নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস

আমি \'স্মৃতিকাতরতা \' নামক ভীষণ এক রোগগ্রস্ত, সেই সাথে বিষাদগ্রস্থ মানুষ। আমার চিকিৎসার প্রয়োজন।

স্বপ্নবাজ সৌরভ

আমি সম্ভবত খুব ছোট্ট কিছুর জন্য মারা যাবো .......

স্বপ্নবাজ সৌরভ › বিস্তারিত পোস্টঃ

আমার বাবা যখন ছোটো : ইশকুলে যাবার আগে বাবার পেট কামড়াতো।

১১ ই জুলাই, ২০২৪ সকাল ১১:৩৩



আমার বাবা যখন ছোটো : আদরের ছেলের জন্যে লেখা লেখা শুরু করা বাবার বই।
লেখক : স্বপ্নবাজ সৌরভ




আমার বাবা যখন ছোটো : বাবার ইশকুল কামাই

আমার বাবা যখন ছোটো ছিল তখন প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে ইশকুলে যাবার আগে তার পেট কামড়াতো। শরীর খারাপ করতো ।
বাবার পেট কামড়ানোর ব্যাপারটা প্রথম প্রথম দাদু দাদীমা গুরুত্ব সহকারে দেখলেও পরে বুঝলো এটা আসলে বাবার ইশকুলে না যাবার বাহানা মাত্র। বাবার পেট কামড়ানোর কথা শুনলে হৈচৈ শুরু হয়ে যেত। সবাই উতলা হয়ে পড়তো , উদ্বিগ্ন হয়ে পড়তো।

'' আর মিষ্টি খাবে না। রোদে দৌড়বে না। আইসক্রিম এক্কেবারে নিষেধ তোমার জন্য। আমের আচার কেন খাও। ''
এইগুলো আসলে বাবার পেট কামড়ানোর কোন কারণেই নয়। কিন্তু দাদুরা কেন যে বুঝতে পারতো না আসল কারণটা ? অবশেষে দাদীমা বাবার দাদার থেকে হোমিওপ্যাথির দানা এনে খাইয়ে দিতো। বাবার দাদা হোমিওপ্যাথির দানা শিশিতে দিতে দিতে বলতেন , " থাক! আজ আর কুটি ভাইয়ের ইশকুলে যাবার দরকার নাই।"

বাবার দাদা বাবাকে কুটিভাই বলে ডাকতেন। হোমিওপ্যাথির দানা বাবার পেটে পড়ার সাথে সাথে বাবা 'কিছুটা' সুস্থ হতে থাকতো। বাবার দাদা যে ইশকুলে যেতে বারণ করেছেন সেই কথা ইতিমধ্যে বাবার কানেও গিয়েছে। হোমিওপ্যাথির দানা আর ইশকুলে যাওয়া বারণ - এই দুইয়ে মিলে ডাবল একশনে নেমে যেতো পেট কামড়ানোর বিরুদ্ধে। কেউ জিজ্ঞেস করলে বলতো একটু ভালো লাগছে। এর মানে হচ্ছে 'ভালো লাগাটা' ইশকুলে যাবার মত নয়। বাবা পুরোপুরি সুস্থ হতো ইশকুলের সময় পার হবার পর এমনকি হাত পা ছুড়তে পারতো দাদুভাই আর দাদীমা যখন ইশকুলে চলে যেতো। আরে হ্যাঁ , উনারাও ইশকুলে যেতো। তবে পড়তে নয় , ইশকুলে ওদের পড়াতে হতো।

পুরোপুরি সুস্থ হবার পর বাবা হুট্ করে ঘর থেকে বের হতো না। কেবল সুস্থ হওয়া একটা রুগী হুট্ করে ঘরের বাইরে যেতে পারে না। বাবা সেটা জানতো। তাই বাবা প্রথমে তার ড্রইং খাতা বের করতো , হরেকরঙের পেনসিলের বাক্সটা খুলে শুরু করতো ছবি আঁকা। বাবা ছবি আঁকতো বেশ। হরেক রঙে পুরো খাতাটা রাঙিয়ে দিতো। সবুজ রঙের গাছ , হলুদ রঙের সূর্য , খয়েরি রঙের খড়ের গাদা। বাবার সবচেয়ে পছন্দের ছিল নদীর ওপারের ছোপ ছোপ গাছ , পাহাড় আর ঘর বাড়ি।

পরিস্থিতি বুঝে বাবা বের হতো ছিপ হাতে মাছ ধরতে। ঘর থেকে উঠোনে নামতেই দেখা হতো বাবার দাদার সাথে। বাবার দাদা ঘরের জানালায় বসে থাকতেন। উনাকে কোন রকম সামলিয়ে বাবা চলে যেতো ছিপ হাতে একদম পুকুর পাড়ে। পুকুর ধারে ছিল বিশাল জাম গাছ। সেই জাম গাছের ছায়াতে বসে মাছ ধরতে বাবার মোটেও সমস্যা হতো না।
মাছ ধরা ভীষণ মনোযোগের ব্যাপার। কিন্তু বাবা মনোযোগ দিতে পারতো না। ঐডালে কাঠবিড়ালি লাফাচ্ছে , ওই পাতার ফাঁকে হলুদ পাখি উনি দিচ্ছে , কোন গাছে কাঠঠোকরা ঠক ঠক করছে , সেদিকেও বাবাকে নজর দিতে হতো। তাই কোন ফাঁকে মাছ টোপ খেয়ে চলে যেতো সেটা বুঝতে অনেক সময় লাগতো বাবার।

