![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
মানিক বার একাডেমী স্কুলে আমাদের সাথে পড়তো। প্রতিদিন সকাল ছয়টায় ঘুম থেকে উঠে গরুর দুধ দোয়াতো। তারাপর সেই সেই দুধ নিয়ে হাটতে হাটতে আসতো চাষাঢ়া রেলষ্টেশনে। নয়টা পর্যন্ত দুধ বিক্রির চেষ্টা করতো। যেদিন ক্রেতা পেতে দেরী হতো সেদিন ওর স্কুলে যেতেও দেরী হতো। ফলে স্কুলের প্রথম পিরিয়ডেই মার খেতো। মানিক অন্য সেকশনে পড়তো। কিন্তু আমার সাথে ভালো ভাব ছিলো। প্রতিদিন দুধ বিক্রি করে ও যা টাকা পেতো এই দিয়ে ওদের সংসার চলতো। ওর বাবা কোথায় ছিলেন তা জানা হয়নি। স্কুল ড্রেসের যে শার্টটা ওইটাই ও বাসায় পড়তো। দুধ বিক্রি করতে গেলেও পড়তো। স্কুলে বছরে একদিন পিকনিক হয়। সেদিনও ওই শার্ট পড়ে এসেছিলো। ওর প্যান্টের হুক নষ্ট হয়ে গিয়েছিলো। তাই প্যান্টে দড়ি লাগানো থাকতো। শার্ট দিয়ে প্যান্ট থাকতো ঢাকা। তবে ওর একটা টেনিস বল ছিলো। ও দুধ বিক্রির টাকা থেকে কখনই কোন টাকা সড়াতো না। পুরো টাকা ওর মার কাছে নিয়ে দিতো। একবারই টাকা সরিয়েছিলো। টেনিস বল কেনার জন্য। সে বল দিয়ে আমরা খেলতাম। খুব ভীতু, খুব সহজ সরল মানুষ ছিলো। ওর ইচ্ছে ছিলো ও ফুটবল খেলোয়ার হবে।
মানিক ফুটবল খেলোয়ার হতে পারেনি। ও কমলাপুর রেলষ্টেশনে এখন বিস্কুট বিক্রি করে। কয়েক বছর আগে দেখা হয়েছিলো। ও নাকি স্কুলের বন্ধুদের দূরে থেকে দেখলেই লজ্জায় পালিয়ে যায়। অন্য এক বন্ধু জানালো।
আমার ছেলের মানিকের মতো কোন বন্ধু থাকবে না। কারন ও যে স্কুলে পড়ে সে স্কুলের পড়ুয়াদের সবার পরিবারের আর্থিক সামর্থ হয় ওর পরিবারের মতো, কয়েজনের এর চাইতে বেশি। আমাদের সময় গরিব, ধনী, মধ্যবিত্ত সবাই একসাথে পড়েছি। এখন গরিবদের সরকারি স্কুল। মধ্যবিত্তদের বেসরকারি পর্যায়ের কিন্তু মধ্যবিত্তদের উপযোগি স্কুল। আর ধনীদের প্রচুর বেতনের অজস্র সূযোগ সমৃদ্ধ স্কুল।
আবাসন, চিকিতসার ক্ষেত্রেও এমনিভাবে বৈষম্য প্রকট হচ্ছে। আমি একজন দরিদ্র মানুষের জীবনটা যেমনভাবে জেনেছি আমার ছেলে অনেক কম জানবে। ওর সমসাময়িক একজন ধনীর সন্তান আরো কম জানবে।
আগামী প্রজন্মের মধ্যে ভয়ানক শ্রেণী বিভেদ তৈরী হবে। শ্রেণী বিভেদ মানুষের মধ্যে এক পর্যায়ে প্রচন্ড ক্ষোভ তৈরী করে। ক্ষোভ থেকে দরিদ্ররা এক সময় ধনীদের উপর প্রতিশোধ নেবে। তারা চরম নিরাপত্তাহীনতার মধ্যে পড়বে। ' ছেলের ভবিষ্যত' চিন্তা করে আমরা সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন করে যেসব স্কুল কলেজ তৈরী করেছি তা বুমেরাং হয়ে দাড়াবে।
আমাদের ছেলেদের অধিকতর নিরাপত্তা দিতে শিক্ষা ব্যবস্থায় ভারসাম্য আনা প্রয়োজন। বিশাল জনগোষ্ঠির শিক্ষার আশ্রয় সরকারি স্কুলগুলির মান না বাড়িয়ে তা সম্ভব না।#
শরীফ উদ্দিন সবুজ, ২১-১১-২০১৩।
২| ২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১
আরিফা হক বলেছেন: আমাদেরকে শিখান হয় বস্তির গরীব ছেলেমেয়েদের সাথে না মিশতে, আমরা নাকি বিগড়ে যাব। এর উল্টাও হতে পারে, হয়ত তারা শুধরে যাবে।
আমি সরকারি স্কুলে পড়ি, আর আমি যা দেখলাম তাতে মনে হয় গরীবের ছেলেমেয়েরাই ভালো, তারা পড়াশোনা করে বাঁচার জন্য, বড় হওয়ার জন্য। আমরা মধ্যবিত্তরা স্বপ্নপুরনের জন্য। আর বড়লোকের ছেলেমেয়েদের কিছু চিন্তা করতে হয় না, তারা ফেল করলেও জীবনে বড় হয়, পরীক্ষায় না টিকলে কি, বাবার টাকা আছে তো। তাদের অধিকাংশের কাছেই জীবনের মূল্য নেই। তাদের বাবা-মা তাদের দুধে-ভাতে রাখে, কিন্তু সেই দুধ-ভাতই তাদের গলায় আটকে যায়...
আপনার লেখাটা ভালো লাগল
©somewhere in net ltd.
১|
২১ শে নভেম্বর, ২০১৩ সন্ধ্যা ৭:০১
আরিফা হক বলেছেন: আমাদেরকে শিখান হয় বস্তির গরীব ছেলেমেয়েদের সাথে না মিশতে, আমরা নাকি বিগড়ে যাব। এর উল্টাও হতে পারে, হয়ত তারা শুধরে যাবে।

আমি সরকারি স্কুলে পড়ি, আর আমি যা দেখলাম তাতে মনে হয় গরীবের ছেলেমেয়েরাই ভালো, তারা পড়াশোনা করে বাঁচার জন্য, বড় হওয়ার জন্য। আমরা মধ্যবিত্তরা স্বপ্নপুরনের জন্য। আর বড়লোকের ছেলেমেয়েদের কিছু চিন্তা করতে হয় না, তারা ফেল করলেও জীবনে বড় হয়, পরীক্ষায় না টিকলে কি, বাবার টাকা আছে তো। তাদের অধিকাংশের কাছেই জীবনের মূল্য নেই। তাদের বাবা-মা তাদের দুধে-ভাতে রাখে, কিন্তু সেই দুধ-ভাতই তাদের গলায় আটকে যায়...
আপনার লেখাটা ভালো লাগল