![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নিজেকে খুব ভালবাসি।
-কিরে?এখনো ঘুমাচ্ছিস?উঠ তাড়াতাড়ি।বললি না আমার সাথে বাজারে যাবি?
-বাবা।আর একটু ঘুমোতে দেও না।১০টার দিকে যাবো।
-তাইলে খাবি কখন বাবা? রান্না করতে সময় লাগবে তো।তাছাড়া আজকে মেহমান আসবে বাসায়।তাড়াতাড়ি বাজার না করলে এসে তারা খাবে কি?
-ও বাবা।একটু সময়।আর ১০ মিনিট ঘুমাই প্লিজ?
-আচ্ছা ঘুমা।তবে ১০ মিনিটের ১ সেকেন্ড ও বেশি না।
.
(ছেলেটা ঘুমিয়ে থাকে আর বাবা মাথায় হাত বুলিয়ে দেয় ছেলেটার।বাবার হাতের স্পর্শে ঘুমে আবারো মগ্ন হয়ে পরে লক্ষী ছেলেটা।বাজারে যাওয়ার কথা সকাল ৭টায়।বাবা ছেলেটাকে ডাক দিয়েছিল ৬টায়।কেননা বাবা জানত হঠাৎ ডাকলে তার শরীর খারাপ করবে।তাই ১ঘন্টা আগেই ডেকেছে।তারপর ছেলেটাকে ১০ মিনিটের কথা বলে এক ঘন্টা মন খুলে ঘুমোতে দিল বাবা।আস্তে আস্তে আবার ডেকে তুলল)
.
-বাবা।তোমার হাতের স্পর্শে আমার ঘুমটা দারুন হয়েছে।তুমি এভাবে মাথায় হাত বুলিয়ে দিলে আমি ভালভাবে ঘুমোতে পারি বাবা।আজ থেকে প্রতিদিন হাত বুলিয়ে দিবা কেমন?
-আচ্ছা বাবা দিব।এবারে উঠ।বাজারে যাবি না?
-হ্যা দাঁড়াও যাচ্ছি।
.
(বলেই লাফ দিয়ে হাত মুখ ধুয়ে আসে ছেলেটা।আজকে বাসায়ও নাস্তা করবে না।বাবার সাথে বাজারে বসে একসাথে নাস্তা করবে ছেলেটা।মাকে বলেই বাবার হাত ধরে নাচতে নাচতে বাজারে চলে যায় ছেলেটা)
.
-কিরে! তুই এর নাচতেছিস কেন?
-বাবা আজ কেন জানিনা বাজারটা নতুন নতুন লাগছে।খুব সুন্দর। আর কত্ত মানুষ ভিড় করছে দেখছো?আজকে বাজারে এত ভিড় কেন?
-আজকেই তো মানুষ বেশি বাজারে আসে তাই।তুই বেশি লাফালাফি করিস না।
-আমি কি লাফালাফি করি?শুধু বকো কেন আমাকে?
-দেখছো!!! আমার ৫বছরের ছেলেটা দেখি বড় হয়ে গেছে।
-বাবা।আমি কি ছোট বলো?তুমি খালি খালি আমাকে ছোট বলো।
-না। তুই অনেক বড়।এবারে হইছে? মা কি কি নিতে বলছে মনে করে বল দেখি?
-চাল,ডাল,আটা,ময়দা,সুজি,নুডুলস,সেমাই.......
-হইছে বাবা!! থাম থাম।তুই তো দেখি দোকানের সবগুলোর নাম বলতেছিস।এতে দেখি একটা দোকানের পুরোটাই কিনে নিয়ে যেতে হবে।
-হেহেহে।তাইলে সবই কিনে নেও বাবা।
-হইছে তোর আর বলতে হবে না।এবারে থাম।আমিই নিজেই নিব।
-বাবা একটা গাড়ি কিনে দিবা?
-কি গাড়ি?
-খেলনা গাড়ি।ওইযে ব্যাটারিতে চলে।
-আচ্ছা দিবো।
-বাবা।বাবা।এখুনি কিনে দেওনা।আমি খেলবো ওইটা দিয়ে।
-আচ্ছা বাবা।বাজারটা করে নিই তারপরেই দিব।
.
