![]() |
![]() |
নির্বাচিত পোস্ট | লগইন | রেজিস্ট্রেশন করুন | রিফ্রেস |
আমি নিজেকে খুব ভালবাসি।
দেখতে দেখতে আজ ১মাস ৪০দিন হয়ে গেল।সকল ব্যাস্ততাকে উপেক্ষা করে লিখতে বসলাম বাবাকে নিয়ে কিছু কথা।বাবার মৃত্যুর পিছনের কিছু রহস্য।
আসলে অন্য সব বাবার মত আমার বাবা সাধারনভাবে মারা যাননি তাকে খুন করা হয়েছে।
আমার বাবা ছিলেন অনেক শৌখিন একটা মানুষ।সবসময় বিভিন্ন আজগুবি জিনিসের প্রতি হালকা দুর্বলতা ছিল তার।তাছাড়া কিছু চাইলে দুষ্টমির ছলে হালকা বকা দিত বাবা।পরে আবার বকা দিয়ে ঠিকই পরের দিন জিনিসটা নিয়ে আসত আমার জন্য।আমি পরিবারের বড় সন্তান।আমার একটা ছোট্ট বোন আছে।সে এবারে মাদরাসা থেকে জেডিসি এক্সাম দিয়েছে।স্বভাবতই যেটা হয় কোন বাবা তার ছেলের থেকে তার মেয়েকে হালকা একটূ হলেও বেশি ভালবাসেন।আমার বাবাও তার বিপরীত নয়।সে আমাকে যথেস্ট পরিমান ভালবাসত কিন্তু আমার বোনের জন্য তার ভালবাসাটা অনেক বেশিই ছিল।বড়ই আল্লাদের মেয়ে সে আমার বাবার।যা আবদার করে সব পুর্ণ করতেন বাবা।কখনোই অপুর্ণ রাখেনি আমাদের কোন আবদার।
আমরা ২০০৩ সাল পর্যন্ত গ্রামেই ছিলাম।শহরীয় গ্রাম।গ্রামও ঠিক না আবার শহরও ঠিক না,দুটোর মাঝামাঝি।বাবা অনেক আগে থেকেই সেখানে ব্যবসা করতেন।অনেক ভাল দোকান ছিল তার ওখানে।২০০৩ সালের পর যখন আমরা গ্রাম থেকে মুল শহরে চলে আসি তখন বাবা সেই গ্রাম ছেড়ে আর আসে না।ওখানেই দোকান চালিয়ে যায়।
আমার বাবার দোকানে একজন কর্মচারী কাজ করতেন।তার বয়স বেশি ছিল না।২৪/২৫ হবে।ছেলেটার নাম নাসির।আমার বাবার সাথে নাসিরের বাবার ভাল সম্পর্ক ছিল,সেই হিসেবে বাবা নিজের কাজে সাহায্যের জন্য নাসিরকে বেছে নেয়।কাজে আসার পর থেকে ভদ্র ছেলেটাকে দেখে সবাই অবাক হয়।বাবা সবসময় বলত যে এটা তার ব্যবসা জীবনের সেরা কর্মচারী।বাসায় এসে দুপুরের খাবার খেয়ে যেত আর রাতের খাবার নিয়ে যেত সে।ভালোই ছিল প্রথম কয়েকটা দিন।এভাবেই চলতে থাকে দিনকাল।বাবা তাকে এতটাই বিশ্বাস করতেন যে টাকার হিসেব চাইতেন না কখনো এমনকি দোকানের হিসেবের খাতাটাও তার কাছেই থাকত।
অক্টোবর মাসের প্রথম থেকে বাবা অনেক অসুস্থ ছিল।বাবা দোকানে যেত না অসুস্থতার জন্য।বাবা নাসিরকে বলতেন যেন সে বাসায় এসে টাকার হিসেবটা দিয়ে যায়।কিন্তু সে আর আসে না।বাবা ফন দিলে ফোন ধরে না।কিছুদিন পরে ফোন একেবারেই অফ করে দেয়।এরপর বাবা ১০ তারিখ হালকা সুস্থ হয়ে দোকানে যাওয়া শুরু করে।এরপর নাসিরকে বলত যেন তার টাকার হিসেবটা একটু ঠিকভাবে দেয়।কিন্তু নাসির হিসেব না দিয়ে অন্য কথা বলে।কথা ঘুরিয়ে নেয়।এরপর বাবা টাকা হিসেব করে দেখে যে ২লক্ষ ৬০হাজার টাকার কোন হিসেব নেই।তাই বাবা নাসিরের কাছে সেই টাকাটার হিসেব চায়।কিন্ত সে হিসেব দিতে পারে না।এরপর বাবা তাকে বলেছিল যে টাকাটার হিসেব বের কর।ভালভাবেই বলেছিল।
এরপরের কাহিনিটা ১৪ তারিখের।এই কয়েকদিন নাসিরের ফোনটা বন্ধ ছিল।এরপর সে ১৪ তারিখ দোকানে আসল্বাবা আবার হিসেব চাওয়ায় সে হিসেব দিতে পারল না।তারপরে বাবা রাগ করে ১টা থাপ্পড় দিয়েছিল তাকে।সে বাজারে মধ্যে বের হয়ে এসে বলেছিল এই চড়ের দাম দিতেই হবে।আমাকে চড় মারার ফল ভাল হবে না।
১৬-ই অক্টোবরঃ-