তবে বাবা আনাড়ি মাছ শিকারী নয়। মাঝে মাঝে বাবা পুকুরের মাছ ধরে সেই মাছের তরকারি দিয়ে দুপুরে ভাত খেত।
মাছের তরকারি নিয়ে হয়েছিল একবার বিপত্তি। একদিন রাতে দাদুভাই ভাত খেতে গিয়ে বললেন , ''এটা কি মাছ ?'
ফুফুরা বলে উঠলো , ''মৃগেল মাছ। সৌরভ ধরেছিলো।''
বাবা বসে ছিল পাশেই। ভাবলো এইবার একটু প্রশংসা পাওয়া যাবে। হলো উল্টোটা। দাদুভাই দিলেন ধমক , ''ইশকুলে না গিয়ে সারাদিন মাছ ধরা।''
বাবা কেঁদে ফেলবে কিনা বুঝতে পারলো না। তবে বুঝলো নিজের কাজ ঠিকঠাক করলেই সে প্রশংসা পেতে পারে। আদতে মাছ ধরা তো বাবার কাজ নয়।কিন্তু একটা ব্যাপার, দাদুভাই বাবাকে ধমক দিলেও মাছ খেয়েছিলেন ঠিকই। এটা ঠিক হয়নি। বড়রাও সবসময় সঠিক কাজটি করেন না।

মাছ ধরা ছাড়াও বাবা সারাদিন অনেক কাজ করতো। ইমারন খান ব্যাট নিয়ে খেলতো , টেনিস বল আকাশে ছুঁড়ে দিয়ে লুফে নিতো , ফড়িঙের পিছে দৌড়োতে , আমের ডালে বাঁধা দোলনায় দুলতো, রাশিয়ান বই পড়তো , রান্নাঘরের জন্য শুকনা পাতা কুড়াতো , গাছের শুকনা ডাল ভাঙতো , গাছের আম পাহারা দিতো , নারিকেল পড়েছে নাকি দেখে বেড়াতো এমন কি ছড়া -কবিতাও লিখতো । ইশকুল কামাই দিলেও বাবার কাজের শেষ ছিল না। আর ইশকুলে গেলে কিন্তু এগুলো সম্ভবও হতো না ।


দাদুরা যখন বুঝলো বাবার ইশকুলে যাবার আগে পেট কামড়ানোটা ইশকুলে না যাবার বাহানা মাত্র, তখন হাজার পেট কামড়ালেও বাবাকে ইশকুলে যেতে হতো। বাবা ইশকুলে যেত ঠিকই কিন্তু যেত চোখ মুছতে মুছতে। সারাদিন ইশকুলে বসে থাকবে আর বাড়ির এদিকে কতনা কিছু হয়ে যাবে! এই চিন্তায় কান্না চেপে রাখা আসলেই কষ্টকর। সেই কষ্ট চেপে রাখতে না পেরে বাবা মাঝে মাঝেই ক্লাসে বসে কেঁদে ফেলতো। সে আবার আরেক গল্প।

আমার বাবা ছোটো থেকে বড় হয়েছে। ইশকুলে যেতে হয়না আর। অফিস যেতে হয়। যদিও বাবার এখন আর পেট কামরায় না। তবুও প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে বলে , '' আজ অফিস না যায়। বাসাতেই থাকি।''
আমিও মাঝে মাঝে বলি - বাবা, তুমি আজকে ছুটি করো।

অফিস যাবো না যাবো না করে বাবা অফিস যায় ঠিকই কিন্তু আমার মন খারাপ হয়। কারণ বাবা অফিস না গেলে সবচেয়ে বেশি খুশি হই আমি। যদিও অফিস কামায় দেয়া মোটেও কাজের কথা নয়। দুঃখের কথা আর ভয়ঙ্কর ব্যাপারটা হচ্ছে ইশকুলে যাবার আগে আমার পেট কামড়ানোটা বাবা বিশ্বাসই করবে না। কারণ বাবাও তো একসময় ছোটো ছিল। আমার মতোই ছোটো ছিল।
অফিস যেতে যেতে ছোটবেলার মত বাবার চোখ ভিজে ওঠে কিনা কিংবা অফিসে বসে হঠাৎ করে কেঁদে ফেলে কিনা , সে কথা বাবার কাছে এখনো জানতে চাওয়া হয়নি। ঠিক করেছি একদিন জানতে চাইবো।




