![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নিজেকে খুব ভালবাসি।
দেখতে দেখতে আজ তিন সপ্তাহ হয়ে গেল।বাবা হারা ছেলেটা বাবাকে মনে করে কাটিয়ে দিচ্ছে রাত-দিন।বাবা যখন মারা যায় তখন ছেলেটার মাঝে খুব ব্যস্ততা ছিল।মারা যাওয়ার পরে কয়েকটা দিন ব্যস্ততাবিহীন দিন কাটলো ছেলেটার।বাবাকে ভেবে ভেবে সারাদিন কাঁদত।আড়ালে আড়ালে চোখের পানি ফেলত।সবাই বলে বুক চেপে কান্না করলে নাকি বুকে ব্যাথা হয়।তবুও ছেলেটা বুক চেপেই কাঁদত নিজের বাবার জন্য,মা বোনকে বুঝতেও দিতনা।রাতে কেউ তার সাথে ঘুমোতে চাইলেও সে সাথে নিতে চায়না।কারন হলো সে জানে রাতের আঁধারে তার চোখের পানি আর বুকের কষ্ট কেউ দেখতে বা অনুভব করতে পারবেনা।তাই একা একটা রুমে অন্ধকারে কেঁদে কেঁদে রাতটা কাটিয়ে দিত ছেলেটা।বাবার জন্য দোয়া করত সারাক্ষন।বাবার মৃত্যুর পরেও বাবার স্মৃতিগুলো,বাবার দেখা স্বপ্নগুলো তাকে আঁকড়ে ধরত।তাই মাঝে মাঝে মরার ইচ্ছা পোষন করলেও বাবার স্বপ্ন পুরন করতে হবে তাই পারত না।এসব কথা,এসব চিন্তা অনেক আগেই ছেড়ে দিয়েছিল সে।ভাবলো মরবে না।মরলে বাবার হত্যাকারীদের শাস্তি নিজ চোখে কিভাবে দেখবে? বাবার স্বপ্নগুলো কিভাবে পুরন করবে? মা-বোনের দিকে তাকিয়ে এসব আজগুবি চিন্তাগুলো ভুলেই যেত ছেলেটা।ভেবে নিত এদের জন্য হলেও তাকে ভাল থাকতে হবে।
.
ছোটবেলার কথা মনে পরতেই কুকড়ে কুকড়ে কেঁদে উঠে ছেলেটা।বাবা তাকে আকাশের ওই চাঁদ দেখাত,তারা দেখাত তাই কষ্টগুলোকে আড়াল করার জন্য যখন চাঁদ-তারার দিকে তাকাত তখন কষ্ট কমার বদলে উল্টে বেরে যেত।
.
বাবা মারা যাবার দিন নতুন জামা পরেছিল ছেলেটা।বাবা দুপুরে খাবার সময় ছেলেটা সামনে আসে জামাটা কেমন হয়েছিল দেখাতে।বাবা খাবার রেখে ছেলেটার দিকে অনেকক্ষন তাকিয়েই থাকে।এরপর খাবার শেষ হবার পরে বাবা যখন নিজের কাজে যাচ্ছিল ঠিক তখন যাওয়ার আগেও দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপলক দৃস্টিতে তাকিয়ে ছিল ছেলেটার দিকে।বিকেলের শেষ সময়টায় উজ্জল দেখাচ্ছিল বাবার চেহারাটা।ছেলেটা ভাবতেও পারেনি এটাই শেষ দেখা ছিল।আজ বাবা বাসায় ফিরে এলে স্যারের বেতন চাইবে আর একটা শীতের জামার জন্য টাকার আবদার করবে বলে ভেবেছিল ছেলেটা।বাবার অনেক আল্লাদের ছেলে সে।কিছু চাইলে বাবা কখনোই না করে না।কষ্ট হলেও সব এনে দেয়।কোন কিছুর অভাব নেই তাদের।
.