দিনটা ছিল শুক্রবার।বাবা প্রত্যেক শুক্রবার অনেক আগেই বাসায় ফিরে আসে।বাট সেদিন সাড়ে দশটা বাজার পরেও বাবা বাসায় ফিরেনি।অনেক চিন্তিত ছিলেন মা।আম্মুর ফোনে একটা কল।আমার বাবাকে কারা যেন কুপিয়েছে!তাকে হস্পিটালে ভর্তি করা হয়েছে।ব্যাস সাথে সাথে আমরা চলে গেলাম হস্পিটাল।সেখান থেকে রাত ১টায় ডাক্তাররা বলছিল বাবার অবস্থা তেমন ভাল নয়।তাকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ঢাকা নিয়ে যেতে হবে।ঐ রাতে আমি আমার মা আর মার চাচু রওয়ানা দিলাম ঢাকার উদ্দ্যেশে।ঢাকায় নেয়ার আগেই আমার বাবা মারা গিয়েছিল।তখন রাত ৪টা বাজে।বাবা মরার আগে পুলিশের কাছে তার স্বীকারউক্তি দিয়ে গিয়েছিল আর আমাদের কাছেও বলে গিয়েছিল যে তার ঘরে পোষা কালসাপই তার এই ঘটনার জন্য দায়ী।
এভাবেই একটা চড়ের জন্য নস্ট হয়ে গেল আমার বাবার জীবন।পরে জানা যায় আমার বাবাকে মোট ৫ জন মিলে কুপিয়েছে।মাথার পিছনে দুইটা কোপ ছিল।বাবার মাথার মগজ বের হয়ে এসেছিল।দুই পায়ের মাঝখানে ২টা কোপ।বাম হাতের দুইটা আঙ্গুল কেটে পরে গেছে।আর ডান হাতের মধ্য পর্যন্ত ফেড়ে গেছে।আমার বাবাকে খুবই নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে।আপাতত ৫ জনের ৩ জন ধরা পরলেও বাকি ২ জন পলাতক যাদের সন্ধান এখনো পাওয়া যায়নি।এই দুজনের মধ্যে নাসির একজন।আরেকজন অজ্ঞাত।জানিনা আমার বাবাকে যারা মেরেছে তারা পর্যাপ্ত শাস্তি পাবে কিনা তবে শুধু এতটুকুই জানি তারা কখনো ছাড় পাবে না।তাদের শাস্তির জন্য যতটুকু করা দরকার আমি করব।করেই ছাড়ব।ইনশাআল্লাহ।
আমার বাবা যেন জান্নাতবাসী হয় এই রইল প্রত্যাশা।আমার বাবার অনেক ইচ্ছার মধ্যে একটা ছিল আমি যেন লেখা-লিখি করে অনেক বড় কেউ একজন হতে পারি।তাই আজো লেখা ছাড়িনি।বাবার ইচ্ছার জন্য লড়েই যাচ্ছি প্রতিনিয়ত।প্রত্যেকটা মুহুর্ত।বাবার এই ইচ্ছাটা পুরন করতেই এখানে আসা।আমার লেখা পরে যদি কোন একটা মানুষেরও উপকার হয় সেটাই আমার চাওয়া।আর একজন মানুষ পড়লে সেটা আমার অনেক বড় পাওয়া!
-সিয়াম মেহরাফ
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৮
সিয়াম মেহরাফ বলেছেন: আমিন
২| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:২৬
মুহাম্মদ তারেক্ব আব্দুল্লাহ বলেছেন: মারার বর্ণনাটা আসলেই খুব খারাপ লাগল, আল্লাহ তা'আলা আপনার বাবাকে উত্তম প্রতিদান দান করুণ ।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৯
সিয়াম মেহরাফ বলেছেন: আমিন
৩| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৯:৫০
ধমনী বলেছেন: বড়ই নির্মম।
আপনার বাবার জন্য দোয়া রইলো।
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:১৯
সিয়াম মেহরাফ বলেছেন: জ্বি
৪| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:২৪
গাওগ্যারামের পোলা বলেছেন: খুব কষট লাগলো। বাবা আপনি ভাল থাকুন।
৫| ২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ১০:৩৯
ডিজ৪০৩ বলেছেন: মানুষকে বিশ্বাস করলে কি তাঁর পরিণতি এমন দিতে হয় ? তাহলে কীভাবে মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করবে ?
©somewhere in net ltd.
১|
২৭ শে নভেম্বর, ২০১৫ রাত ৮:৫৬
এম হাসান মোহাম্মদ রুমি বলেছেন: আল্লাহ তার জন্য জান্নাত নসিব করুক।