![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
কিছু দিন পর ঈদ,
অথচ আব্বার দেখা নেই।
জানালার শিক ধরে রাস্তার দিকেই চেয়ে আছে ছোট্ট রতন।
অপেক্ষা আর শেষ নেই।
আব্বা কি তাইলে আমার জন্য জামা নিয়া আইবো না,
____________
নাহ,
আর ভাবতে পারছে না রতন।
মসজিদে মাগরিবের আজান এই পড়ল বলে,
মা ডেকে চলছে ইফতারের জন্য।
ইফতার আর কি!
ওই তো পানি আর মুড়ি।
কখনও এক টুকরো গুড় বা একফালি পেঁপে।
ওসবে মন নেই রতনের।
ওর চোখ রাস্তায়।
ওই পথ ধরেই আব্বা আসবেন।
নতুন লাল জামা হাতে নিয়ে।
লাল জামা না হলেও অবশ্য ক্ষতি নেই, বলা আছে।
পাশের বাসার রফিকের নতুন জামাটা লাল রঙের কি-না, তাই বলেছিল আর কি!
লাল জামা লাগবে না।
ওই যে এ বছর নতুন বেরিয়েছে জামার কলারের পেছনে ইংলিশে লেখা ওই রকম হলেই হবে।
_____________
এবার রোজা শুরুর প্রথম দিন থেকেই বাবাকে বলে আসছে রতন।
গত ঈদে নতুন জামা হয়নি।
পুরনো একটাকেই ধুয়ে,
মাড় দিয়ে পরিয়েছিলেন মা।
এবার আব্বা বলেছিলেন দেবেন।
কিন্তু দেবেন বললেই কি হয়?
সারাটা মাস হাড়ভাঙা খেটেও ২০০ টাকা বাড়তি জমাতে পারেননি রতনের রাজমিস্ত্রি বাবা কালাম।
ঈদ তো চলে আসছে,
কালাম আশায় ছিলেন রোজার মাস চুক্তিতে যে বাড়িতে জোগালি কাজ করছেন,
সেই মালিক বলেছিলেন সামনে ঈদ দিনে বেশি কাজ করতে পারলে ‘এক্সট্রা টাকা’ দেবেন।
ওই বোনাসের আশায় সারাটি মাস খেটেছেন কালাম।
_________________
তারপর চাঁদ রাতে বিকেলে ওই বাড়িতে গিয়ে দেখেন মালিক নেই,
সপরিবারে ঈদ করতে দেশের বাড়ির পথে।
ম্যানেজারের কাছ থেকে দিনকাবারি টাকাটাই বুঝে নিতে হলো শেষমেশ।
কালাম এখন দিশেহারা,
খাবারের ব্যবস্থা করবে না কি ছেলের শখ পূরণ?
ওদিকে আজান শুরু হয়ে গেছে।
বুকের ভেতর হুহু করে উঠল রতনের।
ঈদের নতুন জামা এবারও হলো না।
চাঁদ দেখার আনন্দে পাশের বাড়িতে পটকা ফুটছে, কিন্তু ওর মনে আনন্দ নেই।
ইফতারের সময় গড়িয়ে যায়, তাতেই-বা ওর কী।
এক সময় আর পারল না, ডুকরে কেঁদে উঠল।
কাঁদতে কাঁদতে ঘুম।
_________________
গল্প শেষ।
তাই কি?
নাহ,
এখানেই শেষ হয় না গল্পটা।
তবে শেষটা শোনার কি আদৌ দরকার আছে?
এ রকম রতনের তো কমতি নেই এ শহরে।
হাজারো রতনের এক ঈদ পার হয়ে আরেক ঈদ চলে যায়, অথচ গায়ে নতুন জামা ওঠে না।
আর আমাদের মধ্যবিত্ত সমাজে ওদের কি হলো-না হলো জেনে বিশেষ কিছু একটা যায়-আসেও না।
খুব কি গায়ে লাগল কথাটা?
__________________
তাহলে চলুন একটা প্রজেক্ট হাতে নিই।
গল্পের শেষটা চলুন আমরাই লিখি।
হিসাবটা সহজ।
এই রোজার মাসের শুরু থেকেই শুরু করা যায়।
আমাদের আশপাশ থেকে প্রথমে রতনের মতো দুয়েকজন পথশিশুর গল্প খুঁজে বের করতে হবে।
তার পর পাল্টে দিতে হবে গল্পের শেষ টুকু।
নিজেদের মতো গল্প লিখে ওদের গায়ে তুলে দেব ঈদের নতুন জামা।
ওদের মুখে হাসি ফোটানোর এ কাজটা কি খুব কঠিন?
মনে তো হয় না।
কত খরচই না করি আমরা নিজেরা।
আমরা কি একটু পারি না এমন দুয়েকটা সুবিধাবঞ্চিত শিশুর জন্য নতুন একটা জামার ব্যবস্থা করতে?
একটু বাড়তি খরচ তো আমরা করতে পারি।
নিজের জন্য কয়েক হাজার টাকা খরচ করে ব্র্যান্ডের জামা কিনছি।
ঘড়ি, জুতার মাঝেও অনেক টাকা খরচ করি আমরা।
স্মার্টফোন কিনি হাজার হাজার টাকায়।
অথচ একটা শিশুর নতুন জামা কিনতে কয়েক শ’ টাকাই যথেষ্ট।
প্রতি মাসে ফোনে যত টাকার কথা বলছি, এসএমএস করছি, ফেসবুক, ইউটিউব, গুগল ব্রাউজ করছি ওই টাকার সামান্য অংশ খরচ করলেই কিন্তু হয়ে যাবে।
মাসটা সহমর্মিতার।
তাই রতনদের স্যাড এন্ডিংয়ের গল্প বদলে হাসি ফোটানোর উদ্যোগ নিতে হবে এখনই।
আর বদলে দিলেই শুধু হবে না।
ছড়িয়ে দিতে হবে সর্বত্র।
জানাতে হবে শহর-গ্রামের সবাইকে।
আস্তে-আস্তে সবাই জানবে,
এগিয়েও আসবে।
তারপর একদিন এ দেশে আর কোনো রতনের ঈদের জামা না পেয়ে কেঁদে কেঁদে ঘুমিয়ে পড়বে না।
_____________
এটুকু আশা করা কি দোষের???
_________________________
©somewhere in net ltd.