৬ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ২:০৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
বড়বেলা লিখিতো মাঝে মধ্যে।

৩| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ৮:২৩

মোঃ মাইদুল সরকার বলেছেন: ছোট্টবেলা মানে রঙ্গিন ঈদ আনন্দ।

২৬ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ২:১০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
এখন ধুসর?

৪| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৩ সকাল ১১:১৮

শূন্য সারমর্ম বলেছেন:


এসব নিয়ে বই লিখলে কেমন হবে?

২৬ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ২:০৮

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
কে পড়বে?
লস খাবো।

৫| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:২১

সেলিম আনোয়ার বলেছেন: আগে কতো আগ্রহ নিয়ে ঈদের চাঁদ খুঁজতাম। আরেকটি বিষয় না বললেই নয় আমাদের গ্রামে এখন সাতটি মসজিদ। আগে ঈদগাহে চলতো ঈদের নামাজ। গ্রামের সবার সঙ্গে দেখা হতো। এখন মসজিদ গুলোতে ঈদের নামাজ হওয়াতে সবার সাথে দেখা হয় না। মনে হবে আমরা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দলে বিভক্ত।

২৬ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ২:১১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: ঈদের চাঁদ খোঁজার মত উৎকন্ঠা আর আনন্দ আর কিছুতে ছিল না।

৬| ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৩ দুপুর ১২:৫৭

রাজীব নুর বলেছেন: আপনার আর আমার বয়স সমান সমান।
আপনার চিন্তা ভাবনার সাথে আমার চিন্তা ভাবনা অনেক অনেকখানি মিলে যায়।

যাইহোক, ঈদ মোবারক বন্ধু।

২৬ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ২:১৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
যারা চিন্তা করে তাদের ভাবনা চিন্তায় মিল অমিল থাকবেই।
ভালো থাকবেন।
ঢাকা ফিরে দেখা করবো বন্ধু।

৭| ৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ১:০৫

চারাগাছ বলেছেন: এই ঈদে বাঁসি পোলাও খেয়েছেন
ঈদ কেমন কাটলো?

৩০ শে এপ্রিল, ২০২৩ রাত ২:১৫

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: না খাইনি।

৮| ০৬ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ সকাল ১০:৪১

খায়রুল আহসান বলেছেন: 'শবে বরাত' এর বিকেল থেকে হালুয়া রুটি বিতরণ পর্বটি ভালো লাগতো। এতে পাড়ার এ বাড়ি ও বাড়ি মিলে পারস্পরিক সৌহার্দ্য বৃদ্ধি পেত। যদিও এখন এ সব রীতিকে বি'দাত বলে অনেকেই মনে করেন। সারা রাত জেগে নফল নামায পড়তে পড়তে ক্লান্ত হয়ে এক সময় ঘুমিয়ে পড়তাম; ফলে ফজরের ফরজ নামায মিস হয়ে যেত!
রেডিওতে ঢাকার আযান শুনে প্রকৃত সময়ের কয়েক মিনিট আগেই ইফতার করে ফেলায় মনের দুঃখে আপনার আম্মার কান্না দেখে আপনার দাদা তাকে যে সমবেদনা জানিয়েছিলেন, সে কথাটি পড়ে খুব ভালো লাগল। দিনে দিনে পরিবার ছোট হয়েছে, আর এসব সম্প্রীতি ও অভিভাবকসুলভ স্নেহ মমতা দেখানোর লোকও উধাও হয়ে গেছে।
প্রথম মন্তব্যটিতে আমি সাজিদ এর স্মৃতিকথা ভালো লেগেছে।

২৭ শে জুন, ২০২৪ দুপুর ২:৩৬

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:

জীবন থেকে কত কিছুই হারিয়ে যায়।
আমাদের সময় কেউ বলেনি ফরজ পড়ার নাম নেই নফল নিয়ে টানাটানি।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.