ছবিঃ আম গাছে বাঁধা দোলনায় বাবা দুলতো।
-------------
এই ব্লগে আমি শৈশবে পড়া রাশিয়ান বই নিয়ে আমার রাশিয়ান শৈশব পোস্ট করা শুরু করেছিলাম। এবার বাবা যখন ছোটো নামের বইয়ের অনুপ্রেরণায় ঠিক করেছি আমার ছোট ছেলেটার জন্য গল্প লেখার।

মন্তব্য ১৪ টি রেটিং +৬/-০

মন্তব্য (১৪) মন্তব্য লিখুন

১| ১১ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ২:২৪

শাওন আহমাদ বলেছেন: আপনাকে খুঁজছিলাম, পেয়ে গেলাম।
আপনার লেখায় নিজের আয়না দেখতে পাচ্ছিলাম। আমিও ভীষণ রকমের ইশকুল কামাই করতাম। এই বাহানা সেই বাহানা লেগেই থাকত। তবে আব্বা খুব কড়া হওয়ায় তেমন একটা সুবিধা করতে পারতাম না।

১৪ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৩৬

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ছোটবেলার অভ্যাস এখনো আছে।
এখনো মাঝে মাঝে অফিস যেতে ইচ্ছা করে না। যদিও কারণ ভিন্ন।

২| ১১ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৩:০৮

মরুভূমির জলদস্যু বলেছেন:
আমার বাবা যখন ছোটো : ইশকুলে যাবার আগে বাবার পেট কামড়াতো।
- এ্টাতো আমারও হইতো!!

১৪ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৩৯

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন: অনেকেরই হতো।
আমার মাঝে মাঝে সত্যিই কামড়াতো। টেনশন কিংবা উৎকণ্ঠা। এখনো কামড়ায় । আইবিএস এর কারণে।

৩| ১১ ই জুলাই, ২০২৪ বিকাল ৫:৪১

করুণাধারা বলেছেন: কেন যেন মনে হচ্ছে স্কুলে যাবার আগে পেট কামড়ানোর এই গল্প আগে পড়েছি!!

কিন্তু আবার পড়তে ভালো লাগলো। +++++

১৪ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৪১

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
পড়েছেন হয়তো। একটু ঘষামাজা আছে। নতুন দুটো গল্প লেখার সময় এটা সংশোধন করেছি।
ছেলেবেলার কথা মনে হয়েছে হয়তো। তাই বারবার পড়েও ভালো লাগা আছে।

৪| ১১ ই জুলাই, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৩

শায়মা বলেছেন: বাবা যখন ছোট এই লেখাটাও মন কেড়ে নিলো।

১৪ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৪৩

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
ভালো থাকবেন শায়মা আপু।
অনুপ্রেরণায় .....

৫| ১১ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:৩৯

জনারণ্যে একজন বলেছেন: 'স্মৃতিকাতরতা' নামক রোগে আমিও প্রবলভাবে আক্রান্ত।

একটু বিরক্তিকর বুঝতে পারি - কিন্তু আপনাদের কোনো কোনো লেখায়, না চাইলেও কেন জানি আমার মন্তব্যে অবচেতনভাবেই রিলেট করে ফেলি বিস্মৃতপ্রায় কোনো স্মৃতি।

আপনার সন্তানের জন্য অনেক আদর রইলো। শুভকামনা থাকলো আপনার জন্য, যেন এরকম অনেক অনেক গল্প ছেলেকে উপহার দিতে পারেন। যেদিন সে বড়ো হবে, সেদিন বুঝতে পারবে তার বাবা তার জন্য কি অসাধারণ, অমূল্য সব উপহার রেখে গেছেন।

১৪ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৪৬

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:

স্মৃতিকাতরতা' কি উপভোগ্য আপনারে কাছে ?
এই প্রশ্নটা সুযোগ পেলেই করি।

বাচ্চার জন্য এমন কিছু গল্প নিয়ে বই প্রকাশের ইচ্ছা আছে। শুধু মাত্র আমার ছেলের জন্য। আমার ছেলেবেলা , শৈশব আর স্মৃতিকাতরতা নিয়ে।

৬| ১১ ই জুলাই, ২০২৪ রাত ১০:৫৪

মনিরা সুলতানা বলেছেন: ছোট বেলায় এমন অনেক কিছুই ঘটত স্কুলে যাবার ভয়ে।
লেখায় ভালোলাগা।

১৪ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৫০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
আপনার স্কুলে যেতে কেন খারাপ লাগতো ?
মানে মাঝে মাঝে কামাই দিতে মন চাইতো কেন ?

আপনার অবর্তমানে অনেক কিছু ঘটে যাবে , এমন কিছু কি মনে হতো ?

৭| ১২ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১২:০৪

মিরোরডডল বলেছেন:




ছবির বাবুটা খুব কিউট, এটা কি আমাদের ইভানুস্কা?


১৪ ই জুলাই, ২০২৪ দুপুর ১:৫০

স্বপ্নবাজ সৌরভ বলেছেন:
বাবু কোই ?
ক্লাস ফাইভে পড়ি সম্ভবত।

আপনার মন্তব্য লিখুনঃ

মন্তব্য করতে লগ ইন করুন

আলোচিত ব্লগ


full version

©somewhere in net ltd.