![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নিজেকে খুব ভালবাসি।
অনেকদিন হলো বিদেশে বাসা বেঁধেছে অর্নব।প্রায় ৪বছর আজ।অর্নবের পড়াশুনা যখন শেষ হয়ে গিয়েছিল তখন অর্নবের পরিবার তাকে বিয়ে দেয়ার জন্য জোড় করে।অর্নব একটা মেয়েকে অনেক ভালবাসত।মেয়েটার নাম সাথী।সাথী একটু গরিব পরিবারের মেয়ে তাই অর্নবের পরিবার সাথীর সাথে তার বিয়ে দিতে প্রস্তুত ছিলেন না।অর্নব খুব হাইলেভেলের ফ্যামিলির ছেলে।ছোটবেলা থেকে অর্নবের কোন ইচ্ছাই তার বাবা-মা অপুর্ন রাখেনি।
.
নিজের পরিবারকে সাথীর কথা বললেও অস্বীকার করে বাবা মা।কিন্তু সাথীকে অনেক ভালবাসে সেই খাতিরেই নিজের সর্বস্ব ত্যাগ করে সাথীকেই বিয়ে করে অর্নব।বিয়ের পর নিজ শহর ছেড়ে অনেক দূরে চলে যায় অর্নব আর সাথী সেখানেই বাসা বাধে দুজনে।অর্নব কিছুদিন পরেই বড় সফটওয়্যার কোম্পানিতে চাকরী পায়।অনেক ভাল স্যালারিতে।অর্নব আর সাথীর খুব সাচ্ছন্দে দিন কাটাতে থাকে।কোন প্রকার সমস্যাই তাদের ছুঁতে পারেনা।ভালবাসা,হালকা রাগ,দুষ্টমি ইত্যাদিতেই চলে যায় তাদের জীবন।মাঝে মাঝে বাইরে ঘুরতে যায়
দুজনেই।
.
এভাবেই চলে যায় ২টি বছর।এখন অর্নবের একটা ছোট্ট মেয়ে আছে।তার নাম ভালবেসে রেখেছে স্বপ্না।দুজনের নাম মিলিয়েই রেখেছে নামটা।অর্নব যখন প্রথম চাকরী পায় তার কিছুদিন পরেই বিদেশে ট্রান্সফার হতে হয় তাকে চাকরীর কাজে।সাথীকে রেখে কোথাও যায়না সে তাই সাথীকে নিয়েই বাসা বাঁধে আবার অদুর প্রান্তে।
.
.
এখন প্রায় ৪বছর হয়ে গেছে।মেয়েটাও আদো আদোভাবে কথা বলতে শিখেছে।সবাই বলে প্রেম করে বিয়ে করলে নাকি সেই সংসার সুখের হয়না।কিন্তু সাথী আর অর্নবের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা পুরোপুরিই বেমানান।তাদের সংসারের মত সুখের আর কোন সংসার নেই।
.
প্রতিদিনের মত আজকেও সকাল ১০টায় অফিস অর্নবের।নাস্তা খেয়ে মেয়ে আর বউকে হালকা আদর করেই অফিসের পথে রওয়ানা দেয় অর্নব।সাথী আর তার কোলে থাকা মেয়েটা দরজার কোনে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে টাটা জানাচ্ছে অর্নবকে।
.
রাস্তায় যেতে যেতে হঠাৎ অর্নবের রাস্তার পাশে থাকা একটা লোকের দিকে চোখ পরলো।লোকটা একটা হস্পিটালের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হাতে একটা ফাইল নিয়ে।অর্নব গাড়ি থেকে নেমে তার কাছে ছুটে যায়।লোকটাকে দেখে অবাক হয় অর্নব।লোকটাও কম অবাক হয়না।অর্নব বলছেঃ-
.
-বাবা!!তুমি এখানে?কেমন আছো তুমি বাবা?
-হ্যা ভালোই আছি তোকে ছাড়া।সেই যে চলে এলি আর তো কোন খবরই নেই।একবারো খবর নিলি না মা কেমন আছে,বাবা কেমন আছে?