তখন রাত ১০টা ৩০।বাবা আসার সময় হয়ে গেছে তাই অপেক্ষা করছিল ছেলেটা।বাবা আসলেই তার হাত থেকে বাজারের ব্যাগটা নিয়ে মধ্যের ঘরে রাখবে।সে তো আর বুঝতে পারেনি যাকে তার বাবা নিজের বাসার চাত খাইয়ে বড় করেছে সেই তার মৃত্যুর কারন হবে।হঠাৎ একটা ফোন।ছেলেটার স্বপ্নগুলো,আবদারগুলো সব নস্ট করে দিল,তছনছ করে দিল সব।
.
বাবাকে কোপানো হয়েছে।স্থানীয়রা তার বাবাকে হসপিটালে ভর্তি করিয়েছে।ছেলেটা ভেবেছিল হয়ত হালকা কিছু।ঠিক হয়ে যাবে।এতটা গভীর ক্ষতের কথা চিন্তাও করেনি কখনো।আল্লাহকে ডাকছে শুধু।বাসা থেকে প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে হসপিটালের দিকে যাত্রা করল সে।ছেলেটা জানে তার বাবার রক্ত ও পসেটিভ তাই ও পসেটিভ রক্তের ম্যানেজের জন্য আহবান জানায় সবাইকে।পরে জানতে পারে বাবার রক্ত এ পসেটিভ।পরে সেটার জন্যেও আহবান করে সবার নিকটে।
.
এতক্ষনে অনেক সময় পেরিয়ে গেছে।তখন রাত ১২টার বেশি বাজে।ডাক্তার বলেছে বাঁচার আশা নেই।রক্ত হলে খানিকের জন্য বাঁচবে তাই ঢাকায় নেয়ার সিদ্ধান্ত দেয় হসপিটাল কতৃপক্ষ।
.
বাবাকে এতক্ষন একবারের জন্যেও দেখেনি ছেলেটা।তাই বুঝতেও পারেনি ক্ষতের পরিমান।তখন রাত ১টা ঢাকায় যাবার জন্য রওয়ানা দিয়েছে সবাই বাবাকে নিয়ে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা করালেই বাবা ঠিক হয়ে যাবে।শুধু আল্লাহকে ডাকছে।বাবাকে গাড়িতে উঠানোর সময় দেখল বাবার শরীর পুরো ক্ষত-বিক্ষত হয়ে আছে।তখন বুঝল ব্যাপারটা খুব সাধারন নয়।
.
গাড়ি চলছে নিজ গতিতে।বাবার মুখে বিভিন্ন কথা।ছেলেটাকে দেখতে চেয়েছিল অনেকবার কিন্তু লাভ নেই।কারন তার চোখের পাশেও কোপানো হয়েছে তাই চোখ তুলে তাকাতেও পারছেনা।শুধু কন্ঠেই ছেলেটাকে অনুভব করার জন্য বাবা বলে ছেলেটাকে ডাকছে।ছেলেটা প্রতিউওরে বাবা বলো,বাবা বলো বলে ডাকছিল।এভাবে অনেকক্ষন কথা বলেছিল বাবা।এরপর রাত ৪টার দিকে একদম নিশ্চুপ হয়ে গেল।ছেলেটা ভেবেছিল হয়ত বাবা একটু ঘুমানোর চেস্টা করছে।কিন্তু বুঝে উঠতে পারেনি যে বাবা আর নেই।
.
তখন সকাল ৭টা ৪৯।ঢাকায় পৌঁছেই বাবা বাঁচবে সেই আশায় ডাক্তারকে বাবাকে চেক-আপ করতে বলল।ছেলেটা মনে মনে হালকা কষ্ট পাচ্ছে তবুও ধরেই নিয়েছে বাবার কিছু হয়নি।ডাক্তার খানিকক্ষন চেক করার পরে ছেলেটার বাবার নাকের ভিতরে থাকা অক্সিজেনটা খুলে ফেলল।ছেলেটার বাবার গায়ের উপর থাকা চাদরটা দিয়ে ঢেকে দিল তার বাবার মুখ।ছেলেটা মনে মনে ফুঁসতে থাকে।তবে কি তার বাবা!!! না না এভাবে বাবা যেতে পারেনা অসম্ভব।ডাক্তার বললেই সরি।সাথে সাথেই বুকটা পাথর হয়ে গেল ছেলেটার।
.