(বাজার করে ছেলেটাকে গাড়ি কিনে দেয় বাবা।এরপর আবার বাড়ির পথে চলতে থাকে)
.
-বাবা।পায়ে কেন যেন খুব ব্যাথা করতেছে।
-কোথায় বাবা দেখি?(বাবা ব্যাকুল হয়ে বলল)
-এইযে এখানে।
-দাঁড়া ডাক্তারের কাছে যাবো।
-উহু।বাবা এত ব্যাথা পাইনাই।হালকা হাটলেই ঠিক হয়ে যাবে।
.
-বেশি বুঝিস আমার থেকে।
.
(ছেলেটার পায়ের ব্যাথা দেখে এক নিমিষেই ব্যাকুল হয়ে যায় বাবা।চেহারা অস্থির চাপ।এরপর ডাক্তারকে দেখালো ডাক্তার বলল তেমন কিছু হয়নি শুধু একটু মচকে গেছে।কিছু না হলেও বাবার মন কি আর মানে!!! সে তো ছেলেটাকে খুব ভালবাসে।একটাই মাত্র ছেলে তার।তাই ছেলের কষ্ট একেবারেই সহ্য করতে পারেনা সে।)
.
-বাবা দেখছো? আমি বলছিলাম না কিছু হয়নাই আমার শুধু শুধু।
-বুঝবি নারে বাবা।তুই ব্যাথা পেলে আমার আর তোর মায়ের যে কি কষ্ট হয় তা তুই বুঝবি না।
.
(বলেই নিজের ছেলের দুই গালে দুটো চুমো এঁকে দেয় বাবা।এরপর কোলে তুলে নেয় ছেলেটাকে।হাতে দুই ব্যাগ আর কোলে নিজের একটামাত্র ছেলেকে নিয়ে গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাঁটতে থাকে বাবা।)
.
.
এরা কোন বাস্তব কাহিনি নয়।শুধুই কল্পনা।তবুও সব বাবারাই এমন হয়।নিজেদের ছেলের ব্যাথা,অস্থিরতা,ব্যাকুলতা দেখলে কোন বাবাই ঠিক থাকতে পারেনা।বাবার ভালবাসা কেউ দিতে পারেনা।বাবার মত কেউ ভালবাসতে পারেনা।প্রত্যেকটা বাবাই নিজের সন্তানের জন্য আদর্শ।সন্তানের ভালবাসার একটামাত্র আশা।হয়তবা প্রয়োজনে বাবা আমাদের অনেক সময় বকা দেয়।কিন্তু সেটা নিজের জন্য নয় তোমার জন্যেই।অনেকেই বিরক্ত হয় বাবার উপর।কিন্তু তারা এটা বুঝেনা বাবা কার জন্য,কিসের জন্য কথাগুলো বলছে।বাবার মর্ম সবাই বুঝে না।সবাই মর্যাদাও দিতে পারেনা।বাবার ভালবাসা বুঝে না।যখন বাবা আস্তে আস্তে হারিয়ে যায়, পৃথিবী ছেড়ে চলে যায় তখন সবাই বুঝে বাবা জীবনে কি ছিল।
.
.
আমিও আমার বাবাকে হারিয়েছি।বাবা যেভাবে ভালবাসত সেভাবে কেউ ভালবাসতে পারবে না কোনদিন।বাবা বলে যখন আমি ডাক দিব তখন ওপাশ থেকে কেউ আর জবাব দিবে না।বাবা আর ভালবাসবে না।বাবা হারিয়ে গেছে আমার থেকে।হারিয়ে গেছে।বাবাহারা সন্তানের কষ্ট কেউ বুঝেনা।যখন রাস্তায় অন্যের বাবারা তাদেরকে আদর করে ডাকে,সেটা দেখে বুকটা ছিড়ে যায় বাবাহারা ছেলেটার।গোপনেই কষ্ট পায় সে।হয়ত জীবনের শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত এভাবেই বাবাকে না পাওয়ার যন্ত্রনা ভোগ করবে সে।নিজের বুকের ভিতর লুকিয়ে থাকা বুক ফেটে যাওয়া কান্না,কষ্টগুলো কেউ আর দেখবে না।কেউ বুঝবে না।
.
.
লেখা:- Siam Mehraf
©somewhere in net ltd.