-বাবা এসব বাদ দেও।আগে বলো দেশ ছেড়ে তুমি এখানে কেন?কি সমস্যা খুলে বলো..
-তোর মা....
-হ্যা বলো।কি হয়েছের মায়ের?
-তোর মায়ের ক্যান্সার হয়েছে।
-কি বলছো এসব তুমি বাবা?
-হ্যা ঠিকই বলছি।তারই চিকিৎসার জন্য আজ দেশ থেকে বিদেশে এলাম।ভাগ্য দেখ!!তোর সাথেও দেখা হয়ে গেল।তোর মায়ের অনেক রক্তক্ষরন হইছে।জরুরি এ পসেটিভ রক্তের দরকার।তাই বাইরে যাচ্ছি রক্ত খুঁজতে।
-একটু দাঁড়াও বাবা।আমিও যাবো।
.
(অর্নব সাথীকে ফোন দিয়ে সব খুলে বলে।সাথী সাথে সাথে অর্নবকে জানায় তার রক্তও এ পসেটিভ।তাই সে আসতেছে বলেই ফোন কেটে দেয়।৩০ মিনিট পর সাথীও হস্পিটালের সামনে পৌঁছে যায়।সেখানে গিয়েই অর্নবের বাবাকে দেখে পা ছুঁয়ে সালাম করে।আর দৌঁড়ে চলে যায় রক্ত দিতে।প্রায় ২ব্যাগ রক্ত দেয় সাথী।ডাক্তার বলেছে রক্ত না পেলে রোগীর খারাপ কিছু হতে পারত।সাথী অনেক নামায, দোয়া পরে যাতে অর্নবের মা সুস্থ হয়ে যায়।আর আল্লাহ সাথীর কথা শুনেও নেয়।)
.
২দিন পর......
.
অর্নবের মা সুস্থ।অর্নবের বাবা সাথীর মন দেখে তাকে মেনে নিয়েছে নিজের ছেলের বউ হিসেবে।অর্নবের মায়ের জ্ঞান ফেরার সময় অর্নবের বাবা তাকে সব খুলে বলেন।এত উদার মন দেখে অর্নবের মায়ের চোখেও পানি এসে যায়।সেও মন থেকে মেনে নেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।এরপর নাতনীর মুখ দেখে পুরোনো কথাগুলো পুরোপুরিই ভুলে যায় তারা।আস্তে আস্তে সব কিছু গুছিয়ে যেতে থাকে।অর্নবের বাবা মা অর্নব,সাথী আর স্বপ্নাকে তাদের সঙে দেশে চলে যেতে বলে।এখনো অর্নবের যা আছে তা দিয়ে অনেক চলে যাবে তাদের।এসবের দিকে না তাকিয়ে বাবা-মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেশে ফিরে যায় তারা।এরপর সাথীর পরিবারো সব মেনে নেয়।এভাবেই সব ঠিকভাবে চলতে থাকে।
.
.
বাবা-মায়ের ভালবাসা কখনোই সন্তানের বিপরীতে যায়না।হয়তবা ক্ষনিকের জন্য,ক্ষনিক সময়ের জন্য সেটা ভুল হয়।বুঝাবুঝির ভুল হয়।কিন্তু শত বাধার মধ্যেও ভালবাসাটা ভালবাসাই থাকে।শুধু প্রকাশ করা হয়ে উঠে না।বাবা-মা সত্যিই সবসময় নিজের সন্তানের জীবনকে আগলে রাখে নিজের জীবন দিয়ে হলেও।সময়ের জন্য হয়তবা সেটা ওলোট-পালোট হয়ে যায়।কিন্তু বিন্দুমাত্র ভালবাসা জায়গা থেকে সরে যায় না।ভালবাসা ভালবাসাই থাকে।তাই আমাদের সকলের উচিত বাবা-মাকে প্রচুর পরিমান ভালবাসা সময় দেয়া।তাদেরকে বুঝতে শেখা তাদের ভালবাসাটাও বুঝতে শেখা।তাহলেই আপনি তাদের আদর্শ সন্তান হয়ে উঠবেন।
.
.
লেখা:- Siam Mehraf
©somewhere in net ltd.