অবশেষ বাড়িতে ফিরে এলো। তখন ঠিক দুপুর ৩টা বাজে।এর আগেরদিনেও তো বাবা এমন সময় দুপুরের খাবার খাচ্ছিলেন।আর আজ.!! বাড়িতে ঢুকতেই কেমন যেন লাগল তার। পুরো বাড়িটাই নিঝুম।
.
রাতে দুইটা জানাযা হয়েছিল। একটা রাত ৮টা ৩০ আরেকটা ৯টা ৩০।এরপর কবরস্থানে প্রবেশ।বাবার পায়ের কাছে ছিল ছেলেটা খাটের পায়া ধরে আস্তে আস্তে কবরের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে সে।চিন্তা করছে বাবাকে সে কিভাবে নিজ হাতে মাটিচাপা দিবে? এর চাইতে নিজে মরে গেলেও তো সেটা ভাল হত।এত কষ্ট যে তার সহ্য হবেনা।বাবাকে কবরে শুইয়ে দিল।কবরটায় খুব পানি।বাবা এখানে কিভাবে থাকবে? ছেলেটা রাতে আরাম করে বিছানায় ঘুমাবে আর তার বাবা এভাবে এই জায়গাতে? না এটা হতে দেয়া যাবেনা।এর চাইতে ভাল সেই মরে যাক।কিন্তু কি আর করা বাস্তবতা।
.
বাবাকে কবরে নামানোর পর বাঁশ আর তার উপরে কাপড় দিয়ে আড়াল করে দিল সব।আর বাবাকে দেখতে পারবে না সে কখনো।কিভাবে থাকবে? পুরো ঘড়টাই যে বাবার স্মৃতিতে ঘেরা।বাবার কবরের উপর প্রথম মাটিটুকু ছেলেটা নিজ হাতে দিল।সে কত নিষ্ঠুর মনে মনে ভাবছে।তার নিজের বাবার কবরে মাটি দিচ্ছে সে।ছিহ.!! একটা সন্তান হয়ে কিভাবে সে এটা পারল? এগুলো ভাবতে ভাবতে কবরটা পুরো মাটিতে ভরে গেল।
.
বাসায় ফিরে এসে কান্নায় ফেটে পরল সব।অতঃপর দ্বীর্ঘশ্বাস।মাত্র ২টা দিন।মাত্র কয়েক ঘন্টা,কয়েকশ মিনিট,কয়েকহাজার সেকেন্ড আর ছেলেটার জীবনের সব শেষ।তার মা,বোনের জীবনের সব শেষ।পুরো বাড়িটাই আজ নিস্তব্ধ। চারিদিক শুধুই ধুধু করছে।পরিবেশটা হঠাৎ কেমন যেন হয়ে নিশ্চুপ।আজ তার বাবা নেই।এটা ভেবে বুকের ভিতরটা খুবড়ে খাচ্ছে।কষ্টে ফেটে যায় ছেলেটা আর তার মা,বোনের বুক।কিন্তু বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে,ভাগ্যকে মেনে নিয়ে আজো তারা এগিয়ে চলেছে সামনের দিকে।এ যেন বাবাহারা জীবন নয়, এ যেন কোন নতুন এক যুদ্ধ।সেই যুদ্ধে তাদের যে জয়ী হতেই হবে।
.
.
.
Siam Mehraf
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ দুপুর ১:২১
সিয়াম মেহরাফ বলেছেন: সবারই লাইফে এমন অনেক কিছুই নেই ভাই।যেমন আপনার মা নেই আর আমার বাবা নেই
©somewhere in net ltd.
১|
০১ লা ডিসেম্বর, ২০১৫ সকাল ৮:৪৭
আত্মবিশ্বাসী লেখক বলেছেন: সিয়াম ভাই,তুমি বাবা হারা আমি মা হারা।